গল্প

এলিয়েন রমণীর সঙ্গে এক রাত

Looks like you've blocked notifications!

১.

গভীর মায়াময় এক বন। যতদূর চোখ যায় পাহাড় আর সবুজ-শ্যামল বনবনানীর মেলা। বনে এত বিশাল বিশাল একেকটি গাছ যে দেখলে মনে হবে এক-দেড় হাজার বছরের প্রাচীন এরা। এগুলোর ছায়াতলে হাঁটলে গা শির শির করে ওঠে এক অজানা শঙ্কায়। এই বুঝি হা করে নেমে এলো হাজার বছর বয়সী কোনো অজগর! তারপরও অদ্ভুত এক ভালোলাগায় পরিবেশটা মনোরম করে রেখেছে সবুজ এই বনানী।

এক সপ্তাহ আগেই গভীর এই বনে পিকনিক এসে দলের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে যুবক। যুবক মানে ভার্সিটি পড়ুয়া রোমেল রাসপুতিন। যাকে সহপাঠীরা ডাকে রাস নামেই। এরপর পথ হারিয়ে রাসপুতিন হাঁটতে হাঁটতে জনবসতি খুঁজে চলেছে। সাতদিন ধরেই চলছে এই অভিযান। রাত হলে কোনো নদীর পাড়ে কিংবা পাহাড়ের কোলে কোনো ছোটখাটো গাছের নিচে বসে বসে খানিক ঘুমিয়ে নেওয়া। এভাবে বনের কমলা, আপেল, পাকা কলা, পেয়ারা এসব খেয়েই দিন যাচ্ছে তার।

রাসপুতিনের পথ হারানোর সপ্তম দিন আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। এদিন হাঁটতে হাঁটতে শেষমেশ একটি লেকের পাড়ে এসে দাঁড়াল সে। টলটলে স্বচ্ছ পানির সেই লেকের এপার থেকে ওপার ঠিক যেন দৃষ্টিসীমায় আসে না, এতটাই সুবিশাল। লেকটির পাড়ের তিনদিকে সুউচ্চ পাহাড়ঘেরা। দূরে পাহাড়ের চূড়ায় সূর্য অস্ত যাচ্ছিল তখন। এদিনের গোধূলিবেলাটা অন্যরকম এক স্বর্গীয় আবেশ তৈরি করেছিল।

ঝিরিঝিরি এমন সন্ধ্যেটা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। রাসপুতিন ভাবছিল, সঙ্গী-সাথি ছাড়া সুমধুর এমন দৃশ্য দেখাও পাপ। এদিকে বাড়ির জন্যও মনটা ব্যাকুল হয়ে পড়েছে তার। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কহীন এই সবুজ জগতে সে থাকতে আসেনি। কিন্তু প্রকৃতি প্যাঁচ মেরে রেখে দিয়েছে তাকে। সবাইকে রেখে তাকেই কেন প্রকৃতি এই শাস্তি দিল? ভেবে পায় না সে।

এদিকে চোখের সামনে লেকের পানি টলটল করছিল। পাহাড় থেকে কয়েকটি রুপালি ঝরনা তারই সামনে দিয়ে এসে কলকল শব্দে লেকে পড়ছিল। নয়ন শীতল করা এমন দৃশ্য মুহূর্তেই বাড়ি ফেরার তাড়নার ব্যথা দূর করে দেয়। তার মন শান্ত হলো।

ঠিক সেই সময় হঠাৎ করেই আকাশ থেকে লেকের পানির ওপর এসে নামল একদল পরীর মতন এলিয়েন। অবাক ব্যাপার হলো, তাদের পা পানিতে ভিজছে না। তারা ডুবেও যাচ্ছে না। বরফের ওপর দিয়ে যেমনটা স্কেটিং করা যায়, তারাও সেভাবে রীতিমতো স্কেটিং শুরু করে দিল সেই লেকের পানিতে। এর মধ্যেই রাসপুতিনকে দেখে সবচেয়ে যে সুন্দরী এলিয়েনটা ছিল, সে চলে এলো তার কাছে।

রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে পরী এলিয়েন জিজ্ঞেস করল,
''‿ ⁀ ⁁ ⁂ ⁃ ⁄ ⁅ ⁆ ''

যুবক তার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝল না। তখন এলিয়েনটিই ইশারা করে তার হাতের একটি থ্রিডি গ্লাসের মতো একটা কিছু দিয়ে চোখে লাগানোর ইশারা করল। সেটা লাগাতেই ভোজভাজির মতো চারদিক একেবারে বদলে আরো রঙিন হয়ে উঠল। সামনে তাকাতেই রাসপুতিন দেখল অপূর্ব সুন্দর এক রমণী, যাকে এতক্ষণ এলিয়েন ভেবে সে ভুল করছিল। এবার সেই রমণী বলল,
'' *^_^* ^*^ ^-^  ^_^ ^︵^∵ ∴‖ ︱︳ ︴''

যুবক এবার তার সব কথা পরিষ্কার বুঝতে পারছিল। এলিয়েন যা বলল তার অর্থ দাঁড়ায়, আমি ভিনগ্রহের এলিয়েনই। আমার নাম স্পর্শিওয়া প্রিয়নীলয়েনুভা। এটা আমাদের গ্যালাক্সি থেকে দেওয়া নাম। আর আমার একটা সুন্দর ডাকনামও আছে, শিল্পীনজেল।

রাসপুতিন বলল, ‘শিল্পীনজেল! তোমাকে তো চেনা চেনা লাগছে! কোথায় যেন দেখেছি। এই গ্রহেরই কোথাও। তুমি শিল্পীনজেল নও, তুমি শিল্পী!’

রমণী তখন মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে শুধু বলল, € ₭ ₮ ₯ ℀ ℁ ℂ ℄<3.

রাসপুতিন এবার দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল রমণীটিকে। আর বলতে লাগল, ‘আরে! তুমি যে এলিয়েন নও। তুমি আমার শিল্পী!’

২.

সকালবেলা ঘুমানোর অভ্যাস আমার। এদিন সকাল বেলায় আমার শিশুসন্তান স্পর্শ আর প্রিয়নীলের টানাটানিতে ঘুম ভেঙে গেল। আর প্রিয়তম স্ত্রী শিল্পী হাসতে হাসতে বলতে লাগল, ‘কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে কার নাম ধরে বিড়বিড় করছিলা তুমি! আজ ভালোবাসা দিবসের কসম, মিছা কথা কবা না।’