সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন
ইসুফ মিয়ায় দাওয়াত খাইয়া গেছে এই ত্তো আউজকা সাত-আষ্ট দিন হয়। কিন্তু জুলেখার মায়ের কাছে এই কয়টা দিনরেই লাগে য্যান কতো কতো বচ্ছর! সেয় এইর মধ্যে পুরা অন্তর দিয়া ইসুফ মিয়ারে মনে করোনের ফুরসত পায় না! গেরামের সকলে জুলেখারে নয়া কইরা বিছরান্তির কোনো বেবস্থা নিলো কি না, সেই ভাবনাও মনে আনার ফাঁকটা আসে না জুলেখার মায়ের হাতে। মন তার বেতালা হইয়া থাকে আরেক ঘটনায়!
কয় দিন হয় একটা আচরিত ঘটনা ঘটতাছে তাগো বাড়িতে। ঘটনার যখন শুরু, সেই পরথম দিনে তার মনে হয়, সেয় বুঝি কী শোনতে কী শোনতাছে! আবার মনে হয় যে, দেখো গা তার কানে না কোন দোষ পইড়া গেছে! তবে, যখন একই বিষয় নিয়া মংলার মায়ও কথা কওয়া ধরে, তখন জুলেখার মায় বোঝে, সেয় কিছু ভুল শোনে না! ভুল দেখতাছেও না! বিত্তান্তখান হাছা হাছাই ঘটতাছে!
কেন ঘটে এমুন ঘটনা অখন তাগো বাড়িতে! এইটা কিসের লক্ষণ! এক খালি খোদা-মাবুদে জানে এই ভেদের মীমাংসা! মাইনষের বুদ্ধি এই আচরিতের ভেদ ভাঙ্গতে পারবো না!
বিষয়টা কী?
হইছে কী, যেদিন ইসুফ মিয়ায় খুদ-ভাঁপার দাওয়াত খাইতে আসে, সেদিন জুলেখার মায়ে পোলাটার পাতে খালি খাওনই বাইড়া দেয় না; লগে একটা আরজিও রাখে তার কাছে। জুলেখার মায়ে তার ধর্মপুতের কাছে ভেগাভেগা কইরা মিন্নতিও জানায় যে, ইসুফ মিয়া বাজানে যুদি জুলেখারে আবার বিছারান্তির একটা বেবস্থা লইতো! ইসুফ মিয়ায়ও তো সেই কথায় অরাজি হয় নাই!
তবে বিষয় সেইটা না! বিষয় হইলো, যখন জুলেখার মায় ইসুফ মিয়ারে অনুনয় করা খালি শুরু করছে, ঠিক সেই সময় সেয় শোনে কী তাগো বাড়ি ঘিরা কিয়ে জানি ধুম আওয়াজ দিতাছে!
আওয়াজটা আসতাছে উঠান তেনে, তবে উঠানের মাটিতে য্যান অই আওয়াজের উৎপিত্তি হইতাছে না! মনে লাগে যে, আওয়াজ আসে ওপরের দিক তেনে! গাছগাছালির ওপরে তেনে আওয়াজ আসে—ভোম ভোম ভোম ভোম—ঘো ঘো ঘো!
কিয়ের এমুন আওয়াজ হয়! কী বেপার! অন্তর তার বেচইন বেচইন লাগতে থাকে। এট্টু য্যান ছটফটায়ও। কিন্তু বাইরে সেয় থির মুখে বসা থাকে।
না থাইক্কা করবো কী! পোলাটায় খাওন পাতে বহা। তারে শান্তিহালে খাইতে তো দিতে হইবো! এই কথা মনে থাকে কি না জুলেখার মায়ের, তাই সেয় অই আঁতকা জাগনা দেওয়া আওয়াজ বিষয়ে কোনো কথাই কয় না।
তার বাদে খাওয়া শেষ কইরা ইসুফ মিয়ায় খালি যাওনের লেইগা তার পাও বাড়ায়, তখনই জুলেখার মায়ে তরাতরি গিয়া উঠানে খাড়া দেয়। বেপারখানা কী হাছা, না গায়েবি কোন কারবার এইটা! এতোকালের মিদে আউজকাই এই ভিটায় উঠতাছে এমুন ভোমভোমানি আওয়াজ! সেই ভোমভোমানি যে শুরু হইছে, তা চলতাছেই চলতাছে। সেইটার তো কোনো থামাথামি নাই! কী ঘটনা!
জুলেখার মায়ে আর এমুন কোন হুড়াহুড়ি কইরা উঠানে আসে, তার তেনে দ্বিগুণ তরা কইরা তার পিছে পিছে আসে মংলার মায়। আওয়াজ তো তাইলে জুলেখার মায় একলা শোনে নাই! আরো একজনের কানেও তো গেছে সেইটা! তাইলে তো বিষয়টা শোনাশুনির ভুল না!
‘কানে তো আইছেই বুজি! এইটা কী যাহা-তাহা আওয়াজ নি! কানাপট্টি দি বয়রা কইরা দিতাছে!’ মংলার মায় উঠান ভইরা আওয়াজের কারণরে বিছরাইতে বিছরাইতে তরাসের গলায় কয়। ‘কিয়ের মিদে আবার কী শুরু হইলো এগিলি!’
ভিটির যেমুনকার নিরাছাড়া, হু হু উঠান; তেমুন ঠান্ডা, মরা মরা হইয়াই পইড়া রইছে। সেইখানে কোনো কিছুর লড়াচড়ির কোনো নিশানা নাই! তাইলে এমুন সীমাছাড়া গঙ গঙ গঙ শব্দ আসে কোনখান তেনে!
ভালা কইরা তল্লাশ কইরা দেখা যায়, আওয়াজ আসতাছে নানান গাছের আগার তেনে! বাড়ির গাছগরান তো জুলেখার বাবায় মরণের পর আর সাফসাফা দশায় নাই! সবটি গাছেরে কঠিন প্রকারে ঘের দিয়া আছে জংলা ধুন্দুলের লতা।
আজদাহা আজদাহা, ডাকাইত্যা তাগড়া ধুন্দুলের লতারা যে ঘের দিয়া থুইছে গাছগিলিরে, সেটি কী যাহা তাহা ঘের নি! য্যান কইচ্চা কইচ্চা তেজি লিকলিকা কতাটি সর্প, সবটি গাছের মাথা আর ঘাড়-গর্দানরে কঠিন প্যাঁচ দিয়া আটকানি দিছে। দিয়া জীয়তে মরা করা কইরা রাখছে সকল গাছেরে। এই প্যাঁচ ছুটায় তার সাধ্য কোনো মনিষ্যির নাই।
জুলেখার বাপে তো মরছে সেই আষাঢ় মাসের গোড়ায়। সেয় গেলো একদিগে, আরেকদিগে বাড়ির ভিটিতে নানান জিনিসের আনাজানা শুরু হইলো। অন্য সব যেমুন তেমুন, দিন পনেরো না যাইতেই দেখা গেলো বাড়ির উত্তর সীমানার যে একচালাটা তোলা হইছিলো, তার পিছনের বিরাট আমগাছটার গুঁড়ির সগল দিগে আপনা তেনে জন্ম নিছে কেমুন কেমুন কতোটি চারা।
তো, বাইরা মাসে এমুন কতো নাই-জিনিসের চারাই তো মাথা জাগায়! আবার আপনাআপনি মিলাইয়াও যায় গা। জুলেখার মায় সেই কারণে অই জংলা চারাটির দিগে খেয়াল রাখে নাই। সেই চারারা যে কালে এই বাড়ির এত্তাবড়ো কাল হইয়া খাড়ইবো—সেই কথা কে জানছিলো!
গুঁড়ি গুঁড়ি যেই ছয়-সাতটা চারা মাথা তুলছিলো, সেইগুলা আছিলো বউন্না ধুন্দুলের চারা। অই কয়টায় করে কী, সেই বাইরা মাস যাওনের আগেই বাড়ির সবগিলি গাছেরে কেমনে জানি বাইয়া ফালায়! এক গাছের মাথার তেনে আরেক গাছের ডাল, তার তেনে আবার আরেক গাছের পাতা-ঠাইল্লা—এই কইরা কইরা বাড়ির তামানটি গাছে বাইয়া-ছাইয়া হুলস্থূল কিরতি করে অই ধুন্দুলের লতারা!
অখন তাগো যতো কাটো, যতো টাইন্না ফালাও; কোনো ফল নাই। আবার পেলপেলাইয়া বাইড়া গিয়া, যেমুনকার ঘের তেমুন কইরা থোয়। পুরাটা বাড়ির কোনো একটা গাছেরে আর গাছ বইল্লা মালুম হয় না। মনে হয় য্যান ধুন্দুল লতা বাওনের লেইগা পোতা কতাটি জ্যাতা খাম্বা অইগুলা! ধুন্দুলের ঝোপড়া ভেদ কইরা উঠানে আর অখন রইদ তরি ঠিকমতোন আহে না।
অই সকল ঝোপড়ায় সংবচ্ছরই ফুল ধরার কোনো বিরাম নাই। ধুন্দুল ফলোনেরও কোনো সীমা নাই। আসল ধুন্দুল তো বাইরা মাসের আনাজ। তারা ফলেও সময় মাইন্না, গাছেরা মরেও সময় মাইন্নাই।
কিন্তু এই ভিটিতে দেখা দেওয়া বউন্নাগিলি ফুল-আনাজ সব জন্ম দিতাছে দুনিয়াছাড়া নিয়মে। ধুন্দুল জন্মাইতাছে বেশুমার! সকল ঝোপড়ার সবখানে পুরা বছর ভইরা ফইল্লা থাকতাছে সীমাছাড়া ধুন্দুল। কিন্ত তামশা দেখো, এতো যে ফলতাছে, সেগিলি যুদি কোনো প্রকারে লোকের কোনো কামে লাগে!
ভাজি-ঝোল যা-ই করো না কেন—এইগিলিরে রাইন্ধা পাতে নেওনের কোনো উপায় নাই! দুনিয়ার তিতা! মোখে দিলে উটকি আহে, এমুন কুটকুইট্টা তিতা! সেই কারণে অইগিলিরে কেউ তোলতেও হাত বাড়ায় না। সংবচ্ছর জংলা ধুন্দুলেরা নিজের ইচ্ছায় ফলতাছে, নিজের ইচ্ছামতো শুকাইতাছে। কেউই তাগো দিগে খেয়াল দেয় না!
তাগো বিচি মাটিতে পড়ে। নয়া চারা হয়। তার বাদে, জুলেখাগো বাড়ির গাছে গাছে নয়া কইরা ধুন্দুলের লতার ঝোপড়া-ঘের পড়তে থাকে।
অবস্থা এমুন হইছে, য্যান বাড়িতে জংলা ধুন্দুলেরই আদত দখল। জুলেখার মায় এই বাড়ির কেউ না! ধুন্দুল ঝোপড়ারাই দয়া কইরা থাকতে দিতাছে জুলেখার মায়রে!
অখনকার এই আচুইক্কা আওয়াজের মূলে অই ধুন্দুলের ফুল। সেই ফুলেরা আবার কেমনে আওয়াজ দেয়? কেমনে অই ফুলের তেনে অমুন ঘোঙর ঘোঙর আওয়াজ ওঠে!
আওয়াজ যে ওঠে তার পিছে কারণ আছে।
মংলার মায়ে দেখে, অই যে সকল গাছের আগায় আগায় ফুইট্টা রইছে হাজারে বিজারে ধুন্দুল ফুল—সেই হইলদা হইলদা ফুলে আইসা ভোমরা জোটছে। এতোকালের কোনো দিনে যেই ফুলে ভোমরার কোনো চিন্ন দেখা যায় নাই; আউজকা তাগো কাছে কেমুন ভোমরা আইয়া হাজির!
তাও দেখো, একটা-দুইটা ভোমরা না! ফুলের আশপাশে দেখো রে হাজির আছে গণ্ডায় গণ্ডায় ভোমরা! যতো হইলদা ফুল, ততো য্যান কালা কালা ভোমরা। কারবার দেখো! তারা আবার ফুলে ফুলে যতো না বইতাছে, তারও থেইক্কা বেশি আওয়াজ দিতাছে! গোঙ গোঙ! গোঙ গোঙ!
মংলার মায় যেমুন সেই ভোমরাগো দেখে, তেমুন জুলেখার মায়ও দেখে। তবে বিষয়খানরে গোনার নেওনের কিছু দেখে না জুলেখার মায়। ভোমরার আওয়াজ নিয়া বেদিশা হওয়ার কী আছে! এই কথা মনে নিয়া সেয় তখন ধুছমুছ পাওয়ে রান্ধনঘরে যায়। বেইলা উইট্টা যাইতাছে মাথার ওপরে। হাতের একটা কামও তো শেষ করা হয় নাই তার! অদিগে, মংলার মায়ের খাওন তো জুড়াইয়া করকরা কাঙ্কর হইয়া যাইতাছে!
জুলেখার মায় তো ঘটনাখানরে হালকার ওপরে পলকা কইরা লইয়া নিজ কামে গেলো গা, কিন্তু উঠানে খাড়া মংলার মায়ে তো দেহি উড়াইয়া দিতে পারতাছে না বিষয়রে! তার অন্তরে ক্যান জানি কুচুর-মুচুর করতে থাকে।
ঘটনাখানরে হালকা রকমে নিতে ক্যান তার দিল সায় দেয় না! কী জানি একটা বিষয় তার মোনে আসি আসি করতে থাকে, কিন্তু মোনে আসে না। কোন একটা আগের আমলের কথা—এই ভোমরা বিষয়ের কী জানি একখান কথা—তার মোনে পড়ি পড়ি করতে থাকে। কিন্তু কিছুতেই মোনে পড়ে না।
কবেকার আমলের কোন একটা কথা জানি সেয় অতি-বুড়া কোনো একজোনের মোখে শোনছিলো। এই ভোমরাগো ডাকাডাকি নিয়া—কী জানি কথাখান! এট্টু আবছা মতোন মোনে আসতে থাকে, আবার মোন তেনে নাই হইয়া যাইতে থাকে।
মোনে আয় মোনে আয়—অন্তরে অন্তরে ডাকাডাকি দিতে দিতে মংলার মায় তখন করে কী—গাছের নিচে নিচে ঘোরে-ঘারে, ঘাড় উঁচাইয়া ভোমরাগো দিগে চায়।
কিন্তু কিয়ের কী! কিছুই তার মোনে আহে না !
আইচ্ছা মোনে না আসে তো না-ই, কিন্তু অন্তরটা খচখচায় কোন কারণে!
কু-গাওয়া ধরছে ক্যান মংলার মায়ের অন্তরে! আজাইরা কারোণে তার দিল এমুন কু-ডাক ডাকতাছে!
এতো সব চিন্তায় তার মিজাজটা এমুন গান্দা হইয়া যায় যে, এতো তরিজুত কইরা রান্ধা খুদের-ভাঁপাটি তার মোখে মাটি মাটি লাগতে থাকে। খাওনে মন দিতে পারে না সে।
মংলার মায় ক্যান খাওয়া-পাতে এমুন বিমনা! পুতেরে থুইয়া একলা এই ভাঁপা খাইতে মংলার মায়ের অন্তর জ্বলতাছে নি! দেখো মায়ের অন্তর! জুলেখার মায় মতে মতে হাসে। তার বাদে সেয় ছইট্টাইতে থাকা মংলার মা-রে কয়, ‘আমি তর পোলার লেইগাও খাওন রাখছি বইন। তরটুক তুই মোখে দে, ভালামতোন!’
সেই কথা শুইন্না একবার মংলার মায়ের ইচ্ছা হয়, তার অন্তরে যে ভাবনাখান লড়ালড়ি দিতাছে, সেইটা সেয় জুলেখার মা বইনেরে ভাইঙ্গা বলে! আবার লগে লগেই তার মোন তারে কয় যে, থাউক! কাম নাই! হেয় না আবার ডরায়!’
এই তাই নানান জাতের ভাবনা নিয়া তারা দোনো জোনে কয় লোকমা খালি মোখে দিয়াও সারে নাই, এমুন সোমে শোনে—ভোমরারা কেমুন নয়া রকমের ডাকপাড়া শুরু করছে! তুফান-জোর ডাক। কতক্ষণ আগে তো খালি আছিলো ঘোঙ ঘোঙ ডাকখান। সেই ডাক কানে আইসা খালি থাবড়া দিতাছিলো।
কিন্তু অখন যেই ডাক ডাকতাছে ভোমরায়, তার আওয়াজ বড়োই আলাদা! অখন য্যান দিতাছে মিঠা রকমের এক ডাক! গুন গুন গুন গুন গুন!
সেই ডাক তো ডাক না, য্যান পরানে মায়া-ধরানি গীত ধরছে তারা! য্যান আত্মারে শীতল করোনের মন্তর দিতাছে ভোমরাগিলি! কী মুলাম কী রস টসটস! গুন গুন গুন!
মোখে লোকমা তোলা বন্ধ কইরা দুই মাতারি সেই মোলায়েম ডাক শুনতে থাকে। শোনে আর দোনোজোনে ফিকফিকাইয়া হাসে। দেহো তো! তার দোনোজোনে কেমুন পোলাপাইনের লাহান কিরতি করতাছে! কেউ দেখলে কী কইবো!
হাসতে হাসতে হঠাৎই মংলার মায়ে চমকানি দিয়া ওঠে। সর্বনাশরে! ভোমরার ডাক বিষয়ে সেই কোন আগে শোনা কথাখান যে তার স্মরণে আসছে! মনে পড়ছে তার!
কী কথা কইয়া গেছে মুরুব্বিরা? তারা কইয়া গেছে তো, যে, ভোমরায় কইলাম বিনা কারোণে ডাক পাড়ে না! ভোমরায় নিয়া আসে ভালা-বুরার সংবাদ! আউজকা এতো বচ্ছর বাদে দেওভোগ গেরামে তাইলে আবার আইছে ভোমরায়, সংবাদ নিয়া?
কী সংবাদ আনছো রে ভোমরা!
ডাকের লক্ষণ তো কয়, ভালা-বুরা দুই জাতের সংবাদই আছে তোমাগো কাছে! ঘোঙ ঘোঙ ঘোঙ-কানাপট্টি বয়রা করোনের আওয়াজ দিয়া কইতাছো—সুখবরি আছে!
লগে দিতাছো মুলাম সুর। গুন গুন গুন গুন! বালাই-মুসিবতও তাইলে দূরে নাই! আইতাছে সেইটাও!
এই ভিটায় কোন সুখবরি আইবো? সেইটা কোনো প্রকারেই আন্দাজ করতে পারে না মংলার মায়। তয়, গায়েবির মালিক আল্লা! সেয়ই ভালা জানে, তার বান্দাগো সুখ-দুখ!
সুখবরির বিষয়খান নাইলে গেলো এই প্রকারে। কিন্তু মুসিবত? কোন মুসিবত আর এই বাড়িতে আসোনের বাকি আছে! বংশের বাত্তি মাইয়াটায় গেছে, বাড়ির বেটাটায় গেছে। থাকার মিদে আছে খালি মাতারিটায়। হের বিপদ ছাড়া আর কার বিপদ হইবো তাইলে!
মোনে মোনে সকল বেপার লাইড়া-বুইজ্জা মংলার মায় দেখে, হিসাব মতোন আলাই-বালাইয়ের ধাক্কাটা আইলে আইবো জুলেখার মায়ের উপরে। আর তো কেউ নাই এই সংসারে, যারে মুসিবতে নাগাল পাইবো!
মংলার মায় সেই খাওয়া পাতে বইয়া থাইক্কায়ই মোনে মোনে কিরা কাটে যে, অখন আলা কয়দিন সেয় কোনো অবস্থাতেই জুলেখার মায়রে একলা কোনোদিগে যাইতে দিবো না। সেয় যেমনেই হউক, জুলেখার মায়ের লগে লগে থাকবোই।
অখন, ভোমরার ডাক বিষয়ে আদি মুরুব্বিগো হুঁশিয়ারির কথাটা কী সেয় ভাইঙ্গা কইবো জুলেখার মায়রে?
তার অন্তর তারে সমঝায়, ‘খবরদার! কিচ্ছু কওনের কাম নাই! দগ্ধ, আধা-মরারে আর মারণের কাম নাই!’
ভোমরার ডাক নিয়া পুরান আমলের মাইনষেগো কথার কিছুই জুলেখার মায়ের স্মরণে আসে না। তবে অই যে কেমুন নানাপদের ঘোঙ ঘোঙ গুন গুন আওয়াজে তার মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে। সেয় মতে মতে স্থির করে যে, এই খাওনের হ্যাংগামটা কোনোমতে শেষ কইরা সেয় গিয়া বইয়া থাকবো ঠাকুরবাড়ির ঘাটলায়।
অন্য অন্যদিন যখন পারে, তখন গিয়া গিয়া ঘাটলাটারে খালি এক নজর দেইক্ষা আসে জুলেখার মায়। এতো বছর ধইরা একটা কোনোদিন তাতে খ্যামা দেয় নাইক্কা মায়। পারে নাই। মাইয়াটায় তো শেষমেশ আছিলো অই ঘাটলার উপরেই?
এইন তেনেই ত্তো সে নাই হইয়া গেছে! হারানি যাওনের আগে এই ঘাটলাটায়ই তো সাক্ষী হইছে জুলেখার ভালামন্দের। দুনিয়ায় খালি এই এক সাক্ষী তার মাইয়ার হারানি-ঘটনার। সেই ঘাটলার কাছে গেলে, এমন কী তারে চক্ষের দেখাটা দেখলেও মায়ের কইলজাখান ঠান্ডা হয়।
সেইদিন সেই প্রথম জুলেখার মায়ে সাব্যস্ত করে, আউজকা যে সেয় গিয়া ঘাটলায় বহা দিবো, পারতে সেইন তেনে লড়বো না। এই যে ভোমরার আওয়াজের ঠেলায় বাড়িতে একদণ্ড তিষ্টানের উপায় নাই জুলেখার মায়ের; অখন তাইলে সেয় জুড়াইতে যায় কই?
আর কই যাইবো! যাইবো ঠাকুরবাড়ির বেহদ্দ ভাঙ্গা সেই ঘাটলায়। গিয়া, সেইখানেই সেয় পইড়া থাকবো। আগে যে ক্যান জুলেখার মায় গিয়া অইখানে হত্তা দিয়া পইড়া থাকে নাই! তেমনে পড়া দিয়া থাকলে, বান-বাতাসে কী তারে কোনো গুপ্তি কথা ঠারে-ঠোরে কইতো না!
মোনে হয় য্যান তারা কইতো!
‘ভালা হইছে ভিটিতে এমুন ভোমরার উৎপাত আইছে!’ জুলেখার মা-র ভিতর তেনে অন্তর ছন্নভন্ন করা নিশ্বাস বাইর হয়, ‘থাকুক অখন ভোমরার গুষ্টিয়ে-বাড়ির দখল নিয়া! জুলেখার মায়ের কিসমতে আল্লায় গাছতলা লেখলে, খণ্ডাইবো কেটায়?’
(চলবে)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ৩৫)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ৩৪)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ৩৩)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ৩২)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ৩১)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ৩০)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন(কিস্তি ২৯)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ২৮)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ২৭)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন(কিস্তি ২৬)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ২৫)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ২৪)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন(কিস্তি ২৩)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন(কিস্তি ২২)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ২১)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ২০)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১৯)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১৮)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১৭)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১৬)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১৫)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১৪)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১৩)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১২)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১১)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ১০)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ৯)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (কিস্তি ৮)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (সপ্তম কিস্তি)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (ষষ্ঠ কিস্তি)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (পঞ্চম কিস্তি)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (চতুর্থ কিস্তি)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (তৃতীয় কিস্তি)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (দ্বিতীয় কিস্তি)
সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন (প্রথম কিস্তি)