সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন
ভোগ দেওনের কর্মটা নিয়া ক্ষণে ক্ষণে শত রকমের ভয়-ভাবনার ঝাপোট খাইতে আছিলো মংলার মা আর জুলেখার মায়ের পরান। পরথম চিন্তাটা আছিলো ভোগ দেওনের স্থানখান নিয়া! গেরামের ভিতরে লোকসকলের বসত। এমুন বসতির ভিতরে তো ভোগ দেওনের বিধি নাই! ভোগ দিতে হয় পতিত-নির্বংইশ্যা কোনো বাড়িতে, নাইলে কোনো বিরান পাতরের গাছতলায়।
গেরামে দিছো তো পড়ছো কঠিন অমোঙ্গলের চক্করে।
এখন কাউয়ারা যে কইলো ভিটির দক্ষিণের ঢালে ভোগ দিতে, সেইটা কোন বিচারে কইলো তারা! আর, সেইটা করোন যাইবোই বা কেমনে!
ভিটির অইদিগে যে জুলেখার মায় ভোগসুদ্ধা কলার পাত বিছাইবো, সেই ঢাল তো উদাম খটখট্টা। লোকে তো দেখবো! দেইক্ষা তারা এমনে এমনেই ছাইড়া দিবো! কেউই দিবো না। গেরামের ভিতরে ভোগ দেওনের কুফা-কামরে মাইনষে কোনো প্রকারেই বরদাস্ত করবো না! বিরাট গেঞ্জামের ভিতরে পইড়া যাইবো গা তাইলে এই বিধবা মাতারি!
অখন উপায় কী! কাউয়াপক্ষীরা এইটা কেমুন জায়গা বাছলো!
অরা কী জানে না যে, ভোগ দিতে হয় চুপচাপ নিরালায়! যুদি কাউয়ারা তাগো ভোগ দিতে কইতো কোনো তেপোথায়, কতো সোন্দরমতে তা পালনি করতে পারতো জুলেখার মায়! নাইলে যুদি অন্য কোনো নিরালা থানে যাওনের আদেশ দিতো, জুলেখার মায় ডরাইতো না! দিয়া আইতোই।
অখন তো পড়ছে সেয় বড়ো বেকায়দায়। লোকে না দেখে, লোকে না ভোগ দিতে দেইক্ষা আবার হুজ্জাত বান্ধায়—এই ডরে ডরে কতো কায়দা কইরা কতো রাখঢাক দিয়া দিয়া সময়ের ভোগ সময়ে দিয়া সারে জুলেখার মায়।
ভোগ তো দিয়া ফালায় তারা দোনোজোনে, ঝোক্কের ঠেলায়। কিন্তুক দিয়া যুদি অন্তরে এট্টু শান্তি পায় দুই মাতারি! খালি ডর খালি ডর! অই ত্তো বুঝি কেটায় জানি দেইক্ষা ফালাইছে! অই ত্তো বুঝি নানান জোনে কুইদ্দা আইতাছে তাগো দোনোজোনরে গাওছাড়া করোনের লেইগা! এই চিন্তায় তাগো পরান খালি ডুকপুগ করতে থাকে।
তবে খোদার কী রহম! কেমুন একটা বিরাট কেরামতি দেখাইয়া ফালায় কাউয়াগিলিয়ে! কেমুন সিয়ানের সিয়ান অরা! কেমুন তগনগদ আইয়া মাতারি দুইজোনরে তারা জানানি দেয় যে, ভোগের পাতা-পোতা, ক্ষীর—কোনোকিছু নিয়া চিন্তার কিছুই নাই!
ক্যান নাই?
কারোণ কাউয়ারা সেইগিলিরে লোকের চক্ষের আউইলে রাখোনের বেবস্থা করছে।
হইছে কী, জুলেখার মা আর মংলার মায়ে তো ডরে টিবিটিবি পরান নিয়া কাউয়াগো ভোগ বিছাইয়া দিয়া আসে। আইসা তারা যে থির মতোন বসা দিবো-তেমত নিয়ম নাই। নিয়ম হইলো—ভোগ দিয়া আইসা লগে লগে কাপোড় বদলাইতে হয়। পাও-হাত ধুইয়া পয়পরিষ্কার হইতে হয়। নাইলে শনির দিষ্টি পড়ে নয়া কইরা।
সেই নিয়ম ধইরা মাতারি দোনোজোনে তখন খালি নিজেগো হাত-পাও ধোওয়া শুরু করছে; অইসোম তাগো কানে আহে যে, ভিটির দক্ষিণের ঢালে দুনিয়ার কাউয়ায় ডাকাডাকি শুরু করছে। তাগো বহুজোনের আনা-যানার আওয়াজও য্যান পাওয়া যায়! কী তাগো হুমধাম ডাকাডাকি, কী তাগো পইখ-পাখনা বাইড়ানের আওয়াজ! কাউয়াগো খাওন চক্ষে দেহে না জুলেখার মা আর মংলার মায়ে, কিন্তু কানে তো শোনে তাগো খুশি গলার হুমাহুমি!
তারা তখন বোঝে যে, যেইটা নিয়া তাগো দোনোজোনের চিন্তা আছিলো, সেইটা কাউয়ার পালেই সোন্দরমতোন সামলানি দিয়া দিতাছে! কাউয়ারাই খাইয়া-লইয়া ভোগের সকল চিহ্ণ নাই কইরা থুইতাছে!
এতো বোঝে অই অবোলা জাতে! কাউয়াগো বুঝদার কাজকারবার দুই মাতারির চক্ষে পানির ধারা ছোটাইয়া দেয়!
অই বিরাট কর্মটা ঠায়ঠিক মতোন শেষ হয়। তখন জুলেখার মায়ের নজর যায় অন্য ছোটো কর্মখানের দিকে।
সেইটারেও ভালারকমে সারতে হইবো! জুলেখার মায় বারেবারে কইতে থাকে।
‘ওইটা নি কোনো কাম! ওইটা কোনো কামই না,’ মংলার মায় বারেবার বিষয়টা উড়াইয়া দিতে থাকে। ‘বড়ো কাম সারা হইছে। আর চিন্তা কিয়ের!’
ছোটো ভোগখান কেমনে জানি দেওনের আদেশ আছে? কী কী জানি করতে হইবো!
না, তেমুন কোনো হুজ্জাতের কর্ম না অইটা। এইবার খালি তিনখান সাফ-সাফা কলার পাতে তিন ঢেলা আউক্ষা মিঠাই ভোগ দিতে হইবো!
আর এইটা তো দেওনও লাগবো গেরামের বাইরে; সেই ঠাকুরবাড়িতে। লোকের চক্ষের তলে পড়ার তো কোনো রাস্তাই নাই এইনে!
এইটাতে তো ঝামেলার কিচ্ছু নাই!
রান্ধন বাড়োনেরও কোনো হুজ্জাত নাই।
পরের দফার ভোগেরে মংলার মায় যতোই কি না হালকা চক্ষে দেখুক, জুলেখার মায়ের অন্তর কিন্তু অই ছোটো ভোগের বিষয়রে লঘু কইরা নিতে পারে না। তার মোনে হয় যে, এইটাই আসোল গুরুতর কর্ম।
সেই কারোনে সেয় সংক্রান্তির দিন পুরা বৈকাল ভইরা অতি যতনে তিন তিনটা কলার পাত কাটে। নিজ হাতে কাটে। নিজ হাতে ধুইয়া-পুইচ্ছা তাগো শুকনা খটখটা করে। চক্ষের আন্দাজ দিয়া দিয়া আউক্ষা মিঠাইয়ের চাক্কারে সমান মাপে তিন টুকরা কইরা, মাইট্টা পাইল্লার ভিতরে সোন্দর মতোন থোয়। সেয় এটি করে, আর মংলার মায় কারবার দেইক্ষা খটখটাইয়া হাসে।
ছোটো একটা কারবারে বইনে দেখো কেমুন হাত্তির লাহান বড়ো বানাইয়া তোলছে!
তার হাসি দেখতে দেখতে জুলেখার মায় আরো মোন দিয়া ভোগের মিঠাইরে গুছানি দেওয়া ধরে। মাইট্টা পাইল্লা ভিতরে মিঠাই থুইয়া, সেইটারে খালি সরা দিয়া ঢাইক্কাই জুলেখার মায় শান্তি পায় না। মোন খচরমচর করতে থাকে তার।
কওন যায় ইন্দুরের কিরতির কথা! ইন্দুরে যুদি রাইতে সরা ধাক্কা দিয়া ফালাইয়া দেয়! যুদি ইন্দুরে মিঠাইয়ে মোখ দিয়া মিঠাইরে খুঁতা বানাইয়া দেয়! তাইলে তো আর উপায় থাকবো না! এই চিন্তায় সেয় সরার উপরে দুইটা পিঁড়ি দিয়া থুইতেও ছাড়ে না।
রাইতটুক পোহাইলেই চৈত মাসের পয়লা দিন!
সকল কাম সারতে সারতে এই কথাটা যে কতোবার মাথায় আহে জুলেখার মাওয়ের! হাজার-বিজার বার আহে। যতোবার স্মরণে আসে, ততোবার সেয় মংলার মায়রে কথাখান কয়।
মংলার মায় শোনে শোনে, আর জুলেখার মায়ের অই কিরতি দেইক্ষা ভিতরে ভিতরে তিতা হইয়া যাইতে থাকে।
এতো পদের নাই-কাম নিয়া বুজিয়ে ক্যান ফাল পাড়তাছে! এইনে আসোল কাম হইলো কাউলকা সকালে বাসিমোখে গিয়া ঠিকঠাক মতোন ভোগটা দেওন। কিন্তু জুলেখার মায়ে পইড়া রইছে মিঠাই লইয়া! তামশা দেখো!
অখন এই যে—শুইতেই কত্তা রাইত করতাছে জুলেখার মায়! কেমনে তাইলে জাগনা পাইবো সেয় বিয়ান বিয়ান? মংলার মায় এই নিয়া এক-দুইবার জুলেখার মায়ের ওপরে ফোসানি দিয়া ওঠে। কিন্তু জুলেখার মায় কিছুই গেরাজ্জি করে না। খালি তার ইচ্ছা যাইতাছে ভোগের মিঠাইগিলি নাড়োন-চারোন দিতে। ইচ্ছা যাইতাছে মংলার মার লগে নানান কথা কইতে!
ক্যান জানি তার মোনে তারে বারবার কইতাছে যে, কাউয়ারা বিনা কারোণে আসে নাই। তারা কোনো একটা ভেদের খবর জানে। সেইটা জানাইতে আইয়াই তারা এট্টু ভোগ পাওনের আবদার ধরছে!
কোন বারতা আনছে অরা! কী সংবাদ আছে! জুলেখার মায়ের চক্ষের পানি শুকাইবো এইবার?
এমুন শত চিন্তায় জুলেখার মায়ের অন্তর তালাগাড়া খাইতে থাকে। তার মাথা-পেট তালাগাড়া খাইতে থাকে! কেমুন অশান্তি হইতে থাকে জুলেখার মাওয়ের।
তার লগে আইসা জোটে আরেক নাই-চিন্তা! সে শোনে যে, কে জানি তার কানে কানে বারবার কইতাছে—রাইতে ঘোমাইলেই জুলেখার মায়ের বিপদ হইবো!
কী বিপদ?
মহাবিপদ।
রাইতে যুদি সেয় ঘোমায়, তাইলে কাউলকা বিয়ানে কাউয়া-কুলি জাগোনের আগে তার ঘোম ভাঙবো না! কাউলকা বিয়ানে সেয় জাগনা পাওনের আগেই সুরুজ উইট্টা সারবো! সেয় ভোগ দেওনের ফুরসত পাইবো না! হায় রে হায়!
এমুন শতেক ডরে থাকা জুলেখার মায় কোনো প্রকারেই সেই রাতে চোক্ষের পাতা এক করতে পারে না। আর জুলেখার মায়রে নানা পদে ছটফটানি দিতে দেইক্ষা মংলার মায়ের চক্ষের পাতা বোজতে চায় না। দেখছো কেমুন জ্বালার জ্বালায় পড়ছে মাতারি দুইটায়!
শেষে কপালে মাইরা শেষ রাইতে উইট্টা পান খাইতে বয় তার দোনোজোনে। রাইত তো গেছেই গা প্রায়। তাইলে আর ঘোমানের লেইগা গুঁতাগুঁতি কইরা ফল কী! কিছমতে ঘোম নাই!
ঘরের বেড়ার ছিদ্রিমাদ্রি দিয়া বাইরের দুনিয়ার শেষ রাইতের আন্ধার জুলেখাগো ঘরে নানা রকমে ফুঁচকি মারতে থাকে। মাতারি দুইজোনে সেই আন্ধাররে তেমন আমলে আনে না। কতক্ষণ পরে, সেই আন্ধারে তার লগে পইখ-পাখালির নানা জাতের ডাকেরেও নিয়া আসে। আইসা নতুন কইরা ফুঁচকি দেয়।
‘অইত্তো দেহি কাউয়া-কুলি জাগনা দিছে বুজি!’ মংলার মায়ে কয়, ‘চৈত মাস আইলো আউজকা!’
চৈত মাসের পরথম দিন। আর এট্টু পর, আউজকার পইল্লা রইদের ঝাপোটখানও খালি পড়বো দুনিয়ায়; মংলার মায়রে নিয়া জুলেখার মায়ে মেলা দিবো ঠাকুরবাড়ির ঘাটলার দিগে। তার পরে যুদি রেহাই পায় এই দুই মাতারি।
সবই পরিষ্কার মোনে আছে, তাও ক্যান জানি খালি ধন্ধ লাগতে থাকে দোনোজোনের!
কিছু নি ভুল হইয়া গেলো! আর তো কিছু ফরমাইশ করে নাই কাউয়া সগলে! খালি মিঠাই-ই ভোগ দিতে কইছিলো; না লগে আরো কিছু দেওনের কথা আছিলো!
তরাতরি পাওয়ে ভোগের তিনখান কলাপাত নিয়া যাইতে যাইতে মাতারি দোনোজোনের অন্তরে দেখো অই একই চিন্তা জাগে। কিন্তু একজোনে যে আর তখন আরেকজোনরে কথাটা জিগায়, সেই কায়দা নাই। ভোগ দেওনের কালে কথা কওন পুরা নিষেধ।
কথা কইছো তো সব গুণ নষ্ট করছো। এতো কষ্টের মাহাত্তি কোন দুক্ষে ধ্বংস করবো তারা!
তাইলে অখন যা আছে কপালে। ভোগ দেওন শেষ করোন লাগবো বিধি মান্নি কইরা। কিছু ভুল হইয়া গিয়া থাকলেও আর শুধরানের রাস্তা নাই।
বকুল বিরিক্ষির গুঁড়ি যেমুন আজদাহা, তেমুন সেইটা গাতা-খন্দে ভরা। সেই গুঁড়িরে আধা ঘের দিয়া ভোগের পাত একে একে সিজিল মতোন রাখে জুলেখার মায়।
রাইক্ষা, মোনে মোনে কাউয়াপক্ষীরে একটা ডাক দেয় সেয়, ‘কাউয়াসগলরে! আহো!’
জুলেখার মায়ের লগে লগে কাউয়া সগলরে ডাক পাড়তে থাকে ঠাকুরবাড়ির পুষ্কুনীর পানি, পাড়ের মাটি, বকুল বিরিক্ষি, বিরিক্ষির পাতারা। তারা কাউয়াগো ডাক দেয় একবার, আরেকবার জুলেখার মায়েরে অন্য আরেকটা কী জানি কথা কইতে থাকে। বারবার কইতে থাকে।
কিন্তু ভোগ দেওনের বিধি-নিয়ম পালনি করা নিয়া জুলেখার মায় এমুন বেতালা-বয়রা হইয়া থাকে যে, সেইসব কথা তার কানে যায় না। কিছুই কানে যায় না।
বয়রা ভোন্দা মাতারি নানা নিয়ম ধইরা ধইরা ভোগের পাতা বিছায়। সেইটা শেষ কইরা সেয় ওঠে। উইট্টা ঝট কইরা একটা ঘুরান দিয়া সোজা বাড়ির দিগে হাঁটা দেয়। কোনো কারোণেই তার আর পিছে চাওয়া চলবো না। নিয়ম নাই।
দেখো, এই ত্তো চৈত মাইস্যা পরথম দিনের বিয়ানবেলা! রইদ না খালি উঠলো! সেই রইদে দেখো এই এট্টুক সময়ের মিদেই কেমুন তুক্ষার চড়চড়া হইয়া ওঠছে! শইল্লে আইয়া বিন্ধা শুরু করছে অখনই!
জুলেখার মায়ের মোন তারে এই কথা কইতে থাকে, আর তরাতরি কদমে আগ্গানির দেওনের লেইগা জোর ঠেলা দিতে থাকে। করছে তো সেয় হুকুম-মাফিক কাম। কাউয়ারা যেমনে চাইছে, তেমনেই সব করছে জুলেখার মায়। তার কপাল ভালা। মংলার মায়রে লগে পাইছে!
অখন কাউয়ারাই জানে, ক্যান তারা এইসগল করাইলো গরিব মাতারিটারে দিয়া! তাতে অখন কী ফল ফলবো, কে কইতে পারে! কী জানি কী আছে কাউয়াসগলের মোনে!
ঠাকুরবাড়ির ঘাটলার তেনে দেওভোগ গেরামে যাওনের রাস্তাটা—এই এক চিলতা! কোনোরকম এট্টু এক চিল পথ—তার দোনোপাশে হাজারে-বিজারে গাছগরান, ঝোপড়া-ঝাপড়ি। সেইসকল গাছগরানে পথটুকরে ঠাইস্সা চিপা দিয়া রাখছে। একলগে দুইজোন মাইনষে সেই পথ দিয়া চলে এমুন উপায় নাই। চলতে হয় আগ-পাছ কইরা। সেই হিসাবে চলতে গিয়া মংলার মায়েরে আগে যাইতে দিছে জুলেখার মায়। পিছে পিছে চলতাছে সেয়।
এই ত্তো ঠাকুরবাড়ির ভাঙ্গা ঘাটলাটা ছাইড়া গেলেই পাওয়ে-হাঁটা রাস্তাখান সেঁধাইয়া যাইবো নানা জাতের গাছের জঙ্গলের ভিতরে। বড়োই থিকথিকা ঘন সেই জঙ্গল। আট্টু আগ্গাইলেই সেই জঙ্গলের আউইলে ঢাকা পইড়া যাইবো পুষ্কুনীর পাড়, ঘাটলা, বকুল বিরিক্ষিটায়। তখন আর নিজের ঘাড়টারে এমুন সোজা কইরা থুইয়া, একটা কাঠের পুতলার মতোন হাঁটা দেওনের ঠেকাটা থাকবো না জুলেখার মায়ের। মংলার মায়ও তার মাথাটা এট্টু এদিগ-ওদিগ লাড়াইতে পারবো।
এই চিন্তাখান অন্তরে নিয়া সোন্দরমতোন সিধা হাঁটা দিতাছিলো জুলেখার মায়। তার হাতের বাওয়ে আছে পুষ্কুনীর ঘাটলাটা। আউজকা তার লগে জুলেখার মায়ের কোনো দরকার নাই! ভোগ দেওনের পরের বিধি মোতাবেক অখন জুলেখার মায় ডাইনে বায়ে, উপরে নিচে—কোনোদিগেই চাওন দিবো না। নিষেধ।
অই সময়ে কোনোদিগে নজর দেওন যে নিষেধ—সেইটা জাইন্নাও দেখো জুলেখার মায়ের বাম চক্ষে কেমুন এক সীমাছাড়া বেত্তমিজি কারবার করে! কতো বড়ো সাহোস হারামজাদা চক্ষের! তার থাকার কথা সোজা সামোনের দিগে চাওন দিয়া। তা না কইরা সেইটায় করে কী, ফুচ্চুত কইরা এট্টু তেছরা হইয়া বাও দিগে চাইয়া ফালায়।
বাও দিগে তো ঘাটলাটা। তার সিঁড়ির পরে সিঁড়ি নাইম্মা গেছে পুষ্কুনীর কোন অতলে!
জুলেখার মায়ের বাম চোখটায় ঘাটলাটার দিগে এট্টুখানিই চায়, কিন্তু সেইখানের সবকিছু এক ঝটকায় দেইক্ষা লইতে ছাড়ে না পিছামারা চক্ষে!
দিলি তো একঝলক তেছরা এট্টু নজর! কিন্তু তুই তার বাদে কোন কারোণে অমুন থরথরাইয়া, ছমছমাইয়া কঁকানি দেওয়া ধরলি! আর সেইটা কি সোজা-সিধা থরথরানি! তার ধাক্কায় জুলেখার মায়ে পুরা তবদা খাইয়া যায়। আর একটা কদম তরি দেওনের দিশা থাকে না তার।
ইয়া মাবুদ! মাবুদ গো! কী দেখছে এইটা জুলেখার মাওয়ের বাম চক্ষুয়ে! কী দেখছে!
দেখছে এক অশৈলী জিনিস!
জুলেখার মায়ের বাও চক্ষে দেখে কী—অই ত্তো ঘাটলার সিঁড়িগিলি! সেই সিঁড়ির একেবারে নামারটায়, পানির একদম লগের সিঁড়িটায় না—কারে জানি দেহা যায়! কেটায় জানি অইনে লেট দিয়া বইয়া রইছে!
পষ্ট দেখা যাইতাছে, অইনে বইয়া রইছে একটা মাতারি।
(চলবে)