রম্য
জিন্দা লাশ : The Silence
বাংলা ছবি যাঁরা দেখেন তাঁরা আসলে দুটো ছবি দেখেন একসঙ্গে।
কী, অবাক হচ্ছেন?
অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিষয়টা আমার-আপনার অজান্তে ঘটে বলে ধরতে পারছেন না।
একটু খেয়াল করলে দেখবেন প্রতিটি বাংলা ছবির কিন্তু একটি ইংরেজি নামও থাকে। এবং মজার বিষয় হচ্ছে ছবির বাংলা নামের সঙ্গে ইংরেজি নামের কোনো মিল নেই।
উদহারণসহ বললে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে।
ছবির নাম ‘তোকে ভালোবাসতেই হবে’।
ইংরেজি নাম By force Love
ছবির নাম ‘অন্তরে ঝড়’
ইংরেজি নাম A Man With Six Lady
বাংলা নাম ‘ভালোবাসা দিবি কিনা বল’
ইংরেজি নাম Love Me or Kill Me
বাংলা নাম ‘প্রেম করেছি বেশ করেছি’
ইংরেজি নাম Love At First Sight
বাংলা নাম ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’
ইংরেজি নাম LPPM
এবং ছবির নাম ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’
ইংরেজি নাম What Is Love
এ রকম অসংখ্য। উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। কারণ প্রায় প্রতিটি বাংলা ছবির একটি করে ইংরেজি নাম আছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইংরেজি নামের সাথে বাংলা নামের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেক সময় সম্পর্ক তো দূরে থাক ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতাও খুঁজে পাওয়া যায় না।
তার মানে কী দাঁড়াল?
বাংলা ছবি দেখতে গিয়ে আপনি আসলে একসঙ্গে দুটি ছবি দেখছেন। এক টিকিটে দুই ছবি।
না, না। এটাকে আবার ইংরেজি করতে যাবেন না। মানে ইংরেজি ছবি করতে যাবেন না।আমরা বাংলা ছবি নিয়ে কথা বলছি।
ছবির জগত থেকে এবার বাস্তবে ফেরা যাক।
আমাদের এক বড় ভাই আছেন। মজিদ ভাই।
না। তিনি বাংলা ছবির সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ নন। তবে বাংলা ছবির ইংরেজি নামের মতো তার এক ধরনের ইংরেজি প্রীতি আছে। সেটা অবশ্য ইদানীংকালের আরজেদের মতোও বাংলিশ না। বিষয়টা আসলে মজিদ ভাইয়ের মতো।
মজিদ ভাই আসলে দুটো ভাষায় কথা বলেন। এক লাইন বাংলায় বলেন তো পরের লাইন বলেন ইংরেজিতে। এবং সেই ইংরেজি আমাদের বাংলা সিনেমার ইংরেজির মতো। আগের বাংলা লাইনের সাথে মিল বা ধারাবাহিকতা না থাকার সম্ভাবনাই বেশি।বাংলা ছবির উদাহরণ যেহেতু দেওয়া হয়েছে। মজিদ ভাইয়ের উদাহরণও প্রাসঙ্গিক।
বসের রুম থেকে মুখ কালো করে মজিদ ভাই বের হলেন।
আমরা তাঁকে ঘিরে ধরে জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে মজিদ ভাই?
মজিদ ভাই আমাদের সবার দিকে একবার তাকালেন। মুখটাকে আরো একটু মলিন করে খুললেন।এমডি সাহেব তো আমারে যা তা বললেন। I am bossless.
ম্যানেজার সাহেব আমার পক্ষে কিছুই বললেন না। Sad but true.
মজিদ ভাইয়ের কথা শুনে আমাদের হাসি আসে। কিন্তু মুখ চেপে ধরি।
বিষয়টা মজিদ ভাইয়ের নজর এড়ায় না।
তোরা হাসতাছস! Oh no baby.
প্রথম লাইন বাংলা আর পরের লাইন ইংরেজি- এভাবেই কথা বলেন আমাদের মজিদ ভাই। পরপর দুই লাইন বাংলা কিংবা দুই লাইন ইংরেজি তিনি বলেন না কিংবা বলতে পারেন না। মজিদ ভাইয়ের কাছের লোক মানে আমরা সবাইকে গর্ব করে বলি, আমাদের মজিদ ভাই একসঙ্গে দুটো ভাষায় কথা বলেন।
তো আমাদের সেই মজিদ ভাইকে একদিন অফিস ক্যান্টিনে ঝিম মেরে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে গেলাম।
কী হয়েছে মজিদ ভাই? হোয়াট হ্যাপেন্ড? মন খারাপ নাকি?
মজিদ ভাই মাথা তুলে তাকান। তারপর বড় করে একবার শ্বাস নেন। দমটা কিছুক্ষণ আটকে রেখে ছেড়ে দেন।
শ্বাস ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে মজিদ ভাইয়ের গাল দুটো একটু ঝুলে পড়ে।
তিনি ওপর থেকে নিচে একবার মাথা ঝাঁকান।
আমি জিন্দা লাশ হয়ে গেছি। The Silence.
মাথাটা আবার নিচু করে মজিদ ভাই সত্যি সত্যি সাইলেন্স হয়ে গেলেন।
তাকে কথা বলানোর নানা চেষ্টা করলাম। কাজ হলো না।
ভাইব্রেশন মোডে আনার চেষ্টা করলাম। তাতেও ব্যর্থ।
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মজিদ ভাই জিন্দা লাশ, দ্য সাইলেন্স হয়ে থাকলেন।
জিন্দা লাশ : The Silence. নামে কোনো কালে কোনো বাংলা ছবি হয়েছে কি না সে তথ্য এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। না হয়ে থাকলে নিশ্চয়ই সামনে হবে।
তবে ছবি হোক বা না হোক আমাদের চারপাশে কিন্তু জিন্দা লাশ প্রকৃতির কিছু মানুষ আছে। যারা থেকেও নেই।
এই জিন্দা লাশ আবার দুই ধরনের।
স্বেচ্ছায়।
আর বাধ্যতামূলক।
যারা স্বভাবগতভাবে জিন্দা লাশ তারা স্বেচ্ছা শ্রেণীর। তাদের অস্তিত্ব কোনো ধরনের গুরুত্ব বহন করে না। তারা থাকাও যা না থাকাও তা।
আর বাধ্যতামূলকভাবে যারা এই শ্রেণীর তারা তো বাধ্য হয়েই তাই। তাদের অস্তিত্ব অনেক সময় হুমকি বা ঝুঁকির কারণ হয় বলে তাদের জিন্দা লাশ হয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত যা বলবৎ থাকে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আমাদের মজিদ ভাই। বাধ্যতামূলক জিন্দা লাশ।
নীরবতা সবার কাম্য।
কিন্তু তাই বলে কবরের নীরবতা নয়।