‘নামকরণ’
হঠাৎ একদিন একজন এসে বলল, ভাই রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করব। ফ্যান্টাসটিক একটা নাম দেন তো।
আমি বললাম, তাহলে নাম দেন ‘ফ্যান্টাসিক ফাইভ’।
মানে! এইটা তো বিএনপির সাবেক পাঁচ মহিলা এমপির নাম। এই নাম কেন!
হুমম। পাঁচ এমপির নাম তো কী হয়েছে। এটা তো ভালো। নামটা এরই মধ্যে পরিচিতি পেয়েছে। সেটা আপনি কাজে লাগাতে পারবেন। ব্যবসা শুরুর আগেই অর্ধেক পরিচিতি পেয়ে যাবেন। মিছিল দিয়ে কাস্টমার চলে আসবে।
কিন্তু আমার রেস্টুরেন্টের নাম ‘ফ্যান্টাসিক ফাইভ’ রাখব কোন যুক্তিতে? যুক্তিটা কি?
যুক্তি আছে। আপনার রেস্টুরেন্টে সব সময় পাঁচটি আইটেম পাওয়া যাবে। পাঁচটার বেশিও না, কমও না। ফ্যান্টাসটিক পাঁচটি রেসিপি। সেখান থেকে ‘ফ্যান্টাসিক ফাইভ’।
মাত্র পাঁচ আইটেম! শুরুর আগেই ব্যবসা লাটে উঠব। বাঙালি হইল ভোজনরসিক। টেবিলে আট-দশ পদ না দেখলে তাদের মুখ-ই ‘হা’ হয় না। মাত্র পাঁচ পদে চলবে না।
আহা। পাঁচ পদ মানে সারা বছর তো আর একই রকম পাঁচ পদ থাকবে না। প্রতিদিন নতুন নতুন পাঁচ পদ। তা ছাড়া এখন মানুষজন সচেতন হচ্ছে। পরিমিত আহার ব্যাপারটা লাইফস্টাইলে ঢুকে যাচ্ছে। আইডিয়াটা খাবে।
না ভাই। এই নাম চলবে না। সমস্যা আরো আছে।
আবার কী সমস্যা!
‘ফ্যান্টাসিক ফাইভ’ নাম দিলে লোকে ভাববে বিএনপির ওই পাঁচ নেত্রী এই রেস্টুরেন্টের মালিক। আমারে কেউ গুনবে না।
গোনাগুনির বিষয় আসছে কেন! আপনি তো ব্যাংক খুলছেন না। আপনি খুলছেন রেস্টুরেন্ট। আপনার টাকা আসলেই হলো।
সমস্যা আরো দুইটা আছে।
আরো দুইটা সমস্যা!
হুমম। ব্যবসার মধ্যে পলিটিকস ঢুকলে ব্যবসা শেষ, সঙ্গে জানও শেষ।
আহ হা। এখানে আবার পলিটিকস এলো কোত্থেকে। আমাদের এই এক প্রবলেম। সবকিছুর মধ্যে রাজনীতিকে টেনে আনি।
আমি আনলাম কোথায়! আনলেন তো আপনি।
আমি হবু রেস্টুরেন্ট মালিকের দিকে তাকাই।
‘ফ্যান্টাসিক ফাইভ’ নাম রাখলে অনেকে ভাবব এইটা বিএনপির ওই পাঁচ নেত্রীর দোকান। সেইটা না ভাবলেও অন্তত এইটা ভাবব যে, এই হোটেলের মালিক বিএনপির সাপোর্টার। সমস্যাটা এখানেই তৈরি হবে। বিএনপির আতি-পাতি নেতারা আইব ফ্রি খাওয়ার জন্য। খাইব কিন্তু বিল দিব না। দিলেও দিব কম। বাকি লেইখা রাখতে বলব। সেই বাকি জীবনেও শোধ হইব না।
আচ্ছা। একটা সমস্যা না হয় বুঝলাম। আরেকটা সমস্যা কি?
এইবার নদীর উল্টা পাড়ে যান। নদীর এই পাড়ে বিএনপি থাকলে ওই পাড়ে আছে আওয়ামী লীগ। তাদের চোখের সামনে বিএনপির ‘ফ্যান্টাসিক ফাইভ’ নামে দোকান হবে আর তারা বসে থাকবে? ভাবলেন কীভাবে! তারাও আসবে।
আসুক না। আসলে খাইয়ে দেবেন। কত আর খাবে।
তারা তো খাইতে আসবে না। তারা আসবে চাইতে। কয়দিন পরপরই চাঁদা। না ভাই, এই নাম চলবে না। অন্য নাম বলেন।
আমি আবার গালে হাত দেই। কিছুক্ষণ ভাবার চেষ্ট করি।
আচ্ছা, তাহলে কী ধরনের রেস্টুরেন্ট করতে চান আপনি?
একটু ডিফরেন্ট টাইপ রেস্টুরেন্ট হবে। ডিফরেন্ট টাইপ খাবার-দাবার থাকবে। ডিফরেন্ট পরিবেশ। সেজন্যই একটা ডিফরেন্ট নাম দরকার।
পাইছি।
কী?
হবু রেস্টুরেন্ট মালিক আমার দিকে এগিয়ে আসে।
নাম রাখেন ‘উষ্টা’
‘উষ্টা’!!! কী কন?
হুমম। ‘উস্টা’ নাম হিসেবে ডিফরেন্ট। খাবার হিসেবেও।
‘উষ্টা’ নামে রেস্টুরেন্ট শেষ পর্যন্ত হয়নি। তবে নামটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে বেশ দ্রুত। ‘উষ্টা’ নামে কোনো রেস্টুরেন্ট বাস্তবে না থাকলে এর একটি বায়বীয় অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়।
তো ‘উষ্টা’ রেস্টুরেন্টের প্রায় সফল নামকরণের পর আমার বাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠে। অনেকেই আসে নুতন নামের জন্য। নবাগত সন্তানের নামকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে নাম চেয়ে রেখেছেন কয়েকজন।
ভাইজান, উৎপাদনমুখী রাজনীতি শুরু করছি আমি আর আমার বউ। দোয়া রাইখেন। সঙ্গে দুইখান নামও।
দুইখান ক্যান। দুইটা নাম রাখবা নাকি?
আরে না। ছেলে হইব না মেয়ে সেটা তো জানি না।
একপর্যায়ে তো জানবা। তখন আমারে জানাইও। দুইটা নামের লোড নিতে পারব না।
কদিন আগে একজনের ফোন।
ভাইয়া, ফাজলামি না। সিরিয়াস।
আমি বললাম, অবশ্যই সিরিয়াস। গলা খাকারি দিয়ে সিরিয়াস ব্যাপারটা বোঝানোর চেষ্টা করি।
আমার ছোট মামা একটা বুক শপ করবে। সিরিয়াস টাইপ নাম দরকার। আপনি তো জানেন বইয়ের শপ আমাদের এখানে এখন একদম রেয়ার।
নাম তো তুমিই ঠিক করে ফেলেছো।
মানে?
বুক শপের নাম দিতে পারো ‘রেয়ার’।
নাম পছন্দ হলো কি হলো না সেটা, শেয়ার না করেই ফোন রেখে দেয় সে।
সর্বশেষ যিনি এসেছেন তিনি প্রথমজনের মতো। তারও রেস্টুরেন্ট কেস।
তবে নতুনজনের রেস্টুরেন্ট অবশ্য ডিফরেন্ট টাইপ না। সাধারণ বাংলা টাইপ খাবারের দোকান।
নাম চাই।
ভাই বাংলা নাম দেবেন। আর নামের মধ্যে একটু দরদ মিশাইয়া দিয়েন। খাবার-দাবারের মধ্যে দরদ না থাকলে জমে না।
বললাম, এখন তো দরদ আসতেছে না। দুদিন পরে আসো।
দুদিন ভেবে নাম প্রস্তাব করলাম, ‘চেটে খাই’।
রেস্টুরেন্টের নামে এর চেয়ে বেশি দরদ কেউ মিশাতে পারবে না। চ্যালেঞ্জ।