‘রিজওয়ান’ নাটকের নাটুকেপনা ও বক্তব্য
১
ঢাকায় গত এক যুগে কোনো মঞ্চনাটক নিয়ে নগরবাসী মাতামাতি করেছে তেমন নজির নেই, এই এক ‘রিজওয়ান’ ছাড়া। লোকে উচ্চমূল্যে টিকিট কিনেছে তো বটেই, উপরন্তু অগ্রিম বুকিংও দিয়ে রেখেছে। টানা উনিশবার মঞ্চস্থ হয়েছে নাটকটি, ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ সেপ্টেম্বর। তরুণ ভারতীয় নাট্যকার অভিষেক মজুমদার এই নাটকটি লিখেছেন, কাশ্মীরি বংশদ্ভূত মার্কিন কবি আগা শাহিদ আলীর কাব্যগ্রন্থ ‘দ্য কান্ট্রি উইদাউট আ পোস্ট অফিস’ অবলম্বনে। এই নাটকটি বাংলায় ভাষান্তর করেছেন ঋদ্ধিবেশ ভট্টাচার্য। আর মঞ্চ, আলোক পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ।
নাটকের কাহিনী যদি অতি সংক্ষেপে সারি তো বলা যায়, নব্বইয়ের দশকে কাশ্মীরের জনগণ ভারতীয় সেনাবাহিনীর দমনপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল, তখন সেনাবাহিনীও উল্টো তাদের ওপর বর্বরোচিত হামলা ও নির্যাতন চালায়। সামরিক এই চরিত্র মুক্তিযুদ্ধ করা বাংলাদেশের অচেনা নয়। যাই হোক, সেই ১৯৯০ সালের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় কাশ্মীরে একটি মেয়ে, নাম ফাতিমা, সেনাসদস্যদের দ্বারা ধর্ষিত ও খুন হয়। তারই ছোট ভাই রিজওয়ান। ঘরবাড়ি দখল ও লুটতরাজের ফাঁকে সেনাবাহিনী রিজওয়ানের মা ও দাদাকেও কতল করে। বেঁচে থাকে এক রিজওয়ান। সে লাশগুলো ঝিলে ফেলতে গিয়ে ধরা পড়ে সেনাবাহিনীর কাছে, পরে সেও মারা যায়। তো ঐ সময় কাশ্মীরে সাত মাস ডাকঘরের কার্যক্রম স্থগিত ছিল। কিছু চিঠি আগেই এসে পড়েছিল, কিন্তু সেগুলো বিলি করার কেউ নেই। প্রায় সকলেই জুলুম নির্যাতনে হয় মারা গেছে, নয় তো পালিয়ে গেছে অন্যত্র। আক্ষরিক অর্থেই এক ভুতুড়ে জায়গা হয়ে উঠেছিল পৃথিবীর জান্নাত খ্যাত কাশ্মীর। আর সেখানে প্রিয়জনদের হারিয়ে রিজওয়ান—যার অর্থ জান্নাতের পাহারাদার—একা লাশ বইতে বইতে সেও একদিন সেনাবাহিনীর হাতে খুন হয়ে যায়। ডাকঘর কার্যকর নেই মানে পুরো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন, পৃথিবীর সকল স্বাভাবিক ঘটনার সেখানে প্রবেশ নিষেধ। এক পৈশাচিক শক্তি যেন তছনছ করে দিচ্ছিলো সেসময়কার কাশ্মীরকে। বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছিল গোটা দুনিয়ার কাছ থেকে। এমনই এক কাহিনী নিয়ে তৈরি হয়েছে নাটবাঙলা প্রযোজিত প্রথম মঞ্চনাটক ‘রিজওয়ান’।
২
‘এই দুনিয়ায় যদি কোনো জান্নাত থেকে থাকে, তবে সে জান্নাত এই মাটিতে, এই মাটিতে, এই মাটিতে’ এমন সংলাপ ঘুরেফিরে নাটকে এসেছে। নাটবাঙলার প্রচারপত্রে বলা হচ্ছে, নাটকের মূল চরিত্র রিজওয়ানের এই সংলাপই ‘বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতিতে আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গীকার।’ কথাটি একটু ঘোলাটে ঠেকলেও প্রচারপত্রের আরো কিছু কথা বললেই পরিষ্কার হবে, আসলে কি বলতে চাইছে বাংলাদেশের ‘রিজওয়ান’ তথা নাটবাঙলা। তারা বলছে, ধর্মীয়-সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন, যুদ্ধ ও সন্ত্রাস-মানবতাবিরোধী বিচিত্র নির্মমতার শিকার ঘর ও পরিবারহীন মানুষের জীবন ও সংগ্রামের কথা ‘রিজওয়ানে’র আখ্যানভাষ্য। নাটকটির আখ্যানভাষ্য আমলে নিয়ে ধরে নিলাম জান্নাত অর্থাৎ স্বর্গ এই মাটিতে, তো এই সংলাপ বা আপ্তবাক্যে যে কথা বলা হলো, সেটা দিয়ে আদৌ কি আগ্রাসন, যুদ্ধ ও নির্মমতাকে ঠেকানো যাবে? বা এসব ঠেকনোর জন্য কি এ ধরনের মন্ত্র সাংস্কৃতিক অঙ্গীকার হতে পারে? পশ্চিমা দেশগুলো, যারা আগ্রাসন চালাচ্ছে, তারাই তো বলছে, জান্নাত বাবা এই পৃথিবীতেই, কাজেই যা পারো লুটেপুটে নাও এখনই। স্বর্গ কোথায়, আকাশে না মানুষের ভাষায়, সেই তর্ক বহু আগেই নিষ্পত্তি হয়েছে, কাজেই স্বর্গ নিয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ না হয়ে ভিন্ন কিছু নিয়ে ভাবা যেত বরং। নাট্যকারই সেটা ভালো বলতে পারবেন। তবে আমরা এতটুকু বলতে পারি, ধর্ম সংক্রান্ত স্বর্গ-মর্ত্য ভাবনাকে উপেক্ষা না করে মানুষকে মানবিক শিক্ষায় দীক্ষিত করা অতি জরুরি। আবারো বলছি, বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে ‘জান্নাত এই মাটিতেই’ এমন কথা সাংস্কৃতিক অঙ্গীকার কি করে সম্ভব তা সত্যিই বোধগম্য নয়।
নাটকের আরেকটি সংলাপ, যা একাধিকবার এসেছে, ‘মানুষ যখন মরে যায় তখন কেবল দেহটাই শেষ হয়, কিন্তু বেঁচে থাকলে অন্য কিছু হওয়া যায়’, এই সংলাপটিও বলবো বড্ড দুর্বল, আগেরটির মতোই। ভাষান্তর যিনি করেছেন তাকে দুষে আর কি করবো, সেটা ভাষান্তরই মনে হয়েছে। আমরা তো জানি, প্রত্যেক অনুবাদই আসলে নতুন কিছু হয়। এখানে নতুন কিছু হয়নি। আর নাটকটি যিনি লিখেছেন অভিষেক মজুমদার, তাঁর জন্য বলতে পারি, এর থেকে হাজার গুণ ভালো সংলাপ আমাদের আধুনিক বাংলা নাটকে আছে। মানুষ যখন মরে তখন দেহটাই শেষ হয়, আর জীবিত থাকলে অন্যকিছু হওয়া যায়, মানে সে বিপ্লবী হতে পারে। আবার চোর বাটপারও তো হতে পারে। এমনকি সেনাবাহিনীর সদস্য হওয়াটাই বা বাদ যায় কেন? কাজেই এমন ধরনের স্বস্তা দার্শনিকতা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ ও বাকোয়াজে পরিণত হয়।
যেহেতু এই দুটি সংলাপ বহুবার উচ্চারিত হয় নাটকে, তাই বলা যায় রিজওয়ানের বড় বিজ্ঞাপন এই দুটি সংলাপই। বাকি সংলাপের অবস্থা আরো খারাপ। নাটক সংলাপহীন হতে পারে। মূকাভিনয়ের মাধ্যমে। ‘রিজওয়ানে’ মূকাভিনয় ছিল না। ছিল একেবারেই ছাড়া-ছাড়া, মন না ছুঁয়ে যাওয়া কিছু কথাবার্তা। তো মঞ্চনাটক কি শুধু সংলাপ দিয়ে হয়? অভিনয়টা লাগে। এই নাটকে অভিনয় কম, কসরৎটাই বেশি চোখে পড়ে। নাট্যনির্দেশক হয়তো বলবেন, এখানে তাঁরা রুশ নাট্যকার সেভোলদ মিয়ারহইকে (Vsevolod Meyerhold) আদর্শ ধরেছেন। অভিনয়কলা ও উপস্থাপনে এই মিয়ারহই বললেন, নাটক হবে নাটুকে অর্থাৎ ‘Theatre Theatrical’, যেখানে অদৃশ্য চতুর্থ দেয়াল (প্রোসেনিয়াম আর্চের দেয়াল) থাকবে না। স্তানিস্লাভস্কির বাস্তববাদী উপস্থাপন থেকে বেরিয়ে মিয়ারহই এমন নাটক হাজির করতে চাইলেন দর্শকের সামনে যেখানে কোন রাখঢাক ব্যাপার থাকবে না। সোজা কথা পর্দা থাকবে না। সেট নির্মাণ হবে কাঠ, কাচ ও নানারকম ধাতব জিনিসপত্র দিয়ে। এমন সেট কনস্ট্রাকটিভিস্ট সেট নামেই পরিচিত। সেটের ওপর শারীরিক কসরৎটাকেই বেশি জোর দেন মিয়ারহই। মেথড অ্যাক্টিং নয়, শারীরিক ক্রিয়াকলাপ দিয়ে নাটক করাটাই মুখ্য মিয়ারহইয়ের কাছে, একে বলে ‘বায়োমেকানিকস’। এর পক্ষে মত দিতে গিয়ে তখন বলা হলো, কৃত্রিমতা নিয়েই তো মঞ্চনাটক, আর সেটা তো অভিনয় শিল্পী বা দর্শকের অজানা নয়। কাজেই অঙ্গের সঞ্চালনই মূলত দর্শককে মুগ্ধ করবে। নাটকে এতে যোগ হয় নাটুকেপনা। যদিও গত শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের পর থেকে নাটকের এই নাটুকেপনা ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যায়।
এই শতাব্দীতে এসে ‘রিজওয়ান’ নাটকে নতুন করে আমরা দেখি সেই মিয়ারহই প্রভাবিত শরীরি সক্ষমতার প্রদর্শনী। তাই তো রিজওয়ান কখনো দড়িতে উল্টো ঝুলে নামছে তো কখনো উঠছে, উপরে উঠে হাত ছেড়ে দিয়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে, সতীর্থরা লাফিয়ে তাকে ধরছে, ফাতিমা ঝুলন্ত ট্রলিতে করে শূন্যে ভাসছে, মই বেয়ে ওঠানামা অনবরত চলছে, নাটকের অন্য চরিত্ররা দর্শকের মাথার উপর হাঁটাচলা করছে, কমান্ডো স্টাইলে মাটিতে নেমে আসছে, দর্শক-আসনের নিচ দিয়ে ধুপধাপ দৌড় দিচ্ছে। কখনো আবার মাটিতেই ডিগবাজি খাচ্ছে। তো এসব তারা যে সেটে করেছে সেটা ওই মিয়ারহইয়ের কনস্ট্রাকটিভিস্ট সেটের অনুকরণেই তৈরি করা। কাঠের সিঁড়ি, যে দুটি ট্রলিতে রিজওয়ান ও ফাতিমা শূন্যে আসা যাওয়া করে সেটার পাটাতন কাঁচের, দর্শকের মাথার ওপর ধাতব মাচা। সেখান থেকে দড়ি ও বাঁশের সিঁড়ি। সেটে প্রায় সব উপাদানই ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া দর্শকের বসার স্থান বাদ দিয়ে প্রায় সবটুকু জায়গাই ব্যবহার করেছেন নির্দেশক।
অনেকটা সার্কাসের প্যান্ডেলের মতো সাজানো সেট ও নিজেদের প্রপস সামলে দুর্বল সংলাপ যখন ছুড়ে দিচ্ছিল অভিনেতারা তখন তাদের বড্ড ক্লান্ত লাগছিল। একে তো এদের অধিকাংশকেই নবীন ও তরুণ মনে হয়েছে, মানে অপরিপক্ব অভিনয়শিল্পী, তার ওপর আবার দৌড়ঝাঁপ, লাফালাফি, উপর-নিচ, গড়াগড়ি, সেটের প্রপস ঠিকঠাকভাবে মেইনটেইন করতে গিয়ে হাপিয়েই উঠছিল যেন অভিনয় শিল্পীরা।
৩
গোটা নাটকে আমার কাছে একটি দৃশ্য বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। সেটি হলো দাদাজানের মৃত্যুর দৃশ্যটি। সেই দৃশ্যে দেখা যায় একই পোশাক ও সজ্জায় তিনজন, তিন দাদাজান, মানে দাদাজান তিনভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। তাদের সামনে তিনটি সিঁড়ি। তারা বলছে, আপনি, আমি ও তুমি। সাবজেক্টকে যে স্প্লিট করে দেখানো, বিভাজিত দেখানো, সেটা অসাধারণ লেগেছে। একারণে যে সাবজেক্ট বা বাংলা করলে বলা যায় ‘সহজ মানুষ’ যে বিভক্ত, যেটা ফরাসি ভাবুক জাক লাকাঁ একটি দাগ টানা এস ($) দিয়ে বুঝিয়েছেন, সেটারই এক নান্দনিক উপস্থাপন মনে হয়েছে আমার কাছে। রেনে দেকার্তের সেই কথা—আমি চিন্তা করি সেজন্যই আমি— এর বিপরীতে গিয়ে লাকাঁ যে বলছেন, আসলে এই আমি যে অখণ্ড আমি নই, আমি চিন্তা করতে পারি বলেই যে আমি আর আমি থাকি না, আমি অনেক, খণ্ডিত হয়ে পড়ি, সেই ভাবনাটাই যেন ‘রিজওয়ান’ নাটকের ছোট্ট ওই দৃশ্যে ধরা দিয়েছে, কালো ঘুটঘুটে রাত্তিরে হঠাৎ বিদ্যুতের ঝলকানিতে হঠাৎ করে যেমন বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ দেখা যায়, তেমন করে।
নাটকে ধর্ষণের দৃশ্যটি যেভাবে দৃশ্যায়িত করা হয়েছে সেটিকে বালখিল্য বলেই মনে হয়েছে। তিনটি মেয়ে মাটিতে চার হাতপায়ে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে, যেন তিনটি পশু, আর একজন সেনা তাদের পা ও হাতের ফাঁক দিয়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিজেকে চালান করে দেয় বুকে ভর দিয়ে। এই দৃশ্যটি দুবার করা হয়। আবার ধর্ষণের পর সেনাসদস্যের পর্যুদস্ত অবস্থা বুঝাতে হাঁটু মুড়ে বসে থাকা ধর্ষকের ওপর দিয়ে মেয়ে তিনটি দুবার করে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যায়। আমার কাছে মনে হয়েছে ধর্ষণের ভয়াবহতাকে এসব দৃশ্যায়নের মধ্য দিয়ে হাস্যকর করা হয়েছে।
আরেকটি কথা না বললেই নয়, সেটি হলো নাটকের সংলাপে চাকমা ভাষার ব্যবহার। নাটকের দুই তিন জায়গায় ব্যবহার হয়েছে চাকমা ভাষা। এরমধ্য দিয়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনকে একটি বৈশ্বিক রূপ দেওয়ার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। তবে সেটি অনেক সচেতন হলেই দর্শকের কাছে ধরা পড়বে, নয় তো নয়। কাশ্মীর থেকে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল পর্যন্ত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর যে অন্যায় হয়েছে, হচ্ছে, সেটাকে ধরার চেষ্টাকে আমি সাধুবাদ জানাই। নাটকের এই স্পিরিটের সঙ্গে আমি একাত্মবোধ করি। তবে কি, নাটকের সংলাপে বরফ ঢাকা পাহাড়, ঝিল, ঠান্ডা আবহাওয়ার কথা এতবার এসেছে যে, নাটকটি যে ভৌগোলিক ভাবে কাশ্মীরে সেটা অনুমান করে নিতে কষ্ট হয় না। নির্দেশক যদি কাশ্মীরের বরফ আচ্ছাদিত পাহাড়, ঠান্ডা হাওয়া ইত্যাদি মুছে দিতেন তাহলে নাটকটি সর্বজনীন হয়ে উঠতো, যেমনটা তারা দাবি করেছেন যে— নাটকটি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে।
৪
কনস্ট্রাকটিভিজম ও বায়োমেকানিকস সব মিলিয়ে নাটুকে ‘রিজওয়ান’ নগরবাসীকে যে মঞ্চমুখী করেছে, মানুষের মনে মঞ্চনাটক দেখার প্রতি যে বিপুল আগ্রহ তৈরি করেছে, সেটার পেছনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক বা মূল গণমাধ্যম টেলিভিশন ও পত্রিকা যেটাই থাকুক না কেন, এই বিষয়টি ইতিবাচক। নগরের মানুষের বিনোদনের বড় অভাব। তারা যে সন্ধ্যার ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সিরিয়াল ছেড়ে দুই ঘণ্টা মঞ্চনাটক দেখতে এসেছেন সেটা ভালো লক্ষণ। আর লক্ষণ তৈরিতে ‘রিজওয়ান’ যে ভূমিকা রেখেছে সেটার প্রশংসা না করলে নিষ্ঠুরতা হবে। তবে কোমল করে এটুকু বলে শেষ করতে চাই, নাটকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা থাকবে, নানা নাট্যতত্ত্বের ব্যবহারও থাকবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত যেহেতু নাটক করা হয় দর্শকের জন্য, সেই দর্শকের কাছে আপনি যা বলতে চাইছেন সেটা সঠিকভাবে পৌঁছুতে পারছে কি না সেটা বড় প্রশ্ন।
‘রিজওয়ান’ নাটকের মধ্য দিয়ে নাটবাঙলা চাইছে ধর্মীয়-সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন, যুদ্ধ ও সন্ত্রাস-মানবতাবিরোধী নির্মমতার বিরুদ্ধে একটি বার্তা দিতে। আমার কাছে এই বার্তা এতটাই ‘বিমূর্ত’ হয়ে গেছে, বা সরাসরি বললে বলতে হয়, মঞ্চনাটকটিতে এতটাই ‘কালোয়াতি’ দেখানোর চেষ্টা হয়েছে, যাতে ওই মূল বার্তা দুর্বল হয়ে পড়েছে। অনেকটা যেন আপনি দর্শকের দিকে বার্তাবাহী তীর ছুড়লেন, কিন্তু ধনুকের গুণ থেকে এক হাত দূরে গিয়ে বল হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। দর্শক বুঝল তীরটি তার দিকেই ছোড়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি বিদ্ধ হননি। ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার শেষ প্রদর্শনী দেখতে গিয়েছিলাম শরের আঘাতে আহত হয়ে ফিরব এই আশায়, কিন্তু শেষপর্যন্ত আশাহত হয়েই ফিরতে হয়েছে। অবশ্য সেজন্য এই প্রচেষ্টাকে কোনোভাবেই আমি খাটো করে দেখছি না, আর নাটকের মূল বক্তব্যের প্রতিও আমার সমর্থন রয়েছে পুরোটাই।