সাক্ষী কেবল চৈত্র মাসের দিন
তরাতরি, খাড়ার উপরে, কয়টা ডুব দিয়া আহোনের নিয়ত লইয়াই সেইদিন জুলেখা গেছিলো ঠাকুরবাড়ির ঘাটলায়। জুলেখার মোনের ভিতরে একটা কড়রা রকোমের বাসনা আছিলো এই যে, অই ডুব দিতে আওন-যাওনের পোথে তারে গেরামের কোনো একটা মাইনষে তো দূর, য্যান একটা পইখ-পাখালিয়েও না দেখে!
কেউ দেখলে বিষয়খান মায়ের কানে যাইতে এক দণ্ডও দেরি হইবো না! তহন গালিগালাইজের তুফান ছুইট্টা দুনিয়া নাশ হইবো। তয়, কেউ অই না দেখলে কোনো হুজ্জাত নাইক্কা! জুলেখায় মায়রে বুঝ দিতে পারবো সায়-শান্তি হালে।
কিন্তু সেই দোপোরে এমুন কুফার কুফা লাগে যে, যাওনের পোথে জুলেখায় তরি দুই-দুইবার থতোমতো খাইয়া বাইত ফিরা যায় যায় অবস্থা হয়!
অতি পরথমে ঘটে আজাইরা এক অঘটন। কী! না, নিজেগো ঘাটলা থুইয়া সেয় খালি ঠাকুরবাড়ির ঘাটলার দিগে যাত্রা করছে, ভিটি বাইয়া নামতে গিয়া খায় সেয় এক কঠিন উষ্টা।
সেইটা কি যাহা-তাহা উষ্টা নি! ডাইন পাওয়ের বুইড়া আঙ্গুলের একদিগ একদম থ্যাতা খাইয়া নান্দিনাশ! উহহুরে! কেমুন কারবার দেহো তো!
তখন কি না সেয় আছে দৌড়ের উপরে। একছুটে তারে যাওন লাগবো ঠাকুরবাড়ির ঘাটলায়। আবার আরেক তুফান লৌড়ে তারে সোন্দর মতোন- বাইত আইয়া হাজিরা দেওন লাগবো। তেমুন হুড়াহুড়ির সোমে, সেয় তাইলে ক্যামনে অই থ্যাতা-খাওয়া আঙ্গুলে দুব্বা থেতলাইয়া দেয়! অইটা করতে গেলে সগল কামে তার দেরি হইয়া যাইবো গা না!
জুলেখায় স্থির করে যে, ডুব দিয়া আইয়া তার বাদে এই থেতলানিরে সেয় যা করোনের করবো। কিন্তুক আগে সেয় যেই কাম করতে যাইতাছে, সেইটা কইরা আহুক তো!
এই চিন্তা কইরা সেয় আঙ্গুলের টিপটিপা বিষ-ব্যাদনা নিয়াই ধুইচ্চা ছোটে ঠাকুরবাড়ির দিগে।
জুলেখাগো নিজেগো ভিটি পার হইয়া কতোখানি জায়গা গেলেই শুরু হয় জংলা গাছ-গাছালিয়ে ঠাসা পতিত ক্ষেতের সীমানা। ক্ষেতের পরে ক্ষেত, অনেক ক্ষেত। ঠাকুরবাড়ির ক্ষেত। সব কয়টা ক্ষেতই হাবিজাবি নানান ঝাড়ে, শতেক রকম কাঁটাগাছে; গণ্ডায় গণ্ডায় লিকলিকা, বেঁকা-বোকা কিছিমের খেজুর গাছে বোঝাই।
তার ভিতর দিয়াই আছে এই এট্টুখানি চিকুন পথখান। পাওয়ে হাঁটোনের সেই রাস্তা দিয়া দুষ্কালের দিনে গেরামের মাতারিরা খালি কোনো প্রকারে ঠাকুরবাড়ির পুষ্কুনীর তেনে পানি আনোন্তির কামখান সারে। সেই রাস্তা দিয়া আর কোনো অয় না! সংবচ্ছরে অই রাস্তা খালি অই এক কামেই লাগে। প্রতিবচ্ছরের হুগনার দিনেই খালি মাইনষের পাও পড়ে সেইনে। নাইলে এই রাস্তাও ক্ষেতের লাহান পতিতই পইড়া থাকে বছরের আর আর সময়ে।
ঝোপ-জংলায় ঠাসা সেই পোথে জুলেখায় খালি পাওটা দিবো, অমুন সোমে তার নজরে আহে মংলার মায়রে। দেহো বিত্তান্ত! এমুন দোপোইরা বেইলের সোমে মাতারি এইনে আইয়া রইছে! রইদ মাতায় লইয়া হেয় করতাছে কী!
হেয় ক্ষেতের অই দূর কিনারে লেট দিয়া বইয়া হেছি শাক তোলতাছে! দেহো তো আলা জুলেখায় কোন জ্বালার তলে পড়লো! মংলার মায় ঘাড় গুঁজা কইরা শাক তোলতাছে ঠিকই, কিন্তু যা দেখোনের হেয় ঠিকই দেইখ্যা লইবো! মাইনষে কয় না—উইড়া যায় পইখের পাখও গোনতে জানে যেয়, হেয় হইলো এই মংলার মায়? হেয় তো তাইলে ঠিকই দেইখ্যা ফালাইবো নে জুলেখারে!
জুলেখারে দেইখ্যা হেয় যুদি গিয়া মায়রে আবার ঠাল্লুস কইরা লাগাইয়া দেয়! তহন? তহন উপায় কী! তাইলে জুলেখায় অখন করবোটা কী!
সেয় কি অহন তাইলে ঠাকুরবাড়ির ঘাটলার চিন্তা মাথার তেনে ফালাইয়া দিবো? সেয় কী তাইলে ডুব দিতে না যাইবো আউজকা, অইনে? এট্টু দোনোমোনো করে জুলেখার অন্তর। এট্টু সেয় য্যান দইম্মাও যায়। দইম্মা গিয়া অল্প এট্টু কাল, এই হাছা-মিছা এট্টু খোন জুলেখায় থোম ধইরা খাড়া দিয়া থাকে।
তয়, চক্ষের পলকটা ফালাইতে না ফালাইতেই সেই বেতালা দশাখান নাই হইয়া যায় জুলেখার মোনের তেনে। ডরায় সেয় কী নিয়া! মংলার মায়রে নিয়া কিয়ের ডর!
অই ত্তো দেহা যায় মংলার মায় ঘাড় গুঁজা কইরা শাগ তোলতাছে যে তোলতাছেই। সেয় আছে তার শাগের ধোন্ধে! ডাইনে বাওয়ে খেয়াল দেওনের কোনো হুঁশ তার আছে বইল্লা তো দেহা যাইতাছে না!
অদিগে দেহো—ক্ষেতের মোখের অই এট্টুহানি জায়গাই খালি খোলা-উদলা। তার বাদেই তো মাথা-সমান বেশুমার ঝোপ-ঝাড়। উদলা জায়গাটুক যুদি জুলেখায় তরাতরি পাও টিপ্পা টিপ্পা যায় গা, মংলার মায় ধরতে পারবো কেটায় যায়? সেয় তো টেরও পাইবো না!
সেইমতে জুলেখায় ক্ষেতের রাস্তার মোখটুক পার হয়। কোনো এট্টু আওয়াজও হয় না। খোলা জায়গাটুক না কোনো প্রকারে পার হইয়া, জুলেখায় করে কী—ধুছমুছ কইরা হাঁটা ধরে ঠাকুরবাড়ির পুষ্কুনীর দিগে।
উষ্টা খাওয়ার পর জুলেখায় মনে করছিলো যে, সোন্দর সুহালেই বুঝি ঠাকুরবাড়ির পুষ্কুনীতে যাইতেও পারবো সেয়; আবার গিয়া ইচ্ছামতোন ডুবাডুবি তো করতে পারবোই।
কিন্তু ধুইচ্চা আধা পোথ গিয়া বোঝে যে, তার পাওয়ের উষ্টা-খাওয়া বুইড়া আঙ্গুলটা বেশি রকম টনটনাইতাছে। সেয় কদম দিতাছে হুড়-ধাড়, কিন্তু কষ্ট হইতাছে তার। ভালোই কষ্ট হইতাছে পাওয়ে। অখন সেয় করে কী! এত্তাখানি পোথ আইয়াও কি কামের কাম না সাইরা ফিরত যাইবো জুলেখায়!
না, হেইটা করবো না জুলেখায়! যাইবোই উয়ে ঠাকুরবাড়ির ঘাটে। গিয়া কয়টা ডুব দিতে কতখোন! আইয়াই তো পড়ছে ঘাটলার কাছে। এই মোনে কইরা সেয় পাওয়ের দুক্ষুরে উড়াইয়া দিয়া আগ্গাইতে থাকে ঠাকুরবাড়ির পুষ্কুনীর দিগে।
পুষ্কুনীর ঘাটলায় পাড়া দিয়া জুলেখার পরানটায় আর পরান থাকে না। অইটায় হইয়া যায় শীতলের শীতল, টলটলা চকচকা পুষ্কুনীর পানি!
এমুন পানিরে থুইয়া নি প্যাঁক-গোলা, ঘোলা, থকথইক্কা পানিরে শইল্লে ঢালতে যায় কেউঅই! ইইছ!
পানির দিগে চাইয়া আউজকা জুলেখার কেমুন জানি দিলখোশ দিলখোশ লাগতে থাকে! তার মোনে য্যান তারে কইতে থাকে যে, আউজকা ডুব দেওয়া-দেওয়ি লইয়া অমুন হুড়াতাড়া করোনের কাম নাই। আউজকা ডুব কয়টা দেওনের আগে ঘাটলার সিঁড়িতে এট্টু থির হইয়া বইলে কোনো দোষ অইবো না!
আউজকা যা যা করোনের, করবো সেইসব জুলেখায় ধীরে-সীরে। কোনো হুড়াতাড়ার ঠেকা নাই আউজকা! ক্যান অমুন লৌড়া-লৌড়ি করোন লাগবো রোজ রোজ! এতো কিয়ের ডর!
এই কথা যেই না জুলেখার মোনে ওঠে, অমনেই তার শইল য্যান ঢিলা হইয়া যায়। জিরানের লেইগা য্যান কাতর হইয়া ওঠে তার শইল, আঁতকার মিদেই।
জুলেখায় তহন করে কী, একটা সিঁড়িতে সেয় অস্তে কইরা বয়। আগে এট্টু জিরাইয়া লউক সেয়। তার বাদে দিবো ডুব। দুই-চাইরটা ডুব দিতে আর কতখোন!
সিঁড়িতে আলগোচ্ছে বইয়া পাও দুইটা সামোনের সিঁড়িগিলিত মেইল্লা দিয়াও সারে না জুলেখায়, ঘাটলার কিনারের বকুলফুল গাছের তেনে একটা কুকিলায় ধুইচ্চা ডাক পাড়োন শুরু করে। কু কু কু-কু! কু! কু কু কু-কু!
আয় হায়! আউজকা আবার এই ছাড়া-বাইত কুকিলায় আইলো কোনহান তেনে! অন্য কোনো দিন তো এই বাড়িতে একটা কাউয়ায় তরি ডাকে না! কোনোসোম না! আউজকা কুকিলায় ডাকে!
কইত্তেনে রে ডাক পাড়তাছে কুকিলাটায়! ঘাড় উঁচা কইরা বকুলগাছের ঠাইল্লা ঠাইল্লায় কুকিলারে বিছরাইতে থাকে জুলেখায়। নাহ! পাতা-পোতার ভিতরে কোনহানে জানি বইয়া রইছে পইখটায়। দেহা যায় না। পক্ষীয়ে আবার ডাকতে থাকে। কু কু! কু কু! কু কু কু-কু!
ডাকতে ডাকতে পইখে য্যান জুলেখারে দেখা দেওনের লেইগাই একেবারে অর নাক বরাবরি বকুলগাছের যে ঠাইল্লাটা পানির দিগে ঝুইক্কা রইছে, সেইটায় আইয়া বয়। বইয়া আবার ডাকতে থাকে। কু কু কু-কু! কু কু!
ডাকে ডাকে, তার বাদে আচমকা পইখটার ডাকের আওয়াজটা এট্টু য্যান কেমুন হুনাইতে থাকে! এট্টু কেমুন য্যান বেতালা হুনাইতে থাকে পইখের ডাকটা!
কু কু! কু কু ডাকতে ডাকতে পক্ষীয়ে য্যান আঁতকা কইতে থাকে, জু জু জু- জু! জুলি জুলি জুলি! অ জুলি! অ জুলি!
হুইন্না জুলেখায় পরথমে তো কতখোন টাসকি খাইয়া বইয়া থাকে! হাছাইনি পক্ষীয়ে কইতাছে—জু জু জু-জু! জুলি অ জুলি! হাছাইনি অরে ডাক পাড়তাছে কুকিলায়! অরে ডাকতাছে নিহি হাছাই!
পরক্ষণেই আঁতকা অর খেয়ালটা আহে যে, আরে এই পইখের ডাকেরে তো যুগ-জনম ভইরা এমুন নানান কিছিমেরই মোনে অয়! অর ডাকরে না এই মোনে অয়—কু কু কু কু; আবার এই মোনে অয় যে, আর তো কিছু না- পইখে দেহি কইতাছে—কাঁঠোল পাকো! কাঁঠোল পাকো!
তাইলে হোনতে যে ভুল হোনতাছে জুলেখায়, হেইটায় কোনো ভুল নাই! নিজের বেভুলা কানেরে নিয়া বহুত তামশা লাগতে থাকে জুলেখার। সেয় নিজের বেদিশা কানেরে নিয়া হাইস্সা কুটপাট হইতে থাকে—একলা নিজে নিজে! তামশা দেখছো মরার কানের! কই পইখে কইতাছে—কু কু কু কু কুউউ কুউউ; আর এদিগে আক্কলনাশা কানে কিনা হোনতাছে—জুউউলি! জুউউলি গো!
জুলেখায় তার হাসি শেষও করে নাই, অই সোমে আঁতকা কেমুন তেজিরকম একটা বাতাসে আইয়া বকুলগাছখানরে ঝাপোট মারে। আর সেই ঝাপোটে দেখো বকুলগাছের কোন আগডাল তেনে জানি ফুলেরা ঝুরঝুরাইয়া পড়া ধরে! ফুলেরা দশ-পাঁচটা কইরা পড়তেই থাকে, পড়তেই থাকে!
আর সেই ফুলেগোও কারবার দেখো! অরা য্যান নিয়তই কইরা থুইছিলো যে, পড়লে অরা পড়বো জুলেখার কোলেই! আর কোনোহানে না!
কোলের উপরে পড়া বকুলফুলটি টোকাইয়া নিজ মুষ্টিতে নিতে থাকে জুলেখায়। এমুন কপাল তার তো কোনো কালে হয় নাই! এমুন কইরা তার কোচড়ে জিন্দিগিতে নি ফুল পড়ছে! আউজকা এটি কেমুন আচানক কারবার হইতাছে! বড়ো খুশি লাগতাছে অর! বহুত খুশি!
কোলে-পড়া সবটি ফুলেরে মুষ্টিতে নিতে নিতে দেখো আবার কী আচানক কারবার শুরু করছে বাতাসে! জুলেখার মোনে লাগতে থাকে যে, সেয় তেজালো বাতাসে য্যান অস্তে অস্তে তারে ঘিরা ধরতাছে। এট্টু এট্টু কইরা অরে ঘিরা নিতাছে! বাতাসে তারে ঘিরা ধরতাছে, না অরে ধীরে ভাসাইয়া লইয়া যাইতাছে কোন নিরালা কোনখানে! সেইটা জুলেখায় পষ্ট কইরা ধরতে পারে না। পষ্ট কইরা বোঝতে পারে না! খালি তার খুশি লাগতে থাকে!
কিন্তুক এইটা কেমুন বাতাস! মাগ্গো মা! কেমুন বাতাস!
এতো ফুলের গন্ধ বাতাসে! বকুল ফুলের গন্ধ!
ও মা রে! বাতাস দেহি বকুলফুলের গন্ধের ভারে চলতে পারতাছে না লাগে! হেইর লেইগাই য্যান বাতাসে তার সগল গন্ধের বোঝা লইয়া খোনে খোনে আইয়া পাগলের লাহান ঝাপটাইয়া পড়তাছে জুলেখার কোলে!
এই না বাতাসে কোন নিরালা দেশে ভাইস্সা যাইতাছিলো গা জুলেখারে নিয়া! আবার সেয় ক্যামনে আইয়া জুলেখার কোলে ঝাপোট খাইয়া পড়তাছে! ক্যামনে!
আবার দেখো—ফুলের গন্ধে বেতালা হইয়া যাইতাছে জুলেখার দুই চউখ! ফুলের গন্ধে কেমুন উতালা হইয়া যাইতাছে দেখো জুলেখার গাছ-কোমর কইরা বান্ধা আঞ্চল! ফুলের গন্ধে দেখো কেমুন অথির হইয়া যাইতাছে জুলেখার মোখ আর অর চুলগিলি, আর অর দুই হাত,অর দুই পাও! আয় হায়! আউজকা এইটা কী হইতাছে!
এমুন চৈত মাইস্যা দিনে গেলো বছরও না কতো দিন আইয়া ডুব দিয়া গেছে জুলেখায়! এই পুষ্কুনীর ঘাটলায় এমনে-সেমনে বইয়াও তো থাকছে সেয় কতোসোম!
কো! কোনোসোম তো এমুন সীমাছাড়া গন্ধঅলা বাতাস পায় নাই উয়ে! ফুলের গন্ধভরা পাগলা বাতাসরে! তুমি কেটায়! আইলা কইত্তেনে রে তুমি বাতাস!
জুলেখার উদাম দুই পাওয়ের পাতায় গিয়া দেখো গন্ধভরা বাতাসেরা কী করে! য্যান তারা হাবুইট্টা জাবড়াইয়া ধইরা পইড়া থাকতে চায় জুলেখার দুই পাওয়ের পাতারে!
পাওয়ের পাতায় বাতাসের জাবড়ানি টের পাইতে পাইতে, একলা একলা তাজ্জব হইতে হইতে, আচমকাই জুলেখার স্মরণে আহে যে; উয়ে না ডাইন পাওয়ের বুইড়া আঙ্গুলটায় উষ্টা খাইছে! উয়ে না সেই আঙ্গুলে কঠিন চোট পাইছে!
অহন তো আলা ভালা কইরা দেহোনের কাম, আঙ্গুলটায় কতোখানি দুক্ষু পাইছে জুলেখায়! বেশি থ্যাঁতলাইয়া গিয়া থাকলে তো অক্ষণ দুব্বার রস দেওন লাগবো! বাড়িত যাওন তরি তো বার চাওন যাইবো না!
ফুলের গন্ধ দিয়া ঘেরাও হইয়া থাকা জুলেখায় বুইড়া আঙ্গুলের চোটটা দেখোনের লেইগা ঘাড় গুঁজা কইরা সারে না, শোনে যে-কেটায় জানি অতি ধীর পাওয়ে সিঁড়ি দিয়া নাইম্মা আইতাছে! কেটায় জানি আলগোচ্ছে আইতাছে জুলেখার দিগে।
মাগ্গো মা! কেটায় আহে এই নিরালা পুরীতে এমুন আলগোচ্ছে! ধড়াক-ফড়াক কইরা ওঠে অর পরান! কেটায় আহে!
পাওয়ের আঙ্গুলের জখমি দেখোন বন কইরা, তরাতরি মোখ তোলে জুলেখায়! কে আইয়া এমুন চুপচাপ, ধীর হইয়া খাড়াইলো জুলেখায় বইয়া থাকা সিঁড়ি বরাবরি! কেটায়!
জুলেখায় চাইয়া দেখে, যেয় আইয়া খাড়াইছে—হেয় জুলেখার কইলজার টুকরা, পরানের পরান।
খাড়াইয়া রইছে ইসুফ মিয়া ভাইয়ে।
(চলবে)