রুশ বিপ্লব ও চিত্রকলা
‘বিপ্লব’ কোন ছোটখাটো বিষয় নয়। পুরোপুরি একটা বদল বা ওলট-পালট। একটি কাঠামোর খোল নলচে বদলে দেয়ার সংগ্রাম। এ ধরনের রাষ্ট্র বিপ্লব একদিনে হয় না। কোথাও হয়নি। বিপ্লব একটা প্রক্রিয়া। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুক্তিসংগ্রাম থেকে বিপ্লবের অভিজ্ঞতা সংগ্রহ, সঙ্গে নিজ দেশের সার্বিক সংগ্রামের বাস্তবতার মিশেলে তৈরী হয় বিপ্লবের ভিত্তিভূমি। সারা বিশ্বের বিপ্লবের বাস্তবতা এমনই। তবে রুশ বিপ্লবের বিষয়টা খুব তীক্ষ্ণ নিরীখে দেখার বিষয়।
‘সেটা শ্রেষ্ঠ সময়, সেটা নিকৃষ্ট সময়, সেটা বিচক্ষণতার যুগ, সেটা বোকামির যুগ, সেটা বিশ্বাসের যুগ, সেটা আলোর ঋতু, সেটা আশার বসন্ত,সেটা নৈরাশ্যের শীত, আমাদের সামনে সবকিছু ছিলো, কিছুই ছিলোনা, সকলেই আমরা সোজা স্বর্গের দিকে যাচ্ছি।, সোজা আমরা উল্টোপথে হাটছি-সেইপথ এ পর্যন্ত আজকের পর্বের মতোই। যেখানে শোরগোল তোলা কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ ভালোর জন্যই হোক বা চরমতম মাত্রার তুলনার দাবিদার।’ ফরাসি বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে লেখা চার্লস ডিকেন্সের উপন্যাস, ‘এ টেল অফ টু সিটিজ’ এর শুরুটা এভাবেই করেছেন চার্লস ডিকেন্স। বিপ্লবের মধ্য দিয়ে পুরাতন যুগ ও তার মূল্যবোধ শেষ হচ্ছে, নতুন যুগের অভ্যুদয় ঘটছে। চরম উত্তেজনায় ভরপুর আশা-নিরাশায় দুলছে শুধু ফরাসি দেশ নয় গোটা ইউরোপ। কার্ল মার্কসের ভাষায় এই বিপ্লবে‘বুর্জেয়ারা বিজয়ী হয়েছিলো; কিন্তু সেই সময় বুর্জোয়ার বিজয় ছিলো এক নতুন সমাজ ব্যবস্থার বিজয়।(The bourgeois and the counter Revoulation- 1848)
ফরাসী বিপ্লব ছিলো বুর্জোয়া বিপ্লব যা মধ্যযুগীয় বর্বরতা ও সামন্ত ব্যবস্থাকে দ্রুততম সময়ে বিপ্লবী পন্থায় বিদায় দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছিলো বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। তাই ফরাসি বিপ্লব ছিলো মহান। ( ফরাসি বিপ্লব থেকে অক্টোবর বিপ্লব-হায়দার আকবর খান রনো)
ফরাসি বিপ্লবের(১৭৮৯-৯৪) পর প্যারিকমিউন ছিলো আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া বিপ্লব। যেটা শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিলো। সময়কাল কম হলেও রেভ্যুরেশনারি স্পিরিট হিসাবে মানুষ প্যারি কমিউনের কমিউনার্ডদের বিপ্লবী স্পিরিটকে গ্রহণ করেছিলেন মহামতি লেনিন। তার জন্য যথাযথ কারণও ছিলো। ১৮৭১ সালের ১৮ মার্চ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত প্যারিস কমিউন পরিচালনাকারী ছিলো বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক সরকার। প্যারিসের মজুরদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত শ্রমিক শ্রেণির এই বিপ্লবী সরকার ৭৩ দিন টিকে থাকে। কমিউনের নির্বাচন ২৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় এবং উক্ত নির্বাচনে ২০,০০০ অধিবাসীর বিপরীতে একজন হিসেবে ৯২ সদস্যের একটি কমিউন কাউন্সিল নির্বাচিত করা হয়। প্যারিস কমিউন রাষ্ট্র থেকে গির্জা এবং গির্জা থেকে স্কুলকে বিচ্ছিন্ন করে, স্থায়ী সৈন্যবাহিনীর বদলে আনে সার্বজনীন রূপে সশস্ত্র জনগণকে, জনগণ কর্তৃক বিচারক ও রাষ্ট্রের কর্মচারীদের নির্বাচন চালু করে, স্থির করে রাষ্ট্রের কর্মচারীদের বেতন শ্রমিকদের বেতনের বেশি হওয়া চলবে না, শ্রমিক ও শহুরে গরিবদের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নে একগুচ্ছ ব্যবস্থা ইত্যাদি নেয়।
কার্ল মার্কসের ভাষায় প্যারিস কমিউনে ছিল প্রথম শ্রেণীহীন রাষ্ট্রের ধারণা, যেখানে সর্বহারার একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা হয়। মার্কস ধারণা করেছিলেন কমিউনের পতন ঘটতে পারে কারণ উপযুক্ত সময় এবং পরিস্থিতি ব্যতিরেকে এই সশস্ত্র সংগ্রামে শ্রমিক শ্রেনী সাময়িক বিজয়ী হয়েছে। চিন্তা করা হয়, কমিউনের থেকে মহামতি লেনিন শিক্ষা নিয়েছিলেন যেটা রুশ বিপ্লবে ব্যবহার করা হয়েছে।
২.
যুগ যুগ ধরে মানুষ শোষণহীন, সাম্যবাদী সমাজের স্বপ্ন দেখেছে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ঊনবিংশ শতাব্দীতে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের রূপরেখা তুলে ধরেছিলেন কার্ল মার্কস-ফ্রেডারিখ এঙ্গেলস। তাঁদের মতাদর্শকে ধারণ করে কমরেড ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিনের পরিচালনায় ও বলশেভিক পার্টির (কমিউনিস্ট পার্টির) নেতৃত্বে ১৯১৭ সালে, পুরনো জুলিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুসারে ২৫ অক্টোবর, আর নতুন গ্রেগোরিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুসারে ৭ নভেম্বর, রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। এ কারণে ৭ নভেম্বর সংঘটিত এ বিপ্লবকে মহান ‘অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই বিপ্লব প্রকৃতই মানব জাতির ইতিহাসে সূচনা করেছিল এক নতুন যুগের।
অক্টোবর বিপ্লবই প্রথম সফল বিপ্লব, যার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছিল শোষণহীন এক নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা। সূচিত হয়েছিল শোষণমুক্ত সমাজের দিকে যাত্রা। এই বিপ্লব পুঁজিবাদের ভিত্তিমূলে বড় রকমের এক ভাঙন ও চিড় ধরিয়েছিল। দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিয়েছিল বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মানুষকে। মানুষ পেয়েছিল মুক্তির স্বাদ। কায়েম হয়েছিল শোষিত শ্রমিক শ্রেণির রাজত্ব। পূর্ববর্তী সকল বিপ্লব থেকে অক্টোবর বিপ্লবের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো, আগের সব বিপ্লব কেবল শাসকশ্রেণির পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছে। কিন্তু সংখ্যালঘিষ্ঠের দ্বারা সংখ্যাগরিষ্ঠের উপর শোষণের অবসান ঘটাতে পারেনি। অন্যদিকে অক্টোবর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শুধু শোষক-শাসক শ্রেণির ও সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনই ঘটেনি, সূচনা হয়েছিল মানুষের ওপর মানুষের শোষণের চির অবসানের যুগ। সূচিত হয়েছিল শ্রেণিহীন সমাজ নির্মাণের পথে যাত্রা। অক্টোবর বিপ্লবের আগে রাশিয়া ছিল পিছিয়ে থাকা একটি দেশ। রাশিয়াকে বলা হতো ‘ইউরোপের পশ্চাৎ ভূমি’।
জারের আমলে ( সেদেশের বাদশাহকে জার বলা হতো) অনাহার, দারিদ্র্য ও অসহনীয় শোষণ ছিল জনগণের নিত্যসঙ্গী। উন্নত শিল্প দূরের কথা, সাধারণ মাপের শিল্প উৎপাদনের ব্যবস্থাও তখন ছিল না। দ্য ‘গ্রেট রাশিয়ানদের’ দ্বারা অন্য জাতিগোষ্ঠীগুলো শোষিত হতো। জারশাসিত রাশিয়ায় সামান্যতম গণতান্ত্রিক অধিকারও ছিল না। জারের শাসনের ভিত্তি ছিল বৃহৎ জমিদারতন্ত্র। রাশিয়ার বিপ্লবী শক্তিগুলো, বিশেষত বলশেভিক পার্টি তথা কমিউনিস্ট পার্টি জার স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তোলে। এসব সংগ্রাম ধীরে-ধীরে বিপ্লবের রূপ নেয়। ১৯০৫ সালে এরূপ এক বিপ্লব ব্যর্থ হয়। তারপর, ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আরেকটি বিপ্লব হয়। সেই বিপ্লবে জার স্বৈরতন্ত্র উৎখাত হয় এবং ‘অস্থায়ী সরকার’ গঠিত হয়। সে সরকার ছিল বুর্জোয়া শ্রেণি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই সরকার প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলোর সাথে আপস করে। বুর্জোয়া শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার পথে অগ্রসর হয় এবং ক্রমশই গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ‘অস্থায়ী সরকার’ শ্রমিক, কৃষক ও সৈন্যদের তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের মুখে পড়ে। ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পর সেদেশে শ্রমিক, কৃষক ও সৈন্যদের নতুন এক ধরনের বিপ্লবী গণতান্ত্রিক সংস্থা হিসেবে ‘সোভিয়েত’ গড়ে ওঠে।
সোভিয়েতগুলোর মধ্যে বলশেভিক পার্টি অবস্থান ক্রমশ শক্তিশালী হতে থাকে। ‘সোভিয়েতগুলোর হাতে সমস্ত ক্ষমতা দাও’এই আহ্বানে বলশেভিক পার্টি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। শ্রমিক বিক্ষোভ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে থাকে। শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। সৈনিকরাও ক্ষোভে ফেটে পড়তে শুরু করে। ১০ অক্টোবর লেনিনের নেতৃত্বাধীন বলশেভিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি অস্থায়ী সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ২৫ অক্টোবর (৭ নভেম্বর) শ্রমিকদের সশস্ত্র অংশ এবং বিপ্লবী সেনারা অস্থায়ী সরকারকে উৎখাত করতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। রাত ৯ টা ৪৫ মিনিটে যুদ্ধ-জাহাজ ‘অরোরা’ থেকে একটা ফাঁকা শেল নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে বিপ্লবী সৈনিক (যারা আসলে উর্দি পরা কৃষক) ও রেড গার্ড বাহিনীর সহায়তায় রাজধানী পেট্রোগ্রাডের শ্রমিকরা বুর্জোয়া সরকারের কেন্দ্র ‘উইন্টার প্যালেসে’ অভিযান শুরু করে। অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই পতন হয় ‘উইন্টার প্যালেসের’। ‘অস্থায়ী সরকারের’ হাত থেকে ক্ষমতা চলে আসে শ্রমিক, কৃষক ও সৈনিকদের ‘সোভিয়েতের’ হাতে। পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে প্রতিবিপ্লবীদের প্রতিরোধ ভেঙে মস্কো, গোটা রাশিয়া এবং পুরনো জার সাম্রাজ্যের অন্যান্য অংশে বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে শ্রমিক শ্রেণি ক্ষমতা দখল করে নেয়।
‘বিপ্লবের পরে লেনিনের নেতৃত্বে জমি, শান্তি ও রুটির শ্লোগানে বলশেভিকরা জনগণকে সংগঠিত করেছিল। প্রবল বাধা ও প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্রুত উন্নতি ঘটতে থাকে। মাত্র দুই দশকের মধ্যেই দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। শোষিত-বঞ্চিত সকল শ্রেণি নির্মম শোষণ থেকে মুক্তি পায়। প্রত্যেক নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করা হয় কাজ, খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সাধারণ মৌলিক চাহিদা। এক দশকের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করা হয়। কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য আসে। নতুন নতুন শিল্প গড়ে ওঠে। প্রলেতারিয়েতের মধ্যে নতুন চেতনা, মূল্যবোধ ও আত্মমর্যাদার উন্মেষ ঘটে। নিপীড়িত মানুষের শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। শুধু শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রেই নয়, বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রেও ঘটে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সোভিয়েত ইউনিয়ন সৃষ্টি করতে থাকে নতুন মানুষ। একটি পিছিয়ে পড়া দেশ থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়ে ওঠে একটি ‘পরাশক্তি’। ( রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শততম বছর, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ইত্তেফাক, ঈদ সংখ্যা, ১৪ নভেম্বর, ২০১৬)
রুশ বিপ্লব অতিদ্রুত হয়ে ওঠে সারা বিশ্বের উন্নয়ন ও মেহনতী মানুষের মুক্তিসংগ্রামের মডেল। ভারতবর্ষেও ধাক্কা এসে লাগে। ওই সময় ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছিলো। ভারতের অনেক বিপ্লবী তখন সামরিক বিষয়ে কথা বলতে মস্কো যাচ্ছিলো, কিন্তু ফিরে আসছিলো কমিউনিস্ট হয়ে। ভারতবর্ষে এভাবে কমিউনিস্ট আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছিলো। শাসকদের ভিত নড়ে যাচ্ছিলো এ ঘটনায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়ে উঠেছিলো বিশ্বের বিস্ময়। সাহিত্যে সারা বিশ্বের সেরা ক্লাসিকগুলো এখানে লেখা হতে থাকে। ম্যাক্সিম গোর্কি, ফিওদর দস্তয়েভস্কি, মায়াকভস্কি, আন্তন চেখভ, সের্গেই ইয়েসিনিন, চিঙ্গিস আইতমাতভ, নিকোলাই গোগল, স্তানিস্লাভস্কি, মার্ক শাগাল কতশত লেখকশিল্পী তখন বিশ্ব সংস্কৃতির প্রচল ধারাকে ভেঙ্গে দিচ্ছে। সে এক স্বপ্নের আবেশ ছড়ানো দিন। লেনা কিংবা ভল্গার বুকে তখন সৃষ্টিশীলতার উল্লাস চলছে। শিল্প-সংস্কৃতির এই বিপ্লব সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলো। বিশ্বের বহু ভাষায় চললো তার অনুবাদ। শিশুতোষ থেকে বড়দের জন্য লেখা সেসব বই মেধা বিকাশ ও সৃজনশীল চর্চায় অনন্য ভূমিকা রেখেছিলো। স্বপ্নের সেই দিনগুলো শিল্পকলাকে কতোটা বিকশিত করেছিলো তা একটি ধারনা মেলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাশিয়ার চিঠিতে।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘এখানে ছবির ম্যুজিয়মের কাজ কীরকম চলে তার বিবরণ শুনলে নিশ্চয় তোমার ভালো লাগবে। মস্কৌ শহরে ট্রেটিয়াকভ গ্যালারি নামে এক বিখ্যাত চিত্রভাণ্ডার আছে। সেখা থেকে ১৯২৯ পর্যন্ত এক বছরের মধ্যে প্রায় তিন লক্ষ লোক ছবি দেখতে এসেছে। যত দর্শক আসতে চায় তাদের ধরানো শক্ত হয়ে উঠেছে। সেইজন্যে ছুটির দিনে আগে থাকতে দর্শকদের নাম রেজেস্ট্রি করানো দরকার হয়েছে।
১৯১৭ খ্রীস্টাব্দে সোভিয়েট-শাসন প্রবর্তিত হবার পূর্বে যে-সব দর্শক এইরকম গ্যালারিতে আসত তারা ধনী মানী জ্ঞানী দলের লোক এবং তারা, যাদের এরা বলে bourgeoine, অর্থাৎ পরশ্রমজীবী। এখন আসে অসংখ্য স্বশ্রমজীবীর দল, যথা রাজমিস্ত্রি, লোহার, মুদি, দরজি ইত্যাদি। আর আসে সোভিয়েট সৈনিক, সেনানায়ক, ছাত্র এবং চাষী-সম্প্রদায়।’
‘আর্টের বোধ ক্রমে ক্রমে এদের মনে জাগিয়ে তোলা আবশ্যক। এদের মতো আনাড়িদের পক্ষে চিত্রকলার রহস্য প্রথম দৃষ্টিতে ঠিকমত বোঝা অসাধ্য। দেয়ালে দেয়ালে ছবি দেখে দেখে এরা ঘুরে ঘুরে বেড়ায়, বুদ্ধি যায় পথ হারিয়ে। এই কারণে প্রায় সব ম্যুজিয়মেই উপযুক্ত পরিচায়ক রেখে দেওয়া হয়েছে। ম্যুজিয়মের শিক্ষাবিভাগে কিম্বা অন্যত্র তদনুরূপ রাষ্ট্রকর্মশালায় যে-সমস্ত বৈজ্ঞানিক কর্মী আছে তাদেরই মধ্যে থেকে পরিচায়ক বাছাই করে নেওয়া হয়। যারা দেখতে আসে তাদের সঙ্গে এদের দেনাপাওনার কোনো কারবার থাকে না। ছবিতে যে বিষয়টা প্রকাশ করছে সেইটে দেখলেই যে ছবি দেখা হয়, দর্শকেরা যাতে সেই ভুল না করে পরিদর্শয়িতার সেটা জানা চাই।’
‘চিত্রবস্তুর সংস্থান (composition ), তার বর্ণকল্পনা (colour scheme), তার অঙ্কন, তার অবকাশ (space), তার উজ্জ্বলতা (illumination), যাতে করে তার বিশেষ সম্প্রদায় ধরা পড়ে সেই তার বিশেষ আঙ্গিক (technique)— এ-সকল বিষয়ে আজও অল্প লোকেরই জানা আছে। এইজন্যে পরিচায়কের বেশ দস্তুরমত শিক্ষা থাকা চাই, তবেই দর্শকদের ঔৎসুক্য ও মনোযোগ সে জাগিয়ে রাখতে পারে। আর-একটি কথা তাকে বুঝতে হবে, ম্যুজিয়মে কেবল একটিমাত্র ছবি নেই, অতএব একটা ছবিকে চিনে নেওয়া দর্শকের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়; ম্যুজিয়মে যে-সব বিশেষ শ্রেণীর ছবি রক্ষিত আছে তাদের শ্রেণীগত রীতি বোঝা চাই। পরিচায়কদের কর্তব্য কয়েকটি করে বিশেষ ছাঁদের ছবি বেছে নিয়ে তাদের প্রকৃতি বুঝিয়ে দেওয়া। আলোচ্য ছবিগুলির সংখ্যা খুব বেশি হলে চলবে না এবং সময়ও বিশ মিনিটের বেশি হওয়া ঠিক নয়। ছবির যে-একটি স্বকীয় ভাষা, একটি ছন্দ আছে সেইটেই বুঝিয়ে দেবার বিষয়; ছবির রূপের সঙ্গে ছবির বিষয়ের ও ভাবের সম্বন্ধ কী সেইটে ব্যাখ্যা করা দরকার। ছবির পরস্পর-বৈপরীত্যদ্বারা তাদের বিশেষত্ব বোঝানো অনেক সময় কাজে লাগে। কিন্তু দর্শকদের মন একটুমাত্র শ্রান্ত হলেই তাদের তখনই ছুটি দেওয়া চাই। অশিক্ষিত দর্শকদের এরা কী করে ছবি দেখতে শেখায় তারই একটা রিপোর্ট থেকে উল্লিখিত কথাগুলি তোমাকে সংগ্রহ করে পাঠালুম। এর থেকে আমাদের দেশের লোকের যেটি ভাববার কথা আছে সেটি হচ্ছে এই-পূর্বে যে চিঠি লিখেছি তাতে আমি বলেছি, সমস্ত দেশকে কৃষিবলে যন্ত্রবলে অতিদ্রুতমাত্রায় শক্তিমান করে তোলবার জন্যে এরা একান্ত উদ্যমের সঙ্গে লেগে গেছে। এটা ঘোরতর কেজো কথা। অন্য-সব ধনী-দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজের জোরে টিঁকে থাকবার জন্যে এদের এই বিপুল সাধনা। আমাদের দেশে যখন এই-জাতীয় দেশব্যাপী রাষ্ট্রিক সাধনার কথা ওঠে তখনই আমরা বলতে শুরু করি, এই একটিমাত্র লাল মশাল জ্বালিয়ে তুলে দেশের অন্য সকল বিভাগের সকল আলো নিবিয়ে দেওয়া চাই, নইলে মানুষ অন্যমনস্ক হবে। বিশেষত ললিতকলা সকল প্রকার কঠোর সংকল্পের বিরোধী। স্বজাতিকে পালোয়ানি করবার জন্যে কেবলই তাল ঠুকিয়ে পঁয়তারা করাতে হবে, সরস্বতীর বীণাটাকে নিয়ে যদি লাঠি বানানো সম্ভব হয় তবেই সেটা চলবে, নতুবা নৈব নৈব চ। এই কথাগুলো যে কতখানি মেকি পৌরুষের কথা তা এখানে এলে স্পষ্ট বোঝা যায়। এখানে এরা দেশ জুড়ে কারখানা চালাতে যে-সব শ্রমিকদের পাকা করে তুলতে চায়, তারাই যাতে শিক্ষিত মন নিয়ে ছবির রস বুঝতে পারে তারই জন্যে এত প্রভূত আয়োজন। এরা জানে, রসজ্ঞ যারা নয় তারা বর্বর; যারা বর্বর তারা বাইরে রুক্ষ, অন্তরে দুর্বল। রাশিয়ায় নবনাট্যকলার অসামান্য উন্নতি হয়েছে। এদের ১৯১৭ খ্রীস্টাব্দের বিপ্লবের সঙ্গে সঙ্গেই ঘোরতর দুর্দিন দুর্ভিক্ষের মধ্যেই এরা নেচেছে, গান গেয়েছে, নাট্যাভিনয় করেছে এদের ঐতিহাসিক বিরাট নাট্যাভিনয়ের সঙ্গে তার কোনো বিরোধ ঘটে নি।’
‘মরুভূমিতে শক্তি নেই। শক্তির যথার্থ রূপ দেখা যায় সেইখানেই যেখানে পাথরের বুক থেকে জলের ধারা কল্লোলিত হয়ে বেরিয়ে আসে, যেখানে বসন্তের রূপহিল্লোলে হিমাচলের গাম্ভীর্য মনোহর হয়ে ওঠে। বিক্রমাদিত্য ভারতবর্ষ থেকে শক শত্রুদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু কালিদাসকে নিষেধ করেন নি মেঘদূত লিখতে। জাপানীরা তলোয়ার চালাতে পারে না এ কথা বলবার জো নেই, কিন্তু সমান নৈপুণ্যেই তারা তুলিও চালায়। রাশিয়ায় এসে যদি দেখতুম এরা কেবলই মজুর সেজে কারখানাঘরের সরঞ্জাম জোগাচ্ছে আর লাঙল চালাচ্ছে, তা হলেই বুঝতুম, এরা শুকিয়ে মরবে। যে বনস্পতি পল্লবমর্মর বন্ধ করে দিয়ে খট্ খট্ আওয়াজে অহংকার করে বলতে থাকে ‘আমার রসের দরকার নেই ' সে নিশ্চয়ই ছুতোরের দোকানের নকল বনস্পতি-সে খুবই শক্ত হতে পারে, কিন্তু খুবই নিষ্ফল। অতএব আমি বীরপুরুষদের বলে রাখছি এবং তপস্বীদেরও সাবধান করে দিচ্ছি যে, দেশে যখন ফিরে যাব পুলিসের ষষ্টি ধারার শ্রাবণবর্ষণেও আমার নাচগান বন্ধ হবে না।’
‘রাশিয়ার নাট্যমঞ্চে যে কলাসাধনার বিকাশ হয়েছে সে অসামান্য। তার মধ্যে নূতন সৃষ্টির সাহস ক্রমাগতই দেখা দিচ্ছে, এখনো থামে নি। ওখানকার সমাজবিপ্লবে এই নূতন সৃষ্টিরই অসমসাহস কাজ করছে। এরা সমাজে রাষ্ট্রে কলাতত্ত্বে কোথাও নূতনকে ভয় করে নি।’ (রাশিয়ার চিঠি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় রাশিয়ায় যে শিল্পের বিকাশ ঘটেছিলো তার কারণ ছিল, বিপ্লবের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে বিপ্লবের একটি ধারা তৈরী হয়েছিলো, যার নাম সোসালিস্ট রিয়েলিজম বা সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদ।
৩.
ঐতিহাসিক সত্য হলো, ১৮৮০’র দশকে প্রভাববাদের বিরুদ্ধে যে প্রতিক্রিয়া তা এই শিল্পধারার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সম্ভাবনার আগেই এসে গিয়েছিল। একটি শিল্পকর্মে স্থায়ী ভাব (motif) ভিন্ন ভিন্ন রঙের বৈচিত্র্যে উপস্থাপন ১৮৯০’র দশকের বৈশিষ্ট্য। (বিমূর্ত শিল্পকলার ধারণা ও বাস্তবতা/ শরীফ আতিক-উজ-জামান,আরাদ্ধ,২৯ নভেম্বর,২০১৫) পুঁজিবাদী শাসকদের এই মতবাদের প্রভাববাদের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় প্রথমে ফ্রান্সে, পরে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে।
এই প্রতিক্রিয়া ছিল শিল্পীর জীবনের অভিজ্ঞতাজাত। ভ্যান গঘ ও গগ্যাঁ তাদের চিত্রকলায় নিজেদের সমাজ-বিচ্ছিন্নতাকে নানা বর্ণে তুলে ধরেছেন। গগ্যাঁর বন্ধুবলয়ে আরো শিল্পীরা ছিলেন যারা পরিণত সময়ে বুর্জোয়া সমাজের আশির্বাদ ছেড়েছেন বা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। ১৮৮৫ সালের দিকে একজন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ শিল্পকলাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করবেন এমন ভাবনাটাই অবাস্তব ছিল। তখন শিল্পীর স্বাধীনতা আর নৈতিক সততা ছাড়া কিছু ছিল না। প্রভাববাদ প্রকৃতিকে অনুভূতি-নির্ভর চিত্রকল্পের জন্য একটি ব্যক্তিগত ও অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে রূপান্তর করেছে। সেই সাথে অসুখি মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে পুঁজিবাদের দিকে আকৃষ্ট করেছে। প্রাথমিক দিকেও প্রভাববাদের একটি নৈতিক ভিত্তি ছিল। এর প্রথাহীন দৃশ্যকল্প, অবিরত পাল্টে যাওয়া বহিঃপ্রকৃতির অন্বেষণ বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত ছিল।
১৮৬০ থেকে ১৮৭০ সালের মধ্যে শহরকেন্দ্রিক যে স্বাচ্ছন্দ্য তা তখনকার চিত্রকলার বিষয় ও নান্দনিক ভাবনার মধ্যে সক্রিয় ছিল। এসব ভাবনায় জারের আমলের শিল্পীদের মগজকে স্থবির করে রেখেছিলো। শিল্পকে তারা একান্ত নিজস্ব নান্দনিক পরিতৃপ্তির বিষয় বলে মনে করতেন। একদিকে প্রভাবভাবাদ অন্যদিকে ভবিষ্যৎবাদের পথ পরিষ্কার করে চিত্রকলা মানবিক বোধের এক অতীন্দ্রীয় শিল্পমাধ্যমে রূপ নেয়। যার নাম হয় সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদ। গোর্কির নেতৃত্বে এ আান্দোলন শুরু হলে অযুত শিল্পীরা অবস্থান নেয় এ শিল্প আন্দোলনে। ইতিপূর্বে শিল্পীদের যে বিচ্ছিন্নতা, নিয়ন্ত্রনহীনতা, বেপথু জীবন, আত্মহনন প্রবৃত্তি সব ধুয়েমুছে শিল্পীদের নতুন এ সংগ্রামে অযুত শিল্পী অবস্থান নেয়। শিল্পীরা এক স্বাভাবিক ছকে নিজেদের স্থাপন করে। এদের মধ্যে নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্বখ্যাত শিল্পী মার্ক সাগাল, কাণ্ডিনেস্কি, মেলভিচ, গোয়েণ্ডেরেভা প্রমুখ। ১৯১৯ সালে সোসালিস্ট রিয়েলিজম বিশ্বের তাক লাগানো এক সম্মেলনের আয়োজন করে। যার নেতৃত্বে ছিলেন তাকলিন। এ সম্মেলনে সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদের এটি শিল্পিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়। যথাস্থানে যথাবস্তু। আমারা একে রিয়েলেস্টিক থেকেও এক ধাপ আগানো শিল্পধারা বলে চিন্তা করতে পারি। তবে থার্ড সম্মেলনের পরে সোসালিস্ট রিয়েলিজম মূল বিন্যাসটি পায় শিল্পী প্রিডাভিজস্কি এবং এক সময়ের ফিউচারিস্ট শিল্পী লা ফিমোভিচ ও রেপিনের হাতে।
রাজনৈতিক চেতনার উজ্জীবিত হয়ে ও চেতনার বিকাশ ঘটাতে সমাজতান্ত্রিক বাস্তবাদের শুরু হয়। আনাতলি লুনাচারস্কি বলশেভিক পার্টির পক্ষ থেকে এটি দেখভালের দায়িত্ব নেন। এ ধারার যেসব চিত্রকলা ও ভাস্কর্য তখন তৈরী হয় তার মধ্যে- করোভিনের মস্কো ব্রিজ,সুখমিনের অর্ডার টু এ্যাটাক, গ্রামিসভের পার্টি কংগ্রেস, ব্রডস্কির লেনিন ইন স্মলনি,ল্যাকটিওনভের লেটার ফ্রম দ্য ফ্রণ্ট,ডেইনিকার ডিফেন্স অব সেবাসটোপল। এমন অজস্র শিল্পীদের কাজে ভরে যাচ্ছে মস্কোর মিউজিয়াম। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ব্যস্ত ভাস্কর গড়ছে মহামতি লেনিনের ছবি, কোথাওবা কাস্তে-হাতুড়ি হাতে কৃষক শ্রমিকের কাফেলা।
১৯৩২ সালে যোশেফ স্ট্যালিন শিল্পের এ ধারাকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরনের অনুমোদন দেন। শিল্পের এই নতুন দর্শন তখন সারাবিশ্বের শিল্পীদের তুলিতে জুড়ে দেয় নতুন ভাষা। যে ভাষা শ্রমজীবী মেহনতী মানুষের শ্রম উঠে আসে তুলিতে-কলমে। ইতিপূর্বে ইউরোপের ধারা প্রভাববাদ বা ভবিষ্যৎবাদ যখন পুঁজিবাদী জার শাসিত সোভিয়েতের শিল্পীদের আচ্ছন্ন ও জীবনবিমুখ করে রেখেছিলো । সোশালিস্ট রিয়ালিজমের জয়জয়কারে ইউরোপের পুঁজিবাদী সমাজ তখন শিল্পের নতুন মাত্রা দাদাইজম, ফিউচারইজম নিয়ে মেতে ওঠে। এর মধ্যেও এটা স্পষ্ট হয় যে সমস্ত ধারাগুলোই রুশ বিপ্লবের আলোয় আালোকিত। মানুষ, বস্তু বা তার কাজকে উপজীব্য করে গড়ে ওঠা এ শিল্পমাধ্যমে শ্রমজীবী ও মেহনতী মানুষ ও তার কাজ উঠে আসতে থাকে তুলি-কলমে। আজ শতবর্ষ পরে আমরা যে দেয়ালিকা বা পোস্টার করি। প্রতিবাদের ভাষা আঁকি দেয়ালে প্লাকার্ডে ফেস্টুনে এসবই রুশ বিপ্লবের ফলাফল। বা সোসালিস্ট রিয়েলিজমের ফলাফল।
শিল্পসাহিত্যের নন্দনতাত্ত্বিক বিচার-বিবেচনার ধারাটি প্রাচীন নয়। বলা যায় রুশ বিপ্লবের সমান বয়সী। তবে এ বিষয় নিয়ে ভিন্নমত এবং যুক্তিতর্কের বহুমাত্রিক বয়ান কম নয়। তবে ওই বিতর্কের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে- শিল্প সৃষ্টির পেছনে দুটো শক্তি সক্রিয়। প্রথমত শ্রম যা মূলত মানসিক, কিছুটা দৈহিক, অন্যদিকে শ্রম, বস্তু ও মেহনতের প্রভাব। শেষোক্ত দিকটি, বিশেষত শ্রম হয়ে ওঠে সৃষ্টির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রেরণা। সময়ের ধারায় ও মানবসভ্যতার বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় শিল্প ও সৃষ্টিতে উভয় ক্ষেত্রেই কথাগুলো সত্য। যেমন সাহিত্যে তেমনি স্থাপত্যে- চিত্রকলায় ও ভাস্কর্যে । তবে এক্ষেত্রে শিল্পসৃষ্টিই প্রধান বিবেচ্য বিষয়। এই শিল্পের সহজিয়া দিক সারা বিশ্বের চেতনা সম্পন্ন মানুষকে শিল্পী করে তুলেছে, শিল্পকে নিয়ে গেছে মানুষের কাছে।
শিল্প সৃষ্টির মৌল তাগিদ, নন্দনতাত্ত্বিক ভাষায় প্রেরণা মূলত কারো মতে ‘মনুষ্যস্বভাবে’ নিহিত, অন্যমতে প্রয়োজনের তাগিদে। এখানে বিষয়টির নন্দনতাত্ত্বিক বিবেচনা। শেষোক্ত মত ক্রিস্টোফার কডওয়েলের। শিল্পের উৎস ও তার নন্দনতাত্ত্বিক বিচার ব্যাখ্যায় এমন মন্তব্যই তিনি করেছেন। মার্কসবাদীদের একাংশ ওই প্রয়োজনের সঙ্গে বিশেষভাবে ‘শ্রম’কে যুক্ত করেছেন গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে। যা কিছু সম্ভব হয়েছে শিল্পের সঙ্গে মেহনতী মানুষের সম্পর্কের কারণে। শিল্পকলা তাই রুশ বিপ্লবের কাছে ঋনী থাকবে বিশ্ব যতকাল টিকে থাকবে।
তথ্যসূচী
১.রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২. ফরাসি বিপ্লব থেকে অক্টোবর বিপ্লব-হায়দার আকবর খান রনো
৩. রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের শততম বছর, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ইত্তেফাক ঈদ সংখ্যা,১৪ নভেম্বর, ২০১৬ ইং
৪. বিমূর্ত শিল্পকলার ধারণা ও বাস্তবতা, শরীফ আতিক-উজ-জামান,আরাদ্ধ,২৯ নভেম্বর,২০১৫
৫. সোসালিস্ট রিয়েলিজম- এলিজাবেথ রোজার
৬. দ্য আর্ট-ক্রিস্টেফার কডওয়েল