মিউজিশিয়ান হতে চেয়েছিলাম : আহমাদ মোস্তফা কামাল
কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল। জন্ম : ১৪ ডিসেম্বর ১৯৬৯ সালে, মানিকগঞ্জে। শিক্ষা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সসহ বিএসসি ও এমএসসি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল ও পিএইচডি। ছাত্রজীবনে প্রতিটি স্তরে রেখেছেন দুর্দান্ত মেধার স্বাক্ষর। কিন্তু যাবতীয় বৈষয়িক সাফল্যের সম্ভাবনাকে নাকচ করে কেবল লেখালেখিকেই জীবনের সব স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দু করে তুলেছেন তিনি। পেশাগত জীবনের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। বর্তমানে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
লেখালেখির শুরু নব্বই দশকের গোড়া থেকেই। প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘দ্বিতীয় মানুষ’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে। গল্পগ্রন্থ ‘ঘরভরতি মানুষ অথবা নৈঃশব্দ্য’ ২০০৭ সালে লাভ করেছে ‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই’ পুরস্কার, উপন্যাস ‘অন্ধ জাদুকর’ ভূষিত হয়েছে ‘এইচএসবিসি-কালি ও কলম পুরস্কার ২০০৯’-এ, ‘কান্নাপর্ব’ উপন্যাসের জন্য ২০১২ সালের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হিসেবে লাভ করেছে ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার’। তাঁর লেখা ‘শিল্পের শক্তি, শিল্পীর দায়’ ও ‘বাংলা গল্পের উত্তরাধিকার’ আলোচিত প্রবন্ধগ্রন্থ। এ ছাড়া সম্পাদনা করেছেন বাংলাদেশের কথাসিহিত্য নিয়ে ১০টি গ্রন্থ। প্রতিশ্রুতিশীল এ লেখকের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন অঞ্জন আচার্য।
যে বই বারবার পড়ি
একটি নয়, একাধিক বই। জীবনানন্দ দাশের ‘কবিতাসমগ্র’, শঙ্ঘ ঘোষের ‘জার্নাল’, অঁতোয়ান দ্য স্যাঁৎ-একজ্যুপেরির ‘ছোট্ট রাজপুত্র’, জোসেফ ক্যাম্পবেলের ‘মিথের শক্তি’।
যে বই পড়ব বলে রেখে দিয়েছি
বইমেলায় বেশ কিছু নতুন বই কেনা হয়েছে। সবগুলোর নাম তো বলা মুশকিল। তবে সেগুলো এক এক করে পড়ব।
যে চলচ্চিত্র দাগ কেটে আছে মনে
‘দি ইনভিজিবল চিলড্রেন অব লাভ’। এ ছাড়া সত্যজিতের ‘পথের পাঁচালী’, রবার্ট জেমেকিসের ‘ফরেস্ট গাম্প’।
যে গান গুনগুন করে গাই
অসংখ্য। গোনা যাবে না।
প্রিয় যে কবিতার পঙ্ক্তি মনে পড়ে মাঝেমধ্যে
এটাও আমাকে জিজ্ঞাসা করতে পারলে? কত লাইন সারা দিন মনে পড়ে, হিসাব নেই।
খ্যাতিমান যে মানুষটি আমার বড় প্রিয়
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, শিল্পী আজম খান, অসম্ভব সরল মানুষ ছিলেন তিনি।
যে ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না
বেলি।
যা খেতে ভালোবাসি খুব
একটা সময় মায়ের হাতের রান্না করা যেকোনো খাবারই ভালো লাগত। এখন ‘ভাত-মাছ’ ভালো লাগে।
যা সহ্য করতে পারি না একেবারেই
ভাণ্ডামি।
জীবনে যার কাছে সবচেয়ে বেশি ঋণী
মা।
যেমন নারী আমার পছন্দ
সুনির্দিষ্টভাবে এ নিয়ে কখনো ভাবিনি।
যেখানে যেতে ইচ্ছে করে
নির্জন যেকোনো জায়গায়।
যেভাবে সময় কাটাতে সবচেয়ে ভালো লাগে
বই পড়ে, গান শুনে।
যে স্বপ্নটি দেখে আসছি দীর্ঘদিন ধরে
উদার, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক, প্রগতিশীল এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের।
যে কারণে আমি লিখি
দুর্বহ জীবনকে একটু সহনীয় করে তুলতে।
নিজের যে বইটির প্রতি বিশেষ দুর্বলতা আছে
আমার সব বইয়ের প্রতিই বিশেষ ভালোবাসা আছে। তবে মায়া লাগে ‘একদিন সবকিছু গল্প হয়ে যায়’ বইটির প্রতি।
ভালোবাসা মানে আমার কাছে...
পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও মমতা।
আমার চোখে আমার ভুল
পুরো জীবনটাই তো ভুলে ভরা।
জীবনে যা এখনো হয়নি পাওয়া
হিসাব করিনি।
যে স্মৃতি এখনো চোখে ভাসে
আমার হারিয়ে ফেলা জন্মভিটা।
যা হতে চেয়েছিলাম, পারিনি
মিউজিশিয়ান হতে চেয়েছিলাম। সংগীত নিয়ে কাজ করার বড় ইচ্ছে ছিল।
জীবনের এ-প্রান্তে এসে যতটা সফল মনে হয় নিজেকে
একেবারই না।
কোনটা ভালো লাগে—পাহাড়, নাকি সমুদ্র?
দুটোই।
কোনটা বেশি টানে—বর্ষার বৃষ্টি, নাকি শরতের নীল আকাশ?
হেমন্তের কুয়াশা। তবে এই দুটোর মধ্যে বন্দি করলে মানব কেন?