ফটক ছিল না যে বাড়িতে

Looks like you've blocked notifications!
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শংকর গোবিন্দ চৌধুরী। নাটোরে গোবিন্দ চৌধুরীর বাসায় ১৯৮৬ সালে ছবিটি তোলা হয়। ছবি : সংগৃহীত

[এই বছর স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেছেন নাটোরের সর্বজনীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শংকর গোবিন্দ চৌধুরী। তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই লেখা।]

তাঁর সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক সংযোগ তেমন ছিল না। যোগাযোগটা ছিল সাংস্কৃতিক। আশির দশকের শুরু থেকেই কলেজের চৌকাঠে পা রাখার আগেই নাটোরে আমরা একটা সাহিত্য-সাংস্কৃতিক গ্রুপ হয়ে উঠি। সাহিত্যসভা করি, বারো মাসে তেরো পার্বণের মতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করি, বাচ্চাদের ছবি আঁকার স্কুল চালু করি। সেইসঙ্গে একুশে ফেব্রুয়ারি, ষোলোই ডিসেম্বর, পহেলা বৈশাখে পত্রিকার প্রকাশনা ছিল অপরিহার্য। আর পত্রিকা হাতে পেয়েই শঙ্কর কাকার কাছে। খুব আগ্রহের সঙ্গে পত্রিকা হাতে নিতেন তিনি। পত্রিকার বিক্রয়মূল্য বা বিনিময়মূল্য হিসাবে আমরা পাঁচ বা দশ টাকা লিখতাম। তিনি সেদিকে দৃকপাত করতেন না। কথা শুরু করতেন অন্যদিক দিয়ে। জিজ্ঞেস করতেন— কাগজের দোকানে বাকি আছে? কত টাকা বাকি?

আমাদের কেউ একজন বাকির পরিমাণ জানাতাম।

পরের প্রশ্ন— প্রেসে?

অঙ্কটা জানানো হতো।

তিনি মনে মনে হিসাব করতেন। তারপর ভেতরের দরজার দিকে তাকিয়ে কাউকে বলতেন— এই তোর কাকিমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আয়।

টাকার অঙ্ক দুইশ, তিনশ বা চারশর বেশি হতো না। তার বেশি দরকার ছিলও না। টাকা হাতে দেওয়ার পরে খাদ্য-খাবার কিছু। কলা কিংবা বিস্কুট। যেদিন খাদ্য থাকত না, সেদিন আলাদাভাবে কুড়ি টাকা। দোকান থেকে খেয়ে নিয়ো।

আড়ালে আমাদের গ্রুপটার খুব প্রশংসা করতেন বলে শুনেছি বিভিন্ন মানুষের মুখে। বলতেন যে—এই ছেলে কয়টা আছে বলেই এই শহরে একটু তাজা বাতাস বয়।

সময় বের করে নিয়ে আমাদের সঙ্গে গল্প করতে ভালোবাসতেন। আশপাশের কেজো মানুষরা উসখুস করত, দলীয় লোকজনও হয়তো ভেতরে ভেতরে বিরক্ত হতো, কিন্তু তিনি পাত্তা দিতেন না। গল্প করে চলতেন। আমরা তো কোনো তয়-তদবিরে যাই না, ঠিকাদারি জিনিসটা কী সেটা বুঝি না, কোনো নালিশ বা ধরনা নিয়ে যাই না। এসব কারণে আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি নিজেও বোধ হয় একধরনের মানসিক স্বস্তি অনুভব করতেন। আমাদের সঙ্গেও রাজনীতি নিয়ে কথা বলতেন। তবে তা হতো জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পরিসর নিয়ে। স্থানীয় রাজনীতি বা ব্যক্তি রাজনীতি নিয়ে কোনো আলাপ হতো না। আমরা পাঠ্যবইয়ের চেয়ে অন্য বিষয়ের বই বেশি পড়ি। এটা তাঁর খুব পছন্দের ছিল। তবে পাশাপাশি একাডেমিক পড়াশোনার খোঁজও নিতেন। এত বেশি বাইরের বইপত্র পড়া, এত এত সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার পরও আমাদের গ্রুপের প্রায় সবারই একাডেমিক রেজাল্ট ভালো হতো। এটা নিয়েও খুশি হতেন খুব। বারবার বলতেন—সমাজের বোঝা হওয়া চলবে না, সমাজের সম্পদ হতে হবে।

এমন কথা বলার অধিকার তাঁর ছিল। কারণ তিনি নিজে ছিলেন সমাজের সম্পদ।

২.

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে ‘পেশাদার রাজনীতিবিদ’ বলা হয়, তাঁর ক্ষেত্রে সেই অভিধা প্রয়োগ করা উচিত হবে কি না, তা নিয়ে একটু দ্বিধা আছে আমার। তবে তিনি সার্বক্ষণিক রাজনীতিবিদ ছিলেন অবশ্যই। অন্য কোনো পেশায় নিয়োজিত থাকতে তাঁকে দেখিনি কোনোদিন। এখন যেসব পদ কোটি কোটি টাকার সম্পদ এনে পায়ের তলায় গড়িয়ে দেয়, সেইসব পদ তাঁর দখলে ছিল দশকের পর দশক। কিন্তু তাঁর নামে কোনোদিন অনেক অর্থ উপার্জনের অভিযোগ চরম শত্রুও আনতে পারেনি। পৈতৃক জমিদারি বিলুপ্ত হলেও উত্তরাধিকারসূত্রে অনেক জমির মালিক ছিলেন তিনি। সেই জমির আয় থেকেই পরিবার পরিচালিত হতো। কয়েকজন ব্যবসায়ীর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত একটি পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন শুনেছি। কিন্তু নিশ্চিত জানি না। একই মহল্লায় বসবাস আমাদের দুই পরিবারের। তাঁকে তা তাঁর পরিবারের সদস্যদের খুব বিলাসিতা করতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। তাঁর বড় কন্যা মিলিদিকে পায়ে হেঁটে কলেজে যেতে-আসতে দেখেছি।

জমি বেচে কিংবা ঘরের টাকা খরচের দ্বারা রাজনীতি করার কথা শুনলে এখনকার প্রজন্ম বিশ্বাস করতে পারবে না। কিন্তু শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরী এবং তাঁর সমসাময়িক অনেকেই এভাবেই রাজনীতি করেছেন।

ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গাতে তাঁকে কোনোদিনই আচারনিষ্ঠ মনে হয়নি আমাদের। সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতাকে সবার ওপরে স্থান দিতেন। কোরআন শরিফের বঙ্গানুবাদ পাঠ করেছিলেন বেশ নিষ্ঠার সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গেলে সেটা বোঝা যেত। বৈঠকখানার দেয়ালে কোনো ঠাকুর-দেবতার ছবি ঝুলতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। তবে বঙ্গবন্ধুর ছবি সব সময় অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে ঝোলানো থাকত দেয়ালে।

মোতাহার হোসেন চৌধুরী ছিলেন তাঁর খুবই প্রিয় লেখক। ভাবুক হিসেবেও তিনি তাঁকে মূল্য দিতেন। একবার নাটোর পৌরসভার উদ্যোগে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আমি পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলাম মোতাহার হোসেন চৌধুরী অনূদিত বার্ট্রান্ড রাসেলের বই ‘সুখ’। শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরী তখন ছিলেন নাটোরের পৌরপিতা। সংস্কৃতি এবং ধর্মের প্রসঙ্গে তিনি মোতাহার হোসেন চৌধুরীর দৃষ্টিভঙ্গিকে খুবই পছন্দ করতেন। আমাদের সঙ্গে আলাপে অনেকবারই উল্লেখ করতেন মোতাহার হোসেন চৌধুরীর বাণী—‘ধর্ম হচ্ছে অশিক্ষিত লোকের কালচার। আর শিক্ষিত লোকের কালচারই হচ্ছে ধর্ম।’ তকে সেইসঙ্গে মনে করিয়ে দিতেন, এই ধরনের কথা যেকোনো জায়গায় যেকোনো লোকের সামনে বলা ঠিক নয়। তাতে ব্যাপক ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থেকে যায়। মানুষ এমন ধারার কথা শুনলে তাকে ধর্মবিদ্বেষী বলেও মনে করতে পারে। তবে বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা করতে হলে এই ধরনের লেখকের বই পড়তেই হবে বলে দাবি করতেন। তাঁর প্রণোদনাতেই হয়তো এই লেখককে বেশ মনোযোগ দিয়ে পাঠ করেছিলাম। খুঁজতে চেষ্টা করেছিলাম মোতাহার হোসেন চৌধুরীর ধর্ম ও সংস্কৃতিচিন্তার সারাৎসার।

‘ধর্ম’ শব্দটির সমপর্যায়ের শব্দ অনেক। ধর্মত, ধর্মতত্ত্ব, ধর্মজ্ঞান, দীন, শ্রেয়, পরমার্থ, পরমসত্য, আধ্যাত্মসত্য, আত্মবিদ্যা, ঈশ্বরবিশ্বাস, ধর্মবিশ্বাস, আকিদা, পন্থা, পথ, মার্গ, তরিকা, মতবাদ, ধর্মশিক্ষা, পাপপুণ্যবোধ। ধর্ম অর্থে আরো দেখা যায়—ঈশ্বরোপাসনা-পদ্ধতি, আচার-আচরণ ও পরকাল ইত্যাদি বিষয়ের নির্দেশ ও তত্ত্ব, পুণ্যকর্ম, সৎকর্ম, কর্তব্যকর্ম, শাস্ত্রবিধান, সুনীতি, সাধনার পথ, শ্রেণিবিশেষের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য, স্বভাব, শক্তি, গুণ, নৈতিক সততা, সতীত্ব (স্ত্রীলোকের ধর্ম), রাশিচক্রে লগ্ন হইতে নবম স্থান।

উল্লেখ্য, সব শব্দ একই ব্যঞ্জনা ও গুরুত্ব বহন না করলেও অভিধানে এগুলো সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার কারণ এই যে যুগভেদে ও ব্যক্তিভেদে মানুষ ধর্মকে উক্ত বিভিন্ন শব্দনিহিত তাৎপর্য অনুসারেই বুঝেছে, বা বুঝে নিতে চেষ্টা করেছে।

মানুষ চিন্তাশীল প্রাণী বলে পরিচিত হলেও সব মানুষের চিন্তাশীলতার পরিধি সমান নয়। অধিকাংশ মানুষ প্রচলিত নিয়ম-নীতি, বিধিব্যবস্থা, চিন্তাপদ্ধতির কোলে নিজেকে সঁপে দিয়ে প্রথাগত জীবনযাপন করে যায়। ধর্মপ্রসঙ্গেও প্রযোজ্য একই কথা। ধর্মকে—বিভিন্ন জাতির বা সম্প্রদায়ের মানুষের সৃষ্টিকর্তা ও পাপ-পুণ্যাদিবিষয়ক বিশ্বাস এবং ইহলৌকিক শান্তি ও পারলৌকিক পরিত্রাণ লাভের উদ্দেশ্যে অনুসৃত আচার-আচরণ, উপাসনাপদ্ধতি এবং সাংসারিক দৈনন্দিন জীবনযাপন সম্পর্কিত কার্যাবলির নামেই অধিকাংশ মানুষ চেনে ও পালন করে। প্রথার আনুগত্য বৃহত্তর সংখ্যক মানুষকে কেমনভাবে আচ্ছন্ন করে রাখতে পারে, তার চরমতম দৃষ্টান্ত  হিন্দুসমাজের বর্ণভেদ প্রথা চার হাজার বৎসর যাবৎ টিকে থাকা এবং প্রতিপালিত হওয়ার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়। এমনকি বর্ণব্যবস্থার যারা নির্মম শিকার, সেই সংখ্যাগরিষ্ঠ শূদ্রবর্ণের মানুষরাও এই বিধান মেনে চলেছেন চার হাজার বছর ধরে। তবে বিশ্বের ভাবুক ও দার্শনিকদের কাছে ধর্ম এখন পর্যন্ত অমীমাংসিত বিষয়। কেউই ধর্ম সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ধারণা ঘোষণা করতে পারেননি।

ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু শুধু রাজনীতিবিদই ছিলেন না, চিন্তাবিদ ও পণ্ডিত হিসেবেও যথেষ্ট খ্যাতিবান ছিলেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি কোনো ধর্মাচরণ করতেন না বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন তাঁর সন্নিহিত মানুষরা। ধর্মনিরপেক্ষ এই রাষ্ট্রনেতা কোনো বিশেষ ধর্মের প্রতি পক্ষপাত যাতে প্রদর্শিত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থেকেছেন সব সময়। সেই নেহরুও প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম ও শুভমূল্যবোধগুলোর সম্পর্ক নিয়ে নিজের দ্বিধার কথা উল্লেখ করেছেন একাধিকবার। একটি ভালো সমাজের জন্য কোন কোন জিনিসের প্রয়োজন, তার উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘আমি কিছু মাপকাঠির কথা বলব। আপনি এগুলিকে নৈতিক মাপকাঠি বলতে পারেন। প্রতিটি ব্যক্তি ও সামাজিক গোষ্ঠীর জন্য এই মাপকাঠিগুলোর প্রয়োজন। যদি এগুলোর অস্তিত্ব না থাকে, তাহলে যাবতীয় পার্থিব উন্নতি সত্ত্বেও আপনি কোনো মঙ্গলজনক পরিস্থিতিতে পৌঁছাতে পারবেন না। এই মাপকাঠিগুলো কীভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখা যাবে, তা আমি জানি না। এ ক্ষেত্রে একটি ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি আছে। কিন্তু ধর্ম তার আচার-আচরণ ও নিয়ম-পদ্ধতিসহ আমার কাছে দুর্বোধ্য। ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন আত্মিক ও চারিত্রিক মাপকাঠিগুলোকে আমি খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কিন্তু আমি জানি না, এগুলিকে কীভাবে আধুনিক জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো যাবে। এটি একটি সমস্যাই বটে।’ (মাইকেল ব্রেচারের সঙ্গে সাক্ষাৎকার।। ১৯৫৬)।

শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরীও এভাবেই দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন। সব ধর্মের ভালো দিকগুলো নিজের মধ্যে আত্মস্থ করার চেষ্টায় নিয়োজিত থাকতে চাইতেন তিনি। আমাদেরও উপদেশ দিতেন সেভাবেই।

৩.

তাঁর দলীয় রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা ছিল না। আওয়ামী লীগের মতো একটি বৃহৎ এবং নানামতের মানুষের দলের মধ্যে উপদলীয় কোন্দল, গ্রুপিং—এসব থাকারই কথা। সেসব তিনি কীভাবে মোকাবিলা করতেন, তা আমরা জানি না। এটাও জানি না যে তিনি নিজেও কোনো উপদল বা নিজস্ব বলয় তৈরি করতেন কি না।

তাঁর সমসাময়িক প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাদের মধ্যে আমরা দেখেছি মুসলিম লীগের আবদুস সাত্তার খান চৌধুরী মধু মিয়াকে, বিএনপির খোরশেদ আলম খান চৌধুরী হুরুম মিয়াকে। কাছাকাছি মতের রাজনীতিবিদদের মধ্যে ছিলেন ন্যাপের খোন্দকার আবু আলী। এঁদের সবার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সৌহার্দ্য, সখ্য, সৌজনমূলক আচরণ এখনকার রাজনীতিবিদদের কাছে রূপকথার মতো মনে হবে। তাঁদের পরস্পরের মধ্যে রাজনৈতিক এবং আদর্শগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। কিন্তু ব্যক্তিসম্পর্কে কোনোদিন নেতিবাচক কিছু আমরা শুনিনি। মধু মিয়ার মৃত্যুর সংবাদ শুনে তাঁকে অঝোরে কাঁদতে দেখেছি। কাছারি মাঠের যতক্ষণ মধু মিয়ার জানাজা চলছিল, শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরী পাশের রাস্তায় রিকশার ওপর বসে কাঁদছিলেন।

দুবার তাঁকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। শেষজীবনে তো প্রায় পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মনের প্রবল জোর নিয়ে চলাফেরা করতেন। জীবননাশের হুমকি সব সময়ই ছিল। কিন্তু তারপরও তাঁর বাড়িতে কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে দেখিনি। বাড়ি ছিল আজীবন অবারিত। চেনা-অচেনা মানুষ ঢুকছে-বেরোচ্ছে ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। বাইরের চলাফেরায়ও কোনো বাড়তি সতর্কতা দেখিনি। মানুষের মধ্যেই তিনি নিজের নিরাপত্তা খুঁজে নিয়েছিলেন।

রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি কতখানি সফল ছিলেন?

রাজনীতিতে সফলতার একটি শর্ত যদি হয় মানুষের সঙ্গে সব সময় সংযুক্ত থাকা এবং মানুষকে সব সময় নিজের সঙ্গে সংযুক্ত রাখা, তাহলে বলতে পারি, তাঁর মতো সফল রাজনীতিবিদ আমি আর একজনও দেখিনি।

এই দাবি করছি কোন যুক্তিতে?

আমরা রাজনীতিবিদদের দেখছি অহরহ। এটাও দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, রাজনীতিবিদ যখন ক্ষমতায় থাকেন, তখন তাঁর বাড়ি-অফিস সবখানে মানুষের থিকথিকে ভিড়। দিনরাত মানুষ গমগম গিজগিজ করে। কিন্তু যখনই তিনি ক্ষমতার চেয়ার থেকে অপসারিত, তখন দেখা যাবে তার আশপাশে কোনো মাছি তাড়ানোর লোককেও পাওয়া যায় না। কিন্তু শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরীই আমার দেখা একমাত্র রাজনীতিবিদ, যাঁর বাড়িতে বা বৈঠকখানায় মানুষ সারা বছরই ভিড় করতেন। তা তিনি বা তাঁর দল ক্ষমতায় থাকুন আর না-ই থাকুন। আর যত দিন তিনি বেঁচে ছিলেন, তাঁর বাড়ির মূল ফটক কখনই বন্ধ দেখিনি আমি।