পর্ব ৩

শিল্পকথা

Looks like you've blocked notifications!

প্রাককথন

শিল্প ও শিল্পী প্রসঙ্গে

 ১৩. তিওদর জেরিকো, এপসম-এ ঘোড়দৌড়, ১৮২১
কাজেই, কোনো ছবির নিখুঁতত্বে দোষ খুঁজে পেলে সব সময়ই দুটো কাজ করা উচিত আমাদের। তার একটি হচ্ছে, শিল্পী যা দেখেছিলেন সেটার বাহ্যিক রূপ বদলে দেওয়ার পেছনে কোনো কারণ রয়েছে কি না এই প্রশ্ন করা। আমাদের এই শিল্পকথার ক্রমন্মোচনের সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের কারণ সম্পর্কে আমরা আরো জানতে পারব। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা পুরোপুরি নিশ্চিন্ত না হচ্ছি যে আমরাই ঠিক, চিত্রশিল্পী নন, ততক্ষণ পর্যন্ত কখনোই কোনো চিত্রকে অশুদ্ধভাবে চিত্রিত বলে দোষারোপ করা আমাদের উচিত নয়। আমরা সবাই এ রকম একটা রায় দিতে প্রায় মুখিয়েই থাকি যে, ‘জিনিসগুলো দেখতে ঠিক ওরকম নয়।’ যেসব ছবি দেখতে আমরা অভ্যস্ত, প্রকৃতি সব সময় অতি অবশ্যই সেগুলোর মতো দেখাবে—এ রকম একটি অদ্ভুত ধরনের চিন্তা করতেই অভ্যস্ত আমরা। অল্প কিছুদিন পূর্বের একটি অত্যাশ্চর্য আবিষ্কারের সাহায্যে সহজেই এর প্রমাণ দেওয়া সম্ভব। 

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে লোকে ঘোড়াকে টগবগিয়ে ছুটতে দেখেছে, ঘোড়দৗড় আর শিকারে অংশ নিয়েছে, এমন সব চিত্রকর্ম আর স্পোর্টিং প্রিন্ট দেখে নয়ন জুড়িয়েছে যেখানে দেখা গেছে অশ্ববাহিনী শত্রুবাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে কিংবা কুকুরের পশ্চাদ্ধাবন করছে; কিন্তু সম্ভবত এঁদের মধ্যে একজনও লক্ষ করে দেখেননি ঘোড়া যখন দৌড়োয় তখন সেটাকে ‘আসলে ঠিক কেমন দেখায়’। ছবি এবং স্পোর্টিং প্রিন্টে সেগুলোকে সাধারণত শূন্যে পুরোপুরি পা ছড়িয়ে দেওয়া অবস্থাতেই দেখানো হয়েছে—ঠিক যেমনটি দেখিয়েছিলেন ঊনবিংশ শতকের মহান ফরাসি চিত্রকর জেরিকো (Théodore Géricault), এপসম-এর ঘোড়দৌড়ের একটি বিখ্যাত ছবিতে (চিত্র ১৩)। 

এর পঞ্চাশ বছর পরে যখন দ্রুতবেগে ধাবমান অশ্বের স্থিরচিত্র গ্রহণের মতো যথেষ্ট দক্ষ ফটোগ্রাফিক ক্যামেরা তৈরি হলো, তখন এসব স্থিরচিত্র প্রমাণ করল যে চিত্রকরেরা এবং জনসাধারণ উভয় পক্ষই এত দিন ভুল করে এসেছেন। ছুটন্ত কোনো ঘোড়াই আমাদের কাছে যেটাকে এত স্বাভাবিক বলে মনে হয় তেমন করে দৌড়োয় না। ঘোড়ার পা যখন মাটি ছেড়ে ওঠে, তখন ঘোড়াটি সেগুলোকে ভেতরের দিকে টেনে নেয় (চিত্র ১৪)। খানিকটা চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারব যে এ রকমটি না হলেই বরং সেটার পক্ষে এগোনো অসম্ভব। কিন্তু তার পরও চিত্রকররা যখন এই নতুন আবিষ্কারটি প্রয়োগ করতে শুরু করলেন এবং ছুটন্ত ঘোড়া আসলে যেভাবে দৌড়োয় সেভাবেই সেগুলোর ছবি আঁকলেন, তখন প্রত্যেকেই এই বলে অভিযোগ করল যে তাঁদের ছবিতে ঘোড়াগুলোকে ভুলভাবে আঁকা হয়েছে।


১৪. এডওয়ার্ড মাইব্রিজ, টগবগ করে ছুটন্ত ঘোড়া, ১৮৭২
সন্দেহ নেই এটা একটা চরম উদাহরণ, কিন্তু একই ধরনের ভুলও আসলে ঠিক ততটা বিরল নয় যতটা বিরল বলে আমরা ভাবি। সনাতন কাঠামো আর রংকেই আমরা একমাত্র সঠিক বিষয় বলে মনে করার পক্ষপাতী। শিশুরা মাঝেমধ্যে ভাবে নক্ষত্র নিশ্চয়ই নক্ষত্র আকৃতির, যদিও আসলে সেগুলো সে রকম নয়। যেসব মানুষ গোঁ ধরে বসে থাকে যে ছবিতে আকাশকে নীল আর ঘাসকে সবুজ হতেই হবে, তারা এসব শিশুর চেয়ে খুব একটা ভিন্ন নয়। ছবিতে ভিন্ন রং দেখলে তারা ভীষণ ক্ষেপে যায়। কিন্তু সবুজ ঘাস আর নীল আকাশ সম্পর্কে আমরা যা যা শুনেছি, সেসব যদি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি এবং পৃথিবীর দিকে এমনভাবে তাকাই যেন আবিষ্কারের নেশায় ভ্রমণে বেরিয়ে এইমাত্র মর্ত্যভূমিতে এসে পৌঁছেছি আমরা এবং এই প্রথমবারের মতো এসব দেখছি, তাহলে হয়তো আমরা আবিষ্কার করব যে জিনিসগুলো রীতিমতো আশ্চর্যজনক। তো, অবরে-সবরে, চিত্রকররা মনে করেন তাঁরা এরকম কোনো এক আবিষ্কারের অভিযানে বেরিয়েছেন। 

দুনিয়াটাকে একেবারে নতুনভাবে দেখতে চান তারা, ছুড়ে ফেলে দিতে চান এসব সনাতন ধ্যান-ধারণা আর পূর্ব-সংস্কার যে রক্ত-মাংস গোলাপি এবং আপেল হলুদ-লাল। পূর্বার্জিত এসব ধ্যান-ধারণা থেকে মুক্ত হওয়া কিন্তু মোটেই সহজ কাজ নয়। তবে যেসব শিল্পী কাজটা সবচেয়ে ভালোভাবে করতে পারেন তাঁদের হাত থেকেই বেরিয়ে আসে সবচেয়ে চমৎকার সব কাজ। তাঁরাই আমাদের প্রকৃতির এমন সব নতুন সৌন্দর্য দেখতে শেখান যেসব সৌন্দর্যের অস্তিত্ব আছে বলে আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি কোনোদিন। তাঁদের অনুসরণ করলে, তাঁদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করলে শুধু জানলা দিয়ে বাইরে একবার তাকানোটাই হয়ে উঠতে পারে একটা শিহরণ-জাগানো অ্যাডভেঞ্চার।

মহৎ শিল্পকর্ম উপভোগের ক্ষেত্রে অভ্যাস এবং পূর্ব-সংস্কার ঝেড়ে ফেলে দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের অনীহার চেয়ে বড় আর কোনো বাধা নেই। পরিচিত একটি বিষয়বস্তুকে অপ্রত্যাশিত কোনো উপায়ে তুলে ধরা কোনো চিত্রকর্মকে প্রায়ই এই খেলো অজুহাতে নিন্দা করা হয় যে সেটাকে সঠিক বলে মনে হচ্ছে না। একটি গল্পকে আমরা যতই কোনো শিল্পকর্মে চিত্রিত হতে দেখি, ততই দৃঢ়ভাবে আমাদের মনে এ-ধারণাটি গেড়ে বসে যে সেটাকে সব সময়ই একইভাবে তুলে ধরতে হবে। বিশেষ করে বাইবেল সম্পৃক্ত বিষয়ে এ ধরনের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে যায়। যদিও আমরা সবাই জানি যে যিশু দেখতে কেমন ছিলেন সে বিষয়ে বাইবেলে কিছু বলা নেই, এবং স্বয়ং ঈশ্বরকে মানবরপে কল্পনা করা যায় না, আর যদিও আমরা জানি যে যেসব প্রতিকৃতি দেখে দেখে আমরা অভ্যস্ত হয়েছি, সেগুলো অতীতের শিল্পীরাই প্রথম সৃষ্টি করেছেন, তার পরেও আমাদের মধ্যে অনেকেই এখনো এ কথা ভাবতে অভ্যস্ত যে এসব সনাতনী রূপ থেকে বিচ্যুতি ব্লাসফেমির সমতুল্য।

সত্যি বলতে কি, বিশেষ করে যেসব শিল্পী পরম আত্মনিবেদনের সঙ্গে বাইবেল পড়েছেন, তাঁরাই তাঁদের মনের মধ্যে সেসব পবিত্র ঘটনার একটা পুরোপুরি নতুন ছবি তৈরি করার চেষ্টা করছেন। যেসব ছবি তাঁরা দেখেছেন তার সব কিছু ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। কল্পনা করার চেষ্টা করছেন শিশু যিশু যখন গোশালায় শুয়ে ছিলেন এবং রাখালরা যখন তাঁকে নৈবেদ্য দিতে এসেছিলেন তখন, বা একজন জেলে যখন সুসমাচার প্রচার করতে শুরু করেছিলেন তখন দৃশ্যটি ঠিক কেমন ছিল। বারেবারেই এমনটি হয়েছে যে মহৎ কোনো শিল্পী যখন পুরোনো কোনো কাহিনী একেবারে নতুন কোনো দৃষ্টিভঙ্গিতে পাঠ করার চেষ্টা করেছেন তখন তা অর্বাচীন মানুষজনকে আহত এবং ক্রুদ্ধ করেছে। এরকমেরই একটি জবরদস্ত কেলেঙ্করিতে একবার জড়িয়ে পড়েছিলেন কারাভাজ্জো (Michelangelo Merisi da Caravaggio)। 

খুবই সাহসী আর বিপ্লবী এই ইতালীয় শিল্পীর কর্মজীবন ছিল ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের সময়। রোমের একটি গির্জার একটি বেদিতে সন্ত ম্যাথুর একটি চিত্র অঙ্কনের দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। কথা ছিল, দেখাতে হবে সন্ত ম্যাথু সুসমাচার লিখছেন, এবং সেই সুসমাচার হচ্ছে ঈশ্বর-বচন, এবং আরো কথা ছিল দেখাতে হবে একজন দেবদূত সেই লেখার কাজে প্রেরণা জোগাচ্ছেন। খুবই কল্পনাপ্রবণ আর আপসহীন তরুণ চিত্রকর কারাভাজ্জো অনেক ভাবনা চিন্তা করলেন—একজন বয়স্ক, দরিদ্র, শ্রমিক মানুষ, সাদাসিধে এক তহশিলদারকে যখন হঠাৎ করে একটি গ্রন্থ রচনা করতে বসতে হলো তখন দৃশ্যটা ঠিক কেমন ছিল। তারপর তিনি সন্ত ম্যাথুর একটি ছবি আঁকলেন (চিত্র ১৫) যেখানে দেখা যাচ্ছে টেকো মাথা, নগ্ন, ধূলিধূসরিত পা নিয়ে তিনি খাপছাড়াভাবে বিশালায়তন গ্রন্থটি ধরে রেখেছেন, এবং লেখার এই অনভ্যস্ত চাপের ফলে তাঁর ভুরু কুঞ্চিত হয়ে উঠেছে। তাঁর পাশে তিনি একটি তরুণ দেবদূতকে আঁকলেন, যাঁকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি এই মাত্র স্বর্গ থেকে নেমে এসেছেন এবং কোমলভাবে সেই শ্রমজীবী মানুষটির হাতটিকে চালনা করছেন, ঠিক যেমন করে কোনো শিক্ষক কোনো শিশুকে দেখিয়ে দেন। 

যে গির্জার বেদিতে ছবিটি বসানো হবে সেই গির্জার কাছে কারাভাজ্জো যখন ছবিটি হস্তান্তর করলেন লোকজন তো তখন—তাদের দৃষ্টিতে—সেই সন্তের প্রতি যথোপযুক্ত সম্মানের ঘাটতি দেখে আঁতকে উঠল। প্রত্যাখ্যাত হলো চিত্রটি, এবং আবার সেটি আঁকার জন্যে চেষ্টা করতে হলো কারাভাজ্জোকে। এবার আর কোনো ঝুঁকি নিলেন না তিনি। একজন দেবদূত আর একজন সন্ত কেমন হতে পারেন সে ব্যাপারে সনাতনী ধারণা থেকে একচুলও বিচ্যুত হলেন না তিনি (চিত্র ১৬)। তার ফলে যা অঙ্কিত হলো সেটাও খুব চমৎকার একটি চিত্র, কারণ কারাভাজ্জো সেটিকে প্রাণবন্ত আর আকর্ষণীয় করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। তবে আমাদের ধারণা, ছবিটি প্রথমটির চেয়ে কম সৎ এবং একনিষ্ঠভাবে আঁকা। শিল্পকর্মকে যাঁরা ভুল কারণে অপছন্দ ও সমালোচনা করেন তাঁরা যে কী ধরনের ক্ষতিসাধন করতে পারেন তারই উদাহরণ এই গল্পটি। আরো যা গুরুত্বপূর্ণ, এটা আমাদের বুঝিয়ে দেয় যে, আমরা যেগুলোকে শিল্পকর্ম বলি সেগুলো কোনো রহস্যময় কর্মকাণ্ডের ফল নয়, বরং সেগুলো মানুষের কাজ, মানুষের জন্যেই তৈরি করা। একটি ছবি যখন কাচ ও ফ্রেম-বন্দি হয়ে দেয়ালে ঝোলে তখন সেটাকে খুব দূরের বলে বোধ হয়। আর, আমাদের জাদুঘরগুলোতে প্রদর্শিত বস্তুসমূহকে, সংগত কারণেই, স্পর্শ করতে নিষেধ করে দেওয়া হয়। অথচ সেগুলো তৈরি করা হয়েছিল ছোঁবার আর নাড়াচাড়া করার জন্যেই, সেগুলো নিয়ে দরকষাকষি হয়েছিল, ঝগড়ঝাটি হয়েছিল, অনেক চিন্তা-ভাবনাও করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে এ-ও স্মরণ করা যাক যে সেগুলোর প্রতিটি খুঁটিনাটি বৈশিষ্ট্যই শিল্পীর নেওয়া সিদ্ধান্তের ফল : তিনি হয়তো সেগুলো নিয়ে মেলা ভাবনা-চিন্তা করেছিলেন, হয়তো ভেবেছিলেন গাছটাকে কি পশ্চাদপটে রেখে দেবেন, নাকি সেটাকে আবার আঁকবেন; হয়তো তিনি উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলেন তাঁর তুলির একটি দৈব আঁচড়ে, যে-আঁচড়ের ফলে একখণ্ড মেঘ পেয়ে গিয়েছিল একটি আকস্মিক, অপ্রত্যাশিত উৎকর্ষ, ওদিকে তিনি হয়তো এই ফিগারগুলো সেখানে রেখেছিলেন কোনো ক্রেতার পীড়াপীড়িতে। 

আমাদের জাদুঘর এবং গ্যালারির দেয়ালে দেয়ালে এখন সার বেঁধে ঝুলে থাকা বেশিরভাগ চিত্রকর্ম এবং ভাস্কর্যই শিল্প হিসেবে প্রদর্শিত হওয়ার জন্য নির্মিত হয়নি। সেগুলোকে নির্দিষ্ট কোনো উপলক্ষে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল, যে উদ্দেশ্যটি লুকিয়েছিল শিল্পীর মনে, যখন তিনি কাজটি শুরু করেছিলেন।
 
১৫. কারাভাজ্জো, সন্ত ম্যাথু, ১৬০২
 
১৬. কারাভাজ্জো, সন্ত ম্যাথু, ১৬০২

অন্যদিকে, যেসব ধ্যান-ধারণা নিয়ে আমরা বাইরের লোকেরা সাধারণত মাথা ঘামাই—সৌন্দর্য, এবং অভিব্যক্তি সংক্রান্ত ধ্যান-ধারণা—সেগুলো কিন্তু শিল্পীরা প্রায় উল্লেখ করেন না বললেই চলে। অবশ্য ব্যাপারটা যে সব সময়ই তাই তা নয়, কিন্তু গত বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে এমনটিই হয়ে এসেছে। এবং এখনো আবার ব্যাপারটি তাই। এর কারণ অংশত এই যে, শিল্পীরা প্রায়শই লাজুক হন, তাঁরা সৌন্দর্যের মতো বড় বড় শব্দ নিয়ে কথা বলাটা অস্বস্তিকর বলে মনে করেন। তাঁদেরকে যদি ‘তাঁদের আবেগ-অনুভূতিকে ব্যক্ত করতে’ এবং একই ধরনের বাজারচলতি আকর্ষণীয় শব্দ ব্যবহার করতে হতো তাহলে নিজেদের কাছে নিজেদেরকে তাঁদের বরং দাম্ভিক বলেই বোধ হতো। এ-ধরনের বিষয় তাঁরা স্বতঃসিদ্ধ বলেই ধরে নেন এবং সেগুলো নিয়ে কথা বলা অর্থহীন বলে মনে করেন। এটা একটা কারণ, এবং মনে হয়, ভালোই একটা কারণ।

কিন্তু আরো একটি কারণ আছে। শিল্পীর বাস্তব, দৈনন্দিন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে এই ধারণাগুলো—আমার ধারণা—বাইরের লোকেরা যা সন্দেহ করে তার চেয়ে অনেক ছোট ভূমিকা পালন করে। শিল্পী যখন তাঁর ছবি নিয়ে পরিকল্পনা করেন, স্কেচগুলো আঁকেন, কিংবা ভাবেন তিনি তাঁর ক্যানভাসটি শেষ করতে পেরেছেন কি না, সেটা এমনই এক সমস্যা যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। হয়তো তিনি বলবেন, তিনি কাজটি সঠিকভাবে করতে পেরেছেন কিনা তাই নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। সেই ছোট্ট সাদাসিধে শব্দ ‘সঠিক’ বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন, সেটা যখন আমরা বুঝে ফেলি তখনই আমরা উপলব্ধি করতে শুরু করি শিল্পীরা ঠিক কী চান।

(চলবে)