কার্ল মার্কস : মানব-স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী
তাঁর জীবন তিনি নিবেদন করেছিলেন মানুষের স্বাধীনতার জন্য। আর সেজন্য তাঁর যা সাধ্য তার সবই তিনি করেছিলেন। বেছে নিয়েছিলেন এমন এক জীবন যে-জীবন চরম অনিশ্চয়তায় ভরা, মানুষের যে-কটি মৌলিক চাহিদা তার সব কটির বঞ্চনায় পরিপূর্ণ, পারিবারিক সদস্যদের অকাল মৃত্যুদীর্ণ; যে-জীবন নিরন্তর অধ্যয়ন, এক্টিভিজম, এবং সর্বোপরি লেখালেখির মাধ্যমে এই মানব স্বাধীনতার অন্তরায়গুলোর কেবল কারণই নির্ণয় করার চেষ্টা করেনি, চেষ্টা করেছিল সেই কারণগুলোর প্রতিকারের পথের দিশা দেবারও। সেই মত ও পথ নিয়ে তুমুল দ্বিমত হয়েছে, হচ্ছে, হবে, কিন্তু তাঁর আন্তরিকতা নিয়ে দ্বিমত করবে, প্রশ্ন তুলবে এমন হিম্মত খুব কম মানুষেরই আছে বলে ধারণা করি।
তিনি কার্ল মার্কস– একজন দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ, ইতিহাসবিদ, রাজনীতি বিষয়ক তাত্ত্বিক, সমাজবিজ্ঞানী, সাংবাদিক এবং বিপ্লবী সমাজবাদী।
২০০ বছর আগে জন্মেছিলেন কার্ল মার্কস, জর্মন রাইনল্যান্ডের ত্রিয়েরে, মে মাসের ৫ তারিখ। তাঁর পিতামাতা ইহুদি ছিলেন; তবে আইনজীবী হিসেবে সহজে নিজের পেশা চালিয়ে নেওয়ার সুবিধার কারণে তাঁর বাবা প্রোটেস্টান্ট হন।
তাঁদের পড়শী লুডভিগ ভন ওয়েস্টফ্যালেন-ও মার্কসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। সেই ভদ্রলোক ছিলেন অত্যন্ত শিক্ষিত একজন উদারপন্থী মানবতাবাদী; সেইন্ট-সায়মনের সমাজবাদী রচনার সঙ্গেও তাঁর ভালো পরিচয় ছিল। তাঁরই কন্যা জেনিকে মার্কস পরে বিয়ে করেন। মার্কসের হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জোহান হিউগো উইটেনবাখ রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং অন্যান্য উদারপন্থী ধারণার সমর্থক ছিলেন। তাঁর প্রভাবও মার্কসের জীবনে কম নয়। বাবার সঙ্গে মার্কসের সম্পর্ক বেশ উষ্ণই ছিল, অন্তত বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তাঁর আমূল পরিবর্তন ঘটার আগ পর্যন্ত, এবং বাবাই ছেলের মধ্যে মানববিদ্যা, এনলাইটেনমেন্ট দর্শন ও ক্লাসিকসের প্রতি ভালোবাসা চারিয়ে দেন যা মার্কস আজীবন লালন করেছিলেন।
১৭ বছর বয়সে মার্কস বন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়শোনা করতে যান, কিন্তু এক বছরের মধ্যেই তাঁকে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি হেগেলের দর্শন এবং হেগেলপন্থী কিছু তরুণের সংস্পর্শে আসেন, যার প্রভাব তাঁর জীবনে গভীর। ১৮৪১ ক্রিস্টাব্দে, মার্কসের পিএইচডি সন্দর্ভ গৃহীত হলেও তিনি তাঁর কাঙ্ক্ষিত চাকরি— বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক— পেলেন না।
এই পরিস্থিতে মার্কস সাংবাদিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েন। নতুন স্থাপিত একটি উদারপন্থী সংবাদপত্রে (Rhenish Gazette বা Rheinische Zeitung) তিনি সামাজিক, রাজনৈতিক, এবং দর্শন-বিষয়ক সমস্যা নিয়ে লিখতে শুরু করেন এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সেই স্বল্পায়ু পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন।
পত্রিকাটির বেশ পাঠকপ্রিয়তা পায়। তবে সেই সঙ্গে সেটি প্রুশীয় সরকারের সেন্সরের মনোযোগও পায়। মোযায়লা উপত্যকার মদ্য উৎপাদনকারীদের দারিদ্র্যের ওপর লেখা মার্কসের একটি ধারাবাহিক বিস্ফোরক লেখাটিই সম্ভবত অত্যন্ত বিপজ্জনক ছিল। যা-ই হোক, একপর্যায়ে, সরকার পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়।
মার্কস এরপর হেগেলের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে একটি সমালোচনামূলক কাজ শুরু করেন এবং তাঁর অর্ধ যুগেরও বেশি বাগদত্তা জেনিকে বিয়ে করেন।
জার্মানিতে স্বাধীনভাবে তাঁর মত প্রকাশ করতে পারছিলেন না বলে তিনি অন্য কোথাও যেতে চাইছিলেন। একটি পত্রিকার কাজ নিয়ে ১৮৪৩ সালের শরতে কার্ল এবং জেনি মার্কস অবশেষে প্যারিস পৌঁছান, এবং শিগগিরই প্রগতিশীল চিন্তা-ভাবনার এই কেন্দ্রটিতে এসে জড়ো হওয়া র্যাডিকাল ও সমাজবাদীদের সঙ্গে মিশতে শুরু করেন। পত্রিকার প্রুশিয়ায় পাঠানো কপিগুলো সেখানকার কর্তৃপক্ষ বাজেয়াপ্ত করে। উদ্যোগটির অর্থ জোগানদাতারা ভয় পেয়ে পিছু হঠেন। অন্যদিকে, বাজেয়াপ্ত প্রথম সংখ্যায় ব্যক্ত কমিউনিস্ট ও বৈপ্লবিক ধ্যান-ধারণার পরপ্রেক্ষিতে প্রুশীয় সরকার সম্পাদকদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের হুলিয়া জারি করেন। মার্কসের জন্য তখন জার্মানিতে ফেরাও অসম্ভব হয়ে পড়ে; তিনি একজন রাজনৈতিক শরণার্থীতে পরিণত হন এবং আমৃত্যু তিনি তাই ছিলেন। যাই হোক, সৌভাগ্যক্রমে, Rheinische Zeitung-এর প্রাক্তন শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ লাভ করায় আপাতত তাঁর চাকরির দরকার হলো না।
১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে ঘটে মানব ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা: মার্কস এবং এঙ্গেলসের বন্ধুত্বের সূত্রপাত।
একজন জর্মন শিল্পপতির পুত্র ছিলেন ফ্রেডেরিখ এঙ্গেলস; এবং মার্কস যেসব জর্মন বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমণ্ডলে ঘোরাফেরা করতেন, তারই সংস্পর্শে এসে এঙ্গেলসও একজন বিপ্লবী সমাজবাদী হয়ে উঠেছিলেন। এঙ্গেলসের একটি লেখা অর্থনীতি সম্পর্কে মার্কসের চিন্তুা-ভাবনার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। শিগগিরিই তাঁরা দুজনে মিলে একটি প্যামফ্লেট রচনায় হাত দিলেন। এই প্যামফ্লেটটিই ১৮৪৫ সালে পবিত্র পরিবার নামে প্রকাশিত হলো। ৩০০ পৃষ্ঠা দীর্ঘ এই প্রকাশনাটিই মার্কসের প্রথম গ্রন্থ।
এদিকে প্যারিসে বসবাসরত কমিউনিস্টদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে প্রুশীয় সরকার ফ্রান্সের ওপর ক্রমাগতভাবে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছিল। শিগগিরই একটি বহিষ্কার আদেশ জারি হলো, এবং মার্কস পরিবার ব্রাসেরসে গিয়ে উঠল।
ব্রাসেলস থাকার অনুমতি পাওয়ার জন্য মার্কসকে কথা দিতে হয়েছিল যে তিনি রাজনীতিতে জড়াবেন না। কিন্তু সেই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার পরও তিনি তিন বছর ব্রাসেলসে থাকতে পেরেছিলেন। এই সময় মার্কস অর্থনীতি ও রাজনীতির বিশ্লেষণমূলক একটি গ্রন্থ রচনার জন্য একজন প্রকাশকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। কথা ছিল, ১৮৪৫ সালে গ্রীষ্ম নাগাদ বইটি লেখা শেষ হবে। ভবিষ্যতে এই বইটি তাঁর বস্তুবাদী দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি বিষয়ক ম্যাগনাম ওপাস পুঁজিতে পরিণত হয়েছিল, জীবদ্দশায় যে-বইটির তিন খণ্ডের মাত্র একটিই তিনি প্রকাশ করে যেতে পেছিলেন।
মার্কস এবং এঙ্গেলসের অন্তরঙ্গতা বেড়ে চলল। এঙ্গেলস ব্রাসেলস এলেন, এবং নতুন শিল্প জগতের প্রাণকেন্দ্র ম্যাঞ্চেস্টারে অর্থনীতি অধ্যয়নের জন্য দুজনে মিলে ছয় হপ্তার জন্য ইংল্যান্ড ভ্রমণে গেলেন ইংল্যান্ড থেকে ফিরে এসে মার্কস অর্থনীতির ওপর তাঁর বইটির রচনা মুলতবি রাখলেন। মার্কস ১৮৪৭ সালের ডিসেম্বরে যখন নব্য গঠিত ‘কমিউনিস্ট লিগের কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার জন্য লন্ডন গেলেন তখন তিনি তাঁর নিজের ধ্যান-ধারণাকে কমিউনিস্ট কর্মকাণ্ডের ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার একটি সুযোগ লাভ করেন। কমিউনিজম কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে সে-ব্যাপারে তাঁর বক্তব্যগুলো তিনি দীর্ঘ বিতর্কের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরেন; এবং শেষে, লিগের মতবাদগুলোকে সহজ-সরল ভাষায় লিখে ফেলার জন্য তাঁকে এবং এঙ্গেলসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারই ফল হচ্ছে ১৮৪৮ সালে প্রকাশিত কমিউনিস্ট ইস্তেহার, এবং সেটাই মার্কসের তত্ত্বের ধ্রুপদী সারসংক্ষেপ হয়ে ওঠে।
সেটা প্রকাশিত হওয়ার আগেই গোটা ইউরোপে বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের আগুন ছড়িয়ে দেওয়া ১৮৪৮ সালের ফরাসি বিপ্লবের কারণে ইউরোপের পরিস্থিতি বদলে যায়। নতুন ফরাসি সরকার মার্কসের বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে, এবং বেলজীয় সরকার তাঁকে মাত্র ২৪ ঘণ্টা সময় দেয় সে-দেশ ত্যাগ করার জন্য। মার্কস প্রথমে প্যারিসে যান, তারপর বার্লিনে বিপ্লবের খবর পেয়ে জার্মানীতে ফিরে আসেন। কোলোনে মার্কস একটি র্যাডিকাল খবরের কাগজ বের করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে থাকেন। যে ব্যাপক গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিপ্লবটিকে সংঘটিত করেছিল, পত্রিকাটি সেটার পক্ষ সমর্থন করে। প্রথম দিকে সেটি বেশ ভালোই চলছিল, কিন্তু বিপ্লবটি ভেস্তে যেতে প্রুশীয় রাজতন্ত্র আবারো খড়গহস্ত হলে মার্কসকেও আবার পথে নামতে হয়। তিনি প্যারিস যাওয়ার চেষ্টা করেন; কিন্তু শিগগিরই তাঁকে সেখান থেকে আবার বহিষ্কার করা হয়; কাজেই ১৮৪৯ সালের ২৪ আগস্ট তিনি ইংল্যান্ডের উদ্দেশে পাড়ি জমান ।
লন্ডনেই বাকি জীবনটা কাটাতে হয় মার্কসকে। গোড়াতে পরিবারটি খুবই দরিদ্র ছিল। এ সময় তিনি বিভিন্নজনকে যেসব চিঠিপত্র লিখেছেন সেগুলো এই অভিযোগ আর খেদোক্তিতে পূর্ণ ছিল যে তিনি যৎসামান্য রুটি ও আলু ছাড়া পরিবারের জন্য কিছুই জোগাড় করতে পারছেন না। তবে, মার্কসের বন্ধু-বান্ধবরা, বিশেষ করে এঙ্গেলস বেশ উদারভাবে তাঁদের নানান জিনিস উপহার দিতেন, পরিবারটির জন্য এই বছরগুলো ছিল ব্যক্তিগত করুণ ঘটনার সময়: তাঁদের চতুর্থ সন্তান শৈশবেই মারা যায়; জেনি আবার গর্ভবতী হন, কিন্তু শিশুটি এক বছরের মাথাতেই মারা যায়। সবচাইতে বড় আঘাতটি আসে তাঁদের পুত্র এডগারের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে। ১৮৫২ সালে থেকে মার্কসের আয় আগের চাইতে অনেকটা নিয়মিত হলো।
কোলোনে তাঁর সঙ্গে The New York Tribune-এর সম্পাদকের পরিচয় হয়েছিল; তিনি তাঁকে পত্রিকাটির জন্য লেখার আমন্ত্রণ জানালেন। মার্কস রাজি হলেন এবং পরবর্তী ১০ বছর পত্রিকাটিতে প্রায় প্রতি সপ্তাহে তাঁর একটি লেখা ছাপা হয়। ১৮৫৬ সালে জেনি উত্তরাধিকারসূত্রে দুটো জায়গা থেকে বেশ কিছু টাকা কড়ি পাওয়াতে পরিবারটির আর্থিক অবস্থার আরো উন্নতি হলো।
১৮৫৭ ও ১৮৫৮ এই দুই বছর তাঁর কর্ম জীবনের সবচাইতে ফলপ্রসূ সময়। এঙ্গেলসকে লেখা চিঠি অনুযায়ী তিনি এ সময় ‘রাত জেগে পাগলের মতো’ ছয় মাস কাজ করে একটি খসড়া পুঁজির ৮০০ পৃষ্ঠা লিখে ফেলেন, যেটা তাঁর জীবদ্দশায় তো প্রকশিত হয়নি। Grundrisseder Kritik der Politischen Okonomie (Foundations for a Critique of Political Economy) নামে সেটি ১৯৩৯-১৯৪১ সালে মস্কোতে প্রকাশিত হয়। পুঁজির প্রকাশিত সংস্করণের চাইতে এই খসড়াটিতে মার্কসের আলোচনার ক্ষেত্র ছিল অনেক বেশি বিস্তৃত।
১৮৬৩ সালের দিকে মার্কস পুঁজির চূড়ান্ত সম্পাদনা শুরু করলেন; সেটার প্রথম খণ্ড ১৮৬৭ সালে প্রকাশিত হলো। এবারও প্রায় সবারই প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল হতাশাব্যঞ্জক, তবে এঙ্গেলস তো একাই সাতটি জর্মন খবরের কাগজে সাতটি অনুকূল রিভিউ লিখলেন।
শেষ অব্দি, শ্রেণি সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে মানব সমাজ বিকশিত হওয়া বিষয়ক তাঁর মূল তত্ত্বের পাশাপাশি মার্কসের অন্যান্য চিন্তা-ভাবনাও মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে থাকে, এবং ১৮৭১ সালের মধ্যে পুঁজির দ্বিতীয় সংস্করণের প্রয়োজন দেখা দেয়। পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৭২ সালে একটি রুশ অনুবাদ বের হলো— রুশ বিপ্লবীদের কাছে মার্কস বিপুল জনপ্রিয় ছিলেন এবং ফরাসি সংস্করণও শিগগিরই বের হলো।
মার্কসের জীবনের শেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হচ্ছে ১৮৭৫ সালে জার্মানির গোথায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের জন্য রচিত ভাষণ। এই কংগ্রেসের উদ্দেশ্য ছিল প্রতিদ্বন্দ্বী জার্মান সমাজবাদী দলগুলোকে একত্রিত করা, এবং সেই উদ্দেশ্যে একটি সাধারণ প্ল্যাটফরম দাঁড় করানো। মার্কস বা এঙ্গেলস কাউকেই ‘গোথা প্রোগ্রাম’ নামের এই সাধারণ প্ল্যাটফরম তৈরির ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি এবং বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র বলে মার্কস যা মনে করতেন তা থেকে অনেক বিচ্যুতি সেখানে লক্ষ করে তিনি ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন।
ফলে, প্রোগ্রামটি সম্পর্কে তিনি বেশ কিছু সমালোচনামূলক লেখা লিখলেন এবং জর্মন সমাজবাদী নেতাদের কাছে সেগুলো পৌঁছে সে চেষ্টা করলেন। মার্কসের মৃত্যুর পর এই রচনাগুলো Critique of the Gotha Programme নামে প্রকাশিত হয়, এবং ভবিষ্যৎ কমিউনিস্ট সমাজ সম্পর্কে মার্কসের বিরল ভাষ্যগুলোর অন্যতম হিসেবে তা গণ্য হয়।
১৮৮১ সালে মার্কসের প্রিয়তমা স্ত্রী জেনি দীর্ঘ রোগ ভোগের পর মারা যান। মার্কস নিজেও তখন অসুস্থ ছিলেন; এবার নিঃসঙ্গ হলেন। ১৮৮২ সালে তাঁর কন্যা জেনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন; ১৮৮৩ সালের জানুয়ারিতে তাঁর মৃত্যু হয়। মার্কস নিজে ব্রংকাইটিসে ভুগে ১৮৮৩ সালের ১৪ মার্চ মৃত্যুবরণ করলেন।
মার্কসের মৃত্যুর পর এঙ্গেলস তাঁর বন্ধুর অসমাপ্ত রচনাগুলো- বিশেষ করে পুঁজির দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড— শেষ করার কাজে নামেন।
আগেই বলা হয়েছে মানব স্বাধীনতার পক্ষের এক সাহসী সৈনিক ছিলেন মার্কস। তাঁর সেই ‘সৈনিক’ জীবনে তিনি পেয়েছিলেন দুই বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা, তাঁর স্ত্রী জেনি ও বন্ধু, সহকর্মী এঙ্গেলস। মার্কসের জীবনে সবচাইতে অপছন্দের বিষয় ছিল দাসত্ব, আর তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র ছিল: `De omnibus dubitandum’ (সব কিছুর ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতে হবে, সন্দেহ করতে হবে); এবং কে না জানে (যদিও অনেকেই মানে না যে), প্রশ্নই জ্ঞানের পূর্বশর্ত? স্বাধীনতার বা মুক্তির প্রথম সোপান?
মানব-স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী এই মণীষীকে দ্বিশততম জন্মবার্ষিকীর প্রাক্কালে প্রণতি জানাই।
(এ-লেখায় পিটার সিঙ্গার রচিত মার্কস : আ ভেরি শর্ট ইন্ট্রুডাকশন এবং রিচার্ড পি আপেলবম রচিত কার্ল মার্কস থেকে প্রভূত সাহায্য নেওয়া হয়েছে।)