‘সনাতন গল্প’ নিয়ে চিপাচসের আয়োজন

Looks like you've blocked notifications!

গত ২৭ নভেম্বর ২০১৮ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে চিত্রালী পাঠক-পাঠিকা চলচ্চিত্র সংসদ, চিপাচস আয়োজিত ৪৮তম মুক্ত আলোচনার নির্বাচিত ছবি ছিল ‘সনাতন গল্প’। ছবি দেখার পর আমন্ত্রিত বিশিষ্ট লেখক ও চিত্রসমালোচক বিধান রিবেরু, অতিথি বক্তা অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বারক্ আলভী, উপস্থিত দর্শক এবং পরিশেষে পরিচালক, নাট্যজন মাসুম আজিজ ছবি নিয়ে কথা বলেন এবং দর্শকদের প্রশ্নের জবাব দেন ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন আসিফ রহমান সৈকত । চিপাচসের সভাপতি সুশীল সূত্রধর লিখিত বক্তব্যে চিপাচসের দীর্ঘ ৪২বছর ধরে চলমান বাংলাদেশে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি নিয়ে মুক্ত আলোচনার তথ্য ও গুরুত্ব তুলে ধরেন । অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নুৎফা বিনতে রব্বানী। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন চিপাচস সহসভাপতি বাচিক শিল্পী জয়ন্ত রায় ।

মুখ্য আলোচক বিধান রিবেরু ছবি নিয়ে তাঁর বিশ্লেষণমূলক  বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, “সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘সনাতন গল্প’ দীর্ঘ ২২ বছর পর মুক্তি পায় পাবনার মধুমিতা সিনেমা হলে ১৯ অক্টোবর ২০১৮।  নাট্যজন ও  পরিচালক মাসুম আজিজ এই সরকারি অনুদানের ছবি নিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে। তবে তাঁর আত্মায় সততা ছিল বলেই দুই দশক পরে হলেও ছবিটি সম্পন্ন করেছেন। সকলকে জানিয়ে দেন, বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি সৎ পরিচালক। ছবিতে তিনি শোষিত জেলে সম্প্রদায়ের কথা বলেছেন। আর শেষ পর্যন্ত প্রশ্ন জারি রেখেছেন শোষক মহাজনরা কি এভাবেই শোষণের ফাঁদে ফেলতে থাকবে দরিদ্র মানুষকে?”

বিধান রিবেরু আরো বলেন, “পরিচালকের বক্তব্যটাই আসল এবং সেটা তিনি ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। তবে এ ধরনের গল্প, মহাজনের ঋণের জালে আটকা পড়ে জেলেদের সারা জীবন দাসের জীবনযাপন করতে হয়, অনেকবারই নানাভাবে বাঙালি পাঠক ও দর্শক পড়েছে ও দেখেছে। ছবির নাম যেহেতু পরিচালক দিয়েছেন 'সনাতন গল্প’, সেই কারণে  গল্পটারও দোষ কেটে যায়। পরিচালক মূলত কার্ল মার্ক্সের কথারই যেন প্রতিধ্বনি তুলেছেন, মানব সভ্যতার ইতিহাস শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস।”

এ সময় তিনি পরিচালককে অভিনন্দন ও চিপাচসকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানের শেষে কথা বলেন পরিচালক মাসুম আজিজ এবং দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন তিনি।

পরিচালক মাসুম আজিজ ছবিটি তৈরির অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জানান, ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে সরকারি অনুদান ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলেন তিনি। ওই সময়ের নিয়ম অনুযায়ী এর বাইরে ১০ লাখ টাকার এফডিসির সহায়তা পাওয়ার কথা। পরে অবশ্য এই সহায়তাও তিনি পাননি।

মাসুম আজিজ বলেন, ‘আমি অনুদান বরাদ্দ পাওয়ার পরই ছবির শুটিং শুরু করেছিলাম। প্রথম কিস্তিতে তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা পাই তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে। সিনেমাটির ২৫ ভাগ দৃশ্য ধারণের পর প্রশাসনিক ও আর্থিক জটিলতার কারণে শুটিং বন্ধ হয়ে যায়। তখন সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন রওশন জামিল, শমী কায়সার, তৌকীর আহমেদ, নাজমা আনোয়ার, শহিদুল আলম সাচ্চু, ফজলুর রহমান বাবুসহ আরো অনেকে। পাবনায় শুটিংও শুরু হয়েছিল। মাঝে অনেক চেষ্টা করেও আর্থিক কারণেই শুটিং করতে পারিনি। আগে যাঁদের নিয়েছিলাম, তাঁদেরও আর রাখতে পারিনি। পুরোনো ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজও বাদ হয়ে যায়।’

মাসুম আজিজ আরো বলেন, ‘২০১৬ সালে হাতে আসে বাকি বরাদ্দের চেক, অর্থাৎ অবশিষ্ট আট লাখ টাকা (’৯৭ সালে প্রথম কিস্তিতে তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। মোট ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা)। এ টাকার ভেতর ছবির শুটিং শেষ করতে হয়। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী এফডিসির সাপোর্ট পাওয়া যায়নি। ২০১৭ সালে এর দৃশ্যধারণের কাজ শেষ হয়। আগের অভিনয়শিল্পীরা এতে আর অভিনয় করেননি। নতুন শিল্পীদের কোনো টাকা দিতে পারিনি। অনেকেই আমার অনুরোধে কাজ করে দিয়েছেন। নিজেকেই সবকিছু করতে হয়েছে। ছবির সংগীত পরিচালনাও আমি করেছি। বাজেট কম থাকাতে এভাবেই কাজ করতে হয়েছে।’

‘সনাতন গল্প’ ছবিটিতে অভিনয় করেছেন মাসুম আজিজ, সাবিহা জামান, উৎস জামান, জয়রাজ, তুষার মাহমুদ, তাহমীনা কৃতিকা প্রমুখ।