গল্প
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ!
অনেক দিন আগের কথা। নাসার বিজ্ঞানীরা খুব খুশি। তাঁরা পৃথিবীর যমজ গ্রহ শুধু আবিষ্কার করেই ক্ষান্ত হননি, প্রাণের উপস্থিতিও টের পেয়েছেন। যে মহাকাশ যান তাঁরা পাঠিয়েছিলেন তা একদম নির্ভুল তথ্য দিচ্ছে।
অবশেষে পৃথিবীর তাবৎ ভালো মানুষদের জোট আনন্দে হাফ ছাড়ছে। তাদের ধারণা হয়েছে, হয় তারা ওই যমজ গ্রহে যাবে। নতুবা পৃথিবীর শয়তান মানুষগুলো যাবে। তাদের ইচ্ছে, নিজেদের পৃথিবীতে নিজেরাই থাকবে। শয়তানগুলোকে পাঠিয়ে দেবে সেখানে।
কিন্তু হলো আসলে উল্টোটা। শয়তানগুলো এতই শক্তিশালী ও কূটকৌশলী যে, তারা নিজেরাই পৃথিবীতে থেকে গেল। পৃথিবীটাকে লুটেপুটে খেল। আর জোরজবস্তি ভালো মানুষগুলোকে পাঠিয়ে দিল যমজের কোলে। পৃথিবী এখন শয়তানের। পৃথিবীর যমজ এখন ভালোদের।
এই যমজের খোঁজ মেলায় কিন্তু একটা অন্যরকম ঘটনা ঘটে গেল। এতদিন পৃথিবীতে নাসার গবেষকরা মনে করতেন, পৃথিবীর পর আর যদি কোথাও প্রাণের সন্ধান পাওয়া যায় তো সেটা মঙ্গল গ্রহে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু, বড় বড় দাড়ি-গোঁফওয়ালা গবেষকরা আজও একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি এ ব্যাপারে। সবাই মনে করছিল, একদিন মঙ্গলগ্রহ থেকে খবর আসবে, এই গ্রহটা জীবনধারণের জন্য উপযোগী এবং পৃথিবীর পর এখানেই জীবন ধারণ করা সম্ভব হবে। অথচ, কোথা থেকে হঠাৎ করেই উড়ে এসে জুড়ে বসেছে যমজ। এটা কি অন্যরকম একটা বড় ঘটনা নয়?
ভিনগ্রহে যারা থাকে তারা হলো এলিয়েন। তো ভালো মানুষ যারা পৃথিবীর যমজে গেল তারাও কালের পরিক্রমায় এলিয়েন হয়ে গেল। এই এলিয়েনদেরও কেউ কেউ আরো অধিকতর এলিয়েন হয়ে গেল। মানে তাদের মধ্যে আর মানুষের ভাবচিহ্ন পাওয়াই গেল না। তবুও, আমাদের চোখে তারা মানুষই থাকবে এই গল্পে। মানুষের উত্তরাধিকারীরা মানুষ হবে না তো কি অমানুষ হবে! অবশ্য, মানুষ হয়েও যারা মানুষের মতো কাজ করে না তাদেরকে ব্যাকরণের ভাষায় অ-মানুষ বলা যেতে পারে। কেউ কেউ আজকাল না-মানুষও বলছেন।
আস্তে-ধীরে সেই গ্রহে অসংখ্য সাম্রাজ্য গড়ে উঠল, অনেক সাম্রাজ্য ভেঙেও গেল। ধীরে ধীরে এক সাম্রাজ্যের সঙ্গে আরেক সাম্রাজ্যের মারামারি-হানাহানি শুরু হলো। পৃথিবীর যমজ, তাই পৃথিবীর মতো না হলে কি চলে! তবে, পৃথিবীর মতোই সেখানেও কোনো কোনো রাজ্যে শান্তি আছে। আবার কোথাও কোথাও সংঘাত আছে। শান্তি-সংঘাত এই দ্বন্দ্ব নিয়ে চলতে চলতে অনেক বর্ষ পার করে ফেলল যমজ।
তো সেই যমজে একটা রাজ্যের নাম রঙ্গদেশ। সেখানে খালি সংকট লেগে থাকে বলে একজন কবি লিখেছিলেন-“সংকট হলো কোনো কিছুর সঙ্গে ‘সঙ’ করলে ‘কট’ খেতে হয়। আমরা ‘কট’ (ধরা) খেয়ে গেছি।” তা রঙ্গ যে দেশের নাম, সে দেশের লোক তো সঙ করবেই!
রঙ্গদেশের লোকেরা নানা বিষয়ে সংকটে পড়ে। আবার কোনো এক অসাধারণ কারণে তারা সংকট থেকে মুক্তিও পায়। তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা নিজেরাই সমস্যার সমাধান করে ফেলে। সমস্যার সমাধান তারাই করতে পারে যারা চিন্তাশীল ও বুদ্ধিমান। সংকটে পড়লে লোকে চিন্তা করে, তখন তার বুদ্ধি খোলে। তবুও যারা এই বুদ্ধি খোলাদের সংকটে ফেলে তারা এতই শক্তিমান যে শক্তি থাকার কারণে এদের মাঝেমধ্যে মাথামোটা মনে হয়। কী দুর্দান্ত ব্যাপার, একই সময়ে, নিজেদের সংকটকালে কারো যখন বুদ্ধি খোলে, তখন অপর পক্ষ শুধু ভুল করে বলে মাথামোটা হয়ে যায়। প্রকৃতির বিচার বড়ই অদ্ভুত।
তো রঙ্গদেশে একদা ভীষণ এক মহামারি দেখা দিল। এই মহামারিতে অবশ্য লোকজনের খাদ্য সংকট হয়নি। তবে, বহু বছরের জন্য রাজ্যটার বুদ্ধির সংকট হয়ে গেল। খাদ্যের অভাব কোনো না কোনোভাবে পূরণ করা যায়।কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তির অভাব হলে, কিংবা ভুল লোকের কাঁধে বুদ্ধি চর্চার দায়িত্ব পড়লে দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষতি হয় এবং সেই ক্ষতি সহজে পূরণ করা যায় না।
আচ্ছা বলেন তো কোন জিনিসটা না থাকলে যে কোনো অঞ্চলে বুদ্ধিবৃত্তিক সংকট হয়? জানি, সবাই-ই বলতে পারবেন। আচ্ছা ঠিক আছে, প্রশ্নটা উইথড্র করে নেওয়া হলো। এত সহজ প্রশ্ন করাটা ভুল হয়ে গেছে।
রঙ্গদেশের শিক্ষাব্যবস্থার দশা খুবই করুণ। কোনভাবেই সেই দশা ঠিক করা যায় না। একটা সময় সেই দেশে প্রচুর নকল চলত। ছেলেমেয়েরা বাড়ি থেকে লিখে নিযে গিয়ে পরীক্ষার খাতায় হুবুহু সেটা তুলে দিত। এই প্রাদুর্ভাব একটা সময় প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। এর পর হঠাৎই দেখা দিল ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস’ নামক আরো এক ভয়ঙ্কর প্রাদুর্ভাব।
এই পদ্ধতিটা এক কথায় এমন, যে প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হয়, সেটা আগের রাতে বা তার আগের রাতে বাইরে বেরিয়ে পড়ে। প্রশ্নটার হাত পা থাকে। সে নিজের ইচ্ছাতেই সবাইকে ফাঁকি দিযে গোপন জায়গা থেকে লোকালয়ে আসে। লোকালয়ে আসার পর সেটা আরো গোপন জায়গায় চলে যায়।
লোকে জানে, সাধারণত গোপন স্থানে অবৈধ কাজ হয়। প্রশ্নপত্র নিজেও চায়, তাকে নিয়ে অবৈধ কাজ হোক। তাহলে তাকে নিয়ে আলোচনা হবে, সে আরও জনপ্রিয় হবে। এভাবে জনপ্রিয় হওয়ার খায়েস জাগায় প্রশ্নপত্র একটা সময় ফেসবুক-টুইটার-ফাইবার-জিমেইল-ইয়াহু-হটমেইল নামক বিভিন্ন ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের একটা করে অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলল। তার প্রসারের গতি বেড়ে গেল। তার এক একটা পত্রলেখ খালি লাইক-শেয়ার-কমেন্ট-ফরোয়ার্ডে ছয়লাব। প্রশ্নপত্র তো গোপন জায়গা থেকে বাইরে বের হয়ে এ জন্যই নিজেকে ফাঁস করতে চেয়েছিল। সে সফল হয়ে গেল।
এই ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র কিনতে মানুষকে প্রচুর অয়েল খরচ হলো। রঙ্গদেশের কারেন্সিকে বলা হয় অয়েল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পরীক্ষায় এই প্রশ্নটা আসে। আজও পর্যন্ত নাকি কেউ ভুল করেও ভুল উত্তর দেয়নি। সবাই সঠিক উত্তরটা সঠিকভাবেই দিতে পেরেছে যে, রঙ্গদেশের কারেন্সির নাম ‘অয়েল’।
যাই হোক, প্রশ্নপত্র যে শুধু শিক্ষা সংক্রান্ত পরীক্ষাতেই ফাঁস হতো, তা নয়; চাকরি সংক্রান্ত পরীক্ষাতেও দেখা যেত একই রকম দৃশ্য। শিক্ষাজীবন শেষে মানুষ চাকরিজীবনে ঢোকে। উভয় ক্ষেত্রে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার অর্থ হলো, কারো কারো পুরো জীবনটাই এই প্রশ্নপত্রের সঙ্গে গোপনে মোলাকাত করে কেটেছে। আর সর্বত্র সে উত্তীর্ণ হয়েছে, বুক ফুলিয়ে হেঁটেছে, মানুষকে হামবড়া ভাব দেখিয়েছে।
তো শিক্ষা-সংক্রান্ত পরীক্ষাগুলোতে ফাঁসকৃত প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকরিসংক্রান্ত পরীক্ষাতেও কারো কারো মনে হয়, এই একটা ভালো চাকরি করার জন্যই তো সারাটা জীবন প্রশ্ন কিনতে অয়েল ঢাললাম। তাহলে চাকরির পরীক্ষাতেও ঢালি। ঢালা হলো। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর তার প্রথম লক্ষ্য দাঁড়াল, সারা জীবনে অন্যের পেছনে খরচ করা অয়েলটা উঠিয়ে ফেলা। তখন সে আরো বেশি চুরি-ডাকাতি শুরু করল। একদিন সেও প্রশ্নপত্র ফাঁস করা শুরু করল। রঙ্গদেশে এই তামাশা তাই বন্ধ হলো না।
আর সব দেশে যেমন সরকার আছে, তেমনি রঙ্গদেশেও সরকার আছে। রাজা শাসিত সরকার। রাজার অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী আছেন। প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত বিষয়-আশয় জানতে রাজা একদিন রাজসভায় বৈঠক ডাকলেন। সর্বত্র আওয়াজ উঠল, আজই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সকল কূলকিনারা হয়ে যাবে। সবাই আশাবাদী। বৈঠক শেষ। শিক্ষামন্ত্রী রাজ্যবাসীকে জানালেন, কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। সব গুজব। আপনারা গুজবে কান দেবেন না। শিক্ষামন্ত্রী তো ঠিকই বলেছেন। যে প্রশ্নপত্র স্বেচ্ছায় বেরিয়ে পড়ে, সে যে ফাঁস হয়েছে এমন তথ্য শিক্ষামন্ত্রী বা মন্ত্রিপরিষদের কাছে কীভাবে থাকবে!
এভাবেই চলল কয়েক বছর। হঠাৎই আরেকটা বছরে গিয়ে নতুন এক ধাঁধার তৈরি হলো। এবার ফাঁস হলো ডাক্তার তৈরি করা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। আবারও রাজ্যজুড়ে তোলপাড়! লোকে বলাবলি শুরু করল, হায় হায় জীবন থাকতে ওই সব ডাক্তারের কাছে আমরা যাব না। এই ডাক্তারদের কাছে আমাদের মেরে ফেলবে!
হঠাৎ করেই আশার সঞ্চার হলো। রঙ্গদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুবই তৎপর। তাদের তৎপরতার কারণে জানা গেল, প্রশ্নপত্র নিজে নিজে ফাঁস হয় না। তার কোনো হাত-পা নেই। সে নিজে নিজে বেরও হতে পারে না। তাকে কেউ বের করে জনসমাজে ছেড়ে দেয়, গোপনভাবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতই ভালো যে, তারা এর হোতাকেও বের করে ফেলল তিন দিনের মধ্যে। এই হোতাও খুবই হোমড়াচোমড়া লোক। খুবই আধুনিক।
ওই হোমড়াচোমড়া ব্যাটা রাজ্যের এক খুবই গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরে কাজ করত। সেখানেই তার সকল আধুনিক ও ডিজিটাল মেশিন বসানো ছিল। কীভাবে কীভাবে যেন সে এখান থেকে বসেই রাজ্যের সব পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে দিত।
রঙ্গদেশে এক অদ্ভুত নিয়ম ছিল। ডাক্তার তৈরি করার জন্য যে শিক্ষা গ্রহণ বা বিতরণ হতো, সেটার দেখভাল শিক্ষা মন্ত্রণালয় করত না। করত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অসম্ভব গুণী ও করিৎকর্মা এক মন্ত্রণালয়। ডাক্তার তৈরি করা পরীক্ষার ফলাফল তারা মাত্র তিনদিনের মধ্যে দিয়ে দিল। সবাই এত এত কিউট আর এত এত ভালো পড়ালেখা করছে যে, স্মরণকালের রেকর্ডসংখ্যক নম্বর উঠে গেল পরীক্ষায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই আগামীর ডাক্তারদের প্রশংসার জলে ভাসিয়ে দিল। তাদের ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য নেশন’ ঘোষণা করল।
তো পরীক্ষা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তো কথা এ কান, ও কান হয়ে গেল যে, এই প্রশ্নপত্রটা ফাঁস হয়েছিল। এটা শোনার পরই তো অনেক পরীক্ষার্থীর মাথা খারাপ হয়ে গেল। এ রকম সারা রাজ্যেই অনেকের মাথা খারাপ হলো। সব মাথা খারাপ হওয়া লোকজন মিলে সিদ্ধান্ত নিল- প্রতিবাদ! আন্দোলন! পরীক্ষা বাতিল করতে হবে!
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী একটু রাগী ও গম্ভীর টাইপের। তবে, তিনি বেশ স্বাস্থ্যবান। তাই ধীরে ধীরে হাঁটেন। তাকে দেখে সবাই একটু ভয়ডর করে। তিনি তাঁর মন্ত্রণালয়ের লোকজনকে যা খুশি নিজেদের পক্ষে ইতিবাচক কথাবার্তা বলার নির্দেশ দিলেন। মন্ত্রণালয়ের লোকজন তাই বলা শুরু করল, যারা সারা বছর পড়েলেখা করেনি, তারাই আন্দোলনের নামে বাহানা করছে। কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। প্রশ্নপত্রের কি হাত-পা আছে নাকি যে ফাঁস হবে!
মন্ত্রণালয়ের লোকজনের কথায় কাজ হলো না। আন্দোলন তবুও চলল। উপায় না দেখে স্বাস্থ্যবান স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই একদিন বললেন- কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। আন্দোলন করে কোনো লাভ হবে না। রাজ্যের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এরা ষড়যন্ত্র করছে। যারা উত্তীর্ণ হয়েছে, তারাই জাতির ভবিষ্যৎ। তারাই আগামীর ডাক্তার। তাদের হাতেই জাতি নিরাপদ।
এরপরও যারা রাস্তায় নামবে তাদের ধরে ধরে ঠেঙানোর নির্দেশ দিলেন রাজ্যের শৃঙ্খলা রক্ষামন্ত্রী।
মাথা খারাপ হওয়া পরীক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক ও আর কিছু বড় বড় মাথা খারাপ হওয়া মানুষজন প্রতিবাদ জারি রাখল। তারা কারো কোনো কথার তোয়াক্কা করল না। তাদের একটাই কথা- স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্য বলছেন না। তিনি খুব কনফিডেন্টলি সত্য এড়িয়ে যাচ্ছেন। তাই তারা প্রতিদিনই মাঠে নামে। আর রাজ্যের শৃঙ্খলা রক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের গৌরবের প্রতীক, গুণী আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ইচ্ছামতো ঠেঙায়। ইচ্ছামতো পেটায়। তারা অনেক ভালো, এটা আমরা আগেই জেনেছি। তাই তারা গালাগালি করলে এই মাথা খারাপ উচ্ছৃঙ্খল ছেলেমেয়েগুলো তা মাথা পেতে মেনে নেয়। মার তো খায়ই!
একদিন হঠাৎ জানা গেল, এই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে যে হোমড়াচোমড়া সরকারি চাকরি করা লোকটা গ্রেফতার হয়েছিল, সেই লোকটার ছুটি হয়ে গেছে। ‘মন্ত্রী মশাই আমার ছুটি হয়েছে, মন্ত্রী মশাই আমার ছুটি হয়েছে’ বলতে বলতে পশ্চাতের ফোঁড়াজনিত ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে লোকটা ছুটি নিয়ে চলে গেছে। তাকে আর পৃথিবীর যমজ অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া গেল না। তবে, ছুটি নেওয়ার আগে লোকটা নাকি নামিদামি বাবুদের নামে সালাম দিয়ে গেছে বলে শোনা যায়।
নাহ, মাথা খারাপ লোকগুলোর চিল্লাচিল্লি বৃথা যায় না। হঠাৎ কেউ একদিন মিছিল থেকে চিৎকার করে ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই’। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে রাজ্যের মিডিয়াগুলোও এই খবরটা ফলাও করে প্রকাশ-প্রচার করে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ওপর চাপ বাড়তে থাকে। তার উচ্চ রক্তচাপ ছিল। চাপের ওপর চাপ, এমন চাপাচাপি বেশ ভালোই পীড়া দিল তাকে। এমতাবস্থায় তার চলাফেরা করাটা আরো মুশকিল হয়ে গেল। রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তাকে সবকিছু ভাবতে বললেন এবং না পারলে পদত্যাগ করতে বললেন। পরে, স্বাস্থ্য খারাপজনিত কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করলেন। কিন্তু কোনো মিডিয়াতে তাঁর পদত্যাগের কারণটা শিরোনাম হলো না। শিরোনাম হলো- ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ'!
আমজনতা বুঝে নিল প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে এটা মন্ত্রী স্বীকার না করলেও পদত্যাগের পেছনে সেটাই আসল কারণ। এই ধারণাটাই কীভাবে কীভাবে যেন রাজ্যের মন্ত্রী থেকে মিসকিন সবার মধ্যেই বদ্ধমূল হলো। পরে যিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলেন, তিনি বহুদিন ধরে এই পদটা পাওয়ার নেশায় ঘুরঘুর করছিলেন। তাঁর স্বপ্ন পূরণ হলো। যদিও তিনিও দায়িত্ব গ্রহণের পর বললেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি, তবে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করব। তিনি পরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন, কারণ তিনি তো জানেন আগের মন্ত্রী মশাই পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থাটা করলেই টিকে যেতেন। তিনি তাই সাবধানে পা ফেললেন।
একদিন আন্দোলন শেষ হলো। মানে আন্দোলনের জয় হলো। ডাক্তার তৈরি করার পরীক্ষা ঠিকই আবার অনুষ্ঠিত হলো। তবে, রঙ্গদেশে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার তামাশা বন্ধ হলো না!
বিভিন্ন পরীক্ষার মৌসুমে এভাবে রঙ্গদেশে আন্দোলন-অনশন চলত। আর মন্ত্রীরা বরাবর প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগকে গুজব বলতেন।
একদিন জানা গেল- আসলে রঙ্গদেশ নামে কোনো রাজ্য ছিল না, এটা একটা গুজব ছিল!