জন্মদিন

নোবেল পাওয়ার জন্য লেখালেখি করিনি : গুন্টার গ্রাস

Looks like you've blocked notifications!
গুন্টার গ্রাস (অক্টোবর ১৬, ১৯২৭-এপ্রিল ১৩, ২০১৫)। ছবি : দ্য গার্ডিয়ান

গুন্টার গ্রাস জন্মেছিলেন ডানজিগে ১৯২৭ সালের ১৬ অক্টোবর। গ্রাসের জন্মস্থান ডানজিগ বর্তমানে পোল্যান্ডের গিডেনস্ক শহর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বাধ্যতামূলকভাবে অংশ নিতে হয়েছিল তাঁকে। যুদ্ধবন্দি হিসেবে সাজাও খেটেছেন। ছাড়া পেয়ে শ্রমিক হিসেবে কয়লাখনিতেও কাজ করেছেন। পরে শুরু করেন লেখালেখি। ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য টিন ড্রাম’। এর পর একের পর এক প্রকাশিত হয় ‘ক্যাট অ্যান্ড মাউজ’ (১৯৬১), ‘ডগ ইয়ার্স’ (১৯৬৫)। গ্রাসের এই তিনটি উপন্যাস পরিচিত ডানজিগ ট্রিলজি নামে।

২০০৬ সালে তাঁর প্রথম আত্মজীবনী ‘পিলিং দ্য অনিয়ন’ প্রকাশিত হওয়ার পর জার্মানিতে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। কারণ, সেখানে গ্রাস লিখেছিলেন তিনি হিটলারের ওয়াফেন-এসএস বাহিনীর সদস্য ছিলেন। ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল জার্মানির লুবেকে ৮৭ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তবে এর আগে বিশ্বব্যাপী রাজনীতিসচেতন লেখক এবং শিল্পী হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৯৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান গ্রাস। তবে শুধু লেখালেখিতেই নিজেকে বেঁধে রাখেননি গ্রাস। কবিতা ও উপন্যাসের পাশাপাশি লিখেছেন মঞ্চনাটক। গ্রাফিক ডিজাইন করেছেন, ভাস্কর্য তৈরি করেছেন, ছবি এঁকেছেন।

আজ গুন্টার গ্রাসের ৮৮তম জন্মদিন। জনপ্রিয় জার্মান স্পিগেল পত্রিকায় ২০১০ সালের ২০ আগস্ট গুন্টার গ্রাসের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। স্পিগেলের পক্ষে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন ভকার হেজ ও কাতজা তিম। মৃত্যুর পাঁচ বছর আগে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে নিজের লেখালেখি, জীবন-দর্শন এবং রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছিলেন গ্রাস। সেই সাক্ষাৎকারটির চুম্বকাংশ এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য

স্পিগেল : জার্মানির ইতিহাসের সঙ্গে আপনার শিকড় জড়িয়ে আছে। কিন্তু আপনি সব সময়ই জাতীয়তাবাদের বদ্ধমূল ধারণার বিরোধিতা করেছেন। জার্মান জাতীয়তাবাদের এখন যে নতুন উৎসাহ এসেছে ফুটবল বিশ্বকাপের জোয়ারে সেটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

গুন্টার গ্রাস : আমি সব সময় বিশ্বাস করেছি এবং বলেছি যে, জাতীয়তাবাদবিষয়ক আলোচনা শুধু ডানপন্থীদের ওপর ছেড়ে দিলে হবে না। আমরা যদি জাতীয়তাবাদ বিষয়ে আমাদের বিশ্বাসকে ঠিকভাবে যাচাই করে নিই, তবেই শুধু আমরা ইউরোপে একটা দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারব। কিন্তু বিশ্বকাপের গ্যালারিতে বসে মানুষ যখন ছোট ছোট জার্মান পতাকা ওড়ায়, সেটার মধ্যে একটা খেলোয়াড়ি উৎসাহ রয়েছে। আমি অনেক মাকে দেখেছি, ছোট ছোট বাচ্চার মুখে কালো, লাল আর সোনালি রেখা এঁকে দিয়েছেন। এটা উদ্দীপনা প্রকাশের একটা রূপ।

স্পিগেল : আপনার সময়ের অনেক লেখকই রাজনৈতিক বিষয়ে বারবার খোলামেলা বক্তব্য দিয়েছেন। নতুন লেখকদের ক্ষেত্রে কি এ বিষয়ে ঘাটতি দেখতে পান?

গুন্টার গ্রাস : লেখকদের ইতিহাস থেকে নতুনরা যদি শিক্ষা না নেয়, তাহলে সেটা অনুশোচনীয় হবে। ভেইমার রিপাবলিকের মতো ভুল করা তাঁদের উচিত হবে না এবং নিজেদের জগৎ নিয়ে ব্যস্ত থাকাটা হবে বোকামি। পশ্চিম জার্মানির গণতান্ত্রিক উত্তরণের ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত এই প্রবণতা এখন কমতে শুরু করেছে। অর্থনৈতিক সংকট, দারিদ্র্যপীড়িত শিশু, অবৈধ অভিবাসীদের দ্বীপান্তরে বাধ্য করা, ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধান। এসব ক্ষেত্রে নতুন লেখকরা তাঁদের মতামত জানাতে পারেন এবং জনমত গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখতে পারেন।

স্পিগেল : আপনি একসময় রাজনৈতিক বিষয়ে সোচ্চার থাকলেও এখন অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করছেন। আপনার সময়ের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে লেখক মার্টিন ভালসার আফগানিস্তান থেকে জার্মান সেনা সরিয়ে নিতে চ্যান্সেলরকে চিঠি লিখেছিলেন। আফগান যুদ্ধ নিয়ে কি আপনার কোনো মতামত রয়েছে?

গুন্টার গ্রাস : অবশ্যই আছে। তবে আফগান যুদ্ধকে আর দশটা যুদ্ধের মতো সাধারণ যুদ্ধ হিসেবে দেখলে হবে না। ইরাক যুদ্ধে জাতিসংঘের ম্যান্ডেট ছিল। ইরাক যুদ্ধে আমাদের (জার্মানি) অংশগ্রহণ একটা বড় ধরনের ভুল ছিল। তবে তখন যুদ্ধে না জড়ানোর কোনো উপায় ছিল না। যুদ্ধে মার্কিনিরা নেতৃত্ব ধরে রাখতে পারেনি। এ ধরনের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের নেই। তারা আরেকবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ভিয়েতনামের মতো। আর তাদের সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও (জার্মানির) পতন ঘটেছে।

স্পিগেল : একজন নোবেলজয়ী হিসেবে আপনার গুরুত্ব এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। তাহলে আপনি কেন নিজেকে আটকে রেখেছেন?

গুন্টার গ্রাস : এ ধরনের বিষয়ে আমার কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের ইচ্ছা নেই। আর সারা দিন আমি ‘নোবেলজয়ী’ এই কথা মাথায় রেখেও কাজ করি না। মাঝেমধ্যে মনে হয় যে আমি একজন নোবেলজয়ী, যখন দুই পয়সা কামাই হয়। কিন্তু লেখার সময় নোবেলের কথা আমার মাথায় আসে না, এটা আমাকে কখনো আঘাতও দেয় না।

স্পিগেল : নোবেল পুরস্কার কি আপনার ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেনি?

গুন্টার গ্রাস : দেখেন, আমি নোবেল পাওয়ার জন্য লেখালেখি করিনি। আমার লেখার নোবেলপ্রাপ্তির কোনো ছাপ পাবেন না, কারণ আমি নোবেল পেয়েছি একটু বেশি বয়সে। ততদিনে আমার অনেক উপন্যাস বেরিয়েছে এবং জনপ্রিয় হয়েছে। আসলে ‘গ্রুপ ৪৭’ (বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী জার্মান লেখকদের সংগঠন) যখন ১৯৫৮ সালে আমাকে পুরস্কৃত করে, সেটা আমার কাছে নোবেলের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, তখন আমি হতদরিদ্র অবস্থায় ছিলাম। আর পুরস্কারটা দিয়েছিল আমারই সতীর্থ লেখকরা। আর সে কারণেই এ পুরস্কারের গুরুত্বটা আলাদা ছিল। আমি নোবেল পুরস্কারকে খাটো করছি না, কিন্তু এই নোবেলপ্রাপ্তি আমার লেখকজীবনে তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।

স্পিগেল : এখন সত্যি করে বলবেন, আপনি কি দীর্ঘ সময় ধরে নোবেলপ্রাপ্তির জন্য প্রতীক্ষায় ছিলেন না?

গুন্টার গ্রাস : না, শেষ সময়ে যখন নোবেলটা পাই, তখন আর আমার আগ্রহ ছিল না। এর আগে ২০ বছর ধরে প্রতি হেমন্তে সাংবাদিকরা আমাকে ফোন দিয়ে জানাতেন যে এবার নোবেলের সংক্ষিপ্ত তালিকায় আমার নাম রয়েছে। এবং তাঁরা পুরস্কার পাওয়ার পর আমার প্রথম সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা পাকা করে রাখতেন। তার পর আমি নোবেল পাইনি এবং ক্রমাগতভাবে বছরের পর বছর এটা ঘটেছে।

স্পিগেল : জার্মান লেখক হাইরিশ বোল যখন ১৯৭২ সালে নোবেল পুরস্কার পেলেন তখন কি আপনি কষ্ট পাননি?

গুন্টার গ্রাস : না, কষ্ট পাইনি। আমার কথা যদি আপনি অবিশ্বাস করেন, তবুও এটাই সত্যি। আমি তখন এসপিডির (সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অব জার্মানি) একটি নির্বাচনী প্রচারে ছিলাম। রাইনল্যান্ড-পালাতিনেত প্রদেশের কোনো এক বাজারের মধ্যে একটি নির্বাচনী বাসে বসে প্রচারের কাজ করছিলাম। জার্মানির ছোট ছোট শহরে সে সময় আমরা এ রকম অনেক নির্বাচনী সভা করেছি। আমি মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখছিলাম। এ সময় পেছন থেকে একজন এসে একটা ছোট চিরকুট দিয়ে যায়, যেখানে লেখা ছিল—‘বোল নোবেল পুরস্কার পেয়েছে।’ আমি তখন সেটা আমার বক্তব্যের মধ্যে সবাইকে জানিয়ে দিই। আমরা তো তখন একই রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী ছিলাম।

স্পিগেল : আপনি সেই অল্প কয়েকজন লেখকের একজন, যিনি নিজের বইয়ের প্রচ্ছদ নিজেই করেন। আপনার সব বইয়ের প্রচ্ছদ আপনি নিজেই করেছেন। এটা আপনার কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ কেন?

গুন্টার গ্রাস : এটা তুলির শেষ স্পর্শের মতো। উপন্যাসের প্রথম অক্ষরের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। এবং লেখায় যতটা যত্ন নেওয়া দরকার, প্রচ্ছদেও সে রকম যত্ন নেওয়া উচিত।

স্পিগেল : একটা ভালো প্রচ্ছদের কী কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে?

গুন্টার গ্রাস : এটা অবশ্যই বইয়ের গল্প এবং বিষয়বস্তুকে সংক্ষেপে তুলে ধরবে। পুরো কাহিনীর প্রতীক হবে এটি। ‘ডগ ইয়ার্স’-এর প্রচ্ছদে একটা কুকুরের মস্তক এঁকেছিলাম। যা দেখে মনে হচ্ছিল, সেটা কারো হাতের পুতুল এবং পেছন থেকে কেউ কুকুরের মাথাটা নাড়াচ্ছে। ‘লোকাল এনেসথেটিক’ বইয়ের প্রচ্ছদে আমি আঙুলে ধরা একটা লাইটারের ছবি এঁকেছিলাম। এবার শুধু অক্ষর দিয়ে প্রচ্ছদ এঁকেছি। প্রতিবার বইয়ের প্রচ্ছদ করা আমার কাছে নতুন এক অভিজ্ঞতা।

স্পিগেল : তাহলে বইয়ের বাজারের যে আধুনিকায়ন হচ্ছে, আপনি নিশ্চয়ই তার বিরোধী। যুক্তরাষ্ট্রে ই-বুকের বিক্রি দ্রুত বাড়ছে।

গুন্টার গ্রাস : আমি বিশ্বাস করি না যে, ছাপা বইয়ের জনপ্রিয়তা কমছে। এটাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে শুধু। গণহারে ছাপার প্রবণতা হয়তো কমে আসবে, তবে বইয়ের সুদিন আবার ফিরে আসবে। তখন আমরা সম্পদ হিসেবে আমাদের উত্তরাধিকারদের জন্য বই রেখে যাব।

স্পিগেল : আপনি কি ভাবতে পারেন, আপনার ‘গ্রিমস ওয়ার্ডস’ কেউ আইপ্যাডে পড়ছে?

গুন্টার গ্রাস : কষ্ট লাগে। তবে আমি আমার প্রকাশকদের সঙ্গে চুক্তি করেছি যতদিন পর্যন্ত না লেখকদের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে আইন কার্যকর হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত যেন আমার কোনো বই খোলাবাজারে ছাড়া না হয়। লেখকদের ক্ষেত্রে আমি শুধু বলতে পারি, এর বিরুদ্ধে নিজেদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হবে। প্রকাশকদের সঙ্গে সম্পর্কটা জোরালো করতে হবে।

স্পিগেল : আপনি কি আন্দোলনের ডাক দিচ্ছেন?

গুন্টার গ্রাস : কম্পিউটারে বই পড়ার এই আন্দোলন আমি বন্ধ করে দিতে চাই ঠিক, তবে আমার পক্ষে হয়তো কাউকে পাওয়া যাবে না। আপাতদৃষ্টিতে বইয়ের এই ইলেকট্রনিক হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় সঙ্গে লেখকদের খসড়া লেখার একটা সংযোগ আছে। বেশির ভাগ নতুন লেখকই এখন কম্পিউটারে লেখেন। পরে সেটা প্রিন্ট দিয়ে তার ওপর সম্পাদনা করেন। তবে আমার ক্ষেত্রে উল্টোটা ঘটে। আমি খসড়া লেখার ক্ষেত্রে বেশকিছু ধাপে কাজ করি। প্রথমে আমি হাতে লিখি। এর সঙ্গে যোগ হয় আমার অলিভেট্টি টাইপরাইটারে লেখা আমার দুটি সংস্করণ। শেষমেশ যোগ হয় এই কয়েকটা সংস্করণ মিলিয়ে আমার সেক্রেটারি কম্পিউটারে, যেটা লিখে প্রিন্ট দেয় সেটা। ওই প্রিন্টেড কপিতে আমি আবার হাত দিয়ে কাটাকাটি করি। আপনি যখন সরাসরি কম্পিউটারে লেখেন, তখন এসব বিষয় হারিয়ে যায়।

স্পিগেল : অলিভেট্টিতে টাইপ করাটি কি আপনার কাছে সেকেলে ব্যাপার মনে হয় না?

গুন্টার গ্রাস : না। কম্পিউটারে লিখলে একটা টেক্সটকে সব সময় মনে হয়, এটা শেষ হয়ে গেছে। যদিও তখনো সেটা শেষ হতে অনেক বাকি। এটা খুবই লোভনীয়। আমি সাধারণত প্রথম যে খসড়াটা হাতে লিখি, সেটা একবারে শেষ করে উঠি। কারণ, সেখানে আমি কোনো শূন্যস্থান রাখতে চাই না। কিন্তু এই শূন্যস্থানগুলো আমি অলিভেট্টি টাইপরাইটারে লিখতে গেলে টের পাই। তার কারণ কাগজের সমগ্রতা। লেখাগুলো একটা নির্দিষ্ট জায়গা দখল করে থাকে। দ্বিতীয় সংস্করণে আমি প্রথম খসড়ার সঙ্গে মিলিয়ে সম্পাদনা করি যেন লেখার মূল বিষয়টা একই থাকে। এই শ্লথ প্রক্রিয়ার কারণে বাড়তি এবং অপ্রাসঙ্গিক কথা লেখার মধ্যে ঢুকে পড়ার ঝুঁকি কম থাকে।

স্পিগেল : তার পরও কি এই কয়েক দশকের লেখালেখিতে আপনার লেখার ধরনে কোনো পরিবর্তন এসেছে?

গুন্টার গ্রাস : প্রথমত, আমি চেষ্টা করেছি লেখার মধ্যে কোথাও না থামতে। আমি যখন ‘টিন ড্রাম’, ‘ক্যাট অ্যান্ড মাউজ’ ও ‘ডগ ইয়ার্স’ লিখি তখন অনেক অগ্রজ লেখক বলেছিলেন, জার্মান ভাষায় এত বাহুল্য না করাটাই মঙ্গল।

স্পিগেল : আপনার নতুন বইয়ে আপনি একটা উপসংহার টেনেছেন। আপনি লিখেছেন, “বিভিন্ন জিনিস নিয়ে কাজ করার ‘ঝোঁক’ আমার কখনো শেষ হবে না। এমনকি উপকথাগুলোও নতুন ভঙ্গিতে বলা উচিত। প্রত্যেকটা সমাপ্তির পর আমার মনে হয়, আমার আরো কাজ করা দরকার।” আপনি আগামী দিনগুলোতে আসলে কী ধরনের কাজ করতে চান?

গুন্টার গ্রাস : একটা সময় ধরে লেখালেখি করার পর দেখবেন, সেই লেখাগুলো মানুষ অনেক দিন ধরে পড়ছে। আমার কাজের ধরন পরিবর্তন করার দরকার ছিল এবং তাই আমি আবার ছাপচিত্রের কাজে ফিরে আসি। এর মধ্যে থেকে আমি আমার উপন্যাস ‘ডগ ইয়ার্স’-এর জন্য নতুন নকশা তৈরি করতে চেয়েছিলাম। সেটা প্রকাশের তখন ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছিল। ‘গ্রিমস ওয়ার্ডস’ দিয়ে আমি আমার আত্মজীবনী শেষ করেছি। আমার বয়সে এসে কেউ যদি আরেকটা বসন্ত পেয়ে যায়, সেটা তাঁর জন্য একটা নতুন চমক। এবং আমি এখন জানি, একটা মহাকাব্যিক বিষয় নিয়ে লিখতে গেলে কতটা সময় লাগবে।

স্পিগেল : জীবন ফুরিয়ে এসেছে ভেবে কি আপনি শঙ্কিত?

গুন্টার গ্রাস : না, আমি সেটা বুঝতে অনুভব করতে পেরেছি। আরেকভাবে বলতে গেলে আমি সেটার জন্য প্রস্তুত। আমার আরো মনে হয়, আমি নিজের ভেতরে এখনো যথেষ্ট পরিমাণ কৌতূহল পুষে রেখেছি। আমার নাতি-নাতনিদের ভাগ্যে কী আছে? ছুটির দিন ফুটবল খেলাগুলোর ফল কী হবে? এখনো অনেক বিষয় আছে, আমি যেগুলোর অভিজ্ঞতা নিতে চাই। বুড়ো হওয়া নিয়ে জ্যাকোব গ্রিম খুব ভালো একটা কথা লিখেছে, ‘গোলায় থাকা শেষ শস্যদানা।’ এই কথাটা আমাকে ছুঁয়ে গেছে। এবং আমি এ বয়সে এসে আমার নিজের মধ্যে এর প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। আর এ অভিজ্ঞতায় আমার মধ্যে কোনো আগাম মৃত্যুভীতি কাজ করছে না।