শৈশব ফিরিয়ে দেয় অ্যাস্ত্রিদ লিন্দগ্রেনের গল্প

Looks like you've blocked notifications!

সুইডিশ লেখক অ্যাস্ত্রিদ  লিন্দগ্রেনের (১৯০৭-২০০২) লেখা পড়ার আনন্দ অতুলনীয়, অন্তত আমার তাই মনে হয়। শিশুদের জন্য তাঁর লেখাগুলো পড়তে বসলে শৈশবে ফিরে যেতে মন চায়। অঙ্কুর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘শিশু-কিশোর গল্প ত্রয়ী’ নামে লিন্দগ্রেনের তিনটি গল্পের অনুবাদ আছে। ‘লোন্নেবেরিয়ার এমিল’, ‘বুলারবী’ আর ‘ব্রোকমকারগতানের লত্তা’—এই গল্প তিনটার অনুবাদ করেছেন লিয়াকত হোসেন।

এখানে তিনটা গল্পের মধ্যে ‘লোন্নেবেরিয়ার এমিল’ আমার অসম্ভব প্রিয়। সুইডেনের স্মোল্যান্ডের লোন্নেবেরিয়ার কাতহুল্টের দুরন্ত পাঁচ বছরের শিশু এমিল। বাবা আন্তন সেভনসন, মা আলমা সেভনসন, ছোট বোন ঈদা, খামার বালক আলফ্রেড ও কাজের মেয়ে লীনাকে নিয়ে গোছানো-সুখী একটা পরিবার এমিলের। কিন্তু বাড়ির সবাই ও কাতহুল্টবাসী এমিলের দুষ্টুমিতে অতিষ্ঠ! আর এমিলের এসব দুষ্টুমির ঘটনাগুলো পড়েই পাঠক খুব মজা পাবে। সুপের গামলায় মাথা ঢুকিয়ে চাটতে গিয়ে এমিলের মাথা আটকে যাওয়া, সেই গামলা থেকে মাথা বের করতে ডাক্তারের কাছে যাওয়া, পয়সা গিলে ফেলা ও পরে সেই পয়সা ডিমের মতো বের করা, ছোট বোন ঈদাকে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ডে টানিয়ে দেওয়া, হুলসফ্রেডে সামরিক কুচকাওয়াজে দুর্ধর্ষ চোর স্পেরোকে ধরা আর এমিলের গান ‘হালি ডাজে হালি ডালি ডা’—এমন সব মজার মজার কাণ্ড পড়ে ভালো না লেগে উপায় নেই।

কিছু নমুনা দিই, ‘সত্যিই দুষ্টু নয় এমিল। ঈদাকে এবং বেড়ালটিকে সে ভালোবাসে। ঈদাকে চিমটি কেটেছে রুটির জেলিটা দেবার জন্য আর বেড়ালটিকে দাবড়িয়ে দেখতে চেয়েছে ওর থেকেও জোরে বেড়ালটি দৌড়াতে পারে কিনা। কিন্তু বেড়াল সেটা বুঝতে পারেনি। শুধু শুধুই চেঁচামেচি করেছে।’

“…কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করে এমিল, ক্ষুধাও পেয়েছে, বাবাকে বুঝিয়ে বলে, ‘আমার পেটের ভেতর পাঁচটি পয়সা আছে। ওটা বের করেইতো বনরুটি কিনতে পারি।’ আর একটু চিন্তা করে বলে, ‘বাবা, তুমি কি দিন কয়েকের জন্যে পাঁচটি পয়সা ধার দিতে পারো? পেটের পয়সাটিতো ডিমের মতো করে বের হয়ে আসবেই, তখন না হয় ফেরত পেয়ে যাবে।’”

‘বুলারবী’ গল্পের সাত বছরের মেয়ে লিসাও একটা অসাধারণ শিশু চরিত্র। বাবা-মা আর দুই ভাই কার্ল ও বিলকে নিয়ে লিসা বুলারবীতে থাকে। লিসার প্রতিবেশী বন্ধু ওলে, আর বান্ধবী ব্রিত্তা ও আন্না। দুই ভাই ও বন্ধু ওলের নানা দুষ্টুমিতে লিসা আর তার বান্ধবীরা বেশ জব্দ হয়। পালটা ওদের জব্দ করতে নানা ফন্দি করে তিন বান্ধবী মিলে। কখনো অন্যকে খুশি করার নানা অভিনব চেষ্টা, কখনো বাড়ি থেকে পালানোর পরিকল্পনা তো কখনো স্কুল থেকে দেরিতে ফেরার ফিরিস্তি কিংবা দোকান থেকে এক বোতল ভালো কোয়ালিটির সস আনার ইতিবৃত্ত—এসব পড়তেও বেশ ভালো লাগবে পাঠকদের।

‘ব্রোকমকারগতানের লত্তা’ গল্পটাও বেশ মজার। তিন বছরের শিশু লত্তার মিষ্টি মিষ্টি কথা আর মান-অভিমান পড়তে কী যে ভালো লাগে! লত্তার প্রিয় পুতুল বামসকে তার বড় ভাইবোন ইউনাস আর মিয়া-মারিয়া মেরেছে বলে ঘুম থেকে উঠে কান্না করে লত্তা, অথচ সেটা যে স্বপ্ন ছিল, সেটা বোঝাতেই পারে না লত্তার মা-বাবা। ওর পছন্দের জামা না দিলে নেংটো হয়েই বসে থাকবে বলে গো ধরে লত্তা। জাম্পার ছিঁড়ে কুকুর কামড়েছে বলবে বলে ঠিক করে। তারপর বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রতিবেশীর বাড়িতে লুকিয়ে থাকে অভিমানি লত্তা, সেখানে গুদাম ঘরেই থাকার আয়োজন করে লত্তা। কিন্তু রাতের অন্ধকার হতেই সব অভিমান আর আত্মবিশ্বাস উড়ে যায় ছোট্ট লত্তার। 

বাবা যখন এসে বলে, ‘জানো লত্তা, তোমার মা খুব দুঃখ পেয়েছে। ক্রিসমাসে তুমি কি বাড়িতে ফিরে আসবে?’ ‘এখনই ফিরতে চাই।’ লত্তার দুচোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।

বইয়ের সবকটি গল্পই অসাধারণ। বিশ্বসাহিত্যে  অ্যাস্ত্রিদ  লিন্দগ্রেনের শিশুসাহিত্যের জুড়ি মেলা ভার।