স্মৃতিতে স্মিতা পাতিল

বেঁচে থাকলে মায়ের বয়স হতো ৬০ : প্রতীক

Looks like you've blocked notifications!
মা স্মিতাকে প্রতীক চেনেন সিনেমার ইমেজেই। ছবি : আইবলিউড

সৌভাগ্য আর দুর্ভাগ্যের বিচিত্র নিয়তি নিয়ে প্রতীক বাব্বরের জন্ম। যাঁর মায়ের নাম স্মিতা পাতিল। ছেলে প্রতীককে জন্ম দেওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহের মাথাতেই দুনিয়া ছেড়ে চলে যান ভারতীয় ছবির ইতিহাসে অসামান্য প্রতিভাধর এই অভিনেত্রী। প্রতীককে জন্ম দিতে গিয়ে শরীরটা বেশিই ভেঙে পড়েছিল তাঁর, সামাল দিতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। মায়ের কোনো স্মৃতি প্রতীকের মনে থাকার কথা নয়; কিন্তু সারা জীবন ধরেই মাকে মননে-মানসে-প্রতিদিন ধারণ করেন তিনি। দুদিন আগে, ১৭ অক্টোবর ছিল স্মিতা পাতিলের জন্মদিন। বেঁচে থাকলে আজ তাঁর বয়স হতো ৬০। জন্মদিনে স্মিতার স্মৃতি নিয়ে একটি বই প্রকাশ হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে ছিলেন স্মিতা পাতিলের সহ-অভিনেতাদের একজন—অমিতাভ বচ্চন। সংবাদমাধ্যম ডিএনএর সঙ্গে অনেক কথাই বলেছেন এদিন প্রতীক বাব্বর। নির্ধারিত বা ধরাবাঁধা প্রশ্নপত্রের আগে বলতে শুরু করেন নিজেই।

প্রতীক : ২৯ বছর হলো আমার মা চলে গেছেন। আমাকে জন্ম দেওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায় তিনি মারা যান। এই অক্টোবরের ১৭-তে তাঁর বয়স হতো ৬০। আমি, আমরা সবাই মনে করার চেষ্টা করি, তিনি কেমন জাদুময় এক মানুষ ছিলেন! তাঁর জীবনে আসা আর তাঁর চারপাশের মানুষদের কতটা ভালোবাসতেন, সমর্থন জোগাতেন। নির্মাতা, শিল্পী, প্রযোজক, ভক্ত—সবার সঙ্গেই তাঁর সম্পর্ক ছিল নির্ভেজাল, তাতে কোনো কৃত্রিমতা ছিল না। আজ এত বছর পরও আমার এই ভাবতে আর দেখতে ভালো লাগে যে, বাইরের দুনিয়ার সবাই আজো আমার মাকে মনে করে, তাঁর কাজ আর প্রাপ্তির প্রতি সম্মান জানায়। আজ আমি যেমন মানুষ হয়ে উঠতে পেরেছি, সেখানেও মায়েরই অবদান। মুম্বাই ইউনিভার্সিটিতে আমি মাকে নিয়ে বক্তব্য রেখেছি, তাঁর অসামান্য একজন নারী হয়ে ওঠার গল্প বলেছি।

প্রশ্ন : মায়ের সঙ্গে আপনি সময় কাটাতে পারেননি, তার পরও মনে হয় আপনি তাঁর সঙ্গে অনেক কানেক্টেড।

প্রতীক : হ্যাঁ, আমি তাঁর সঙ্গে কানেক্টেড। দুর্ভাগ্য এটাই যে, সেটা স্পর্শ বা পরিবারের মানুষদের মতো একসঙ্গে পাশাপাশি কাটানোর মতো নয় কখনোই। মাধ্যমটা সব সময়ই তাঁর সিনেমা, ছবি, পরিবারের গল্প, বন্ধু-বান্ধব আর সহকর্মীদের গল্প থেকে পাওয়া। নিজে একজন শিল্পী হিসেবেও আমি তাঁর সঙ্গে এক ধরনের সংযোগ অনুভব করি। তাঁর কাজ এবং পারফরম্যান্সের ঘরানা আমি স্টাডি করি। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ হলো, তিনি খুব সাধারণ একজন শিল্পী ছিলেন; কিন্তু তাঁর পারফরম্যান্স ছিল অজস্র আবরণ ও স্তরে মোড়ানো, আর গভীরতা ছিল অসীম। আমি নিজেও অভিনেতা হিসেবে এমনই হয়ে উঠতে চাই। মায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আধ্যাত্মিক, স্বর্গীয় ভালোবাসার।

প্রশ্ন : আপনাকে কি কেউ বলে, আপনি দেখতে মায়ের মতো হয়েছেন?

প্রতীক : মানুষ বলে যে, আমি আমার মা-বাবা দুজনের চেহারাই পেয়েছি। আমি মোটেও প্রতিবাদ করি না! তাঁদের ক্যারিয়ার যখন চলছিল, তখন তো তাঁরা দেখতে দারুণ সুন্দর। আর আমার চোখে তাঁরা এখনো খুবই সুন্দর।

প্রশ্ন : বাবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক এখন কেমন?

প্রতীক : আমাকে আমার মায়ের বাবা-মা বড় করে তুলেছেন। আমার বাবার অন্য একটি পরিবার দেখাশোনা করতে হতো। আমি তাঁকে দেখতে পেতাম, তবে মাঝেমধ্যে। আমাকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকেও দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে, আমার নানিই এটা করেছেন। প্রথম প্রথম আমি কিছু টের পেতাম না, আমার মনে হতো না যে আমি তাঁকে দেখতে যাই বা তাঁর সঙ্গে থাকি, স্বভাবতই কোনো কিছুই অনুভব করতাম না। তিনি এমন কেউ ছিলেন না, যাঁকে আঁকড়ে ধরে আমি কেঁদে ফেলব। কিন্তু একটা সময়, বেশ কিছু বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর, আমি অনুভব করলাম, আরে, আমার বায়োলজিক্যাল প্যারেন্ট তো উনি, তিনিই কেবল বেঁচে আছেন। কাজেই আমার তাঁর সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি হওয়া উচিত। বন্ধন গড়ে ওঠা উচিত। আমি চেয়েছি, আমাদের মধ্যে সমর্থন, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাপূর্ণ একটা সম্পর্ক গড়ে উঠুক।

প্রশ্ন : সম্প্রতি নানিকে হারিয়েছেন। নিজেকে সামলে নিচ্ছেন কীভাবে?

প্রতীক : স্মিতা তো আমার কল্পলোকের মা, আমার আসল মা তো আমার নানি! কী, অবাক হলেন? (হাসি) একটু মজা করলাম আর কী! নানি ছিলেন আমার সবকিছু। ছোট থাকতে আমি ভাবতাম, নানি সারা জীবন আমার পাশে থাকবেন, কখনো তাঁর বয়স হবে না। কিন্তু তা তো হয় না, আর বিষয়টা আমার জন্য বেদনার। পরিবারের সবাই দেখেছে, তিনি কীভাবে শয্যাশায়ী হলেন, হাঁটা বন্ধ হয়ে গেল তাঁর, কারো সঙ্গে কথা বলতে পারতেন না। আমরা বুঝেছিলাম, আর বেশি সময় বাকি নেই। আমরা প্রস্তুতও ছিলাম; কিন্তু জানেন, এখনো আমার এটা বিশ্বাস হয় না যে উনি আর নেই। সব সময় তাঁকে মিস করি। আমি আশা করি, উনি আমার জন্য গর্ববোধ করবেন সব সময়, কারণ আমি যেভাবে গড়ে উঠতে পেরেছি, তাঁর জন্যই পেরেছি। আমরা সবাই চেষ্টা করেছি, শেষের দিকটায় যতটা পারি তাঁর পাশাপাশি থাকতে। 

প্রশ্ন : উনি আপনাকে কী বলতেন? তাঁর কোন কথাগুলো মনে পড়ে?

প্রতীক : উনি খুব শৃঙ্খলা মেনে চলতেন। আমি যেভাবে পোশাক পরতাম, তা তিনি পছন্দ করতেন না। আমার জিন্স ছেঁড়া আর রংচটা, আমার বক্সারগুলোও ঢিলেমার্কা! উনি আমাকে বলতেন, তুমি যেহেতু কিছু টাকা-পয়সা কামাই করছ, তাহলে নতুন আর ভালো জামাকাপড় কিনছ না কেন? উনি বলতেন, দিনে তিনবার করে দাঁত ব্রাশ করবে, দুবার গোসল করবে, প্রত্যেকবার খাওয়ার আগে হাত ধুয়ে নেবে, খাওয়ার মাঝখানে পানি খাবে না, সিগারেট খাবে না, গাড়ি আস্তে চালাবে। আর উনি বলেছিলেন যে, আমি যদি কখনো মোটরবাইক কিনি, তাহলে নাকি উনি আমাকে কখনোই ক্ষমা করবেন না। এই ব্যাপারটার সঙ্গে আমার আজো লড়াই করতে হচ্ছে... কারণ আমি বাইক ভালোবাসি ভীষণ!

প্রশ্ন : এখন জীবন কেমন চলছে আপনার?

প্রতীক : আমার নানি আমার সবকিছু ছিলেন। আমি এখনো আমার পরিবারের কাছেই রয়েছি। আমার বাবা, খালারা, দাদা, আর্য, জুহি, ওদের মা—সবাই তো রয়েছেন। কিন্তু আমি নিজে নিজের মতো করে, নিজের ওপর নির্ভর করে বাঁচতে চাই। আমি জানি, এটা বলা সহজ হলেও করা সহজ নয়, কিন্তু আমি নিজের মতো করেই বাঁচতে চাই।

প্রশ্ন : ক্যারিয়ারের কী খবর?

উত্তর : ‘উমরিকা’ নামে একটা ছবিতে কাজ করছি। এটা প্রশান্ত নায়ারের ছবি, ‘লাইফ অব পাই’ ছবির সুরজ শর্মা এতে অভিনয় করেছেন। ছবিতে আমরা দুই ভাই। এ বছরের জানুয়ারিতে সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এটা বেশ প্রশংসাপূর্ণ কিছু রিভিউ পেয়েছে। আগামী বছরের শুরুর দিকেই ছবিটা ভারতে মুক্তি পাওয়ার কথা। এটা একেবারে শৈল্পিক ঘরানার ছবি, আমার মায়ের প্রিয় ঘরানা!