রম্যগল্প
জামাই আদর
নারী মহলে আমাদের বৈশাখী আপার পরিচিতি ‘বিলাই বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে।
কারণ, বিয়ের প্রথম রাতে তিনি বিড়াল মেরেছেন। এবং এ জন্য বৈশাখী আপা যে সময় নিয়েছেন, তা বিশ্বরেকর্ডের কাছাকাছি।
বিড়াল মরে বেঁচেছে। ভয় ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে বৈশাখী আপার জামাইয়ের মনে। বৈশাখী আপাকে জমের মতো ভয় পান তিনি।
এ ব্যাপারটা বৈশাখী আপা খুব উপভোগ করেন। কারণ, জমে যাওয়া জামাই তাঁর পছন্দ।
বৈষয়িক জ্ঞান টনটনে বৈশাখী আপা দেখেশুনে নরম মেরুদণ্ডের একজনকেই জামাই হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
ঘর এবং ঘরের বাইরে, কোনো হিসাবেই বৈশাখী আপা ভুল করেন না।
রোজ দেওয়া দুধওয়ালাকে ধরলেন একদিন।
দুধের মধ্যে দুধ বইলা তো কিছু পাই না। পুরাটাই পানি মনে হয়। তা, ফিল্টার পানি মেশাও তো?
কী কন ম্যাডাম। তওবা তওবা। আমার সবগুলা গরু প্রোডাকশনে আছে। পানি মেশানোর মতো পাতলা কাম আমি করমু!
সে তুমি ভালো জানো। কিন্তু দুধ তো পাতলা। পানির কাছাকাছি।
বুঝছি ম্যাডাম। আসলে হইছে কী, আপনাগো যে গরুর দুধ দিই, ওই গরুটা পানি একটু বেশি খায়। নেপালি গরু তো। পাহাড়ে পাহাড়ে ছিল। পানি খাওয়ার সুযোগ পায় নাই। এখন পোশাই দিতেছে। সেই জন্য মনে হয় দুধ একটু পাতলা।
আমারে উনিশ-কুড়ি বুঝাইও না। আমি কী জিনিস, সেইটা তোমার স্যার জানে। দুধ নিয়া তোমার নয়-ছয় আমার কাছে ক্লিয়ার।
ক্লিয়ার! তা কে আপনারে ক্লিয়ার করল ম্যাডাম?
মাছি।
মাছি! দুধ তো খান আপনারা। মাছি জানল কেমনে?
মাছি জানে না বলেই তা সমস্যা। দুধই যদি হবে, তাইলে দুধে মাছি বসে না ক্যান?
দুধওয়ালা বৈশাখী আপার চেয়েও সেয়ানা।
ম্যাডাম, আফনে হইলেন বৈশাখী ঝড়। ঝড়ের মইধ্যে মাছি আইব ক্যামনে!
যিনি বৈশাখী আপার নাম রেখেছেন, তাঁকে দশে দশ দিতেই হবে।
বৈশাখ মাসের ঝড়টা পুরোপুরি আছে বৈশাখী আপার চরিত্রে। আর ঝড়ের ঝাপ্টাটা বেচারা স্বামীকেই বেশি পোহাতে হয়।
বৈশাখী আপার বরকে তাই প্রায়ই করুণ কণ্ঠে গাইতে শোনা যায়, কোথা থেকে এলো এই নিয়তির ঝড়...
কোথা থেকে এসেছেন কিংবা এর পর কোথায় তিনি যাবেন, জামাইকে সেই ব্যাখ্যা দেওয়ার মানুষ বৈশাখী আপা নন। আমাদের দুলাভাইয়ের চাপা হাহাকার তাই গানের খাতার স্বরলিপি হিসেবেই থেকে যায়।
বৈশাখী আপা চলেন তাঁর মতো।
জামাইয়ের কাজ হচ্ছে, ঝড় সামলাও।
আর ঘর?
সে তো বিয়ের পর থেকেই আমাদের দুলাভাই সামলাচ্ছেন।
ঘর সামলানোর সময় কোথায় বৈশাখী আপার।
তাঁর কত কাজ।
তিনি একাধারে পলিটিশিয়ান এবং বিউটিশিয়ান।
পেশার এ রকম বৈপরীত্য আমাদের অবাক করে।
বৈশাখী আপা হাসেন।
আরে, পলিটিশিয়ানরাই তো বারবার রূপ বদলায়। তাই বিউটিশিয়ানের কোর্সটাও কইরা রাখছি। সময়মতো কাজে লাগব। পাশাপাশি ব্যবসা তো হচ্ছেই।
এ দুই পেশার বাইরে বিলাই বিশেষজ্ঞ হিসেবেও বৈশাখী আপার ব্যাপক চাহিদা বাজারে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো নারী আসছেন বৈশাখী আপার কাছে। বৈশাখী আপাও কাউকে নিরাশ করেন না। মনোযোগ দিয়ে সমস্যা শোনেন এবং জামাই বশীকরণ মন্ত্রণা দেন।
যাঁরা মন্ত্রণায় ফল পান, তাঁরা আবার আসেন বৈশাখী আপার মন্ত্রণালয়ে।
আপা, আপনার পরামিশে কাজ হইছে। বিলাই ম্যাও করছে।
ফল পাওয়া নারী মহলের কেউ কেউ বৈশাখী আপাকে উল্টো মন্ত্রণা দেন।
আপা, আপনে একটা বই বাইর কইরা ফালান। মাইয়া মানুষ কি খালি রান্নার বই লেখব? বজ্জাত জামাইরে কীভাবে কষাইতে হয়, সেই বইও থাকন দরকার। আপনি লিখলে ঝাল-মসলা ঠিকঠাক হইব।
প্রস্তাবটা বৈশাখী আপার মনে ধরে। তিনি এ-সংক্রান্ত একটা বই লেখার কাজে হাত দেন।
প্রথমে বইয়ের নাম ঠিক হয়েছিল ‘জামাই শায়েস্তা’ ১০১ টিপস।
প্রকাশক বলল, ম্যাডাম নামটা নেগেটিভ হয়া যায়। পুরুষ মানুষ কেউ এই বই কিনবে না। পাঠকদের নাইনটি পার্সেন্ট পুরুষ।
আমি তো পুরষদের জন্য লিখছি না। এই বই তো পুরুষদের শায়েস্তা করার জন্য।
সে আপনি শায়েস্তা করেন। কোনো সমস্যা নাই। আপনি শায়েস্তা করবেন। আমি ব্যবসা করমু। আর ব্যবসার পলিসি হিসেবে নামের মধ্যে একটা টুইস্ট থাকলে ভালো হয়। বিক্রি বাড়বে। এমন একটা নাম দেন, যাতে পুরুষ মানুষও কনফিউজড হয়া যায়। তারাও আগ্রহ নিয়া কিনব। কিনার পর দেখব ফক্কা। হা হা হা।
প্রকাশকের পরামর্শে শেষ পর্যন্ত বইয়ের নাম হয় ‘জামাই আদর’ ১০১ টিপস।