প্রাচ্যরীতির চিত্রকর্মে ‘শকুন্তলার পুনর্মিলন’
‘এসব চিত্রের মূল উদ্দেশ্য দৈনন্দিন জীবনের অস্থিরতার মাঝে চোখ ও মনকে নির্মল আনন্দ দান করা। নগরায়ণ জীবনে এমন প্রকৃতি ও মানুষের সহাবস্থানের আকাঙ্ক্ষাও আমাকে বারবার এমন কম্পোজিশন তৈরিতে আগ্রহী করে। শকুন্তলার বর্ণনায়িত সৌন্দর্য বেশি টানে বিধায় আমার চিত্রে নারীর শরীর কাঠামোই বেশি উঠে এসেছে। অজন্তা গুহাচিত্রের নারীচিত্র, মোগল মিনিয়েচারের নারীচিত্র, নব্য-বঙ্গীয় রীতিতে অঙ্কিত নারীর চরিত্র কিংবা বাংলার আবহমানকালের নারী চরিত্রের মধ্যে আমি শকুন্তলার প্রতিচ্ছায়া দেখতে পাই। একই শকুন্তলার বহুরূপ বহু ছবিতে এসেছে আমার এত দিন ধরে আঁকা শকুন্তলার বিভিন্ন সিরিজচিত্রে। সেই চরিত্রগুলোর পুনর্মিলন ঘটাতেই এ প্রদর্শনীতে শকুন্তলার সিরিজচিত্রের উপস্থাপন।’ নিজের শিল্পকর্ম ও প্রদর্শনী সম্পর্কে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শিল্পী মলয় বালা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে প্রাচ্যধারার চিত্রকর্ম নিয়ে ‘শকুন্তলার পুনর্মিলন’ শিরোনামে শুরু হয়েছে শিল্পী মলয় বালার একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাকবি কালিদাসের অভিজ্ঞান ‘শকুন্তলম’ নাটক অবলম্বনে ‘শকুন্তলা’ উপাখ্যান রচনা করেছেন। রাজা রবিবর্মাসহ অনেক শিল্পী শকুন্তলার কাহিনী চিত্রিত করেছেন। প্রকৃতির মতো সৌন্দর্য, প্রেমময় ও সহিষ্ণুতায় ভরা শকুন্তলার কাহিনী। তপোবনের প্রাণিকুল, বৃক্ষরাজির সঙ্গে শকুন্তলার নিরন্তন মানবপ্রেম ও অকৃত্রিম সৌহার্দ্য ফুটে উঠেছে শিল্পী মলয় বালার শকুন্তলা সিরিজচিত্রে।
প্রকৃতির বটগাছের সৌন্দর্য শিল্পী মলয় বালাকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে। প্রকৃতির শোভা ও শকুন্তলার সৌন্দর্য একীভূত করে শকুন্তলা সিরিজ চিত্র এঁকেছেন নিউ-বেঙ্গল ঘরানার জলরং ওয়াশ পদ্ধতিতে হ্যান্ডমেইড কাগজে।
গাছের ওপর জড়িয়ে থাকা শিকড়, গাছের বাঁকল একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে থেকে যে প্রতিমূর্তি ফুটে ওঠে, তাতে শিল্পী শকুন্তলাকে দেখতে পান। তাই তো আপাতদৃষ্টিতে তাঁর চিত্রে গাছের শিকড়, বটের ঝুড়ি দেখলেও একটু লক্ষ করলে খুঁজে পাওয়া যায় নৃত্যরত শকুন্তলা, সখীদের সঙ্গে কথোপকথনে ব্যস্ত শকুন্তলা, হরিণশাবক আদর করছে শকুন্তলা, দুষ্মন্তের সঙ্গে প্রণয়রত শকুন্তলা এ রকম প্রভৃতি দৃশ্য।
শকুন্তলা সিরিজের এ রকম ১৮টি চিত্রকর্ম রয়েছে প্রদর্শনীতে। কাজগুলো জলরং, অ্যাক্রিলিক, মিশ্র মাধ্যম ব্যবহার করে ওয়াশ পদ্ধতিতে করা। প্রতিটি কাজে ওয়াশ পদ্ধতির লাবণ্য বিরাজমান। ভারত শিল্পের ষড়ঙ্গের মূলনীতি বজায় রেখে স্বকীয়তা, স্বভাব, পরম্পরা ধরেই তাঁর কাজ। বেঙ্গল স্কুলের ওয়াশ পদ্ধতিতে ছোট পরিসরে কাজ হতো। শিল্পী মলয় বালা বড় পরিসরের কাজ নিয়ে সাজিয়েছেন তাঁর প্রদর্শনী। তবে তাঁর প্রতিটি কাজের টেকনিকের মধ্যে রয়েছে বৈচিত্র্য।
গত ১৬ নভেম্বর বিকেল ৪টায় প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বনামধন্য শিল্পী সমরজিৎ রায়চৌধুরী এবং দিকদর্শন প্রকাশনীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর রতন চন্দ্র পাল। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন।
প্রদর্শনীটি আগামী ২২ নভেম্বর (প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা) পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।