হুমায়ূনের কাহিনী পাঠককে কাছে টানে : ড. আনিসুজ্জামান

Looks like you've blocked notifications!

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের অন্যতম বহুমাত্রিক লেখক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ বাংলা ভাষা ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর গুণগত ও রূপগত উভয় ক্ষেত্রে পরিবর্তন সাধন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের শিল্পকলার ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গনে বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিশীলতা ও বহুমাত্রিকতা সংযোজনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশীদার হয়েছেন।

হুমায়ূন আহমেদ তাঁর নাটক ও সিনেমায় স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, লোকজ ঐতিহ্যকে সংযোজন করে ক্রিয়াশীল নাগরিক সমাজে দেশীয় মাত্রা যোগ করেছেন। বিস্ময়করভাবে তাঁর সমগ্র সৃষ্টি তরুণ প্রজন্মের কাছে নন্দিত হয়েছে। তাঁর গল্প ও উপন্যাসের সংলাপ এবং চরিত্র উদাহরণ হয়ে প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় অন্তর্জালের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত অথবা সামাজিকভাবে অনুরণিত হয়। তাঁর গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা, গান ও চিত্রকর্ম বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সমাজের সামাজিক সংস্কার উত্তরণের সোপান।

গত ১৩ নভেম্বর ছিল বাংলা সাহিত্যের এই অন্যতম কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৬৭তম জন্মদিন। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও ব্যাংক এশিয়ার যৌথ উদ্যোগে গত ২৭ নভেম্বর বিকেল ৪টায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে একটি স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। হুমায়ূন আহমেদের কর্ম ও জীবন নিয়ে স্মরণসভায় আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, অন্য প্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম এবং হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।

এ ছাড়া জাতীয় জাদুঘরের ২৩ নম্বর গ্যালারিতে হুমায়ূন আহমেদ রচিত বইপুস্তক, পেইন্টিং, আলোকচিত্র ও স্মৃতিস্মারক, পাণ্ডুলিপি এবং তাঁর পাঁচটি চলচ্চিত্র নিয়ে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী হুমায়ূন প্রদর্শনী।

ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, হুমায়ূন আহমেদ ‘নন্দিত নরক’ ও ‘শঙ্খনীল কারাগার’ উপন্যাসের মাধ্যমে পাঠকপ্রিয় হয়ে ওঠেন। পরে তিনি মিসির আলী, হিমু, শুভ্র ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গ্রন্থ রচনা করে সব শ্রেণির পাঠকের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছান। তাঁর অসাধারণ বর্ণনা, কাহিনী বিস্তৃতি পাঠককে সহজে কাছে টানে। হুমায়ূন হয়ে ওঠেন সবার প্রিয় মানুষ। হুমায়ূন আহমেদ আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর লেখনী ও গান আমাদের মাঝে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে যুগের পর যুগ।

কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, হুমায়ূন আহমেদ তাঁর সৃজনশীল কর্মে স্মরণীয় হয়ে আছেন। বাঙালির স্বপ্ন দেখা জাগরণ ও জীবন-যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার প্রেরণা দিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। অতি সাধারণ ঘটনা তাঁর দক্ষ জাদুকরি বর্ণনায় হৃদয়স্পর্শী হয়ে ধরা দেয়। তিনি আমাদের স্মরণে ও স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছেন।

কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, হুমায়ূন আহমেদ তাঁর গল্প, নাটক, উপন্যাসে বাস্তব ঘটনার বর্ণনার পাশাপাশি হাস্যরস তুলে ধরেছেন। বাঙালির রসবোধ তীব্র। হুমায়ূন আহমেদ যাপিত জীবনের সুখ-দুঃখ তাঁর সাহিত্যের উপাদান হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আবার গুরুগম্ভীর বক্তব্যের পাশে তাঁর হাস্যোরসাত্মক বক্তব্যে পাঠক-দর্শক আনন্দিত হয়েছে।