জয়নুল গ্যালারিতে ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং প্রদর্শনী

Looks like you've blocked notifications!
ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং প্রদর্শনীর কয়েকটি ছবি। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে শুরু হয়েছে ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং স্টাডি গ্রুপ আয়োজিত ৪৭জন শিল্পীর পঞ্চম প্রাচ্যচিত্রকলা প্রদর্শনী। ১৭ মার্চ বিকেল ৪টায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং স্টাডি গ্রুপ ২০০৯ সালে ২১ জন শিল্পীর যৌথ প্রদর্শনীর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। এর উদ্দেশ্য ছিল প্রাচ্য চিত্রধারাকে নতুনভাবে সমসাময়িক চিন্তাভাবনায় উপস্থাপন করা। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান প্রদর্শনীটি ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং স্টাডি গ্রুপের পঞ্চম প্রদর্শনী।

প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচ্যকলা বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রাপ্ত প্রবীণ ও নবীন শিল্পীরা এবং বাংলাদেশের সমকালীন স্বনামধন্য শিল্পীরা। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী ৪৭ জন শিল্পীর ৫৪টি শিল্পকর্মে প্রাচ্যরীতির বিভিন্ন মাধ্যম, টেকনিক ও শিল্প অনুভূতির নানা অনুষঙ্গের প্রভাব লক্ষ্যণীয়। বিশেষত অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রবর্তিত জলরঙের ওয়াশ পদ্ধতিতে বেশিরভাগ কাজ করা হয়েছে।

ওরিয়েটাল পেইন্টিং স্টাডি গ্রুপের এই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী ৪৭ জন শিল্পী তাঁদের নিজস্ব ঐতিহ্যের বিষয়ে সচেতন। তাঁরা গভীরভাবে স্বাদেশিকতার মূল্যবোধকে হৃদয়ে ধারণ করেন এবং নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য ধারাকে বজায় রেখেই শিল্পের আন্তর্জাতিকতা বোধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ। তাঁরা বাংলাদেশে প্রাচ্যচিত্রকলার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচনে ব্রতী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যকলা বিভাগের প্রথম দিকের ছাত্র শিল্পী তাজুল ইসলাম। তাঁর জলরঙে অঙ্কিত 'Forms & Colour' শিরোনামের শিল্পকর্মে একই সাথে ট্যাপেস্ট্রি ও ক্যালিগ্রাফির সমন্বিত নান্দনিকতা বিমূর্ত আকারে পরিলক্ষিত হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিল্প শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করা শঙ্কর মজুমদারের শিল্পের ব্যবহৃত মাধ্যম এবং বিষয় যেন প্রাচ্যচিত্রধারার নিরীক্ষার এক নতুন সংযোজন। তাঁর চিত্রের বুনট,  রেখার ব্যবহার এবং বিষয়ের উপস্থিতি শিল্পে এক মোহনীয় আবেশ সৃষ্টি করে। তিনি অক্সাইড মাধ্যম বিশেষভাবে ব্যবহার করে জলরঙের ওয়াশের আদল সৃষ্টি করেছেন।

প্রদর্শনীর কনভেনর ড. মলয় বালা এঁকেছেন প্রাচ্যধারার ধোয়া পদ্ধতিতে ‘শকুন্তলার পুনর্মিলনী’ শিরোনামের চিত্র। সাধারণত শিল্পী কালীদাসের রচিত শকুন্তলা বিষয়কে কেন্দ্র করে সিরিজ চিত্র আঁকেন। তাঁর চিত্রে শকুন্তলা যেন ছবির সম্পূর্ণ চিত্রপটে নিজেকে বিরাজিত করে রেখেছেন। রঙের  ব্যবহার, বিষয়ের ছন্দ যেন দর্শককে ভাবের কল্পনালোকে নিয়ে যায়।

সময়ের আবর্তনে সৃষ্টি হয় পরজীবীর কিছু মোহনীয় সৌন্দর্যের। প্রকৃতির গঠন এবং ভাব সবসময়ই সুন্দর। শিল্পী কান্তিদেব অধিকারী প্রকৃতির সেই ক্ষণস্থায়ী সৌন্দর্যকে তাঁর চিত্রপটে সুনিপুণ রূপ দিয়েছেন। যে রূপের নেপথ্যে রয়েছে তাঁর শিল্পের মূল দর্শন।

শিল্পীর স্বভাবগত স্থান থেকেই শিল্পী প্রকৃতি নির্ভর। শিল্পীর জাঁ নেসার ওসমান তার জলরঙ চিত্রে জীবনের কিছু ব্যাখ্যা মনের সুললিত আচরণে বিমূর্ততায় প্রকাশ করেছেন। জল ও রঙের যে পারস্পরিক বন্ধুত্ব তা তিনি নিগুঢ়ভাবে উপস্থাপন করেছেন। শিল্পী জাহিদ মুস্তফা তাঁর  Memory of my village চিত্রে শৈশবের নানা মুখচ্ছবির স্মৃতিচারণা করেছেন। গ্রামের প্রতিকৃতি ও স্মৃতিবিজড়িত মুখচ্ছবির সমন্বয়ে তিনি ছবিতে শিল্পরূপ দিয়েছেন।

শিল্পী জি সি ত্রিবেদী তাঁর “রেখার মায়া” শীর্ষক ছবিতে রেখার সুললিত ছন্দে বাংলার প্রকৃতি ও নারীর রূপকে চিত্রায়িত করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সুশান্ত অধিকারী তাঁর ছাত্র জীবনের ঐতিহ্যগত প্রাচ্যধারায় একটি চিত্র উপস্থাপন করেছেন। যা এই সংগঠন থেকে সদ্য আয়োজিত প্রাচ্যধারার শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষণীয় বটে।

শিল্পী অমিত নন্দী তাঁর ‘কনভারসেশন উইথ রবীন্দ্রনাথ’ শিল্পকর্মে নানা অবয়বের সমন্বয়ে প্রাচ্যধারার চিত্রে পরিশীলতার যথেষ্ট দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। অন্যদিকে শিল্পী নাহিদা নিশা ‘প্যারাডাইস লস্ট’ চিত্রকর্মে মননশীলতার চূড়ান্ত রূপ দেখিয়েছেন। চিত্রে রঙের ও বিষয়ের গভীরতা শিল্পের ধারার অনন্যতা তৈরি করেছে।

মঙ্গলবার জয়নুল গ্যালারিতে প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বারক আল্ভী। প্রদর্শনীটি আজ বুধবার, ১৮ মার্চ, রাত ০৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।