বিশ্বসেরা ১০০ বই
হোসে সারামাগোর ব্লাইন্ডনেস
পর্তুগিজ লেখক হোসে সারামাগোর লেখা উপন্যাস ‘ব্লাইন্ডনেস’। উপন্যাসটির মূল পর্তুগিজ নাম ‘এনসাইয়ো সবরি আ সেগিরা’।
পৃথিবীতে অনেক গল্প নিয়েই উপন্যাস লেখা হয়েছে। কিন্তু এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট বা গল্প বলার ধরন পাঠকদের মধ্যে অদ্ভুত এক ঘোর তৈরি করে। অন্য এক জগতে নিয়ে যায় তা পাঠকদের। তৈরি করে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি।
এই বইতে সহিংসতার নতুন এক রূপ উন্মোচন করেছেন লেখক। একই সঙ্গে উপন্যাসটি ছন্দময়, চিন্তাশীল, আমোদপূর্ণ, পাশবিক ও কাব্যিক। ১৯৯৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন হোসে সারামাগো।
‘ব্লাইন্ডনেস’ উপন্যাসটি অবলম্বনে ২০০৮ সালে একই নামের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন ফার্নেন্দো মিরিয়ালস, যাতে অভিনয় করেছিলেন মার্ক রুফালো ও জুলিয়ান মুর।
কাহিনী সংক্ষেপ
এক নামহীন শহরে হঠাৎ করে ছড়িয়ে পড়তে থাকে অদ্ভুত এক অসুখ। আর এই অসুখে ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যেতে থাকে সবাই। কোনো পূর্বলক্ষণ বা যন্ত্রণা ছাড়াই এই অসুখে পড়তে থাকেন একের পর এক শহরের সব বাসিন্দা।
একজন মানুষ হয়তো শহরের রাস্তায় গাড়ির মধ্যে বসে আছে। হঠাৎ করেই দেখবে তার আশপাশে সে আর কিছু দেখতে পাচ্ছে না।
শহরের মতোই উপন্যাসের চরিত্রগুলোরও কোন নাম দেননি সারামাগো। ধীরে ধীরে শহরে একটা অসুস্থ পরিবেশ তৈরি হয়।
শারীরিকভাবে অন্ধ হওয়ার পাশাপাশি মানসিকভাবেও অন্ধ হয়ে পড়তে শুরু করে মানুষগুলো। সামাজিক মূল্যবোধ বলে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না তাদের মধ্যে। দুর্বলের ওপর শুরু হয় সবলের অত্যাচার। অর্থাৎ যারা চোখে দেখতে পায় শুরু হয় তাদের অত্যাচার।
আর পাঠক এই গল্প পড়বেন একজন মধ্যবয়সী মহিলার বয়ানে। যাকে এই গল্পে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘ডাক্তারের স্ত্রী’ (দ্য ডক্টরস ওয়াইফ) হিসেবে।
উপন্যাসের আরেকটি চরিত্র ডাক্তার। অন্ধ লোকদের চিকিৎসা দিতে শুরু করেন ডাক্তার ও তাঁর স্ত্রী। আর সেই নিরাময় কেন্দ্রে থাকা মানুষদের মধ্যে তৈরি হয় এক হৃদ্যতার সম্পর্ক। তারা সবাই চেষ্টা করে অজানা এই রোগ, অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার। আর এদের সুস্থ করে তোলার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে থাকেন ডাক্তার ও তাঁর স্ত্রী।
কিন্তু নিরাময়কেন্দ্র্রে খাবারের অপর্যাপ্ততা এবং বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। যেটা সামলে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এর মধ্যে রোগ আরো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে খাবার সরবরাহ করা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি প্রাথমিক ওষুধপথ্যও দেওয়া বন্ধ করে দেয় তারা। এ নিয়ে বিদ্রোহ শুরু হয় নিরাময়কেন্দ্রে।
পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হতে থাকে, শহরে এবং নিরাময়কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে থাকে। সরকারি সব সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বন্ধ হয়ে যায়। শহর ডুবে যেতে থাকে অন্ধকারে।
লেখক পরিচিতি
হোসে দো সুসা সারামাগো (José de Sousa Saramago) জন্মেছিলেন ১৯২২ সালের ১৬ নভেম্বর। পরবর্তীকালে পর্তুগিজ এই লেখক পরিচিতি পান হোসে সারামাগো নামে। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।
জনপ্রিয় এই সাহিত্যিকের বই অনূদিত হয়েছে ২৫টিরও বেশি ভাষায়। সারা বিশ্বের তাঁর বইয়ের ২০ লাখেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।
উদার সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা বলা হয় তাঁকে। আর এ কারণে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনার শিকার হয়েছেন তিনি।
বিশেষ করে ক্যাথলিক চার্চ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং ইন্টারন্যাশনাল মনেটারি ফান্ড (আইএমএফ)-এর বেশ কিছু বিষয়ে তিনি কঠোর বিরোধিতা করেছিলেন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেই সবচেয়ে বেশি সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি।
নিজেকে নাস্তিক দাবি করা সারামাগো তাঁর সাহিত্যকর্মের ওপর নিজ দেশে পর্তুগালের সরকারি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে মনঃক্ষুণ্ণ ছিলেন। এ কারণে তিনি স্প্যানিশ দ্বীপ লানজারোতে নির্বাসনে চলে গিয়েছিলেন।
সেখানেই নির্বাসিত থাকা অবস্থায় ২০১০ সালের ১৮ জুন মারা যান সারামাগো।
** বিশ্বসেরা ১০০ বইয়ের তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত তালিকা অবলম্বনে। এ তালিকা তৈরি করেছে ‘নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস’। বিশ্বের ৫৪টি দেশের ১০০ লেখকের কাছে তাঁদের চোখে সেরা ১০টি বই ও লেখকের নাম চেয়েছিল নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস। ১০০ জন লেখকের দেওয়া সেই তালিকার ভিত্তিতেই যাচাই-বাছাই করে তৈরি করা হয়েছে এই তালিকা।