চিত্রকলা, পয়লা বৈশাখ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা
চিত্রশিল্প নিয়ে কথাশিল্পী সুবোধ ঘোষের একটি কথা দিয়ে লেখাটির শুরু করা যাক ‘ছবিতে রূপ ফুটিয়ে তোলাই শিল্পীর তুলির আসল কাজ নয়, সার্থক কাজও নয়। আসল কাজ হলো, রূপের আবেগ ফুটিয়ে তোলা।’ শিল্প-মাধ্যমের এক নীরব অথচ সুতীব্র মাধ্যম হচ্ছে চিত্রকলা, সে তো সবারই জানা। আপাত দৃষ্টিতে চিত্রকলা মুক হলেও এর সবচেয়ে বড় শক্তি তার প্রায়োগিক ভাষা ও ভাষার বহিঃপ্রকাশ। তবে এর নেই কোনো স্থানিক ভাষিক-ভঙ্গি। ব্যাখ্যান এর সর্বজনীন। যার ফলে একজন বাঙালি চিত্রশিল্পীর চিত্রকর্মও উপলব্ধি করতে পারেন বাংলা-সংস্কৃতির সংস্পর্শে না-থাকা যেকোনো মানুষ। অথবা একজন ইউরোপিয়ান শিল্পীর চিত্রকর্ম দেখে অনায়াসেই বোধগম্য করতে পারেন বাঙালি চিত্রদর্শকরা। আর এর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো, এ শিল্পের নেই কোনো সীমান্তবেড়ি। এটা আকাশের বিস্তৃত; ভূমির মতো শত-সহস্রর খণ্ড বিখণ্ডিত নয়।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পূর্বকালে এ অঞ্চলের অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ববঙ্গের চিত্রকলার চার পুরোধা চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন, সফিউদ্দিন আহমেদ, কামরুল হাসান, এস এম (শেখ মুহম্মদ) সুলতান মূলত যশস্বী হয়েছিলেন কলকাতাকেন্দ্রিক শিল্পচর্চায়। অতঃপর পঞ্চাশের দশকে তৎকালীন ঢাকা আর্ট স্কুলের প্রথম প্রজন্মের শিল্পীরা এ দেশে চারুশিল্পের নতুন দিক উন্মোচন করেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের শিল্পাঙ্গনে আসে নতুন অভিঘাত। প্রতিকূল অবস্থা শিল্পী-চেতনায় সময়, সমাজ ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা তৈরি করে। তৎকালীন ঢাকার গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্টসের অগ্রগণ্য শিক্ষককরা স্বৈরাচারী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অবজ্ঞা প্রত্যক্ষ করে এক কাতারে আসেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুশাসনের মধ্যে অবস্থান করে যেহেতু স্বাধীন চিন্তার বা অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যায় না, তাই চল্লিশের দশকের শেষে গড়ে ওঠে প্রতিবাদের এক সাংগঠনিক রূপ ‘ঢাকা আর্ট গ্রুপ’।
এখন কথা হলো, একজন চিত্রশিল্পী কি কেবলই রং-তুলি নিয়ে ক্যানভাসের পর ক্যানভাস ছবি এঁকে যান? নাকি আর দশজন সচেতন নাগরিকের মতো তাঁরও আছে সমাজের প্রতি, দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা? শিল্পী মাত্রই সংবেদনশীল। তাই সমাজের যা কিছু অমঙ্গল, যা কিছু অশুভ, যা কিছু অন্যায় তার সবকিছু তাঁদের চেতনায় সুতীব্রভাবে প্রভাব ফেলে। সেই কারণেই হয়ত আমরা দেখতে পাই ১৯৭১ সালে নিরীহ বাঙালিদের ওপর স্বৈরাচারী পাকিস্তানি শাসকের লেলিয়ে দেওয়া হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার প্রতিবাদে জয়নুল আবেদিনকে পাকিস্তানি শাসকদের দেওয়া ‘লালে ইমতিয়াজ’ উপাধি প্রত্যাখ্যান করতে অথবা ১৯৬৯ সালে রংতুলি ফেলে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে ফিলিস্তিনে রণাঙ্গনে অংশ নিতে।
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের রেখাচিত্র বা ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর মনপুরা দ্বীপে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় অবলম্বনে চিত্রিত ‘মনপুরা-৭০’ বিবেকবান মানুষকে নাড়া দেয়। ইতিহাস সাক্ষী, মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের রক্তপায়ী ও হিংস্রর মুখমণ্ডল সংবলিত পোস্টার ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে’ চিত্রন করে স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের আন্দোলনে উজ্জ্বীবিত করেছিলেন আবু শরাফ মোহাম্মদ কামরুল হাসান, সবার কাছে যিনি ‘পটুয়া কামরুল হাসান’নামে পরিচিত। ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮ সালে তৎকালীন স্বৈরাচারী শাসকের (হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ) বিরুদ্ধে তাঁকেই দেখি ‘দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পরে’ স্কেচ করতে। এস এম সুলতানের ‘হত্যাযজ্ঞ’ চিত্রকর্মটি মুহূর্তে স্তম্ভিত করে আজও বাঙালির হৃদয়।
আর তারই ধারাবাহিকতায় ছাপ দেখি বাংলা মাসের প্রথম দিনটিতে। মঙ্গল শোভাযাত্রা তারই চলতি রূপ। বৈশাখী উৎসবের একটি আবশ্যিক অঙ্গ এ শোভাযাত্রা। বাঙালির বর্ষবরণের আনন্দ আয়োজনে মিশে আছে এ মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে প্রতি বছরই পয়লা বৈশাখে অর্থাৎ বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ তথা বাংলা নববর্ষে অনুষ্ঠিত হয় এ মঙ্গল শোভাযাত্রা। বৈশাখের সকালে এ শোভাযাত্রাটি রাজধানী ঢাকায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসেই শেষ হয়। এই শোভাযাত্রায় ফুটিয়ে তোলা হয় গ্রামীণ জীবন এবং আবহমান বাংলাকেও। শোভাযাত্রায় অংশ নেয় চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-পেশার হাজারো নানা বয়সের মানুষ। এই শোভাযাত্রায় বহন করা হয় বিভিন্ন ধরনের প্রতীকী শিল্পকর্ম। থাকে বাংলা সংস্কৃতির পরিচয়বাহী নানা প্রতীকী উপকরণ, রং-বেরঙের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিলিপি।
১৯৮৯ সাল থেকে শুরু হওয়া এ মঙ্গল শোভাযাত্রা নববর্ষ উদযাপনের একটি অন্যতম আকর্ষণ হয়ে স্থান করে আছে বাঙালির মন ও মননে। ঢাকায় আয়োজিত প্রথম আনন্দ শোভাযাত্রাটি জনমানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। সকালে চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পয়লা বৈশাখে এ শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রায় সেইবার স্থান পায় বিশালকায় চারুকর্ম পাপেট, হাতি ও ঘোড়াসহ বিচিত্র সাজসজ্জা। থাকে বাদ্যযন্ত্র ও নৃত্য। তারপরের বছরও চারুকলার সামনে থেকে বের হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। তবে সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী জানা যায়, সে বছর নববর্ষের সকালে চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দ মিছিল বের করে চারুশিল্পী সংসদ। শুরুতে চারুকলার এ শোভাযাত্রাটির নাম মঙ্গল শোভাযাত্রা ছিল না। এর নাম ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা।
সেই সময়ের সংবাদপত্রের খবর থেকেও এমনটা নিশ্চিত হওয়া যায়। সংবাদপত্র থেকে যতটা ধারণা পাওয়া যায়, ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এই আনন্দ শোভাযাত্রা মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে নাম লাভ করে। তবে বর্ষবরণ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা চারুকলায় ১৯৮৯ সালে শুরু হলেও এর ইতিহাস আরো কয়েক বছরের পুরোনো। ১৯৮৬ চারুপীঠ নামের একটি প্রতিষ্ঠান যশোরে প্রথমবারের মতো নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভযাত্রার আয়োজন করে। যশোরের সেই শোভাযাত্রায় ছিল পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরোনো বাদ্যযন্ত্রসহ আরো অনেক শিল্পকর্ম। শুরুর বছরেই যশোরে সেই শোভাযাত্রা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরবর্তী সময়ে সেই শোভাযাত্রার আদলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে শুরু হয় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা।
যশোরে প্রথম যে শোভাযাত্রাটি বের হয় তার উদ্যোক্তা ছিলেন চারুপীঠের প্র্রতিষ্ঠাতা তরুণ শিল্পী মাহবুব জামাল শামীম, হীরম্ময় চন্দ, ছোট শামীমসহ কয়েকজন। এর আগে এই উপমহাদেশে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে শোভাযাত্রার তেমন একটা ইতিহাস পাওয়া যায় না। এরপর ১৯৯০ সালে বরিশাল ও ময়মনসিংহ শহরে বের হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। এ প্র্রসঙ্গে চিত্রশিল্পী রফিকুন নবীর কথা তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘১৯৮৬ সালে যশোরের চারুপীঠের শামীম ও হীরম্ময় চন্দের উদ্যোগে প্রথম পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সাজগোজ করে শোভাযাত্রা বের করা হয়। চারুকলা ইনস্টিটিউট ও চারুশিল্পী সংসদের উদ্যোগে আমরা ১৯৮৯ সালে ঢাকায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করি। তবে যশোরের চারুপীঠ এ ক্ষেত্রে প্রশংসার দাবিদার। তাদের চেতনা থেকেই আমরা বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে শোভাযাত্রা শুরু করি।’ এদিকে প্রথম শোভাযাত্রার স্মৃতিচারণা করে শিল্পী শামীম বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা থেকেই আমরা ওই সময় নববর্ষ উদযাপনে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করি। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরিতে অংশ নিয়ে আমরা শহীদ মিনারে গিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। আমার চিন্তা হয়, ভাষা তো হলো; কিন্তু আমাদের কৃষ্টি, ইতিহাস ঐতিহ্য কোথায়? বাঙালি হতে গেলে আরো কিছু করা দরকার।
এই চিন্তা থেকে আমি শিল্পী হীরম্ময় চন্দ ও ছোট শামীম মিলে সিদ্ধান্ত নিই বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে শহরে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করব। এক মাস আগে থেকেই আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করি। ছোট শামীম প্রজাপতি, পাখি তৈরি করে। হীরম্ময় চন্দ তৈরি করে মুকুট। চারুপীঠের ৩০০ শিক্ষার্থীকে আমরা নাচ-গানের প্রশিক্ষণ দেই। কেমন পোশাক হবে তাও ঠিক করি। এরপর যশোর সাহিত্য পরিষদের কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে আমরা ১৯৮৬ সালে বাংলা ১৩৯২ বর্ষবরণ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করি। ঢাক, ঢোল, সানাই বাজনাসহ বর্ণাঢ্য সেই শোভাযাত্রা এম এম কলেজের পুরাতন ছাত্রাবাস চারুপীঠ কার্যালয় থেকে শুরু হয়। এরপর দড়াটানা, বড়বাজার, চৌরাস্তা, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড হয়ে ফের চারুপীঠে এসে ওই শোভাযাত্রাটি শেষ হয়। পরবর্তী সময়ে আমরা চারুকলার ছাত্ররা মিলে ১৯৮৯ সালে প্রথম ঢাকায় শোভাযাত্রা বের করি। বরিশাল, ময়মনসিংহ জেলায় ১৯৯০ সালে যে শোভাযাত্রা বের হয়, সেখানেও চারুকলার ছাত্রদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।’
তথ্য-উপাত্তে আমরা দেখতে পাই, ঢাকায় আয়োজিত প্রথম আনন্দ শোভাযাত্রায় ছিল পাপেট, ঘোড়া, হাতি। ১৯৯০-এর আনন্দ শোভাযাত্রায়ও স্থান পায় নানা ধরনের শিল্পকর্মের প্রতিকৃতি। ১৯৯১ সালে চারুকলার শোভাযাত্রা জনপ্রিয়তায় নতুন মাত্রা লাভ করে। চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিল্পীদের উদ্যোগে হওয়া সেই শোভাযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাধ্যক্ষ, বিশিষ্ট লেখক-শিল্পীসহ সাধারণ নাগরিকরাও অংশ নেয়। শোভাযাত্রায় স্থান পায় বিশালকায় হাতি, বাঘের প্রতিকৃতির কারুকর্ম। কৃত্রিম ঢাক আর অসংখ্য মুখোশখচিত প্ল্যাকার্ডসহ মিছিলটি নাচে-গানে উৎফুল্ল পরিবেশ সৃষ্টি করে। ১৯৯২ সালের আনন্দ শোভাযাত্রার সামনে রং-বেরঙের পোশাক পরা ছাত্রছাত্রীদের কাঁধে ছিল বিরাট আকারের কুমির। বাঁশ এবং বহু বর্ণের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল সেই কুমিরটি। ১৯৯৩ সালে ‘১৪০০ সাল উদযাপন কমিটি’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রার আকর্ষণ ছিল বাঘ, হাতি, ময়ূর, ঘোড়া, বিভিন্ন ধরনের মুখোশ।
চারুকলার সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় দিয়ে শিশু একাডেমি হয়ে আবার চারুকলায় এসে শেষ হয়। এর এক বছর পর ১৯৯৪ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয় পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁও ও শান্তিনিকেতনে। কয়েক বছর ধরে নববর্ষ উপলক্ষে দেশব্যাপী মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হচ্ছে। তবে মানিগঞ্জের সিংগাইর থানার সারাইল গ্রামের সিদ্ধাবাড়ীর প্রাচীন মেলায় এক ধরনের লোকমিছিল বের করা হতো বলে জানা যায়। অনেকের মতে, এই লোকমিছিলের বিবর্তনরূপ এ শোভাযাত্রা। তবে যাই হোক, সময় পাল্টেছে অনেক। এ কথা আজ স্বীকার করতেই হয়, শোভাযাত্রায় প্রদর্শিত প্রতিমূর্তিগুলো নিছক কেবল পশুপাখির অবয়ব মাত্র নয়; বরং এর সাথে মিলেমিশে আছে রাজনৈতিক বাস্তবতা। চলমান রাজনীতির ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত এ শোভাযাত্রা নিঃসন্দেহে অভিনব ও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
বৈশাখের প্রথম দিনে একদিকে লাল-সাদা রঙের সংমিশ্রণে সেজে ওঠে বাঙালি, উদযাপন করে আনন্দ। তারই পাশাপাশি সমসাময়িক সমাজ-বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নানা অসঙ্গতির প্রতিবাদের স্বরূপ হিসেবে মূর্ত হয় চিত্রকলার ভাষিক দিক। মঙ্গল শোভাযাত্রায় শোভিত প্রতিটি প্রতিমূর্তিই তারই সাক্ষ্য বহন করে। এদিকে বাংলা নববর্ষ বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়ে আসছে অনেক দিন ধরেই। এমনকি এ উৎসবে অংশ নেয় ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন উৎসব। বাঙালিরা সেদিন আপন সংস্কৃতিতে নিজেদের রাঙিয়ে তুলে নানা সাজে। বিশ্বের সব প্রান্তের সব বাঙালি এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়, ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে অতীত বছরের সব দুঃখ-গ্লানি। সবার কামনা থাকে যেন নতুন বছরটি সমৃদ্ধ ও সুখময় হয়।
তারপরও প্রাসঙ্গিকক্রমে চিত্রশিল্পী আমিনুল ইসলামের একটি কথা মনে পড়ে গেল। তিনি তাঁর এক লেখায় (উত্তরাধিকার : শিল্পকলার শিকড়-অন্বেষণে আরেক পরিপ্রেক্ষিত) খানিকটা চাপা খেদের সাথেই উল্লেখ করেছিলেন ‘শিল্পকলার শিকড়ের সন্ধান আলোচনায় প্রায় সবাই জাতীয় ইতিহাস থেকে শিল্প-সংস্কৃতির ঐতিহ্য খোঁজে অথবা সমাজবিজ্ঞানের আলোকে আচার-অনুষ্ঠান, ধর্ম, বিশ্বাস, রাজনীতি ও অর্থনীতির বিচিত্র গতিধারার বিশ্লেষণ করে। এ সবই শিল্পকলা সৃষ্টির বহিরাঙ্গ বা বাহ্যিক দিক, অনেক পরের ঘটনা, শিকড় নয়। তার পূর্বের খোঁজ কেউই করেন না। সত্যিকার অর্থে মানুষের শিল্পকলা বিকাশের শিকড় পাঁচ শত, পাঁচ হাজার, পাঁচ লাখ বছরের পুরোনো। শিকড়ের সন্ধান করতে হলে আমাদের যেতে হবে আরো গভীর উৎসমূলে, মানুষের বিবর্তনের পথ ধরে।’