মেলার সময় দেশে আসেন পূরবী বসু ও জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত

ফেব্রুয়ারি এলেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা। তাই ফেব্রুয়ারি আর গ্রন্থমেলা এখন একাকার। যদিও দুই বছর ধরে এখন মেলা বিস্তৃত হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত পৌঁছেছে। ফেব্রুয়ারি আসতেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশের এলাকা উৎসবমুখর হয়ে ওঠে লেখক, পাঠক, প্রকাশকদের অংশগ্রহণে। প্রতিদিনই মেলায় হাজির হন কোনো না কোনো লেখক। লেখক ও পাঠক পারস্পরিক সাক্ষাতে মেলা হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত ও আনন্দমুখর।
মেলার প্রথম দিনেই এসেছিলেন লেখক দম্পতি পূরবী বসু ও জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত। পূরবী বসু ও জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত দুজনেই যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। প্রতিবছর বইমেলা এলেই তাঁরা চলে আসেন দেশে। সন্ধ্যার দিকে মেলার মাঠে দেখা হতেই হাসতে হাসতে পূরবী বসু বললেন, ‘মেলা শুরু হলো, আমরাও চলে এলাম! সারা বছর অপেক্ষা করে থাকি এই মাসটির জন্য।’
পাশেই দাঁড়ানো জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত একই সুর মিলিয়ে বললেন, ‘মেলায় আসি অনেকের সঙ্গে দেখা হয়। সবার সঙ্গে বাসায় গিয়ে দেখা করা তো আর সম্ভব নয়। আর সবাইকে বাসায় ডেকে আনাও যায় না। তাই মেলা একধরনের ক্ষেত্র বা সুযোগ তৈরি করে দেয় সবার সঙ্গে সাক্ষাতের। পাশাপাশি অনেক বই নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগও হয়। অনেক নবীন লেখকের সঙ্গে দেখা হয়। নতুনদের চিন্তার বিষয়েও ধারণা পাওয়া যায়।’
মেলায় আসার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে পূরবী বসু বললেন, ‘একটা সময়ে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, তখন তো প্রায় রোজই মেলায় আসা হতো। মেলায় না এলে তখন মনে হতো রাতে ঘুমই ভালো হতো না। কোনোদিন যদি ক্লাস শেষে মেলায় যেতে না পারতাম, তবে পরের দিন কখন যাবো, সে অপেক্ষায় বসে থাকতাম। তখনকার মেলায় এখনকার মতো এত স্টল হতো না সত্যি, তবে আনন্দ হতো। তখনকার বড় বড় লেখক আসতেন, তাঁদের সঙ্গে দেখা হতো। তাঁদের সঙ্গে দেখা হতো বলতে দূর থেকে তাঁদের দেখতাম। খুব অল্পই তাঁদের কাছে ভিড়তাম। তবুও যাঁদের লেখা পড়ি, তাঁদের কাছ থেকে দেখতে পাব—সে লোভে বা আগ্রহে মেলায় যেতাম।’
আমেরিকায় বসবাস করলেও প্রতিবছর বইমেলায় বই প্রকাশ হয় পূরবী বসুর। তারই ধারাবাহিকতায় গেল বছর কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এবারের মেলায়ও তাঁর বই প্রকাশিত হবে। মেলার প্রথম দিন তাঁর বই স্টলে আনতে পারেননি প্রকাশক। তাঁর বই পাওয়া যাবে অন্যপ্রকাশ ও নবযুগ প্রকাশনার স্টলে।
অন্যদিকে, গল্পকার জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে অন্যপ্রকাশ থেকে। বই প্রকাশের বিষয়ে কথা বলতে তিনি খুব উৎসাহ দেখাতে চান না বলেই মনে হলো। তিনি বরং মেলায় পাঠক ও দর্শনার্থী কেমন এলো, সেদিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। দেশের অস্থির অবস্থার কথা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির কারণে মেলায় লোকসমাগম কম হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করলেন তিনি।
ফেব্রুয়ারিজুড়েই বাংলাদেশে থাকবেন—এমনটা জানিয়ে পূরবী বসু বললেন, এবার যদি দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকে এবং শরীর ঠিক থাকে, তবে মেলায় আরো অনেক দিন আসব। পাশে দাঁড়ানো জ্যোতিপ্রকাশ দত্তও স্ত্রীর কথার সঙ্গে মাথা নাড়লেন।