গুণদার ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ জীবন
১
নির্মলেন্দু গুণ লিখে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখা গেল বাংলা উইকিপিডিয়া তথ্য দিচ্ছে, তাঁর অর্থাৎ কবি নির্মলেন্দু গুণের কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা প্রায় পঁয়ত্রিশ। এর মানে তাঁর কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা আমার বয়সের প্রায় কাছাকাছি। সুতরাং তাঁর কবিতা নিয়ে আলোচনা করতে যাওয়া আর মই দিয়ে মেঘ স্পর্শ করার চেষ্টা সমান। তা ছাড়া আমি কবিতার মানুষ নই, গদ্যের। গল্প-উপন্যাস নিয়ে আমার কারবার। সুতরাং তাঁর কবিতার আলোচনায় না যাওয়ার এটাও একটা যুক্তি হতে পারে। কিন্তু নির্মলেন্দু গুণ কি শুধুই কবি? তিনি কি গদ্যকার নন? নিশ্চয়ই। তাহলে তাঁর গদ্য নিয়েও তো আলোচনা করা যায়। তবে সেই আলোচনায় নতুন কিছু থাকবে না, তাঁর গদ্য সম্পর্কে অন্যের বলা কথাগুলোই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে লিখতে হবে।
বাংলাদেশের অগ্রসর পাঠকমাত্রই জানেন নির্মলেন্দু গুণের গদ্য কতটা শক্তিশালী, কতটা আধুনিক, কতটা সাবলীল, কতটা রসালো। অন্তত যাঁরা আমার কণ্ঠস্বর বইটা পড়েছেন, গদ্যশিল্পী নির্মলেন্দু গুণকে তাঁরা বেশ ভালো করেই জানেন। আমি আর নতুন করে কী লিখব? গদ্য নিয়ে আলোচনা না করার এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি বৈকি। তাহলে? তাহলে আর কি, সামগ্রিক নির্মলেন্দু গুণকে নিয়ে এলোমেলো কিছু আলোচনা করাটা সুবিধাজনক। যুক্তিযুক্তও।
২
উইকিপিডিয়া যে নির্মলেন্দু গুণের পঁয়ত্রিশটি কাব্যগ্রন্থের তথ্য জানাল, তাঁর সবকটি পড়েছি বললে মিথ্যা হবে। এই সৌভাগ্যটা আমার হয়নি। যতদূর মনে পড়ে, প্রেমাংশুর রক্ত চাই, না প্রেমিক না বিপ্লবী, চৈত্রের ভালোবাসা, বাংলার মাটি বাংলার জল, দূর হ দুঃশাসন―এই কাব্যগ্রন্থগুলো পড়ার সুযোগ হয়েছিল গত শতকেই, আমার বয়স বিশ পূর্ণ হওয়ার আগেই। কাব্যগ্রন্থগুলো পড়ার আগ্রহটা উসকে দিয়েছিল তাঁর অন্য একটি বই―আমার কণ্ঠস্বর। এটি তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ফেনীর পরশুরাম শাখার মাধ্যমে বইটি পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। তখন আমাদের বন্ধুবৃত্তে তিনটি বই পড়া অনেকটা বাধ্যতামূলক ছিল―নির্মলেন্দু গুণের আমার কণ্ঠস্বর, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ভালোবাসার সাম্পান ও আবদুল মান্নান সৈয়দের করতলে মহাদেশ। আমার কাছে তখন মনে হয়েছিল, তিনটি বইয়ের মধ্যে প্রধানতমটি হচ্ছে আমার কণ্ঠস্বর। বইটি সম্পর্কে কলকাতার দেশ পত্রিকায় কবি ও প্রাবন্ধিক শ্রীসুরজিৎ দাশগুপ্ত লিখেছিলেন, ‘আমার কণ্ঠস্বর আত্মস্মৃতিমূলক বাংলা সাহিত্যে এক অভিনব কণ্ঠস্বর―আন্তরিক, আদর্শের ও প্রবৃত্তির দ্বন্দ্বে উদ্ভ্রান্ত, শক্তিশালী, সাহসী, সৎ ও সংরক্ত। বহু দিক থেকেই নির্মলেন্দু গুণের আমার কণ্ঠস্বর অষ্টাদশ শতাব্দীর ফরাসি দার্শনিক জাঁ জাক রুশোর স্বীকারোক্তি নামক বিশ্বখ্যাত গ্রন্থের সঙ্গে তুলনীয়। এ গ্রন্থ মানবিক অস্তিত্বের এমন এক বহুমাত্রিক প্রকাশ, যা একাধারে নাটকীয় ও মর্মস্পর্শী।’
উপরোক্ত কাব্যগ্রন্থ ও এই আত্মজীবনীটি ছাড়া তারপর নির্মলেন্দু গুণের গ্রন্থবদ্ধ কোনো লেখা আর পড়া হয়নি। পড়েছি বিচ্ছিন্নভাবে। কখনো দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকীতে, কখনো কোনো সাহিত্য পত্রিকায় এবং সাম্প্রতিক ফেসবুকে।
২০০৮ সালে তাঁর একটা লেখা পড়া আমার জন্য প্রায় বাধ্যতামূলক ছিল। তখন আমি বাংলাদেশের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন সাপ্তাহিকে কাজ করছি। নির্মলেন্দু গুণ পত্রিকাটির উদ্বোধনী সংখ্যা থেকেই এবং প্যারিস নামে ধারাবাহিকভাবে একটি ভ্রমণ কাহিনী লিখছিলেন। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসকে বলা হয় শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির লীলাভূমি। গুণদা প্যারিস ভ্রমণ করে এসে লেখায় হাত দিলেন। সাহিত্যের নানা দিক উঠে এসেছে তাঁর এবং প্যারিস শীর্ষক ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনীটিতে। নিছক ভ্রমণকাহিনী নয়, অতীত থেকে বর্তমান অবধি নানা ঘটনার প্রেক্ষাপটে প্যারিসের মানুষ, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, স্থাপত্য প্রভৃতি বিষয়ের সাবলীল বর্ণনা প্রকাশিত হয় তাঁর এই অনবদ্য রচনাটিতে।
সাপ্তাহিক পত্রিকাটির নিয়মিত বিভাগগুলোর দেখাশোনার দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল আমার ওপর। ফলে অনিবার্য কারণেই তাঁর ধারাবাহিক লেখাটি আমাকে পড়তে হতো―কোনোভাবেই যাতে ভুল ছাপা না হয়। এ সুবাদে গুণদার সঙ্গে দু-একবার ফোনে কথাও হয়েছিল। লেখা পেতে দেরি হলে অথবা কোনো শব্দ বুঝতে অসুবিধা হলে বা খটকা লাগলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ফোন দিতাম এবং তিনি সঠিক শব্দটি বা সঠিক বাক্যটি বলে দিতেন। ফোনে কথা বলতে বলতেই ধীরে ধীরে তাঁর সঙ্গে একটা হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে।
বছরখানেক পর তাঁর এবং প্যারিস ধারাবাহিকটি শেষ হয়ে গেল। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের আর কোনো মাধ্যম থাকল না। প্রায় বছর দেড়েক পর সাপ্তাহিক-এর ঈদ সংখ্যা কি বিশেষ কোনো সংখ্যার জন্য একদিন তাঁর একটি আত্মজৈবনিক সাক্ষাৎকার নেওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁকে ফোন করলাম। সেদিনই প্রথম তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয়। যতদূর মনে পড়ে, আলাপটি প্রায় দেড় ঘণ্টায় গড়িয়েছিল। তখন তাঁর বয়স সাতষট্টির কম নয়। কিন্তু তাঁর সঙ্গে সেদিনের আলাপে একবারও মনে হলো না তিনি সাতষট্টি বছরের বৃদ্ধ। বরং মনো হলো, তিনি এখনো যুবক, এখনো চল্লিশ পার করেননি। সাতষট্টি বছর বয়সেও তিনি এত মজার কথা বলতে পারেন, এত রসিকতা করতে পারেন, কথা দিয়ে মানুষকে হাসাতে পারেন, লেখার মতো তাঁর কথাও যে রসালো―সেদিনই প্রথম টের পেলাম। কথা বলছেন তো বলছেনই, আমি মুগ্ধ শ্রোতা শুনেই যাচ্ছি। শুনছি আর হাসছি।
কথার একপর্যায়ে আসল কথাটি বললাম, ‘দাদা, আপনার একটা ইন্টারভিউ করতে চাই। বেশ বড়সড়। আত্মজৈবনিক।’ দাদা হাসলেন। না, কিছুতেই তিনি সাক্ষাৎকার দেবেন না। হাসতে হাসতে বললেন, ‘আমি তো আন্ডারগ্রাউন্ডে, ইন্টারভিউ নেবে কী করে?’ শুনে প্রচণ্ড হাসি পেল। এই কথা শুনে কার না হাসি পাবে! কবি নির্মলেন্দু গুণ আন্ডারগ্রাউন্ড জগতের বসিন্দা, এমন একটা কথা বাংলাদেশের কেউ বিশ্বাস করবে? হাসি তো পাবেই।
কথাটা আসলে এক অর্থে মিথ্যা নয়। প্রথমত, যতটা জানতাম তখন ঢাকায় তাঁর বাসা আমাদের চেনা এলাকার বাইরে, বুড়িগঙ্গা নদীর কাছে কামরাঙ্গীরচরে। কামরাঙ্গীরচরের মতো এলাকায়, যেখানে সাধারণত নিম্নবিত্ত মানুষ থাকে, তাঁর মতো বিখ্যাত কোনো কবি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন, আমার জানা নেই। তাঁর সময়ের কবিগণ, যাঁরা কবি হিসেবে তাঁর মতো খ্যাতিমান, তাঁদের কেউ গুলশান, কেউ বনানী, কেউ ধানমণ্ডির মতো অভিজাত এলাকায় নিজস্ব বাড়িতে কিংবা ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তিনি এখনো, এই পড়ন্ত বয়সেও, কামরাঙ্গীরচরেই থাকেন। এতেই বোঝা যায় ব্যক্তি নির্মলেন্দু গুণ অর্থনৈতিকভাবে কতটা সৎ জীবন কাটিয়েছেন এবং কাটাচ্ছেন। কিন্তু না, সেদিন তাঁর কথাবার্তা শুনে বোঝা গেল না তিনি ‘জীবন কাটাচ্ছেন’, বরং মনে হলো তিনি ‘জীবনযাপন’ করছেন।
অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জীবনটাকে উপভোগ করছেন। আমাদের কালের ত্রিশ বছরের একজন যুবকের মধ্যেও এমন প্রাণপ্রাচুর্য খুব একটা দেখা যায় না। অবাক লেগেছিল, সাতষট্টি বছর বয়সেও মানসিকভাবে এতটা সজীব তিনি থাকেন কী করে! তাঁর সঙ্গে সেদিন কথা বলে সত্যিকারার্থেই জীবনটাকে উপভোগ্য করে তোলার মন্ত্র পেয়েছিলাম।
দ্বিতীয়ত, দেশের অধিকাংশ কবি-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী যেখানে নানা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি হিসেবে হাজির থাকছেন, যা ইচ্ছে তা লিখে পত্রিকার পাতা ভরাচ্ছেন, সুযোগ পেলেই প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়ে বেড়াচ্ছেন, রাতের বেলায় টেলিভিশনের টক শোতে গিয়ে সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতিবিষয়ক আলোচনায় শো মাতিয়ে তুলছেন, নির্মলেন্দু গুণ তাদের তুলনায় ব্যতিক্রম। অনেকটা নিভৃতচারী। অনেকটা গভীর নদীর অন্তঃপ্রবাহী নিঃশব্দ স্রোতের মতো। এই হিসেবে তো তিনি আন্ডারগ্রাউন্ডেই।
পরে উপলব্ধি করতে পেরেছি, ‘আমি তো আন্ডারগ্রাউন্ডে’ কথাটি বলে আসলে তিনি সাক্ষাৎকার দেওয়া থেকে বিরত থাকতে চাইছেন। নিজেকে তিনি আড়াল করতে চাইছেন। আত্মপ্রচারের বাসনা নেই তাঁর মধ্যে। আত্মপ্রচারকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে যেতে চাইছেন। তা ছাড়া সাক্ষাৎকারে নতুন আর কী কথা বলবেন তিনি? যা বলার তা তো তার আমার ছেলেবেলা বা আমার কণ্ঠস্বর বা আত্মকথা ১৯৭১ বইতে লিখেই ফেলেছেন। ব্যক্তি ও কবি নির্মলেন্দু গুণকে, তাঁর বেড়ে ওঠা, বেড়ে ওঠার পরিমণ্ডলকে জানার জন্য এই বইগুলোই তো যথেষ্ট। সাক্ষাৎকারে তো নতুন করে আর কিছু বলার নেই। আত্মপ্রচারের এই সংযম আমরা খুব কম লেখকের মধ্যেই পাই। এটিই নির্মলেন্দু গুণকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে দিয়েছে, আলাদা করে রেখেছে।
৩
কবি নির্মলেন্দু গুণ এখন জীবনের সর্বশেষ অধ্যায়ে, যে অধ্যায়ে মানুষকে সাধারণত নিঃসঙ্গতা গ্রাস করে। কিন্তু একেবারেই ব্যতিক্রম গুণদা। আভিধানিক অর্থে নিঃসঙ্গ বলতে যা বোঝায়, সেই অর্থে তিনি নিঃসঙ্গ, সন্দেহ নেই। কামরাঙ্গীরচরের ‘নয়াগাঁও’র বাড়িতে তিনি বলতে গেলে একাই থাকেন। কিন্তু নিঃসঙ্গতা যে তাঁকে কব্জা করতে পারেনি, তা বোঝা যায় ফেসবুকে তাঁর স্ট্যাটাসগুলো দেখে। ফেসবুকে পুরোদমেই সরব। বলা যায় ফেসবুক তাঁর নিঃসঙ্গতাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই তিনি ফেসবুকে কিছু না কিছু লিখছেন। কোনোদিন কবিতা, কোনোদিন জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা, কোনোদিন নিজের ক্যামেরায় ভালো কোনো ছবি তুলে আপলোড করে দিচ্ছেন। সাম্প্রতিক তাঁর বেশিরভাগ স্ট্যাটাসে থাকে কাশবন প্রসঙ্গ। কাশবন বিদ্যানিকেতন। এটি তাঁর সাম্প্রতিক স্বপ্নের জায়গা। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের আদলে জন্মভূমি নেত্রকোনায় তিনি গড়ে তুলেছেন কাশবন বিদ্যানিকেতন।
কদিন আগে কাশবন সম্পর্কে তিনি ফেসবুকে লিখলেন, ‘বিদ্যুৎ পাচ্ছে কাশবন বিদ্যানিকেতন। একটি শুভ সংবাদ। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কাল থেকে বিদ্যুৎ পেতে চলেছে কাশবন বিদ্যানিকেতন। বিদ্যুতের থাম এবং ট্রান্সফরমার বসানো হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ-মিটারও এসে গেছে আমাদের হাতে। দৈব-দুর্বিপাকে পৃথিবী ধ্বংস না হয়ে গেলে, আমরা কাল থেকে কাশবন বিদ্যানিকেতনে বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতে চলেছি। আহা কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে। নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ বিতরণকারী কর্তৃপক্ষকে অনেক ধন্যবাদ। কাল থেকে আমাদের ঘুমিয়ে থাকা কম্পিউটার ল্যাবটি চালু হবে। শুরু হবে মাল্টিমিডিয়ার ক্লাস। মাথার ওপরে বিদ্যুৎ-পাখা বাতাস বিলাবে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের। রাতের অন্ধকার ভেদ করে জ্বলে উঠবে আলোর নাচন। কাশবন বিদ্যানিকেতনে দ্রুত বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার জন্য ফেসবুকে লেখার পর দ্রুত কাজ হয়েছে। বিদ্যুৎ না পেলে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করা হবে বলে যে হুমকি দিয়েছিলাম, তাকে বিবেচনায় নেওয়ার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ-কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। যাঁরা আমার ঘেরাও কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছিলেন, তাঁদের অনেক ধন্যবাদ।
অতঃপর স্টেনলেস স্টিলের বর্ণমালা দিয়ে বানানো স্কুলের নামফলকটি ছবিতে দৃশ্যমান বিদ্যালয় ভবনের ছাদের ডান দিকটায় স্থাপন করা হবে। দুটি ৮০ ওয়াটের এনার্জি বাল্ব স্কুলের ওই নামফলকটির ওপর রাতভর আলো দেবে। সেই আলোর কিছুটা পড়বে নজরুল ভাস্কর্যে, কিছুটা কাশবনের স্বাগত স্তম্ভে। বারহাট্টার দিক থেকে সড়কপথে আসা পথিকরা অনেকদূর থেকেই দেখতে পাবেন সেই আলো। কাশবনের অলোকবর্তিকা।’
পুরো স্ট্যাটাসটা তুলে দিলাম এই কারণে যে, এই লেখাটিতে কাশবন সম্পর্কে মোটামুটি কিছু তথ্য রয়েছে। কাশবন আসলে কী ধরনের প্রতিষ্ঠান, সেই বিষয়েও একটা ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়া কাশবন নিয়ে গুণদার ভেতর যে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা কাজ করছে, তাও টের পাওয়া যাচ্ছে। কোনোদিন কাশবনে যাওয়া হয়নি। তবে তাঁর স্ট্যাটাসের সূত্রে জানতে পারি, দিনে দিনে কাশবনের কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। একদিন হয়তো এই বিদ্যানিকেতন সত্যিকারার্থেই শান্তিনিকেতনের মতো জ্ঞানের চারণভূমি হয়ে উঠবে। আমরাও সেই প্রত্যাশা করি।
গুণদার কবিতার মতো ফেসবুক স্ট্যাটাসগুচ্ছও পাঠকপ্রিয়। দেখতে পাই, একেকটি স্ট্যাটাসে কম করে হলেও দেড়-দুই হাজার লাইক এবং এক-দেড়শ মন্তব্য পড়ে। এদিক থেকে তিনি ফেসবুক সেলিব্রেটিও বটে। ফেসবুকে তাঁর স্ট্যাটাসগুচ্ছ নিয়ে এরই মধ্যে ২০১৩ সালের অমর একুশে বইমেলায়, কথাপ্রকাশ থেকে ‘নির্গুণের মুখপঞ্জি ও কাশবনের গল্প’ নামে একটি বইও বেরিয়েছে। সৌভাগ্য যে, তাঁর ফেসবুক ফ্রেন্ড হওয়ার সুবাদে বইটির প্রচ্ছদে আমার ছবিটিও স্থান পেয়েছে। তাঁর মতো একজন জীবন্ত কিংবদন্তির বইয়ে আমার মতো নগণ্যের ছবি স্থান পেয়েছে, এটি পরম সৌভাগ্য তো বটেই।
আমরা যাঁরা গুণদার ভক্ত, আমাদের মধ্যে বিস্ময় জাগিয়ে সম্প্রতি তিনি একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করলেন। তাঁর ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ কবিতা অবলম্বনে তরুণ কবি ও চলচ্চিত্র পরিচালক মাসুদ পথিক নির্মাণ করেছেন একটি অনবদ্য সিনেমা―নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ। ছবিটি এরই মধ্যে বাংলা চলচ্চিত্রে একটা ভিন্নমাত্রা সংযোজন করেছে। জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছে। ছবিটিতে গুণদা একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনয় দেখে একবারও মনে হয়নি, এর আগে কখনো তিনি সিনেমায় অভিনয় করেননি।
এভাবে বহুমাত্রিক কাজের মধ্য দিয়ে প্রিয় গুণদা আমাদের মাঝে আরো অনেক দিন বেঁচে থাকুন, এই প্রত্যাশা আমাদের। সত্যি গুণদা, আপনাকে দেখে আমরা অনুপ্রাণিত, উদ্দীপিত, উজ্জীবিত হই। বেঁচে থাকার সাহস পাই। অন্তত আমাদের ভালো রাখার জন্য আপনার আরো অনেক দিন বেঁচে থাকা দরকার।