মুক্তগদ্য

বিখ্যাত লেখকদের মৃত্যুভাবনা

Looks like you've blocked notifications!
মার্ক টোয়েন

মৃত্যুই মানুষের নিয়তি। কবি নির্মলেন্দু গুণ ‘স্ববিরোধী’ কবিতায় লিখেছেন, ‘আমি জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়েছিলাম, এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি।’ প্রত্যেক জীবিত মানুষের মধ্যেই কাজ করে মৃত্যুভাবনা। কবি ও লেখকরা মানুষ হিসেবে একটু বেশি সংবেদনশীল।  মৃত্যু নিয়ে তাদের রয়েছে নিজস্ব ভাবনা ও দর্শন। এ রকমই পাঁচজন বিখ্যাত লেখকের মৃত্যুভাবনার কথা ছাপা হয়েছে শর্টলিস্ট ডটকম ওয়েবসাইটে।

মার্ক টোয়েন

মৃত্যু সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না। জন্মের আগে আমি হাজার হাজার কোটি বছর ধরে মৃত ছিলাম। তাই মৃত্যুতে আমি অস্বস্তিবোধ করি না।’

১৮৭১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি জন্মেছিলেন স্যামুয়েল ল্যাংহর্ন ক্লেমেন্স নামে। পরবর্তীকালে পরিচিতি পান মার্ক টোয়েন নামে। তাঁর বিখ্যাত কাজের মধ্যে রয়েছে দি অ্যাডভেঞ্চার্স অব হ্যাকলবেরি ফিন (১৮৮৫), দি অ্যাডভেঞ্চার্স অব টম সোয়্যার (১৮৭৬), ইভস ডায়েরি (১৯০৬)। কর্মজীবনের শুরুতে কিছুদিন সাংবাদিকতা করেছিলেন মার্ক টোয়েন। এ সময় বেশ কিছু ভ্রমণ-সাহিত্য রচনা করেছেন তিনি পত্রিকার জন্য। ১৯১০ সালের ২১ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান টোয়েন। ১৮৯৬ সালে মেয়ে সুসির মৃত্যুর পর থেকেই বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। বাকি আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের মৃত্যু তাঁকে বিমর্ষ করে তুলেছিল জীবনের শেষ ভাগে।

আলবের কামু

‘আমাদের সবাইকেই যেহেতু মরতে হবে এবং এটা ঠেকানোর কোনো উপায় নেই, তাই কখন এবং কীভাবে মরব, সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই।’

১৯১৩ সালের ৭ নভেম্বর আলজেরিয়ার জন্মেছিলেন কামু। একই সঙ্গে তিনি লেখক, সাংবাদিক ও দার্শনিক। ১৯৫৭ সালে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন কামু। ১৯৬০ সালের ৪ জানুয়ারি মাত্র ৪৬ বছর বয়সে ফ্রান্সের এক ছোট্ট শহর লো গ্রোন ফোসাখে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান কামু। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে দ্য স্ট্রেঞ্জার, দ্য প্লেগ।  

আর্থার মিলার

‘সবাই সঠিক আক্ষেপ নিয়ে মরার প্রত্যাশা করতে পারে।’

আর্থার মিলার জন্মেছিলেন ১৯১৫ সালের ১৭ অক্টোবর। একবিংশ শতাব্দীতে মার্কিন মঞ্চনাটকে তিনি উল্লেখযোগ্য জায়গা দখল করে আছেন। তাঁর বিখ্যাত মঞ্চনাটকের মধ্যে রয়েছে অল মাই সন্স (১৯৪৭), ডেথ অব এ সেলসম্যান (১৯৪৯), দ্য ক্রুশিবল (১৯৫৩), এ ভিউ ফ্রম দি ব্রিজ (১৯৫৫)। সিনেমার জন্য চিত্রনাট্যও লিখেছেন মিলার। ১৯৬০-এর দশকে নাটক রচনার জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। সাত দশক ধরে লিখেছিলেন আর্থার মিলার। শেষ বয়সে ক্যানসরে ভুগছিলেন তিনি। কার্নিকাটের রক্সবেরিতে নিজের বাড়িতে ২০০৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি।

 

টেনেসি উইলিয়ামস

‘মৃত্যু অনেক তাড়াতাড়ি চলে আসে। যখন আপনি জীবনের অর্ধেকও পার করেননি। কত মানেুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া বাকি থেকে যায়।’

১৯১১ সালের ২৬ মার্চ তাঁর জন্ম। তিনিও একজন বিখ্যাত মার্কিন নাট্যকার। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে দ্য গ্লাস মেনাজেরি (১৯৯৪), ক্যাট অন এ হট টিন রুফ, সুইট বার্ড অব ইয়ুথ। ১৯৮৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের এলিসি হোটেলের (Elysee Hotel) একটি স্যুইটে টেনেসি উইলিয়ামসের মৃতদেহ পাওয়া যায়। মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছিল, আইড্রপের বোতলের ছিপি গলায় আটকে মারা গিয়েছিলেন তিনি। তবে ফরেনসিক রিপোর্ট এবং তদন্ত শেষে গোয়েন্দারা জানিয়েছিলেন, ওষুধ এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানে তিনি মারা গিয়েছিলেন।

লিও টলস্টয়

‘যতক্ষণ পর্যন্ত না মানুষ মৃত্যুভয়কে জয় করতে পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে কিছু ভোগ করতে পারবে না। যে কোনো কিছুর পরোয়া করে না, পৃথিবীতে সবকিছুই তার। কষ্ট না পেলে মানুষ তার ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণাও করতে পারে না, আসলে মানুষ নিজেকেই নিজে বুঝতে পারে না।’ 

‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ লিও টলস্টয়ের বিখ্যাত বই। ১৮২৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাশিয়ায় জন্মেছিলেন টলস্টয়। উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ—লেখালেখির সব ক্ষেত্রেই তিনি উজ্জ্বল। তাঁর বিখ্যাত বইয়ের মধ্যে রয়েছে আন্না কারেনিনা, অ্যা কনফেশন। ১৯১০ সালে ৮২ বছর বয়সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান টলস্টয়। মৃত্যুর বেশ কিছুদিন আগে থেকেই মৃত্যুভাবনা ঘিরে ধরেছিল তাঁকে। স্বজনদের বারবার সে কথা বলেছেন তিনি।