আবুল হাসানের কবিতা

‘রাজা যায় রাজা আসে’ কাব্যগ্রন্থ থেকে

Looks like you've blocked notifications!

স্বীকৃতি চাই

 

আমি আমার ভালোবাসার স্বীকৃতি চাই

স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে,

মৃত্যুমাখা মাটির উপর দাঁড়িয়ে আছি একলা মানুষ,

বেঁচে থাকার স্বীকৃতি চাই,

স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে!

 

ঐ যে কাদের শ্যামলা মেয়ে মৌন হাতের মর্মব্যথায়

দাঁড়িয়ে আছে দোরের গোড়ায়

অই মেয়েটির স্বীকৃতি চাই,

স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে।

 

সস্তা স্মৃতির বিষণ্ণতার

নাভিমূলের অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি চাই

স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে

আমি আমার আলো হবার স্বীকৃতি চাই

স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে

 

অন্ধকারের স্বীকৃতি চাই

স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে, স্বীকৃতি দে।

 

 

অসভ্য দর্শন

(নির্মলেন্দু গুণকে)

 

দালান উঠেছে তাও রাজনীতি, দালান ভাঙছে তাও রাজনীতি,

দেবদারু কেটে নিচ্ছে নরোম কুঠার তাও রাজনীতি,

গোলাপ ফুটছে তাও রাজনীতি, গোলাপ ঝরছে তাও রাজনীতি!

মানুষ জন্মাচ্ছে তাও রাজনীতি, মানুষ মরছে তাও রাজনীতি!

বোন তার বেণি খুলছে যৌবনের অসহায় রোদে মুখ নত করে

বুকের ভ্রমর হাত রাখছে লুকিয়ে—তাও রাজনীতি

 

তরুণেরা অধঃপাতে যাচ্ছে তাও রাজনীতি পুনরায়

মারামারি যুদ্ধ আর অত্যাচার, হত্যার আগ্রাসী খুন মানুষের

ছাড়ানো বীর্যের ব্যথা, বিষণ্ণ মিথুন

মহিলার রক্তের ভিতরে ভ্রূণ, সমস্যার ছদ্মবেশে আবার আগুন

উর্বর হচ্ছে, রাজনীতি, তাও রাজনীতি!

আমি পকেটে দুর্ভিক্ষ নিয়ে একা একা অভাবের রক্তের রাস্তায় ঘুরছি

জীবনের অস্তিত্বে ক্ষুধায় মরছি রাজনীতি, তাও রাজনীতি

বেদনার বিষবাষ্পে জর্জরিত এখন সবার চতুর্দিকে খাঁ, খাঁ, খল,

তীব্র এক বেদেনির সাপ খেলা দেখছি আমি; রাজনীতির তাও কি

রাজনীতি?

 

 

একটা কিছু মারাত্মক

(মামুনুর রশীদকে)

 

একটা কিছু মারাত্মক ঘটছে কোথাও

নইলে ডাইনির মতোন কেন কোমর বাঁকানো

একটি চাঁদ উঠবে জ্যোৎস্নায়

উলুকঝুলুক গাছ,

এখানে সেখানে,

সবদিকে

কেন এত রক্তপাত হবে? গুপ্তহত্যা হবে?

কেন জীবনের দ্রব্যমূল্য বাড়বে এত শনৈঃ শনৈঃ

কেন ফুরাবে এমন আমাদের পকেটে সিগরেট,

খাদ্য, রুপালি আত্মার ঘ্রাণ রমণী ও টাকা?

একটা কিছু মারাত্মক ঘটছে কোথাও

নইলে কেন পাওয়া যায় না প্রেমিকা?

কেন মোমের আলোর শিখা আজকাল

ধীরে জ্বলে,

ধীরে জ্বলে, মাঝরাতে

মহিলার শাড়ি কেন সভ্যতার শোভার মতন

খুলে যায়

নেমে যায়, আজকাল কেন এত সহজেই ভেঙে পড়ে কালো চোখ, কোমল যৌবন?

একটা কিছু মারাত্মক ঘটছে কোথাও

নইলে কিশোর চেনে না কেন ঘাসফুল? ঘাস কেন সবুজের বদলে হলুদ?

একটা কিছু মারাত্মক ঘটছে কোথাও

নইলে নয়টি অমল হাঁস

থেঁতলে যায় ট্রাকের চাকায়?

ভালোবাসা, কেবলি... কেবল একটি

বাজেয়াপ্ত শব্দের তালিকা হয়?

 

একটা কিছু মারাত্মক ঘটেছে কোথাও

নইলে মানুষের দরোজায় টোকা দিলে কেন আজ দরোজা খোলে না?

'বৃষ্টি হলে গা জুড়োবে' কেউ কেন বলে না এখন?

 

 

অন্তর্গত মানুষ

(মুহম্মদ নূরুল হুদাকে)

 

আমি যদি বোলতে পারতাম

আমি এর কিছু নই!

এই পাথরের চোখ,

পরচুলা

নকল পোশাক,

এসব আমার নয়

এসব আমার নয়, প্রভু

 

আমি যদি বোলতে পারতাম!

 

 

ব্লেড

 

লিমিটেড কোম্পানীর কোকিল স্বভাবা মেয়ে,

তাকে যদি ডাকি, ওহে ইস্পাতিনী ঘরে আছো

মোড়কের মায়াবী অন্দর থেকে মুখ তুলে তাকায় সে,

বলে, আরে, এযে সেই ইতর নাগর।

 

কত দিন যেনো তোর জোটেনি চুম্বন আহা

ওষ্ঠের উপরিভাগে অভিভূত আগাছা ছেড়েছে তাই,

মুখে চারপাশে কালো কচুরীপানারা!

 

চেহারায় চেরীর ঝোপের আর

মুখে তোর মোজেক ফ্লোরের মতো মাধুরী না এলে এই

শহরে কি, বণিক এমন শহরে কি

সম্ভবে হে সুখ, স্বপ্ন গোলচাঁদ, গোলাপ গোলাপ?

 

বলি তাই এসেছি তোমার কাছে ইস্পাতিনী

শুশ্রূষার সবুজ চুম্বনে আজ স্নিগ্ধ কোরে দাও তুমি এ হেন মলিন মুখ,

সামাজিক ওষ্ঠ আর অন্তরাল,

গভীর গভীরতর অন্তরাল—সেবিকা, সেবিকা!