বিখ্যাত লেখকদের বন্ধুত্ব
লেখকরা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে লেখেন। লেখালেখির সূত্রেই অনেকের সঙ্গে ঘটে পরিচয়, হয় বন্ধুত্ব। বিখ্যাত লেখকদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক একই সাথে শ্রদ্ধার ও ভালোবাসার। বিশেষ করে একজন আরেকজনের লেখার সমালোচনা করে আরো সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেন।
লেখকদের মধ্যে এ রকম অসংখ্য ভালো বন্ধুত্বের উদাহরণ রয়েছে। আবার একইভাবে গভীর বন্ধুত্ব ভেঙে যাওয়ার উদাহরণও রয়েছে প্রচুর। কয়েকজন লেখক বন্ধুর খবর জানিয়েছে হাফিংটন পোস্ট।
ডি এইচ লরেন্স ও ক্যাথরিন মেন্সফিল্ড
ব্রিটিশ লেখক ডি এইচ লরেন্স ও নিউজিল্যান্ডের লেখিকা ক্যাথরিন মেন্সফিল্ডের বন্ধুত্ব ছিল দীর্ঘদিনের। অবশ্য তাঁদের বন্ধুত্বও হয়েছিল মধ্যবয়সে এসে। দুজনই দুজনের লেখালেখিতে প্রভাব ফেলেছেন, সমালোচনা করেছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন। লরেন্স ছিলেন ঔপন্যাসিক, কবি ও নাট্যকার, অন্যদিকে মেন্সফিল্ড ছিলেন একজন গল্পকার। লরেন্স তাঁর উপন্যাস ‘উইমেন ইন লাভ’ এর গুদরান চরিত্রটি তৈরি করেছিলেন মেন্সফিল্ডের আদলে। তাঁদের দীর্ঘ বন্ধুত্বে মনোমালিন্য, দূরত্ব তৈরি হলেও কখনো তা ভেঙে যায়নি। দুই বন্ধুর মধ্যে মেন্সফিল্ড মারা যান ১৯২৩ সালে আর লরেন্স মারা যান তার সাত বছর পর ১৯৩০ সালে।
জেমস বাল্ডউইন ও টনি মরিসন
বাল্ডউইন ও মরিসনের পরিচয় হয়েছিল বইয়ের মাধ্যমেই। বাল্ডউইন ১৯৭৩ সালে তার বইয়ের পাণ্ডুলিপি নিয়ে যখন র্যান্ডম হাউজ প্রকাশনিতে গিয়েছিলেন তখন মরিসন ছিলেন সেখানকার একজন সম্পাদক। সেই সূত্রেই তাঁদের পরিচয় এবং বন্ধুত্ব। দুই লেখকের এই বন্ধুত্ব তাঁদের লেখালেখিকে সমৃদ্ধ করেছিল। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে দুজনেই সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। বাল্ডউইন ১৯৮৭ সালে মারা যান, মরিসন এখনো বেঁচে আছেন।
চার্লস ডিকেন্স ও উইকি কলিন্স
ডিকেন্সের চেয়ে ১২ বছরের ছোট ছিলেন কলিন্স। লেখালেখির সূত্রেই তাঁদের পরিচয় ও বন্ধুত্ব। এই দুই ইংরেজ লেখকের পরিচয় ঘটেছিল ১৮৫১ সালে। সেই সময়ে চার্লস ডিকেন্স লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেও উইকি কলিন্স তখনো অতটা পরিচিত নন। তবে পরে ডিকেন্সের পরামর্শ ও সমালোচনা কলিন্সের লেখালেখিকে প্রভাবিত করেছিল। তাঁরা দুজন একসঙ্গে অনেক নাটক লিখেছেন। তবে একপর্যায়ে গিয়ে এই দুই লেখকের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয় পেশাগত দ্বন্দ্বের কারণে। কলিন্স একসময় গাঁজায় আসক্ত হয়ে পড়েন এবং নানা রোগে আক্রান্ত হন। তবে দূরত্ব থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। ১৮৭০ সালে চার্লস ডিকেন্স মারা যান আর কলিন্স মারা যান ১৮৮৯ সালে।
ট্রুম্যান কাপোত ও হারপার লি
বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে হারপার লি একজন রহস্যময় লেখিকা। ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘টু কিল আ মকিংবার্ড’। প্রথম উপন্যাসের মাধ্যমেই সাড়া জাগান তিনি। উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পরের বছরেই ১৯৬১ সালে পান পুলিৎজার পুরস্কার। এরপর দীর্ঘদিন তাঁর আর কোনো উপন্যাস প্রকাশিত হয়নি। ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয় ‘গো সেট আ ওয়াচম্যান’ উপন্যাসটি। যদিও হারপার লি এটা লিখেছিলেন ১৯৫০-এর দশকে। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল আগের উপন্যাসের সিক্যুয়াল এই উপন্যাস। তবে পরে নিশ্চিত হওয়া যায় ‘গো সেট আ ওয়াচম্যান’ উপন্যাসটি ছিল ‘টু কিল আ মকিংবার্ড’ উপন্যাসের প্রথম খসড়া। হারপার লি ও আরেক বিখ্যাত মার্কিন লেখক ট্রুম্যান কাপোত ছিলেন ছোটবেলার বন্ধু, প্রতিবেশী। আলাবামার মনরোভিলে তাঁদের দুজনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। কাপোতের ‘ইন কোল্ড ব্লাড’ উপন্যাসটি রচনার জন্য গবেষণা ও প্রাথমিক কাঠামো তৈরির কাজে সহায়তা করেছিলেন হারপার লি। তবে একসময় তাঁদের বন্ধুত্বে দূরত্ব তৈরি হয়। ট্রুম্যান কাপোত মারা যান ১৯৮৪ সালে আর হারপার লি মারা যান ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
সিলভিয়া প্ল্যাথ ও অ্যানি সেক্সটন
দুজনই ছিলেন নামকরা কবি ও লেখক। দুজনেই নারী অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। তাঁদের কবিতা ও লেখা মার্কিন সমাজ ও নারীদেরকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছিল। দুজনেই জন্মেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে। সিলভিয়া প্ল্যাথের জন্ম বোস্টনে আর অ্যানি সেক্সটনের জন্ম নিউটনে। এই দুই বান্ধবীর মৃত্যুও ছিল রহস্যময়। দুজনই আত্মহত্যা করেছিলেন। ৩০ বছর বয়সে, ১৯৬৩ সালে, আত্মহত্যা করেন সিলভিয়া প্ল্যাথ। ১৯৭৪ সালে, ৪৫ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন অ্যানি সেক্সটন।