শিশুপ্রহরে শিশুদের বিপুল সাড়া
হরতাল-অবরোধের কারণে মেলার শুরুর দিন থেকে বইপ্রেমীদের উপস্থিতি কম থাকলেও শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শিশুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। বিশেষ করে শিশুদের জন্য নির্ধারিত স্টলগুলোতে শিশুদের বই দেখা ও কেনার আগ্রহ ছিল মনোমুগ্ধকর।
বাংলা একাডেমির উদ্যোগে সকাল ৮টা থেকে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শুরু হয় মেলা। চিত্রশিল্পী এম এ হাশেম এর উদ্বোধন করেন। এতে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা কয়েকশ শিশু অংশ নেয়। এরপর বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে শিশুপ্রহর। মূলত শিশুপ্রহরের সময় ভিড় বাড়তে থাকে শিশুদের। এতে বিক্রেতাদের মুখেও দেখা মিলল স্বস্তির হাসি। এ বিষয়ে ‘ফুলকি’ প্রকাশনীর বিক্রেতা পিপলু আহমেদ বলেন, ‘বইমেলার শুরুর দিকে তেমন লোকসমাগম না থাকায় হতাশ ছিলাম। তবে ছুটির দিনে বইমেলায় লোকসমাগম বেশি, তাই বিক্রিও বাড়ছে।’
‘পাতাবাহার’ প্রকাশনীর বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম জানান, ‘হরতাল-অবরোধের কারণে মেলা জমছে না। তবে আজ শুক্রবার মানুষের সমাগম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রি বেড়েছে, এতে ভালো লাগছে।’
‘ঝিঙেফুল প্রকাশনী’র স্বত্বাধিকারী আরাফাত খান বলেন, ‘মেলায় ভিড় বেশি হলে পাঠক ইচ্ছেমতো বই দেখে কিনতে পারে না। আজকে শিশুপ্রহর হওয়ায় মেলা অনেকটাই ফাঁকা। শিশুরা অভিভাবকদের সাথে ঘুরে ঘুরে পছন্দমতো বই কিনতে পারছে।’
মেলায় ঘুরে দেখা গেল শিশু-কিশোরদের হাতে বই। অভিভাবকরাও বায়না অনুযায়ী বই কিনে দিচ্ছেন তাঁদের সন্তানদের।
অভিভাবক সোহরাব হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সময়ে ছেলেমেয়েরা বই পড়ার পরিবর্তে বাসায় গেমস, ইন্টারনেটে সময় নষ্ট করে। তাই ছোটবেলা থেকে বইয়ের প্রতি মনোযোগী করতে আমার মেয়েকে বইমেলায় নিয়ে এসেছি।’
সোহরাব হোসেন আরো বলেন, “শিশুদের দেশি-বিদেশি রূপকথার গল্প, আবিষ্কারের কাহিনী ও মনীষীদের জীবনীবিষয়ক বই পড়ানো উচিত।’
এবারের বইমেলায় শিশুদের বই বিক্রি হচ্ছে মোট ২৬টি স্টলে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রগতি প্রকাশনী, ঝিঙেফুল, টোনাটুনি, শিশুরাজ্য, ফুলকি, প্রিয় প্রকাশ, পাতাবাহার, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, আদিগন্ত প্রকাশন ইত্যাদি।
স্টলগুলোতে শিশুদের জন্য যে বইগুলো অভিভাবকরা বেশি পছন্দ করছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে মীনা কার্টুন, মজার মজার গল্প, সাগরতলের মৎস্যকন্যা, সিনডেরেলা, ভূতের ছানা, ইমামতির গাড়ি, জাদুর পাখি প্রভৃতি। এ ছাড়া জামসেদ ওয়াজেদের ‘বিশ্বের সেরা রূপকথা’, রহমান ওয়াহিদের ‘পাগলা রাজার টেনশন’, বি এম শাহনেওয়াজের ‘ঈশপের গল্পসমগ্র’, শ্রী দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের লেখা ‘ঠাকুরমার ঝুলি’, মোস্তফা মাসুদের ‘চলে এসো রূপকথার দেশে’, উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর ‘টুনটুনির বই’, নজরুল ইসলামের ‘দুষ্ট ভূতের পাঠশালা’, মুস্তাফা পান্নার ‘সবুজ বন সবুজ টিয়া’, জুবায়দা গুলশান আরা হেনার ‘গল্পে গল্পে যায় বেলা’ ও ‘আমার দেশের গল্প পরী’, মুহম্মদ জুলফিকার আলীর ‘স্মৃতির পাতায় সাত বীরশ্রেষ্ঠ’, ভিন দেশের লোককাহিনী নিয়ে আলী ইমামের লেখা ‘শিয়াল ও অজগর’, হাসান হাফিজের লেখা নাইজেরিয়ার রূপকথা ‘গাভী’ ও ‘তিন ছেলে’। এ ছাড়া ছোটদের ছবি আঁকার কলা-কৌশল নামে আঁকা শেখার সিরিজ বই। এ বইগুলো পাওয়া যাচ্ছে শিলা প্রকাশনী, প্রিয়প্রকাশ, শিশু প্রকাশ, ঝিঙেফুল, রঙিন ফুল, শিশুঘর, পাতাবাহার, ছোটদের মেলা, হলি পাবলিকেশনসহ বইমেলার শিশুদের স্টলে।
এ ছাড়া বুড়ো সিংহ এবং চালাক শিয়াল, খরগোশ ও কচ্ছপের দৌড়, ছোটদের প্রকাশনাগুলোর বাইরে নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমির স্টলেও ভিড় ছিল যথেষ্ট। তবে বাংলা একাডেমির বিক্রয়কেন্দ্রে ছোটদের বাংলা-ইংরেজি অভিধানই বেশি বিক্রি হয়। তা ছাড়া ফুল, পাখি, প্রকৃতিবিষয়ক বইগুলোও বিক্রি হচ্ছে বেশ। সব মিলিয়ে শিশুপ্রহরে বই বিক্রির ধুম পড়ে যায়।
শিশুপ্রহরে খুদে পাঠক ও ক্রেতাদের পছন্দের কেনাকাটা নির্বিঘ্ন করতে অভিভাবক ছাড়া অন্য বয়স্ক দর্শনার্থী বা ক্রেতাদের মেলায় প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত রাখা হয়।