জন্মবার্ষিকী
লোকসংগীতে অম্লান আব্বাসউদ্দীন ও তাঁর গান
সেই ছোট্টবেলার কথা। আমার বয়স হবে তিন-চার বছর। তখন কলের গান বা গ্রামোফোন রেকর্ডের চল। দূর থেকে ভেসে আসছে মধুর সুর- ‘কিসের মোর রাঁধন/ কিসের মোর বাড়ন/ কিসের মোর হলদী বাটা’। গানের অর্থ না বুঝলেও সেদিন আমার শিশুমনকে দোলায়িত করেছিল এই সুর। এই গান শেষ হতেই আবার বেজে ওঠে- ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই / হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে’ গানটি। আমার শিশুমনকে এবার আর কিছুতেই আটকে রাখতে পারলাম না। কোন দিক থেকে সুর ভেসে আসছে, সেই দিকেই ছুটলাম। আমাদের বাড়ির ডানদিকে পুকুর, বাঁ দিকে ফাঁকা মাঠ, পুকুরের পাশেই বাঁশঝাড়, ঝাড় পেরিয়ে ডানে একটা বিশাল বাড়ি। বাড়ির বাম দিকে সরু রাস্তা সোজা উত্তরে চলে গেছে জোড়গাছ বাজারের দিকে। কোনো ভয়-ডর নেই, একাই দৌড়াচ্ছি। ১০-১২টি বাড়ি পার হওয়ার পর দেখতে পেলাম, সামনে একটি খড়ের বাড়ি। বাড়ি ঘিরেই লোকসমাগম।
অজপাড়াগাঁয়ের এই বাড়িতে বিয়ে। তাই বিয়েবাড়িতেই কলের গান বাজছে। সবাই গোল হয়ে ঘিরে ধরেছে ‘কলের গান’ যন্ত্রটিকে। আমি অনেক কষ্টে ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম। চমকে উঠলাম! একি? কেউ তো নেই, তাহলে গান গাইছে কে? দেখি যন্ত্রটার সামনে গোঁফওয়ালা এক চাচা। উনি থালার মতো একটা চাকতির ওপর একটা সূচালো কলমের মতো কি একটা বসিয়ে দিচ্ছেন আর অমনি গান শুরু। এই শিশু ‘আমি’ রীতিমতো চমকে উঠলাম। চোখের দৃষ্টি কোনোভাবেই সরছে না। আরো গভীর আগ্রহ আর মনোযোগ নিয়ে দেখছি। যতই দেখছি, ততই তাজ্জব বনে যাচ্ছি। মনে মনে ভাবলাম, এবার গোঁফওয়ালা চাচাকে জিজ্ঞেস করব, এটা কী। কে গায় ওখানে? উনি কে? আবার ভাবি না; ততক্ষণে ভয়ে আমার বুকটা দুরুদুরু করে কাঁপছে। তবু সাহস করে বললাম, চাচা ওটা কী? বড় বড় চোখে চাচা আমার দিকে তাকাল। আরো ভয় পেয়ে গেলাম। প্রায় মিনিট দশেক পর আবার বললাম, চাচা ওটা কী?
এবার উনি হড় হড় করে বললেন, এটা কলের গান। আর এই যে গাইছেন, ওনারা আব্বাসউদ্দীন ও ফেরদৌসী রহমান। আর এটা ভাওয়াইয়া গান। সেদিন গোঁফওয়ালা চাচার কাছে এই প্রথম শুনেছিলাম দুজন শিল্পী ও ‘ভাওয়াইয়া’ শব্দটির নাম। এরপর কতবার যে আব্বাসউদ্দীন ও ফেরদৌসী রহমানের গান গ্রামোফোন রেকর্ডে শুনেছি, তার হিসাব নেই। জীবনের প্রথম ‘কলের গান’-এ গান শোনার স্মৃতি আজও আমার মনে জাগরুক। মাত্র চার-পাঁচ বছরের মধ্যে শেষ হলো কলের গান ও গ্রামোফোন রেকর্ডের চল। শুরু হলো রেডিওর যুগ। আমাদের বাড়িতেই আমার বাবা নাজমুল হক (মাস্টার) নিয়ে এলেন বিশাল আকারের একটি রেডিও। এই রেডিও আমাদের পরিবারের সবার সঙ্গী হয়ে গেল। রেডিও নিয়েও অনেক মজার স্মৃতি আছে, সেসব কথা আজ না-ই বা বললাম। ওই সময় রংপুর রেডিও থেকে ‘তিস্তাপাড়ের গানের অনুষ্ঠান-ভাওয়াইয়া’ প্রচার হতো বিকেল সাড়ে ৪টায়। জনপ্রিয় সেই অনুষ্ঠান শোনার জন্য গ্রামের অনেক লোক আমাদের বাড়িতে জমা হতো। নিয়মিত এই অনুষ্ঠান শুনতে শুনতে অনেক শিল্পীর নামর সঙ্গে পরিচিত হলাম। রেডিওতে শুনলাম আব্বাস উদ্দীন, মহেশ চন্দ্র রায়, ফেরদৌসী রহমান, হরলাল রায়, মো. কছিম উদ্দীন, মকবুল হোসেন, রথীন্দ্র নাথ রায়, নুরুল ইসলাম জাহিদ, সিরাজ উদ্দীন, সুরাইয়া বিলকিস, শমসের আলী প্রধানসহ অসংখ্য শিল্পীর নাম।
দারুণ ভালোলাগা তৈরি হলো নিজের ভেতর। এও মনে হলো, আমাদের প্রতিদিনের সুখ-দুঃখের কথা ‘ভাওয়াইয়া’ গানে কী দারুণভাবেই না ফুটে উঠেছে। সেই ছোট্টবেলাতেই তালমিশ্রির স্বাদের মতো বুকের ভেতর আটকে আছে ভাওয়াইয়ার সুর। এর সৌন্দর্য, রূপ-রস, আমাকে সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়ায়। কোনো কোনো ভাওয়াইয়ার সুর ও বাণী শুনে আমি প্রায় পাগলের মতো হয়ে উঠি।
যখন শুনি- ‘ও মোর কালারে কালা-/ ওপারে ছকিলাম বাড়ি/ কলা রুইলাম কালা সারি সারিরে/ কালা, কলার বাগিচায় ঘিরিল সেইনা বাড়িরে’। প্রিয় মানুষটির জন্য এই যে অপেক্ষা! যার অপেক্ষায় সারাটি জীবন কাটিয়ে দিলেন তিনি। সুন্দর করে বাড়ি সাজালেন (ছক করলেন), সারি সারি কলার গাছ রোপণ করা হলো, কলার গাছের ফাঁকে ফাঁকে সুপারির গাছ লাগালেন, সুপারির গোড়ায় পানের গাছও লাগিয়ে দিলেন। ওদিকে বাড়ির উঠোনে বেল, চম্পা ফুল রোপণ করলেন। আবার বাড়ির দক্ষিণ পাশে সাধুর দোলাও (নিচু জায়গা) শাওন মাসের জলে ভরে গেল। কতবার যে শাওন মাস এলো-গেলো, পেরিয়ে গেল মাসের পর মাস-বছর, তবুও তার বন্ধু এলো না। শুধু কি তাই, অপেক্ষারত এই নারীর মাথার কেশেও ময়লা পড়ে গেল-তবুও এলো না-তার প্রাণের মানুষ।
এই গানের বাণী, ভাবার্থ ও সুর আমাকে যে কতটা ব্যাকুল করে তুলেছে, তা বলে বোঝাতে পারব না। হৃদয়হরা দারুণ এই গানটি আব্বাসউদ্দীনের কণ্ঠে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর পর আমি যখন নিজের কণ্ঠে এই গান তুলে মঞ্চ, বেতার, টিভি ও চ্যানেলের মাধ্যমে শ্রোতা-দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি, তখন শ্রোতা-দর্শকের কাছ থেকে আমি যে আকাশ সমান ভালোবাসা আর সম্মান পাচ্ছি, তা কাউকে বলে বোঝাতে পারব না। এই গান নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে কত যে স্মৃতি আমার ; তাও বলে শেষ করতে পারব না।
শুধু ভাবি ভাওয়াইয়া গানের ছোট্ট ক্যানভাসে নারীপ্রেমে গভীর স্পন্দন ধ্বনিত হয়েছে। মানবপ্রেম জীবন্ত ও জ্বলন্ত রূপ নিয়ে ফুটে উঠেছে ভাওয়াইয়া গানে। সাহিত্যিক ও সাঙ্গীতিক উভয় গুণে ভাওয়াইয়া গান অনন্য।
আজকাল যেন ভালোবাসা কতটা ফিকে আর মলিন হয়ে পড়েছে। মিথ্যে দিয়েই যেন শুরু। সত্যের কাছাকাছি কেউই যেতে পারছি না। গীতিকবি নুরুল ইসলাম জাহিদের সাড়ে তিন হাজার গানের মধ্যে থেকে একটি গানের মুখ (স্থায়ী) তুলে ধরছি, সেই সঙ্গে পুরো গানের ভাবার্থও বলার চেষ্টা করছি :
‘আইজ দ্যাওয়ায় দারুণ ম্যাঘ বুঝি ঝরি আসিবে/ আরে বাইরেত না যান সোনা মোর গাও ভিজিবে’॥ স্বামী তাঁর স্ত্রীকে বলছেন, আকাশে (দ্যাওয়ায়) মেঘ, বৃষ্টি আসবে, তাই ঘরের বাইরে যেও না, বৃষ্টিতে ভিজলে তোমার জ্বর আসবে। তোমার জ্বর হলে কে আমাকে দেখবে। আর তোমাকে সুস্থ করার জন্য সেবাযত্ন কে করবে, আর কেবা তোমাকে সাগু রান্না করে খাওয়াবে। তখন দারুণ এক বিড়ম্বনায় পড়ব আমরা।
আহা! স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কি নিদারুণই না প্রেম। অন্যদিকে, ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই-কত রব আমি পন্থের দিকে চায়ারে / যেদিন গাড়িয়াল উজান যায়.../ নারীর মন মোর ঝুইরা রয়রে/ ওকি গাড়িয়াল ভাই/ হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে/ আর কি কবো দুস্কের জ্বালা গাড়িয়াল ভাই/ গাঁথিয়া চিকন মালারে/ ওকি গাড়িয়াল ভাই/ কত কান্দিম মুই নিধুয়া পাথারে’’॥-আব্বাসউদ্দীনের কণ্ঠে গাওয়া এই বিখ্যাত ও জনপ্রিয় গানটিতে যে শাশ্বত প্রেম, যে আকুতি কিংবা আহাজারি আছে তা কি বলার অপেক্ষা রাখে। এই একটি ভাওয়াইয়া গান হাজার ভাওয়াইয়া গানকে ছাপিয়ে যায়। এই গানটি নিয়েও আমার শিল্পী জীবনে আনন্দ আর অহংকারের যেন শেষ নেই। নিজের জন্ম ভাওয়াইয়ার তীর্থভূমি চিলমারীর বন্দরে হওয়ায় আমার খুশির মাত্রাটা যেন একটু বেশিই।
মনে পড়ে বছর চারেক আগে অস্ট্রেলিয়ার সিডনির অলিম্পিক পার্কে বৈশাখী মেলায় গান করতে গিয়েছিলাম। ২০ হাজার বাঙালি সেদিন টিকেট কেটে গান শুনতে এসেছিল। মাঠজুড়ে গমগম আওয়াজ। যখন আমার নাম ঘোষণা হলো, তখনো হাজার লোকের কোলাহল। মঞ্চে উঠে শুরুতেই যেই আমি ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই... ...’ বলে টান দিয়েছি, তখনই পুরো অলিম্পিক পার্ক যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেল। পিনপতন নীরবতা। হাজার হাজার দর্শক অথচ কোনো সাড়াশব্দ নেই। আমি বুঝতে পারলাম, সবাই এখন শেকড়ের কাছে ফিরে গেছে। নিজের বুকটা যেন আনন্দে ফুটে উঠল। ওই মঞ্চে আমার চারটি গান করার থাকলেও সেদিন দর্শক-শ্রোতার অনুরোধে নয়টি গান করতে হয়েছিল। গান শেষে মঞ্চ ত্যাগ করে অসংখ্য দর্শককে ফটো ও অটোগ্রাফ দিতে হয়েছিল সেদিন। সেদিন আবারও বুঝেছিলাম- লোকসংগীতের অন্যতম ধারা তথা মাটির গান ভাওয়াইয়ার সুর কতটা শক্তিশালী।
ভাওয়াইয়ার ভাব ও বিষয় সম্পর্কে বলতে গিয়ে গবেষক ড. ওয়াকিল আহমদ বলেছেন, ‘ভাওয়াইয়া গানের মৌলিক বিষয় নরনারীর প্রেম; এ প্রেম সম্পূর্ণ লৌকিক। বিশেষ করে যুবতীর প্রেম-বাসনা, মিলনাকাঙ্ক্ষা, বিরহ-যাতনা ইত্যাদি ভাব অবলম্বন করে অধিকাংশ ভাওয়াইয়া রচিত হয়েছে।
‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে’ ইত্যাদি গানে আধ্যাত্মিকতার রূপক আছে বলে কেউ কেউ উল্লেখ করেন। বিশেষত বগা-বগীর বিচ্ছেদ বেদনায় আশেক-মাশুক তত্ত্বের রূপক আছে। পীর-ফকিররা জিকির ও হালকাতে এ রকম ভাওয়াইয়া গেয়ে থাকেন। বগা-বগীর কান্না সুফিতত্ত্বের বাঁশ-বাঁশির কান্নার অনুরূপ। বাঁশ থেকে বাঁশির উৎপত্তি; বাঁশির কান্না- উৎসবের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য। এটাই আশেক-মাশুক তথা আত্মা-পরমাত্মার তত্ত্ব। এখানে তার প্রভাব থাকতে পারে।
‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে’ গানটির সৃষ্টি নিয়ে ভাওয়াইয়া গবেষকরা বলেছেন, কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর পাড়ে নীলকরদের আশ্রয় ছিল, যেটির নাম ছিল নীলকুটি। পরবর্তী সময়ে সেখানে নীলকুটি নামে একটি গ্রামও হয়েছে। জানা যায়, স্থানীয় মানুষজন তৎকালীন নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। নীলকরদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ কোনো এক গ্রাম্য কবি এই গানটি রচনা করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দীনের কণ্ঠে এই গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
আধ্যাত্মিকতার রূপক থাকুক কিংবা প্রতিবাদস্বরূপ গানটি লেখা হোক না কেন, এই গানটিতে আছে আর্তনাদ। এই গান যে কতটা অনুভূতি দিয়ে গাইতে ও শুনতে হয় ; তা যার মধ্যে আছে-সেই শুধু বুঝবে কি অসাধারণ বাণী ও করুণ সুরের গান এটি। সংগীত বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গানের কথা ও করুণ সুরের কারণে পৃথিবীর সেরা ১০টি গানের মধ্যে অন্যতম একটি গান এটি।
আগেই বলেছি, ভাওয়াইয়ার সুর ভীষণ শক্তিশালী। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সহজিয়া জীবনের সুখ-দুঃখের কথাগুলোই অত্যন্ত সহজ করে বলা হলেও এর গাঁথুনি কাঠামো বেশ ছান্দিক ও প্রাণময়, আর সুর ; সে তো হৃদয়ছোঁয়া। যে কোনো মানুষের হৃদয়কে এই সুর টানবেই, যে কাউকেই এই সুর ভাবাবে বা উদাস করবেই। স্বয়ং ভাওয়াইয়াসম্রাট আব্বাসউদ্দীন বলেছেন, উদাস হাওয়ার মতো এই সুরের গতি, তাই এর নাম ভাওয়াইয়া। ভাওয়াইয়ার নামকরণ নিয়ে সাধারণভাবে বলা হয়- ‘ভাব’ থেকে ভাওয়াইয়ার উৎপত্তি।
ভাওয়াইয়া প্রেমের গান ; প্রেমভাব নিয়ে রচিত করুণ, উদাস সুরের গান ভাওয়াইয়া নামে পরিচিত। ‘ভাব’ শব্দের আভিধানিক অনেক অর্থ আছে যেমন- প্রণয়, প্রীতি, প্রকৃতি, স্বভাব, ধরন, মর্ম, আবেগ, ভক্তি, চিন্তা প্রভৃতি। ‘ভাব’ শব্দের আঞ্চলিক শব্দ হচ্ছে ‘ভাও’। এই ‘ভাও’ শব্দের সঙ্গে ‘ইয়া’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে গঠিত হয়েছে ‘ভাওয়াইয়া’ শব্দ। প্রত্যয় নিষ্পন্ন এই শব্দের অর্থ ‘যে ভাবে’ অথবা ‘যা ভাবায়’। অর্থাৎ যে গান ভাবায় অথবা যে গানের কথা ও সুর ভাবরস সৃষ্টি করে এবং শ্রোতা হন ভাব-বিহ্বল তাই ভাওয়াইয়া। আবার কেউ বলেন, ‘ভাওয়া’ শব্দ থেকে ভাওয়াইয়া নামের উৎপত্তি। ‘ভাওয়া’ শব্দের অর্থ ‘নদীর চর’ অথবা ‘এলুয়া-কাশিয়া-নলখাগড়া-যুক্ত জলাভূমি। এসব এলাকায় ‘বাথান’ করে মহিষ চরান মৈষাল তথা মহিষের রাখালরা। মইষালরা দোতরা বাজিয়ে এই গান করত। ‘ভাওয়া’ থেকে এই গান ভেসে আসত পার্শ্ববর্তী লোকালয়ে। তাই এই গানের নাম হয়েছে ভাওয়াইয়া। অনেকে বাতাস শব্দজাত ‘বাও’ এর সঙ্গে ‘ইয়া’ প্রত্যয় যোগে বাওয়াইয়া > ভাওয়াইয়া নিরূপণ করে থাকেন। বাতাস বা বায়ুবাহিত গান-তাই বাওয়াইয়া থেকে ভাওয়াইয়া। আগেই বলেছি স্বয়ং আব্বাসউদ্দীন বলেছেন, উদাস হাওয়ার মতো এর সুরের গতি, তাই এর নাম ভাওয়াইয়া। ‘বাউদিয়া’ সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক গান ভাওয়াইয়া এরূপ আরেকটি মত প্রচলিত আছে। ‘বাউদিয়া’ সম্প্রদায়ের অর্থ ‘ছন্নছাড়া’। এই ছন্নছাড়া তথা বাউদিয়া সম্প্রদায়ের লোক সংসারের প্রতি উদাসীন। এরা প্রেমের পাগল।
তবে বাউদিয়া সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক গান ভাওয়াইয়া-এই মতকে অসমর্থিত মত বলে উল্লেখ করেছেন ভাওয়াইয়ার কিংবদন্তি গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী নুরুল ইসলাম জাহিদ। তিনি বলেন, এটি মনগড়া ব্যাখ্যা।
নুরুল ইসলাম জাহিদ ভাওয়াইয়ার নামকরণ সম্পর্কে মনে করেন, মোহিত সুরের এই গান শুনে অনেকেই বলতেন এই গানের সুর ‘মাওয়াইয়া’ করে দিয়েছে। ‘মাওয়াইয়া’ অর্থ ‘মাত’ করে দেওয়া। এই মাওয়াইয়া থেকে ভাওয়াইয়া গান।
গবেষকদের মতে, শাস্ত্র-ধর্মের প্রভাবে এ গান দীর্ঘকাল লোকালয়ের বাইরে অরণ্যে-বাথানে-পথে-প্রান্তরে-নদীবক্ষে চর্চিত হয়েছে। উনিশ শতক পর্যন্ত ভাওয়াইয়া গানের চর্চা স্বশ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বিশ শতকের গোড়ার দিকে এর প্রতি শিক্ষিত শ্রেণির দৃষ্টি পড়ে। তারা ভাওয়াইয়া গান সংগ্রহ ও আলোচনা করে পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করতে শুরু করেন। এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সাহিত্য সংগঠন ‘রঙ্গপুর-সাহিত্য পরিষৎ’-এর ভূমিকা অগ্রগণ্য ছিল। এরপরই কোচবিহারের দুই কণ্ঠশিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদ ও সুরেন্দ্রনাথ রায় বসুনিয়া সভা-সমিতিতে গান গেয়ে ও গ্রামোফান রেকর্ড করে ভাওয়াইয়া গানকে বাংলার আনাচে-কানাচে পৌঁছে দেন।
পল্লীর দুলাল ভাওয়াইয়ার সম্রাট আব্বাসউদ্দীন আহমদ তাঁর স্বীয় আত্মজীবনী ‘আমার শিল্পী জীবনের কথা’য় লিখে গেছেন- “আমার গ্রামে ছিল বহু ভাওয়াইয়া গায়ক, সারা গ্রামটি সকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত গানের সুরে মুখরিত হয়ে থাকত। বাড়ির পূর্বে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ। আমাদের আধিয়ারী প্রজারা হাল বাইতে বাইতে, পাট নিড়াতে নিড়াতে গাইত ভাওয়াইয়া গান। সেই গানের সুরেই আমার মনের নীড়ে বাসা বেঁধেছিল ভাওয়াইয়া গানের পাখী।” আব্বাসউদ্দীনের বাড়ির পূর্বপাশে মাঠ, মাঠের পরে কালজানি নদী। গ্রাম, মাঠ, নদীচর, দীর্ঘপথ-প্রান্তর ভাওয়াইয়া গানের উপযুক্ত পরিবেশ। ‘আধিয়ারী প্রজা’র মুখে যে গানটি শুনে আব্বাসউদ্দীনের মনের নীড়ে ভাওয়াইয়া গানের পাখী বাসা বেঁধেছিল তার চরণগুলো ছিল নিম্নরূপ :
ক’ ভাবী মোর বধূয়া কেমন আছে রে?
তোর বঁধূয়া আছে রে ভালে,
দিন কতক কন্যার জ্বর গেইছে রে,
ওকি কন্যা চায়া পাঠাইছে
জিয়া মাগুর মাছ রে ॥
এই গানে বেদনা ও উদ্বেগ দুই আছে; স্বভাবতই গানের সুরে বিরহের আর্তি জেগেছে। ভাওয়াইয়া গানে বিরহ তো আছেই; এতে আছে অসম্ভব রকম আহাজারি। একজন মানুষের সবকিছু হারানোর বা নিঃস্ব হওয়ার পর তার মনের অবস্থা কী হতে পারে, কী আঁকুতি থাকতে পারে-সেই আঁকুতিই উঠে আসে ভাওয়াইয়ার কথা ও সুরে।
ভাওয়াইয়া গান সম্পর্কে আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই- ‘উত্তরাঞ্চলের উঁচু-নিচু, এবড়ো-খেবড়ো মেঠো পথের ভাঁজে-ভাঁজে যে গান বাজে, যে গান কখনো হয়ে ওঠে কৃষক-শ্রমিকের গান, গাড়িয়ালের যাত্রাপথের আনন্দের গান, বিরহী গৃহবধূর না বলা কথা কিংবা যে গান মায়ের কান্নাভেজা আকুতির কথা বলে, সে গানই হচ্ছে ভাওয়াইয়া।
উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, চিলমারী, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আসামের গোয়ালপাড়া জেলার সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাই ভাওয়াইয়া গানের বাণীতে স্থান করে নিয়েছে। আর সেসব গান সাধারণ মানুষের মুখেমুখে বংশপরম্পরায় গীত হয়ে- এখন পর্যন্ত সেগুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।
অন্যান্য গান থেকে ভাওয়াইয়া গানে প্রেমভাবে যেমন স্বাতন্ত্র্য আছে, এর সুরেও আছে স্বাতন্ত্র্য। দীর্ঘ টানা সুর, সুরের মধ্যে ভাঁজ, সুরধ্বনির মধ্যে ‘হ’ ধ্বনির সূক্ষ্ম উচ্চারণ অন্য কোনো গানে নেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিরহজনিত করুণ সুর। ভাওয়াইয়ার করুণ সুরকে আরো মর্মস্পর্শী করে তোলে গায়কের পরিবেশ, তার একাকিত্ব ও নির্জনতা। আব্বাসউদ্দীন বলেছেন, ‘প্রাণ দিয়ে যারা প্রাণকে বুঝতে চান ভাওয়াইয়া কবির সহজ হৃদয় অতি সহজেই তাঁদের কাছে ধরা পড়ে।... মন যখন একান্ত মনের বশে, তখনই ভাওয়াইয়া গানের অলকানন্দা মনের ক’ল ভাসিয়ে নেমে আসে।’
ভাওয়াইয়ার শ্রেণি বিভাগে দেখা যায়, ভাওয়াইয়া টানা সুরের গান। গানের সময় শিল্পীর গলা ভেঙে যায়। সুরের বৈচিত্র্যও বেশি। গলা ভাঙার বিষয়ে বলা হয়, উঁচুনিচু রাস্তায় গাড়িতে বসে গান করে যাওয়ার সময় গাড়ির চাকার উত্থান-পতনে গাড়িয়ালের গলা ভেঙে যায়। রচনার দিক থেকে এ গান বিরহমূলক; উত্তরাঞ্চলের প্রকৃতি যথাযথভাবে ধরা পড়ে এ গানে, দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ, গরুর গাড়ি যেন এ গানের সুরে রূপ পায়।
ভাওয়াইয়া বিশেষজ্ঞ হরিশচন্দ্র পাল আঞ্চলিক নামানুসারে ভাওয়াইয়া গানকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করেছেন। ভাগগুলো নিম্নরূপ :
১. চিতান ভাওয়াইয়া : এই গান বিচ্ছেদব্যথায় ভেঙে পড়ার গান। সাধারণত এই গান উচ্চগ্রাম থেকে আরম্ভ হয়ে নিম্নগ্রামে নেমে আসে। ২. ক্ষীরোল ভাওয়াইয়া : ক্ষীরোল ডাং হলো দোতারার সুরের একটি বিশেষ ধরন। বিরহমাখা এ গান কিছুটা নিম্নগ্রাম থেকে শুরু হয়ে পরে উচ্চগ্রামে যায়। ৩. দরিয়া ও দীঘলনাসা ভাওয়াইয়া : দরিয়া ফরাসি শব্ধ। এর অর্থ নদী। দীঘলনাসা অর্থাৎ দীর্ঘ টানা সুরের কারণে এরূপ নামকরণ হতে পারে। উভয় গানই যেন দীর্ঘ রাতের টানে হৃদয় বিলিয়ে দেওয়ার সুর। ৪. গড়ান/করুণ ভাওয়াইয়া : অত্যন্ত করুণ সুরের ভাওয়াইয়া, যা গড়িয়ে চলার ভাব অর্থে এর রূপ নামকরণ হতে পারে। এ গানে বিরহকাতর নারীর যেন ধুলায় গড়াগড়ি যাওয়ার অবস্থা। ৫. মইষালী ভাওয়াইয়া : এই গান অন্যান্য ভাওয়াইয়া গানের মতো, কিন্তু চাল ভিন্ন ধরনের। এই গান গাওয়ার সময় মনে যেন গায়ক কোনো কিছুর সোয়ার হয়ে চলেছে এবং চলার ছন্দ গানের ছন্দে প্রকাশ পায়। এই চালকে সোয়ারী চাল বা মইষালী চাল বলে।
আব্বাসউদ্দীনের অনুজ প্রখ্যাত ভাওয়াইয়া গীতকবি আব্দুল করীম ভাওয়াইয়াকে একটি মাহাত্ম্যপূর্ণ সুর হিসেবে আখ্যায়িত করে বলতেন, উচ্চাঙ্গসংগীতের বিভিন্ন রাগ-রাগিনীর মতো ভাওয়াইয়া সুরও তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে অম্লান। ভাওয়াইয়া সুরের স্বতন্ত্রে উত্তাঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষার ব্যঞ্জনা শ্রোতার মনকে আপ্লুত করে। দীর্ঘ টানা সে সুরের মাধুর্য হৃদয়গ্রাহী হয়েছে উচ্চগ্রামে পৌঁছে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্বরভঙ্গ ও ‘হ’ ধ্বনির সূক্ষ্ম প্রয়োগের মাধ্যমে। ভাওয়াইয়ার মর্মস্পর্শী করুণ সুর শ্রোতার মনে এক ধরনের হাহাকার সৃষ্টি করে। কখনো কখনো দুচোখ পানিতে ভরে আসে।
ভাওয়াইয়া ‘মাটির সুর’ হলেও ‘দুয়োরানী’ ভাওয়াইয়া’কে ‘সুয়োরানী’র আসনে সমাসীন করেছেন পল্লীগীতি সম্রাট আব্বাসউদ্দীন। ভাওয়াইয়া এবং আব্বাসউদ্দীন সে কারণেই সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। কলকাতার গ্রামোফোন কোম্পানিতে গান রেকর্ড করতে গিয়ে আব্বাসউদ্দীন আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের সান্নিধ্যে আসেন। প্রথম রেকর্ডের তুমুল বিক্রির কারণে একের পর এক ভাওয়াইয়া গানের রেকর্ড বের হতে থাকে। আব্বাসউদ্দীনের রেকর্ডকৃত চটকাসহ ভাওয়াইয়া গানের সংখ্যা ৩৫। ওই সময় নজরুল ইসলামের লেখা ভাওয়াইয়া গানও তিনি রেকর্ড করেন। এগুলির অধিকাংশ ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’ কোম্পানি রেকর্ড করে। আব্বাসউদ্দীনের দরদী কণ্ঠে গাওয়া ভাওয়াইয়া গানের প্রশংসা করে ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’ গ্রামোফোন কোম্পানির প্রচারপত্রে লেখা হয়, ‘পল্লীগীতি রাজ্যের দুয়োরানী ভাওয়াইয়া গানকে সর্বপ্রথম আব্বাস সাহেবই আদর করে রাজ-অন্তপুরে ডেকে আনলেন। তখন আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখলাম উপেক্ষিত দুয়োরানীর রূপশ্রী সুয়োরানীর চেয়ে তো কম নয় এবং তাঁর চেয়ে মুগ্ধ হলাম তার সরল হৃদয়ের মাধুরীতে। এর জন্য সমগ্র রসিকজনের অভিনন্দনের মালা পাওয়া উচিত পল্লী দুলাল আব্বাস সাহেবের। বহু দুর্লভ গান সংগ্রহ করে তিনি আপনাদের উপহার দিয়েছেন।’ সেই যে ভাওয়াইয়া’র জয়যাত্রা সূচিত হলো, সে ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে।
ভাওয়াইয়া গানের প্রতি নজরুল ইসলামের অনুভূতির কথা ব্যক্ত করে আব্বাসউদ্দীন লিখেছেন, ভাওয়াইয়া গান শুনলেই কবি বড় চঞ্চল হয়ে উঠতেন। বহুদিন বলেছিলেন, ‘জানি না এ গানের সুরে কী মায়া; আমার মন চলে যায় কোনো পাহাড়িয়া দেশের সবুজ মাঠের আঁকাবাঁকা আলোর প্রান্তিকে-উপপ্রান্তিকে।’
কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো ভাওয়াইয়ার সুর আমাকেও সেই ছোট্টবেলাতেই চঞ্চল করে তুলেছে। যখন যে অবস্থায় থাকি, এই সুর আমাকে ব্যাকুল করে তোলে, কখনো কখনো পাগলপ্রায় হয়ে উঠি ; দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। যতবার শুনি এ সুর, ততবার মুগ্ধ হই ; ভাবের গানের ভাব সাগরে ডুবে যাই। শুধু ভাবি...গ্রাম্য সাধারণ গীতিকবিরা কী অসাধরণ সব ভাওয়াইয়া লিখেছেন। তাতে কী অসাধারণ কল্পচিত্র! সেই যে ছোট্টবেলায় শুরু, আজও এই ভাওয়াইয়া নিয়ে আছি, ভবিষ্যতেও থাকব। এর মধ্যে ভাওয়াইয়া চর্চা, গবেষণা, সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, প্রশিক্ষণ প্রদান, কর্মশালা ও ভাওয়াইয়া স্কুল পরিচালনার মধ্যদিয়ে ভাওয়াইয়ার প্রচার-প্রসারে কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। উত্তরাঞ্চল থেকে নতুন নতুন ভাওয়াইয়া তুলে এনে বেতার, টিভি-চ্যানেলে শক্তভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি।
আব্বাসউদ্দীনের গাওয়া জনপ্রিয় গান ছাড়াও আরো ১০টির অধিক ভাওয়াইয়া গান ইতিমধ্যে শ্রোতা ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে দেশবাসীর কাছে। যতই চেষ্টা আর কাজ করি না কেনো-ভাওয়াইয়ার প্রচার-প্রসারে আব্বাসউদ্দীনের শ্রম-প্রচেষ্টা আর অবদান বাংলা লোকসংগীতে চির অম্লান হয়ে থাকবে। কুচবিহারের অপর সন্তান ভাওয়াইয়া গানের সাধক সুরেন্দ্রনাথ রায় বসুনিয়ার নামও বেঁচে থাকবে চিরকাল। আর এ দেশের উত্তরাঞ্চলের ভাওয়াইয়ার কৃতী শিল্পীদের মধ্যে উজির গিদাল, বড় উজির গীদাল, রহমত আলী মাস্টার, ভোলা গীদাল, ভাওয়াইয়ার যুবরাজ কছিমউদ্দীন, ফেরদৌসী রহমান, রথীন্দ্রনাথ রায়, গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী নুরুল ইসলাম জাহিদ, গীতিকার ও শিল্পী হরলাল রায়, মহেশ চন্দ্র রায়, সমশের আলী প্রধান, সিরাজ উদ্দীন, মকবুল হোসেন, কে এম আব্দুল আজিজ, সুরাইয়া বেগমসহ অনেকেই ভাওয়াইয়া গানকে ব্যাপকভাবে পরিচিত ও সমৃদ্ধ করেছেন। এ ছাড়া আরো অনেক প্রতিভাবান শিল্পী অতীতে ছিলেন, বর্তমানে আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন আশা করছি। শেষে এটুকুই বলতে চাই-ভাওয়াইয়াসম্রাট আব্বাসউদ্দীনের জন্মস্থান বলরামপুরের পথ যেন গিয়ে মিশেছে চিলমারীর বন্দর অবধি। তাইতো তিনি গাড়িয়াল ভাইকে বলতে পেরেছিলেন-‘হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে..’। আব্বাসউদ্দীন, চিলমারী বন্দর এবং এই বন্দর নিয়ে চিলমারীর এই বিখ্যাত ভাওয়াইয়া গান একাকার হয়ে মিশে আছে। ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক কারণেই তাই চিলমারীর বন্দরে একটি ভাওয়াইয়া ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি। আর এটি প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে বাংলা লোকসংগীতের বিশাল ভাণ্ডারের একটি শক্তিশালী সম্পদ ‘ভাওয়াইয়া’র চর্চা, গবেষণা ও প্রচার-প্রসারে অনন্য ভূমিকা রাখা সম্ভব। একই সঙ্গে কোনো ‘ফিউশন’ বা ‘কনফিউশন’ নয়- এই ভাওয়াইয়া সুরের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে অস্থিরতায় নিমজ্জিত অসুরদের সুরের মায়াজালে বন্দি করা সম্ভব বলে মনে করি।