গাফফারের ক্যানভাসে ‘সময়ের ছাপ’
নতুন কারো সঙ্গে দেখা হওয়ার পরপরই একটা ছাপ পড়ে মানুষের মনে। নতুন দেশ দেখার সময়ও একই অনুভূতি হয়। নতুন কোনো বস্তু দেখলেও হয়। তবে ব্যক্তির বিষয়টি সময় সময় বদলায়। প্রথম যাকে হেঁটে আসতে দেখা গেছে, সে মানুষকে গাড়িতে চড়তে দেখলে পুরোনো ছাপের ওপর আরেকটি ছাপ পড়ে। যাকে প্রথম দিন ফ্যাকাসে লেগেছিল, পরের দিন তাঁকে সজীব দেখা গেলেও তেমনটি হয়। তৃতীয় দিন তাঁকে উজ্জ্বল রঙের পোশাকে দেখেও আলাদা লাগতে পারে। সেই তাঁকে কান্না লুকাতে দেখলে কিংবা বাজারের থলে হাতে নিয়ে ঘুরতে দেখলেও কিন্তু নতুন ভাব তৈরি হয়। সময়ের ফেরে এমন অজস্র ছাপ পড়ে মানুষের মনে। শিল্পী গাফফার নিজের দেখা সে সময়ের চিহ্নগুলোই ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর চিত্রকর্মে।
আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা এবং জুম গ্যালারিতে ‘সময়ের ছাপ’ শিরোনামে শুরু হয়েছে চিত্রশিল্পী মো. আবদুল গাফফার বাবুর দ্বিতীয় একক চিত্র প্রদর্শনী।
কোনো কোনো চিহ্নের বয়স বেশি হওয়ায় ছাপ হালকা হয়ে গিয়ে থাকতে পারে; কিন্তু দাগ রেখে বসে গেছে গভীরে। আবার কোনো চিহ্ন টাটকা, কিন্তু অল্প দাগ কেটে গেছে। গাফফারের ছবিতে এমন অজস্র চিহ্নের ছড়াছড়ি। সব মিলিয়ে ছবিগুলোয় হাসি আছে, কান্না আছে, অপরিচয়ের ধাক্কা আছে, বন্ধুত্বের প্রশান্তি আছে, আতিথেয়তার তৃপ্তি আছে, বুঝতে না পারার বেদনা আছে। জলরং, তেলরং, পেনসিল, উডকাট, লিথোগ্রাফসহ নানা মাধ্যমে আঁকা আবেগ আর অনুভূতির মিশ্রণে তৈরি এই ছবিগুলোর চেহারা বিমূর্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে ২০০৮ সালে গাফফার এমএফএ সম্পূর্ণ করেছেন। ছাপচিত্র ছিল তাঁর পড়ার বিষয়। ২০০০-২০১৬ সাল অবধি তিনি দেশে-বিদেশে অনেক দলবদ্ধ চিত্রপ্রদর্শনী, কর্মশালা ও রেসিডেন্সিতে অংশ নিয়েছেন। ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে তাঁর প্রথম একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী হয় ২০১৪ সালে।
গতকাল শনিবার প্রধান অতিথি হিসেবে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক সোবহান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের দুজন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বারক আলভী ও অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য্য।
প্রদর্শনীটি চলবে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা, শুক্র-শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা ও বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে। রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ। প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত।