হুমায়ূন আহমেদের ৭৫তম জন্মদিন আজ

Looks like you've blocked notifications!
কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। ছবি : তুমুল মাহবুব

কালজয়ী কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৫ তম জন্মদিন আজ সোমবার (১৩ নভেম্বর)। ১৯৪৮ সালের এই দিনে তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার ছায়া সুনিবিড় প্রত্যন্ত কুতুবপুর গ্রামে বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের কোলে জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর জন্মস্থানের বিভিন্ন এলাকার নাম বারবার তাঁর লেখার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। ছেলেবেলায় তাঁর ডাকনাম ছিল কাজল। তাঁর বাবাও একজন লেখক ছিলেন। বিশিষ্ট লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবীব তাঁর ছোট দুই ভাই। 

বাবা পুলিশ অফিসার হওয়ায় বদলিজনিত কারণে বিভিন্ন জেলায় পড়াশোনা করতে হয়েছে তাঁকে। সেজন্য তিনি সর্বশেষ বগুড়া জিলা স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাস করেন। ১৯৬৭ সালের এইচএসসি পাস করেন ঢাকা কলেজ থেকে। এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে ডিস্টিংশন নিয়ে অনার্সসহ এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। সেখানে মাত্র ছয় মাস থাকার পরই তিনি চলে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে। 

তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চতর গবেষণা করে পলিমার কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণ করেন। সে সময় থেকেই তিনি লেখালেখি শুরু করেন। প্রথমেই প্রকাশিত হয় তাঁর উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’। সেই প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ এত বেশি পাঠকনন্দিত হয় যে তার পর আর তাঁকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। 

কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ একাধারে ছিলেন শিক্ষক, সমাজসেবী, গল্পকার, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, চিত্রকর, চিত্রনাট্য লেখক, নাট্যনির্দেশক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রবন্ধকার ইত্যদি। সাহিত্যের সব জায়গায় ছিল তার সরব উপস্থিতি। কখনও আবার রং-তুলির ছোঁয়ায় রাঙিয়েছেন ক্যানভাসের রংহীন সাদা স্থান। পিছিয়ে ছিলেন না নির্মাণেও। ছোটপর্দা, বড়পর্দায় তার নানা সৃষ্টি বাঙালির মনে দাগ কেটে থাকবে হাজার বছর।

হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা তিন শতাধিক। তাঁর লেখা অন্যতম উপন্যাসগুলো হলো নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া ও বাদশা নামদার ইত্যাদি। তাঁর লেখা উপন্যাসের জনপ্রিয় চারটি চরিত্র হলো হিমু, রুপা, মিসির আলী ও শুভ্র। এ ছাড়া মির্জা, মিয়ার বেটা, বদি, বাকের ভাই ইত্যাদি তাঁর সৃষ্ট অনবদ্য স্মরণীয় চরিত্র। 

তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো- এইসব দিনরাত্রি, অয়োময়, কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাত, আজ রবিবার ইত্যাদি।

হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হচ্ছে আগুনের পরশমণি, দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন,‌ শ্যামল ছায়া, চন্দ্রকথা ও ঘেটুপুত্র কমলা ইত্যাদি। শ্রাবণ মেঘের দিন, আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া, সর্বশেষ ঘেটুপুত্র কমলা চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মতো বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন বাংলাদেশের সাহিত্যের এই অপ্রতিদ্বন্দ্বি লেখক।

২০১২ সালের ১৯ জুলাই নির্মাণের মহান এই কারিগর নিউ ইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।