কবিতা উৎসবে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি

Looks like you've blocked notifications!
জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কবিতা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন পরিষদের নেতৃবৃন্দ। ছবি : এনটিভি

একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে আজ বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী জাতীয় কবিতা উৎসব–২০২৪। জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত ৩৬তম এই উৎসবের স্লোগান— ‘যুদ্ধ গণহত্যা সহে না কবিতা’। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কবিতা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

এরপর গ্রন্থাগার চত্বরে স্থাপিত মঞ্চে সমবেত কণ্ঠে একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ও উৎসবসংগীত ‘যুদ্ধ গণহত্যা সহে না কবিতা’পরিবেশিত হয়। পরে গত এক বছরে প্রয়াত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন কবি আমিনুর রহমান সুলতান এবং ঘোষণাপত্র পাঠ করেন কবি আসলাম সানী। কবি শিহাব সরকার উৎসব আহ্বায়কের বক্তব্য দেন।

এরপরে কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত তার বক্তব্যে বলেন, কবিরা চিরকালই শান্তির পক্ষে। এবারের জাতীয় কবিতা উৎসবে নানা আয়োজনে ‘যুদ্ধ গণহত্যা সহে না কবিতা’স্লোগানকে মূর্ত করে তোলা হয়েছে।

এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ।

কবি নির্মলেন্দু গুণ সশরীর উপস্থিত থেকে উৎসব উদ্বোধনের কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি আসতে পারেননি। তাঁর ধারণকৃত ভিডিওচিত্র পর্দায় দেখানো হয়। জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে নির্মলেন্দু গুণ বলেন, এরশাদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি ও সে সময় চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে কবিতা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কবিদের এরশাদের দলভুক্ত হওয়া থেকে নিবৃত্ত করার জন্য...। পরিষদের সঙ্গে অনেক তরুণ কবি যুক্ত ছিলেন। পরিষদ গঠিত হওয়ার পর শামসুর রাহমানসহ অগ্রজ কবিদের আমরা এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছিলাম। কবি সুফিয়া কামাল এর নেতৃত্ব দিয়েছেন। একপর্যায়ে ১৯৯০ সালে আমি পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেই। শামসুর রাহমান তখন সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। কবিতা উৎসবে আসেননি—এমন কবি বাংলাভাষীদের মধ্যে কম আছেন। এভাবে কবিতা পরিষদ দেশের জাতীয় সংস্কৃতি চর্চার একটা ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়ায়।

সভাপতির ভাষণে মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘যুদ্ধের প্রয়োজনে সাম্রাজ্যবাদী-অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সীমাহীন দৌরাত্ম্য ও মানবাধিকারের প্রহসন আর মানতে পারছি না। পৃথিবীজুড়ে প্রতিদিন অসম যুদ্ধে নারী-শিশুসহ মানুষের প্রাণসংহার, বসতি উচ্ছেদ ও লুণ্ঠনের ভয়াবহতা আমরা সহ্য করতে পারছি না। এই জাতিগত নিধনের ঘটনায় জাতিসংঘসহ সারা পৃথিবীর বিবেকবান মানুষেরা ক্ষুব্ধ। যুদ্ধ-গণহত্যার বিশ্ব ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে কবিতা উৎসবের কণ্ঠে আমরা স্লোগান তুলে দিয়েছি—যুদ্ধ গণহত্যা সহে না কবিতা। নির্দয় যুদ্ধে গণহত্যা কোনো কবি সহ্য করতে পারে না।’

মুহাম্মদ সামাদ আরও বলেন, ‘একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা ৩০ লাখ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করা হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে, করছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখনো একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। এই মঞ্চ থেকে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি জানাচ্ছি আমরা।’

উৎসবে যোগ দিতে আসা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কবি ও পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমির সভাপতি সুবোধ সরকার বলেন, ‘কলকাতার কবিবন্ধুসহ বাংলা ভাষার পক্ষ থেকে সবার প্রতি আমার ভালোবাসা। এই ঐতিহাসিক উৎসবের মঞ্চে দাঁড়াতে পেরে আমার ভালো লাগছে। আমি সম্মানিত বোধ করছি। এই উৎসব গোটা উপমহাদেশে সাড়া ফেলেছে। কবিতা শেষ পর্যন্ত কোনো সীমান্ত মানে না। কবিতা একখণ্ড মেঘ। এই মেঘকে আটকানো যায় না। যে মানুষটা ব্যক্তির ভেতরে নিভৃতে বাস করে, সে-ই তো কবিতা। জাতীয় কবিতা উৎসব ৩৬ বছরে পা দিল। এত দীর্ঘ সময় ধরে কবিতা নিয়ে এত বড় উৎসব সম্ভবত উপমহাদেশের আর কোথাও হয় না।’

বক্তব্যের পর নিজের লেখা ‘মণিপুরের মা’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন সুবোধ সরকার।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত ও কবি লিও টিটো এল অসান জুনিয়র, ভারত ও নেপালসহ বিভিন্ন দেশের কবিরা কবিতা উৎসবে অংশ নেন। উৎসবে রাত নয়টা পর্যন্ত চলে কবিতাপাঠ।

দ্বিতীয় দিনের আয়োজন

আগামীকাল শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় ‘যুদ্ধ গণহত্যা সহে না কবিতা’ শীর্ষক সেমিনারের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় ও শেষ দিনের আয়োজন শুরু হবে। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কারপ্রাপ্ত কবির নাম ঘোষণা করা হবে। রাত আটটা পর্যন্ত কবিতাপাঠ চলবে। পরে কবিতার গানের মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হবে।