চলছে জাতীয় পিঠা উৎসব

জাতীয় শিল্পকলা একাডেমীতে চলছে জাতীয় পিঠা উৎসব ২০২৪। বাংলাদেশ শিল্পকলা একডেমির আয়োজনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এ মেলা উদযাপন চলছে। ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ পিঠা উৎসব চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত চলবে পিঠার এ উৎসব।
গ্রাম বাংলার বাহারি স্বাদের পিঠা খেতে প্রতিদিনই স্টলগুলোতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।
বিভিন্ন জেলার প্রান্তিক পর্যায় থেকে ৫০ টি স্টলে পিঠাশিল্পীরা অংশ নিয়েছেন এবারের পিঠা উৎসবে। উৎসবে খানিকটা ভিন্নতা যোগ করতে, যারা পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে পরিবারের জন্য পিঠা তৈরি করেন এবং লুপ্তপ্রায় পিঠাকে বংশপরম্পরায় ধরে রেখেছেন, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এবারের পিঠা উৎসবে। উৎসবে একটি স্টলে দুজন করে শিল্পী এক দিনের জন্য অংশ নিতে পারবেন। মূল্যায়ন কমিটি পিঠার গুণমান, ভিন্নতা ও স্বাদ যাচাই করে নম্বর দেবেন। এভাবে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়জন পুরস্কৃত হবেন। পিঠা উৎসবে অংশগ্রহণকারী সবাইকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সনদ দেওয়া হবে।
নারায়নগঞ্জ পিঠা ঘরের জেনারেল ম্যানেজার শামসুল আরেফিন মুকুল বলেন, আগেকার দিনে গ্রাম-বাঙলায় আমরা আমাদের মায়ের মুখ থেকে পিঠা বানানো ও তা নিয়ে গ্রামে গ্রামে উৎসবের কথা শুনতাম। বর্তমানে যারা শহরাঞ্চলে বড় হচ্ছে তাদের কাছে এ ঐতিহ্য অনেকটাই অজানা। মূলত সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ও তরুণ প্রজন্মের কাছে পরিচিত করে তুলতে এটি অত্যন্ত সুন্দর একটি আয়োজন। দর্শনার্থীরাও খুব ভালো সাড়া দিচ্ছেন এবার।
তিনি এবং তার স্ত্রী মিলে 'পালং পাটিসাপটা' নামের নতুন এক পিঠা উদ্ভাবনের কথাও জানান তিনি। পালং দিয়ে তৈরি করা এ পিঠার ভিতরে থাকে মুরগির মাংস। যার দাম ১২০ টাকা। মূলত ঝাল পাটিসাপটা তৈরি করার ইচ্ছা থেকেই তাদের এমন উদ্ভাবন বলে জানা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেলা প্রাঙ্গণ পরিচ্ছন্ন রাখতে যথেষ্ট ডাস্টবিনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়াও দোকান ও পিঠা ভেদে একেকটি পিঠার দাম একেক রকম হলেও দাম নিয়ে অভিযোগ নেই মেলায় আসা দর্শনার্থীদের। স্টল ভেদে ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের পিঠা পাওয়া যাচ্ছে পিঠা উৎসবে।
উৎসবে আসা দর্শনার্থী সানজানা ইসলাম বলেন, শীত এবং পিঠা যেন একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত৷ পিঠা খাওয়া ছাড়া যেন শীতের আনন্দ পরিপূর্ণতা পায়না। সেই আনন্দ যেন আরও বৃদ্ধি করে দিল এই পিঠা উৎসব। বিভিন্ন অঞ্চলের বাহারি ধরনের পিঠার সাথে পরিচিত হতে পারছি এখানে এসে। এবং এখানকার পিঠাগুলোর স্বাদও যথেষ্ট ভালো।
দাম নিয়ে জানতে চাইলে এক শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থী হিসেবে যেকোনো জিনিস কেনার আগেই দাম নিয়ে ভাবতে হয় আমাদের। তবে পিঠা উৎসবের পিঠাগুলোর দাম আমার মতে ঠিকই আছে। এছাড়াও স্টলগুলোতে কর্মরত সকলেই খুব আন্তরিক।
পিঠা উৎসবে পাওয়া যাচ্ছে যেসব পিঠা
মালপোয়া, তালের পিঠা, চই পিঠা, দুধ পুলি, ভাপা, চিতই, ডিম পিঠা, নকশি পিঠা, মুগ পাকন, পাটিসাপটা, লবঙ্গ লতিকা পিঠা।

আদিবাসীদের কলা পাতার পিঠা, কালো বিন্নি চালের পায়েস, চালের ছোট রুটির সাথে পুর সবজি, ছিটা পিঠাসহ নানা ধরনের আদি পিঠা রয়েছে উৎসবে।
পিঠার পাশাপাশি রাজশাহীর বিখ্যাত কালাই রুটি, গরুর বট, হাসের মাংসের ঝাল ফ্রাই, চিকেন নাগেটস,মোমো, মুংডিসহ নানা মুখরোচক মশলাদার খাবারও পাওয়া যাচ্ছে এ উৎসবে।
পিঠার স্বাদ উপভোগ করতে আসা দর্শনার্থীরা দেখতে পারবেন মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও। যার মধ্যে রয়েছে লোক নৃত্য, লোকসঙ্গীতানুষ্ঠান, একক ও সমবেত নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি, লালনগীতি, একক সংগীত ও দলীয় সংগীত ইত্যাদি।
উৎসবে আসা দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে নাগরদোলা, শিশুদের জন্য মিনি ট্রেন, ট্রাম্পলিনসহ বিনোদনের নানা ব্যবস্থা।