১০ লেখককে সম্মাননা দিল অনুপ্রাণন প্রকাশন

Looks like you've blocked notifications!

পাণ্ডুলিপি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ১০ জন লেখককে পুরস্কৃত করল অবাণিজ্যিক সৃজনশীল প্রকাশনা অনুপ্রাণন প্রকাশন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলার মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনাড়ম্বর এই অনুষ্ঠানে ‘অনুর্ধ্ব ৪০ তরুণ পাণ্ডুলিপি প্রতিযোগিতা-২০২৩’ বিজয়ী প্রত্যেকের হাতে সম্মাননা স্মারক হিসেবে ফুল, সনদ, অনুপ্রাণন নামাঙ্কিত মগ ও পাঁচ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়।

প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ১০ জন সাহিত্যিকের বই প্রকাশিত হয়েছে এই বইমেলায়। বইগুলোর মোড়ক উন্মোচনে অংশ নেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।

গত বছর ২০২৩ সালের শুরুর দিকে পাণ্ডুলিপি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে অনুপ্রাণন প্রকাশন। বয়সসীমা রাখা হয়েছিল অনূর্ধ্ব ৪০ বছর। সারা দেশের অনেক লেখক এই আয়োজনে অংশ নেন। জুরিবোর্ডের বিচারে সেরা ঘোষণা করা হয়েছে পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ, দুটি উপন্যাস, দুটি গল্পগ্রন্থ ও একটি শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ।

কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে—আইরিন সুলতানা লিমার ‘ভুল প্রণয়ের গন্ধ’, সানজিদা সিদ্দিকার ‘শীতগ্ধ’, টিপু সুলতানের ‘সেলাই’, তৌহিদুল ইসলামের ‘নগরবন্দি’, হিশাম মো. নাজেরের ‘অণু-পরমাণুভূতি’। উপন্যাস দুটি হচ্ছে—অমিত কুমার কুণ্ডুর ‘মৌসন্ধ্যা’, বাসার তাসাউফের ‘কার কাছে যাবো’। ছোটগল্প দুটি হচ্ছে—ইমরান খানের ‘যন্ত্র ও জন্তু’, হাবিবুল্লাহ রাসেলের ‘রাশিয়ার বোমা বনাম আছিয়ার উনুন’। শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ বিভাগে বিজয়ী একটি একটি বই—জুয়েল আশরাফের ‘বর্ষা এলেই ভূতটা আসে’।

অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন কবি ও বাচিক শিল্পী তাহমিনা শাম্মী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি আইরিন সুলতানা লিমা। তার পক্ষে সম্মাননা স্মারক বুঝে নেন কবি নুরুন্নাহার মুন্নি। অনুপস্থিত আরেক কবি টিপু সুলতানের পক্ষে উপহার-স্মারক গ্রহণ করেন কথাসাহিত্যিক শফিক হাসান।

স্বাগত বক্তব্যে অনুপ্রাণন প্রকাশক আবু এম ইউসুফ বলেন, ‘শুরু থেকেই অনুপ্রাণন প্রকাশন তরুণদের বই প্রকাশ করে আসছে। সৃষ্টিশীল ও সম্ভাবনাময় তরুণ লেখকদের প্রাধান্য দিচ্ছে। অনুপ্রাণন জন্মলগ্ন থেকেই প্রতিভাবান তরুণদের সাহিত্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ করে আসছে। ২০২৩-এ আমরা অনূর্ধ্ব ৪০ বছর বয়সী তরুণদের জন্য পাণ্ডুলিপি প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। আগামীতেও এ ধরনের প্রতিযোগিতামূলক আয়োজন করার ইচ্ছা আছে।’

পাণ্ডুলিপি প্রতিযোগিতার জুরিবোর্ডে ছিলেন কবি সরদার ফারুক, কথাসাহিত্যিক মোজাম্মেল হক নিয়োগী, কবি পারভেজ আহসান প্রমুখ। কথাসাহিত্যিক মোজাম্মেল হক নিয়োগী বলেন, ‘তরুণ লেখকদের মধ্যে পঠন-পাঠনের পরিধি কম। এটা আরও বাড়াতে হবে। কালজয়ী সাহিত্য সৃষ্টি করতে হলে বিস্তৃত পাঠের কোনো বিকল্প নেই।’

কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু অনুপ্রাণনের নানামাত্রিক আয়োজনের ভূঁয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে আমাদের বড় প্রকাশকদেরও এমন দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল। দুঃখজনকভাবে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। সত্যিকারের পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা রাখেননি কেউই। এই শূন্যস্থান পূরণ করতে এগিয়ে এসেছে অনুপ্রাণন প্রকাশন তথা সম্পাদক ও প্রকাশক আবু এম ইউসুফ।’

তরুণ লেখকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে গোলাম কিবরিয়া পিনু আরও বলেন, ‘তোমাদের আরও স্বপ্ন দেখতে হবে। আরও গভীর সৃজনশীল শক্তিমত্তার মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে। গর্বিত করবে লেখালেখির ভুবনকে।’

কবি পারভেজ আহসান বলেন, ‘তরুণরা ভালো লিখছেন। আগামীতে নিশ্চয়ই আরও ভালো করবেন। পাণ্ডুলিপি প্রতিযোগিতার এই মহতী আয়োজনের সঙ্গে থাকতে পেরেছি ভাবলে নিজেরই ভালো লাগে।’

বিজয়ী কবি ও লেখকদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অমিত কুমার কুণ্ডু। ভালোলাগার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘বাজারে মুরগি লেখক ও মুরগি ধরা প্রকাশক বলে একটি স্ল্যাং চালু আছে। নানা রকম চালাকি ও বাণিজ্যিক অপতৎপরতার বিপরীতে অনুপ্রাণন প্রকাশন দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী কাজটি করে যাচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠান আজ আমাদের পুরস্কার দিচ্ছে, টাকা দিচ্ছে। এটা অবশ্যই সংশ্লিষ্ট অনেকের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। গর্বিত বোধ করছি।’

অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী লেখকদের বন্ধুজন ও আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয় পরিমাণে। তারাও যে এই সাহিত্যিকদের কৃতিত্বপূর্ণ অর্জনে আনন্দিত ও গর্বিত সেটাই বলে দিচ্ছিল উজ্জ্বল চোখ ও আনন্দ ঝলমল মুখগুলো। উপস্থিত থাকা সংশ্লিষ্ট লেখকরা মুখে তেমন কিছু উচ্চারণ না করলেও তাদের প্রত্যয়দীপ্ত ভঙ্গি ও উঁচু শির স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে আগামীতে সাহিত্যাঙ্গনে রাজত্ব করার গোপন অভিপ্রায়টুকু!