বুকশেলফ সদৃশ বাড়ির সীমানাপ্রাচীর, মুগ্ধ দর্শনার্থীরা
‘আনন্দধারা’ নামের বাড়ির সীমানাপ্রাচীর তৈরি শেলফে রাখা বইয়ের সারির মতো করে। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার সরারচরের কালেখাঁর ভাণ্ডা গ্রামের রকিব হাসানের ‘আনন্দধারা’ বাড়ির এই সীমানাপ্রাচীর স্থানীয়ভাবে ‘বইদেয়াল’ নামে পরিচিত।
বুকশেলফ সদৃশ বাড়ির সীমানাপ্রাচীরে স্থান পেয়েছে কালজয়ী ৩৩টি বইয়ের মোড়ক। এ নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে মানুষের মধ্যে। এলাকা ছাড়িয়ে প্রতিদিন দূরদূরান্তের লোকজন এই বইদেয়ালটি দেখতে সেখানে ছুটে আসছে। এমনকি বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে সেখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পাঠচক্রও।
৪৭ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত বাড়ির সীমানাপ্রাচীরের বইদেয়ালটি ১০০ ফুট লম্বা এবং প্রতিটি বইয়ের মোড়ক ১০ ফুটের মতো উঁচু। ইট-পাথর দিয়ে সীমানা প্রাচীরের মূল কাঠামোতে স্টিলের পাত দিয়ে তৈরি বুকসেলফ সদৃশ কাঠামোতে বিখ্যাত লেখকদের লেখা কালজয়ী বইয়ের মোড়ক স্থান পেয়েছে।
বুকশেলফে আছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলি’, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা’, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’, হুমায়ূন আহমেদের ‘তোমাদের জন্য রূপকথা’, আবু ইসহাকের ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’, সমরেশ মজুমদারের ‘গর্ভধারিণী’, মরিস বুকাইলির ‘বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান’ এবং আনিসুল হকের ‘মা’ বইটিসহ কালজয়ী ৩৩টি বইয়ের মোড়ক।
বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত শামছুল হক ভুঁইয়ার ছেলে রকিব হাসান নিজে ছোটবেলা থেকেই বই পাগল মানুষ। বই পড়া ও জ্ঞানচর্চাকে উৎসাহ দিতেই বইয়ের দেয়াল গড়ার অভিনব উদ্যোগটি নেন বলে জানান তিনি।
রকিব হাসান বলেন, ‘নতুন প্রজন্ম ডিজিটাল মাধ্যমে আসক্ত হয়ে বই বিমুখ হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। তাই নতুন প্রজন্মকে এসব থেকে সুস্থ ধারায় ফেরাতেই আমার এই প্রয়াস। বইপড়ে বাঙালির জীবন ও সংগ্রামের ইতিহাস জানার প্রতি আগ্রহী করে তুলতেই আমার এই বইদেয়াল নির্মাণ।’
রকিব হাসানের এখন একমাত্র স্বপ্ন এখানে একটি পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা, যাতে এলাকার লোকদের হাতে সহজে বই পৌঁছে দেওয়া যায়। তাদের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা যায়।
ঢাকা থেকে বইদেয়াল দেখতে আসা ব্যাংকার ফিরোজ কামাল জানান, মানুষকে বইমুখী করতে এই বইদেয়ালটি মানুষের মাঝে বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। তাই ঢাকা থেকে ছুটির দিনে এই বাড়িটি দেখতে এসেছেন।
শুধু দর্শনদারী নয়, সেখানে বসছে পাঠচক্রের মতো আসরও। বিকেলে দেখা গেল একটি সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে একদল তরুণ-তরুণী বাইদেয়ালের সামনে গোল হয়ে বসে বই পড়ছে।
একটি বেসরকারি হাইস্কুলের শিক্ষক লুৎফুন্নুহার চিনুর নেতৃত্বে কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে এসেছেন আনন্দধারা বাড়িটি দেখতে। খঁটিয়ে খুঁটিয়ে বইদেয়াল দর্শন করে সেখানে বসেছে পাঠচক্রের আসর।
লুৎফুন্নুহার চিনু জানান, মানুষকে বই পড়তে ও বই সম্পর্কে জানতে এই বইদেয়াল বিরাট অনুপ্রাণিত করবে। তাই তিনি সংগঠনের তরুণ সদস্যদের নিয়ে এখানে এসেছেন।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম সাকিব আল হাসান জানান, বই কীভাবে মানুষের বন্ধু হয়, তা জানতে এই দেয়াল মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে। এর ফলে এলাকার সুনাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাজিতপুর উপজেলায় ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে কর্মরত স্বাধীন আহমেদ বারেক জানান, এই দেয়ালে বিখ্যাত লেখকদের বইয়ের মোড়ক দেখে নতুন প্রজন্ম অনেক কিছুই শিখতে পারবে। বর্তমান প্রজন্ম যারা বিভিন্ন দিকে বিপথগামী হচ্ছে তাদের সুপথে ফিরিয়ে আনতে হলে ‘বইদেয়াল’-এর মতো উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।