ঢাবির চারুকলায় চলছে শিল্পী ধনঞ্জয় মন্ডলের একক চিত্রপ্রদর্শনী
শিল্পীজীবনের চল্লিশ বছরের নিরন্তন শিল্পসাধনার সঙ্গে শিল্পপ্রেমী দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দিতে একক চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন শিল্পী ধনঞ্জয় মন্ডল । প্রদর্শনীটি চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারি-১-এ । মোট ৩৭টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে এ প্রদর্শনীতে। যার মধ্যে ১২টি বাস্তব দৃশ্যে আঁকা এবং ২৫টি অ্যাক্রেলিক ক্যানভাসে আঁকা। প্রদর্শনীতে বিক্রি হচ্ছে ছবি। উদ্বোধনের দিনেই বিক্রি হয়েছে দুটি।
আজ শুক্রবার (১ মার্চ) বিকেলে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাবির চারুকলা অনুষদের শিক্ষক অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য্য। ৭ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১ টা ৩০ থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে প্রদর্শনীটি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজক চিত্রশিল্পী ধনঞ্জয় মন্ডল বলেন, আমার ছবি আঁকার সূচনা গ্রামে। গ্রামের প্রকৃতিকে কাছ থেকে দেখেই আমি ছবি আঁকি। মূলত লকডাউনের সময়টাকে চিত্রকর্মের কাজে লাগাই। আজকের প্রদর্শনীর অনেক চিত্রকর্মই লকডাউনের সময়ে আঁকা। আমার স্ত্রীর অনুপ্রেরণায় আমি অনেকটা এগিয়ে এসেছি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বরেণ্যশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরেন সোম বলেন, প্রকৃতি থেকে শিল্পী ধনঞ্জয় তার নিজের মতো করে সাজিয়ে সেটা ফুটিয়ে তোলেন ক্যানভাসে। তার রঙ বাছাইও চমৎকার। যার ফলে তিনি তৈরি করেছেন তার নিজস্ব একটি ধরন। তার চিত্রকর্মগুলো দেখলাম, আঁকা প্রতিটি ছবিই অসাধারণ। আশা করি, তিনি তার কাজের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবেন এবং পরবর্তীতে আরও প্রদর্শনী তার দর্শকদের উপহার দেবেন।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য্য বলেন, ধনঞ্জয়ের মতো অনেকেই পড়াশোনা করে বেরিয়ে গেছেন। কিন্তু হাতেগোনা মাত্র কয়েকজন শিল্পকর্মের সঙ্গে এখনও জড়িত। তিনি আরও বলেন, চারুকলায় পড়েনি এমন অনেকেই এখানে কাজ করছেন। মূলত কারুশিল্প ভালো লাগা থেকে আসে। নিজের ভেতরকার সত্ত্বাটা কারুকাজের মাধ্যমে ফোটে ওঠে। এমন অসংখ্য শিল্পকর্ম নিয়ে এই প্রদর্শনী।
শিশির বলেন, যারা চারুকলাকে ভালোবাসে তারা পরিবারের চেয়ে এগুলোকে বেশি সময় দেয়। একজন শিল্পীর রক্তের সঙ্গে মিশে যায় এগুলোর প্রতি ভালোবাসার সম্পর্ক। এই সম্পর্ক ধনঞ্জয়ের মতো মানুষদের জন্য বেগবান হচ্ছে। আমরা তাকে অভিনন্দন জানাই।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ও সীব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক সামিয়া জামান বলেন, ধনঞ্জয় মন্ডল স্যারের মতো প্রচণ্ড ধৈর্যশীল এবং স্থির মানুষ আমি দেখিনি। আমি ওনার সঙ্গে দীর্ঘ ৩৫ বছর কাজ করেছি। ওনার সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি ধন্য। তিনি নিষ্ঠা এবং সততার সঙ্গে কাজ করেন, যেটা আজকাল খুব কম পাওয়া যায়।
চিত্রশিল্পী ধনঞ্জয় মন্ডলের সহপাঠী শিল্পী এবং কবি জাহিদ মোস্তফা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, চারুকলায় ভর্তি হয়ে প্রথম থেকেই আমরা দেখেছি, ধৈর্যের সঙ্গে ছবি আঁকার যে অনুশীলন সেই অনুশীলন ধনঞ্জয় চালিয়ে গেছেন। আমি অনেক সময় তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি। তার কথাতেও আমরা পেয়েছি অন্যরকম অনুপ্রেরণা। তিনি আরও বলেন, সেই গ্রামীণ পরিবেশ থেকে উঠে এসে ঢাকা মহানগরে তার জীবন অত্যন্ত দক্ষতা এবং সফলতার সঙ্গে অতিবাহিত করছেন। একজন শিক্ষক হিসেবে ব্রত নিয়ে তিনি ৪০ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন। এটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।
চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজক ধনঞ্জয় মন্ডল ঢাবির চারুকলা অনুষদের ১৯৭৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার লক্ষ্মীবিলাস গ্রামে। সেখানেই শৈশব কাটে তার। অবসর সময়ে চিত্রকর্ম করতেই ভালোবাসেন।
ছেলেবেলায় শিক্ষক পল গোমেজের হাত ধরে তার গ্রামের বাড়িতেই ছবি আঁকার হাতেখড়ি হয় শিল্পী ধনঞ্জয় মন্ডলের। বৈবাহিক জীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি।
এর আগে ১৯৮৬ সালে কোলকাতায় শিল্পী ধনঞ্জয় মন্ডলের প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শন হয়েছিল। যার আয়োজন করা হয় ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতির সৌজন্যে। তার আগে কেউ এককভাবে চিত্র প্রদর্শনী করতে সক্ষম হননি বলেও দাবি করেন শিল্পী ধনঞ্জয় মন্ডল।