অবশেষে খানজাহান আলী থানার ওসিকে বদলি, তদন্ত কমিটি গঠন

Looks like you've blocked notifications!
খানজাহান আলী থানার বদলি হওয়া ওসি শফিকুল ইসলাম। ফাইল ছবি

অবশেষে খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলামকে নিয়ে লুকোচুরি ঘটনার অবসান হয়েছে। কেএমপির মুখপাত্র সহকারী পুলিশ কমিশনার কানাই লাল সরকার গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন, শফিকুল ইসলামকে নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে সোয়াটে বদলি করা হয়েছে। একই সঙ্গে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত ১৬ জুলাই খুলনার মশিয়ালীতে চার খুনের ঘটনার পর খানজাহান আলী থানার ওসি শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ঘাতক, গুলি চালানো তিন ভাইয়ের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তাঁর বিচার ও অপসারণ দাবি করে আসছিল। অনেকে টিভি ক্যামেরার সামনে ওসির ফাঁসিও দাবি করে আসছিলেন। ঘটনার ১০ ঘণ্টা পর এলাকায় কেএমপির উপকমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লার নেতৃত্বে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি টিম গেলেও তাদের সামনে গ্রামবাসী পুলিশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন।

গত ১৭ জুলাই থেকে ওসি শফিকুল ইসলামকে থানায় দেখা যায়নি। জানতে চাইলে বলা হয়েছে, তিনি অপারেশনে আছেন। কিন্তু স্থানীয়দের বিরুদ্ধে তখন থেকে ওসির অবস্থান নিয়ে গুঞ্জন ছিল। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি ধরেননি।

পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা যায়, পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবীর ঘটনার মূল হোতা তিন ভাইকে আটকের পর ওসিকে থানায় প্রবেশ করতে বলেছিলেন। আবার অনেকে তাঁকে পুলিশ লাইনে দেখেছে বলে প্রচার করেছে। এ সময় পরিদর্শক (তদন্ত) কবীর আহমেদকে থানার ওসির কাজকর্ম করতে দেখা গেছে।

সব গুঞ্জনের অবসান হয়েছে ঘটনার পাঁচ দিন পর। তবে ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা জাকারিয়া ও তাঁর ভাই মিল্টনসহ আসামিদের অনেকেই এখনও আটক হয়নি। এলাকায় বিষয়টি নিয়ে এত ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে যে গুলিবর্ষণের ঘটনার পর গণপিটুনিতে নিহত জিহাদের লাশ দুদিন পর পুলিশ প্রহরায় অন্য এলাকায় দাফন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো মামলা হয়নি। তবে পুলিশ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বিধিবিধান মতোই।

কেএমপির সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) কানাই লাল সরকার জানান, মশিয়ালীতে হত্যার ঘটনার পর উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগসহ সার্বিক বিষয় তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এস এম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) লুৎফুল হায়দারকে পরিবর্তন করে পরিদর্শক (তদন্ত) কবীর আহমেদকে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। এখন তিনিই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব পালন করবেন।

মশিয়ালীর মরহুম হাসান প্রফেসরের তিন ছেলে জাকারিয়া, জাফরিন ও মিল্টন আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁরা সরকারি দলের নাম ব্যবহার করে এলাকায় অবৈধ সুদ ও মাদক ব্যবসার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এর মধ্যে জাকারিয়া খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক ও পাটকল শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের পৃষ্ঠপোষকতায় তিন ভাই মূলত বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অজপাড়াগাঁয়ে ওই তিন ভাই বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেছেন।

তিন ভাই গত ১৬ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে মুজিবর রহমান নামের এক যুবকের বাড়ির পাশে পাইপের মধ্যে বন্দুকের গুলি রেখে ধরিয়ে দের পুলিশের কাছে। ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে এলাকাবাসী থানায় গেলে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়। একই সময় পাশের এলাকার এক তরুণীকে জাকারিয়ার বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখেন। এ ঘটনা শুনে গ্রামবাসী জড়ো হয়ে জাকারিয়ার বাড়ি গিয়ে হামলা চালায়। এ সময় বাড়ির ভেতরে থেকে গুলি করলে নজরুল ফকির, রসুল ফকির ও পরে সাইফুল ইসলাম নামের তিনজন মারা যান।

এদিকে, ওই রাতেই তিন ভাইয়ের সহযোগী জিহাদ শেখকে গণপিটুনি দেয় গ্রামবাসী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন ভোররাতে জিহাদ মারা যান।