অভিনেত্রী স্বর্ণাসহ তিনজনকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ
প্রতারণার মাধ্যমে সৌদি আরব প্রবাসীর কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার মডেল ও অভিনেত্রী রোমানা স্বর্ণাসহ তিনজনের পাঁচ দিনের রিমান্ড নাকচ করে দিয়েছেন আদালত। তবে পুলিশ চাইলে কারাফটকে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।
আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম মাহমুদা আক্তার এই আদেশ দেন।
এর আগে আজ দুপুরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বর্ণা, তাঁর সহযোগী আশরাফি আক্তার শেলী ও আন্নাফি ইউসুফ ওরফে আনানকে হাজির করে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। এরপরে তাদের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের আবেদন বাতিল করে আসামিদের কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) মনিরুজ্জামান মনির এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে প্রতারণার শিকার জুয়েল সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে গতকাল বৃহস্পতিবার স্বর্ণাসহ তিনজনের নামে দণ্ডবিধির ৪২০/৪০৬ ধারায় মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। এরপরে গতকাল বিকেলে রাজধানীর লালমাটিয়ার সি ব্লকের একটি বাসা থেকে রোমানা স্বর্ণাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁর দুই সহযোগী মামলার আসামি আশরাফি আক্তার শেলী ও আন্নাফি ইউসুফ ওরফে আনানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তারের বিষয়টি এনটিভি অনলাইনকে জানান তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মৃত্যুঞ্জয় দে সজল ও মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ।
ওসি বলেন, ‘বাদী জুয়েল ও আসামি স্বর্ণার মধ্যে ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জুয়েলের অভিযোগ, সম্পর্ক শুরুর পর থেকে স্বর্ণা বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে তাঁর কাছ থেকে টাকা নিতেন। একপর্যায়ে তাঁরা বিয়েও করেন। বিয়ের পর ফ্ল্যাট কেনার টাকাও নিয়েছেন স্বর্ণা। এভাবে এক কোটি ৭৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে বাদীর দাবি। সর্বশেষে জুয়েলকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলা হয়। এর আগে আবার জুয়েলের আপত্তিকর ছবি তুলে তা নিয়ে ব্ল্যাকমেইলও করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জুয়েলের দাবি। তারপর তিনি মামলা করেছেন। মামলার পর আমরা স্বর্ণাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি।’
এডিসি মৃত্যুঞ্জয় দে সজল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাদী জুয়েল মামলার এজাহারে ৯১ লাখ টাকা দেওয়ার প্রমাণের কথা উল্লেখ করেছেন। টাকাগুলো বিভিন্ন সময় ব্যাংকের মাধ্যমে দিয়েছেন। এ ছাড়া অনেক টাকা দেওয়ার কথা বলেছেন, তার লিখিত দলিল তাঁর কাছে নেই।’
মামলার বাদীর বরাত দিয়ে মৃত্যুঞ্জয় দে সজল বলেন, ‘২০১৯ সালের মার্চ মাসে তাঁদের বিয়ে হয়। সে সময় স্বর্ণা কাবিননামায় বিধবা বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু তাঁর সংসার রয়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে জুয়েলকে ডিভোর্স দেওয়া হয়েছে বলে স্বর্ণা তাঁকে জানান। তারপর জুয়েল দেশে ফিরে আসেন ফেব্রুয়ারি মাসে। কোনো উপায় না দেখে তিনি গতকাল মামলা করেছেন।’
এডিসি আরো বলেন, ‘মামলা করার আগে জুয়েল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিবাহ ও তালাক শাখায় যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁর নামে কোনো তালাকনামা পৌঁছায়নি তখনও। এ ছাড়া স্বর্ণাও কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি বলে জুয়েল আমাকে জানিয়েছেন। জুয়েল মামলার এজাহারে তাঁদের ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের কথোপকথন ও নানা বিষয়ের প্রমাণ দেখিয়েছেন।’
২০০৬ সালের শেষের দিকে মডেলিংয়ের মাধ্যমে শোবিজে নাম লেখান রোমানা স্বর্ণা। টিভি পর্দার এই অভিনেত্রী সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। ২০১৫ সালে তন্ময় তানসেনের ‘পদ্ম পাতার জল’ এবং ২০১৬ সালে একই পরিচালকের ‘রান আউট’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি।