আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না নিয়েই ফিরে গেলেন ডিপজল

Looks like you've blocked notifications!
চলচ্চিত্র অভিনেতা ও প্রযোজক মনোয়ার হোসেন ডিপজল। ফাইল ছবি

ঢাকা-১৪ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন ফরম তুলতে গিয়ে খালি হাতেই ফিরলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা ও প্রযোজক মনোয়ার হোসেন ডিপজল। একইসঙ্গে নৌকার মনোনয়ন ফরম তুলতে পারেননি মিরপুরের মোল্লা পরিবারের সন্তান ও সাবেক বিএনপিনেতা এখলাস উদ্দিন মোল্লাহ।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে নৌকার মনোনয়ন ফরম তুলতে যান বিএনপির সাবেক দুই নেতা।

যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ঢাকা-১৪ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম তোলার জন্য এখলাস উদ্দিন মোল্লাহ মঙ্গলবার তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের অফিসে আসেন। এ সময় ফরম বিতরণের দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তাঁরা এখলাস মোল্লাহর কাছে জানতে চান আপনি আওয়ামী লীগের স্থানীয় কোনো পদে আছেন কিনা অথবা প্রাথমিক সদস্যপদ পূরণ করেছেন কিনা। এই সংক্রান্ত কাগজপত্র তাঁর কাছে দেখতে চান। তিনি সে কাগজ দেখাতে না পারায় তাঁর কাছে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয়নি। তখন তিনি দলীয় অফিস থেকে বের হয়ে যান।

এখলাস উদ্দিন মোল্লাহ যখন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনতে দলীয় কার্যালয়ের রুমে প্রবেশ করেন, সেই সময় রুমের সামনে অপেক্ষা করছিলেন আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী চলচ্চিত্র অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল। এখলাস উদ্দিন মোল্লাহর ফরম কিনতে না পারার কারণ জানতে পেরে, ডিপজলও দ্রুত ওই এলাকা ত্যাগ করেন। এ সময় ডিপজলের সঙ্গে ছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা জায়েদ খান ও মিশা সওদাগর।

মনোনয়ন ফরম তুলতে না পারার ব্যাপারে এখলাস উদ্দিন মোল্লাহ ও মনোয়ার হোসেন ডিপজলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, মনোয়ার হোসেন ডিপজল ও এখলাস উদ্দিন মোল্লাহ দুজনই আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক নেতা এখলাস উদ্দিন মোল্লাহ ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১১ আসনে বিএনপির মনোনয়নে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন। পরে তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে তিনি ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৫ আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদারের কাছে পরাজিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নৌকার মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। তাঁর ভাই ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার ঢাকা-১৬ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁদের প্রয়াত বাবা হারুন মোল্লাহ এক সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। ১৯৯১ সালে তিনি ঢাকা-১১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপিতে যোগ দেন এবং ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

অন্যদিকে মনোয়ার হোসেন ডিপজল বিএনপির সমর্থনে ১৯৯৪ সালে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার নির্বাচিত হন। বিএনপির এই নেতা ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৪ আসনে নৌকার প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরমও কিনেছিলেন তিনি। কিন্তু মনোনয়ন পাননি। ডিপজল বর্তমানে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

গত ২ জুন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫ ও সিলেট-৩ শূন্য আসনের উপনির্বাচনের জন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মনোনয়ন ফরম নেওয়ার আহ্বান জানায় আওয়ামী লীগ। ৪ জুন থেকে ১০ জুন বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম বিতরণ করবে দলটি।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহ এবং আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে এবং কোনো ধরনের লোকসমাগম ছাড়া প্রার্থী নিজে অথবা প্রার্থীর একজন যোগ্য প্রতিনিধির মাধ্যমে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে হবে। আবেদনপত্র সংগ্রহের সময় প্রার্থীকে অবশ্যই প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সঙ্গে আনতে হবে। আগামী ১০ জুন বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে মনোনয়ন ফরম জমা দিতে হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

ঢাকা-১৪, কুমিল্লা-৫ ও সিলেট-৩ শূন্য আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৪ জুলাই। গত ২ জুন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।

ইসি সচিব জানান, এই তিন আসনের উপনির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৫ জুন, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১৭ জুন, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৩ জুন, প্রতীক বরাদ্দ ২৪ জুন ও ভোটগ্রহণ ১৪ জুলাই।