গৃহবধূর চুল কেটে দেওয়া

আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা জানতে চান হাইকোর্ট

Looks like you've blocked notifications!

অপবাদ দিয়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় এক গৃহবধূর চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রশিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী বুধবারের মধ্যে সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে যোগাযোগ করে সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশারকে তা জানাতে বলা হয়েছে।

আজ রোববার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে এ আদেশ দেন।

বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।

গতকাল প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, উল্লাপাড়া উপজেলায় এক গৃহবধূর চুল কেটে নিয়েছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। অভিযোগ রয়েছে, নিজের লালসা পূরণ করতে না পেরে দুই সন্তানের জননী গৃহবধূকে চরিত্রহীনা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বঁটি দিয়ে মাথার চুল কেটে দিয়েছেন উধুনিয়া ইউনিয়নের গজাইল গ্রামের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুর রশিদ ও তাঁর সহযোগীরা। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে গজাইল গ্রামে ২৫ নভেম্বর রাতে।

এ ঘটনায় উল্লাপাড়া মডেল থানায় ওই নেতা ও তাঁর চার সহযোগীর বিরুদ্ধে ২ ডিসেম্বর মামলা করেছেন নির্যাতিতা গৃহবধূ। মামলার পর থেকে প্রাণভয়ে ওই গৃহবধূ পাশে তাঁর বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আর ঘটনার পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা ও তাঁর সহযোগীরা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে নানা তৎপরতা শুরু করেছেন। পুলিশ এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

থানায় দায়ের হওয়া মামলা ও নির্যাতিতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় গজাইল গ্রামের এক নারী আত্মীয়র বাড়িতে যাওয়ার জন্য ভাড়া মোটরসাইকেলের খোঁজে বের হন। পথে একই গ্রামের সাইফুল ইসলামের বাড়ির পাশে যেতেই সেখানে তাঁকে অতর্কিতে আটকে ফেলেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুর রশিদ ও তাঁর সহযোগীরা। তাঁরা গৃহবধূকে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আপত্তিকর কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে আটক করেছেন বলে চিৎকার করে লোকজন জোগাড় করেন। এ খবরে গ্রামের লোকজন ছুটে এলে সেখানে তাৎক্ষণিক সবার সামনে মাছকাটা বঁটি দিয়ে দ্রুত ওই গৃহবধূর চুল কেটে দেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রশিদ ও তাঁর সহযোগীরা। এ সময় নানা কাকুতি-মিনতি করেও কারো বিন্দুমাত্র সহায়তা পাননি ওই গৃহবধূ। ওই গৃহবধূর চুল কেটে উল্লাস প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ নেতা ও তাঁর সহযোগীরা। রাতেই তাঁরা ওই গৃহবধূর মাথার পুরো চুল কেটে দেওয়ার জন্য গজাইল বাজারে শরিফ নামের এক সেলুন শ্রমিকের কাছে কাঁচি আনতে যান। কাঁচি দিতে রাজি না হওয়ায় ওই সেলুন শ্রমিককে তাঁরা মারধর করে বলে সেলুন শ্রমিক অভিযোগ করেন।

ঘটনার পর সেখান থেকে পালিয়ে ওই গৃহবধূ তাঁর সন্তানদের নিয়ে পাশে তরফ বায়রা গ্রামে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে পুরো ঘটনা পরিবারের কাছে খুলে বলেন। নিকট আত্মীয়দের সহায়তায় ২ ডিসেম্বর ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানায় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রশিদ, একই গ্রামের মোজাহারের ছেলে মুনসুর, বাহের আলীর ছেলে ছালাম, নাসির ও শহিদুল ইসলামকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০/৩০ ধারায় একটি মামলা করেন। উল্লাপাড়া মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হাফিজ তদন্ত করছেন। মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকে আসামিরা আত্মগোপনে রয়েছেন।

নির্যাতিত গৃহবধূ জানান, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রশিদ আগে থেকেই তাঁকে নানা কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। তাঁর বাড়ির ডিশ সংযোগ কেটে দেওয়ার পর থেকে তাঁর সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তখন থেকে তাঁকে নানাভাবে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তিনি দাবি করেন, ‘আমি নিরাপরাধ। আমাকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সবার সামনে মাথার চুল কাটা হয়েছে। এতে আমি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছি। ঘটনার পর থেকে আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না। এমনকি বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগসহ দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে আসামিরা।’

গৃহবধূ নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে কথা হলে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল রশিদ দাবি করেন, তিনি ওই গৃহবধূর চুল কাটেননি। অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার সময় গ্রামবাসী তাঁকে আটক করে মাথার চুল কেটে দিয়েছে। স্থানীয় একটি মহল এ ঘটনায় তাঁকে জড়িত করে ওই গৃহবধূকে দিয়ে মামলা করিয়েছে।

উল্লাপাড়া মডেল থানার ওসি শাহীন শাহ পারভেজ কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।