‘আগে ছিলাম রাস্তার ভিখারি, এখন আমি লাখপতি’
বীরাঙ্গনা শিলা গুহ একজন উপকারভোগী নারী। আজ রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় একটি ঘর বুঝে পেয়েছেন তিনি।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার মাজদিহি পাহাড়ের দৃষ্টিনন্দন এলাকায় নির্মিত তিনশ ঘর ও দলিল ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবারের মধ্যে হস্তান্তর করেন। এ সময় উপকারভোগীদের মধ্যে বীরাঙ্গনা শিলা গুহ বক্তব্য দেন।
বক্তব্যে শিলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, ‘আমি ঘর পেয়ে খুবই খুশি। আগে ছিলাম রাস্তার ভিখারি, এখন আমি লাখপতি। শুধু বঙ্গবন্ধুকন্যার জন্য আমি এ পর্যায়ে আসতে পেরেছি। ভগবান তাঁকে দীর্ঘজীবী করুন। কামনা করি, বঙ্গবন্ধু ও আমার মা শেখ ফজিলাতুন্নেছার আত্মা শান্তি পাক।’
শিলা গুহ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাঁর একটাই দাবি রেখে বলেন, ‘আমাকে যে নতুন ঘর দিয়েছেন, সেই ঘরে একবার আসবেন। আমি আপনাকে সাতকড়া দিয়ে তরকারি রান্না করে খাওয়াব।’
এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন শিলা গুহ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘তারা (একাত্তরের শহীদরা) যেন স্বর্গ থেকে দেখতে পান, আমরা সুখী হয়েছি। আমি এখনও আপনার (শেখ হাসিনা) মঙ্গল কামনা করে দুই টাকার বাতি জ্বালিয়ে পুজো করি। প্রতিদিন আমি বাতি জ্বালাই, আমার বোন যেন সুখী থাকে। আমার বোনকে যেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত করতে না পারে। আমার বোন যেন হাজার বছর বাঁচে, সেই কামনা করি।’
শিলা গুহ বলেন, ‘আমি যুদ্ধের সময়ও ভাবতে পারিনি যে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধ বয়সেও আমাকে দেখে রাখবেন। তাই আমি ভীষণ খুশি হয়েছি।’
আবেগ আপ্লুত শিলা গুহর কান্নায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। কথা বলা শেষে চশমা খুলে চোখ মুছতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকেও।
বীরাঙ্গনা শিলা গুহ আগে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিঁন্দুরখান এলাকার একটি বস্তিতে বসবাস করতেন।
শিলা গুহর বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি খুব ভালো বক্তব্য রাখছিলেন, আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা নেবেন। আমি যদি সুযোগ পাই নিশ্চয়ই আসার চেষ্টা করব। আপনাদের যে অবদান, আপনাদের যে আত্মত্যাগ, এই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই তো আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। আত্মত্যাগ কিন্তু বৃথা যায় না। আপনারা যারা ঘর পেয়েছেন সবাই ভালো থাকেন, এই কামনা করি।’
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর ও দলিল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. আব্দুস শহিদ, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিছবাউর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।