আজও জাহানারা খোঁজেন যমুনায় হারানো ভিটেমাটি

Looks like you've blocked notifications!

যমুনায় ভিটেমাটি হারানো নিঃস্ব এক বিধবা নারী জাহানারা বেগম। চোখের সামনেই যমুনায় বিলীন হতে দেখেছেন সাজানো সংসার আর ঘর-গৃহস্থালি। জাহানারা জানেন, সেই সাজানো বসতি আর ফিরে পাবেন না তিনি। তবু প্রতিদিন সকাল হলেই তিনি ছুটে যান যমুনার তীরে। যমুনার ভাঙনে হারানো সেই ঘর খুঁজে ফেরা ক্লান্ত চোখ বারবার ফিরে যায় অশ্রুসিক্ত হয়ে।     

জাহানারার স্বামী মৃত্যুকালে রেখে গিয়েছিলেন তিনটি পাকা ঘর, পাঁচ বিঘা ফসলি জমি, তিন বিঘা আয়তনের মাছের ঘের ও বসতভিটা। এখন সেগুলো শুধুই স্মৃতি। সামান্য কিছু বসতভিটা এখনও আছে। তবে তাও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। প্রতিদিন সকালে নদী পাড়ের সেই জমিটুকু দেখতে আসেন জাহানারা।

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর ভাঙন। ছবি : এনটিভি

আজ রোববার সকালে শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের পাচিল এলাকার যমুনার পাড়ে দেখা যায় জাহানারাকে। এ সময় তিনি জানান, ১৯৭১ সালে তাঁর বিয়ে হয় নদী পাড়ের সানোয়ার হোসেনের সঙ্গে। বিয়ের পর থেকে পাচিল এলাকায় যমুনার পাড়ে তাঁদের বসবাস শুরু হয়। তিন বছর আগে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময় স্বামীর রেখে যাওয়া বসতভিটা, ফসলি জমি, মাছের ঘের এখন যমুনায় বিলীন। যা আছে তাও যমুনার ভাঙনের অপেক্ষায়। পুকুরের মাছ বিক্রি করে তাঁর সংসার চলতো। এখন আশ্রয় নিয়েছেন পাচিল বাজারে ছেলের বাড়িতে।

জাহানারা বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল হলেই ঘুম ভাঙে ভয় নিয়ে। জমিটুকু আছে, নাকি গ্রাস করেছে রাক্ষুসী যমুনা? আর কেউ যেন আমার মতো এমন করে নিঃস্ব না হয়। ভাঙন ঠেকাতে বাঁধ নির্মাণ করা জরুরি। তা না হলে হয়তো যমুনা পাড়ের হাজারও মানুষ সব হারিয়ে নিঃস্ব হবে।’

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর ভাঙন। ছবি : এনটিভি

জাহানারা বেগমের মতো শত শত পরিবার রয়েছে, যারা যমুনায় ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে এখন নিঃস্ব।

সরেজমিনে দেখা যায়, একমাস হলো সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর থানাধীন খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদী ভাঙন শুরু হয়। যমুনায় পানি বাড়ার কারণে গত ১৫ দিন ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙনে ইতোমধ্যে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে আরও অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। অনেকে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘ভাঙনরোধে ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প দুই একদিনের মধ্যে একনেকে অনুমোদন হবে। এ বিষয়ে আমরা চিঠি পেয়ে ঢাকায় এসেছি। ঢাকা থেকে ফিরে ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করা হবে। আশাকরি আগামী শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারব।’