আদালতে ঘটনার বর্ণনা দিলেন নির্যাতিত নারীর স্বামী
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় ওই নারীর স্বামী আজ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (৩ নম্বর আমলি আদালত) বিচারক মাসফিকুল হক তাঁর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালত পরিদর্শক নাজমুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, এ ঘটনায় ওই নির্যাতিত নারীর স্বামী আজ বিকেলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল সোমবার একই আদালতে ঘটনার বর্ণনা দিনে নির্যাতিত ওই নারী।
এর আগে আদালত এই মামলার প্রধান আসামি বাদলকে দুটি মামলায় মোট সাত দিনের এবং ইউপি সদস্য সোহাগকে একটি মামলায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বলে জানান আদালত পরিদর্শক।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে এক গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তাঁর স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখেন দেলোয়ার বাহিনীর বাদলসহ অন্যরা। এরপর তাঁরা গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তাঁরা বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইল ফোনে ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। পরে অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার ওই নারী বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে বেগমগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। সেখানে নয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো সাত-আটজনকে আসামি করা হয়। তবে দেলোয়ারকে আসামি করা হয়নি। এরই মধ্যে দুটি মামলার এজাহারভুক্ত চার আসামিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে চার আসামিকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজন হলেন একলাশপুর ইউপির সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে সোহাগ (৪২), মামলার ১ নম্বর আসামি একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম একলাশপুর গ্রামের মোহর আলী মুন্সিবাড়ির রহমত উল্যার ছেলে বাদল (২২), ২ নম্বর আসামি একলাশপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের খালপাড় এলাকার হারিদন ভূঁইয়াবাড়ির শেখ আহম্মদ দুলালের ছেলে মো. রহিম (২০), ৫ নম্বর আসামি পূর্ব একলাশপুরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নোয়াব আলী বেপারী বাড়ির সাজু (২১) এবং ৯ নম্বর আসামি একলাশপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম একলাশপুর গ্রামের মোহর আলী মুন্সিবাড়ির মৃত আবদুর রহিমের ছেলে মো. রহমত উল্যাহ (৪১)।
এর মধ্যে মো. রহিম ও রহমত উল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিন করে মোট ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গতকাল সোমবার নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (আমলি আদালত-৩) বিচারক মাশফিকুল হক এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মামলার ১ নম্বর আসামি বাদলকে গতকাল রাতে বেগমগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেছে র্যাব-১১-এর সদস্যরা। আর ইউপি সদস্য সোহাগ ও সাজুকে গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার একলাশপুর এলাকা গ্রেপ্তার করা হয়। বাদল ও সোহাগ রিমান্ডে গেলেও সাজুকে বেগমগঞ্জ থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাঁকে আগামীকাল আদালতে তোলা হবে।
এই মামলার পলাতক আসামিরা হলেন আবুল কালাম, ইস্রাফিল হোসেন, সামছুদ্দিন সুমন, আবদুর রব ও আরিফ। তাঁদের সবার বাড়ি বেগমগঞ্জে। তাঁরা সবাই একলাশপুরের দেলোয়ার বাহিনীর সদস্য।
বাহিনী প্রধান দেলোয়ারকে গত রোববার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন শিমরাইল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে বাসে তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব-১১। তবে বেগমগঞ্জ থানায় করা দুটি মামলায় তাঁর নাম নেই। দুটি মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় সাত-আটজনকে আসামি করা হয়েছে।
তবে দেলোয়ারকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অস্ত্র মামলায় আজ দুদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ দুপুরে দেলোয়ারকে সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক ফাহমিদা বেগম দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।