আপাদমস্তক সাংবাদিক ছিলেন আবদুস শহিদ, এনটিভিতে শোকের ছায়া
এনটিভির যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক আবদুস শহিদ আপাদমস্তক একজন সাংবাদিক ছিলেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে সাংবাদিকতাকেই ধ্যান-জ্ঞান মনে করতেন তিনি। সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাংবাদিকদের অধিকার আদায়েও রাজপথে সোচ্চার ছিলেন আবদুস শহিদ। এনটিভির নিউজকে জনমানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ও নান্দনিকভাবে উপস্থাপনের জন্য কাজ করে গেছেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে এনটিভির নিউজরুমসহ সাংবাদিক সমাজে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মনের দিক থেকে প্রবল আত্মবিশ্বাসী ও সাহসী মানুষ ছিলেন তিনি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য আবদুস শহিদ এনটিভির সংবাদকে সাজাতেন দর্শকদের জন্য। করোনা থেকে মুক্ত হয়ে খুব শিগগির তিনি ফিরে আসবেন এমন অপেক্ষাতেই ছিলেন তাঁর সহকর্মীরা। কেননা, দীর্ঘদিন করোনা আক্রান্ত থেকে তাঁর অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকেই যাচ্ছিল। কিন্তু মানুষ চায় কী আর হয় কী। আজ রোববার অফিসে এসে শুনতে হয় আবদুস শহিদ আর নেই।
আবদুস শহিদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে এনটিভির পরিচালক আশফাক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা সবাই শকড, শোকাহত ও মর্মাহত। আমাদের বলার ভাষা নেই। আমাদের এখনো মনে হচ্ছে, উনি আমাদের মাঝে আছেন। তিনি চিরকাল আমাদের মাঝে থাকবেন, ইনশাআল্লাহ। আপনারা সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহতায়ালা উনাকে জান্নাত নসিব করুন এবং উনার পরিবারকে শোক সহ্য করার ক্ষমতা দিন।’
একজন নিউজম্যান বলতে যা বোঝায়, সেটিই ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের একাংশের সাবেক সভাপতি আবদুস শহিদ। এনটিভি সংবাদ আজ যে কোটি কোটি দর্শকের কাছে এতটা গ্রহণযোগ্য, তার নেপথ্যে যাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁর মধ্যে আবদুস শহিদ ছিলেন অন্যতম। সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে এনটিভিতে তাঁর সৃষ্টিশীল কাজের অবদান হিসেবে কিছুদিন আগে যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। কিন্তু শেষমেশ করোনা তাঁকে আর তাঁর প্রিয় অফিসে আসতে দিল না। নিয়ে গেল সবার আড়ালে।
এনটিভির হেড অব নিউজ জহিরুল আলম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘শহিদ ভাই এভাবে চিরবিদায় নেবেন, কখনো ভাবিনি। ভেবেছি, শহিদ ভাই ফিরে আসবেন আমাদের মাঝে। প্রতিটি মুহূর্তে দোয়া করেছি তাঁর জন্য। আল্লাহ তাঁকে চির শান্তিতে রাখুন। আমি আসলেই খুব শোকাহত। কারণ, শহিদ ভাই আমার দীর্ঘদিনের সহকর্মী।’
শুধু নিউজরুম নয়, এনটিভির প্রতিটি শাখার কর্মীরা কেউ যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে আবদুস শহিদ হঠাৎ এক সকালে এভাবে সবাইকে ছেড়ে চলে যাবেন।
এনটিভির এইচআর অ্যান্ড অ্যাডমিনের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার সুলতানা এ বানু গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘উনি (আবদুস শহিদ) আমাদের রেখে এভাবে চলে যাবেন, আমি আজকেও এটা বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি তাঁর খবর জেনেছিলাম, কিন্তু এতটা খারাপ হয়ে যাবে আর আজকে এত বড় নিউজ শুনতে পারব, তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।’
এনটিভি অনলাইনের প্রধান খন্দকার ফকরউদ্দীন আহমেদ জুয়েল বলেন, ‘প্রিয় শহিদ ভাই আমাদের মাঝে নেই, এটা আমরা ভাবতে পারছি না। উনি আমাদের এত সবার সজ্জন একজন ব্যক্তি ছিলেন। খুবই কষ্ট লাগছে শুনে।’
সাংবাদিকতার বিভিন্ন শাখায় কাজ করে আবদুস শহিদ নিজে যেমন সমৃদ্ধ ছিলেন, তেমনি তিনি সমৃদ্ধ করেছেন এনটিভির নিউমরুমকে। সংবাদের নেপথ্যের এই কারিগর শেষে চলেই গেলেন পৃথিবীর নেপথ্যে।
নভেল করোনাভাইরাসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে আজ রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন আবদুস শহিদ। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তিনি স্ত্রী ও এক ছেলে রেখে গেছেন।
গত ২৫ জুলাই আবদুস শহিদের করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগ শনাক্ত হয়। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ২৭ জুলাই তাঁকে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ২৮ জুলাই তাঁকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ তাঁর মৃত্যু হয়।
১৯৫৭ সালে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ গ্রামে আবদুস শহিদের জন্ম হয়। সৃজনশীল এই মানুষটি তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে এনটিভিসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। সাংবাদিকদের নেতৃত্বেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের একাংশের সভাপতি হিসেবে সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দেন আবদুস শহিদ। এ ছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে কাজ করে গেছেন তিনি। তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
আবদুস শহিদ লক্ষ্মীপুরে গ্রামের বাড়িতে তাঁর মা-বাবার নামে আফিয়া-বারী হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন।