‘আপিল নিষ্পত্তির আগেই’ দুজনের ফাঁসি কার্যকরের অভিযোগ

Looks like you've blocked notifications!

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষমাণ থাকাবস্থায় দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরকম খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। কীভাবে এটি সম্ভব হলো বা প্রকৃত সত্য কী- এ নিয়ে তোলপাড় চলছে বিচারাঙ্গনে।

জানা গেছে, ফাঁসি কার্যকর হওয়া দুই আসামি হচ্ছেন চুয়াডাঙ্গা জেলার বাসিন্দা মোকিম ও ঝড়ু। ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে যশোর জেলা কারাগারে তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়। সম্প্রতি তাদের আপিল নিষ্পত্তির জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এলে বিষয়টি জানাজানি হয়। আসামিদের আইনজীবী বিষয়টিকে ‘বিস্ময়কর’ বলে অভিহিত করেছেন।

আসামিদের আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিচারপ্রার্থী মোকিম কনডেম সেলের প্রিজনার ছিলেন। বিচারপ্রার্থীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়েছি, কনডেম প্রিজনার মোকিম ও ঝড়ুর মৃত্যুদণ্ড এরই মধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। মূলত মোকিম ও ঝড়ুর পরিবার খুবই দরিদ্র। তাই তাদের পক্ষে মামলার খোঁজ নেওয়া সম্ভব হয়নি।’

আইনজীবী আরও জানান, মোকিম ও ঝড়ুর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তা হবে দুঃখজনক।’ 

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘আপিল আবেদনের পর আসামিদ্বয়ের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে কারা কর্তৃপক্ষের অপেক্ষা (আপিল নিষ্পত্তির) করা উচিত ছিল।’

মামলার বিবরণে জানা যায়, আসামি মোকিম ও ঝড়ুর বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায়। ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন একই এলাকার সাবেক ইউপি মেম্বার মো. মনোয়ার হোসেন খুন হন। ওই ঘটনায় তার চাচাতো ভাই মো. অহিমউদ্দিন বাদী হয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহারে মোকিম ও ঝড়ুর নাম আসে। পরে ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ মামলার বিচারে তিনজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ, দুজনকে যাবজ্জীবন ও অপর আসামিদের খালাস দেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন— একই ইউনিয়নের তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, মোকিম ও ঝড়ু।

বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুসারে আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য মামলাটি হাইকোর্টে আসে। মামলার ডেথ রেফারেন্স নম্বর ছিল ৩৯/২০০৮। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মোকিম ও ঝড়ুর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে ২০১৩ সালের ৭ জুলাই ও ৮ জুলাই মামলার রায় ঘোষণা করেন। বাকি আসামিদের খালাস দেন।

পরে মোকিম (আপিল নং-১১১/২০১৩) ও ঝড়ু (আপিল নং-১০৭/২০১৩) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেন।

তখন মোকিমের পক্ষে আপিল মামলাটি তদারকির দায়িত্ব পান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির। এরপর কেটে গেছে আটটি বছর। দীর্ঘ সময় পর সম্প্রতি মামলাটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় উঠেছে।

মামলাটি শুনানির জন্য তালিকায় ওঠার পর আইনজীবী দরিদ্র মোকিমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানতে পারেন, ‘আপিল নিষ্পত্তির আগেই’ ২০১৭ সালে মোকিমের ফাঁসি কার্যকর করেছে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। এমনকি অপর আসামি ঝড়ুর মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

নিয়ম অনুসারে, হাইকোর্ট কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের পর আপিল দায়ের করা হলে আপিল বিভাগ থেকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে এবং সংশ্লিষ্ট ডিসির কাছে এ বিষয়ে নির্দেশনা যায়। ফলে দণ্ড কার্যকর ওই সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়।