আফ্রিকায় নিহত ৩ শান্তিরক্ষী : সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নীলফামারীতে চলছে শোকের মাতম
আফ্রিকায় শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন বাংলাদেশি তিন সৈনিক। তাঁদের মধ্যে শরীফুল ইসলামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। আর মো. জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি নীলফামারী ও জসিম মিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। গতকাল তিনজনের মৃত্যুর খবরের পৌঁছানের পর থেকে তাঁদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। নিরবতা যেন ঘিরে ধরেছে ওই এলাকাগুলোকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এনটিভি অনলাইন প্রতিনিধি শিহাব উদ্দিন বিপু এসব তথ্যের পাশাপাশি জানান, জসিম মিয়া ২০০৯ সালে জসিম সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ২০২১ সালে তিনি জাতীসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যান। জসিম বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিংগা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরু মিয়ার ছেলে। ছেলের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ তিনি।
নিহত জসিমের পরিবারে চার বোন, দুই ভাই, দুই ছেলে, স্ত্রী ও বাবা রয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে তার দেশে আসার কথা ছিল।
সিরাজগঞ্জ থেকে আমাদের প্রতিনিধি শরীফুল ইসলাম ইন্না জানান, আফ্রিকায় নিহত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য শরীফুল ইসলামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। শোকে ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ। শরীফুলের মা পাঞ্জু আরা বেগম নির্বাক হয়ে পড়েছেন। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা লেবু শেখ। শরীফুলের বাবা ও মা মাঝে মাঝে অস্পষ্ট কণ্ঠে শুধু বলছেন, ‘তোমরা আমার শরীফুলকে আইনা দাও, এইভাবে সে চইলা যাইতে পারে না।’
সন্তানের মৃত্যুর পর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন শরীফুলের মা, বাবা, ভাই স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা। কাঁদছেন প্রতিবেশীরাও। বুধবার সকালে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকার বেড়াখারুয়া গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী শরীফুল ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। মিশনে যাওয়ার ছয় মাস আগে বিয়ে করেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে শরীফুল সবার বড়। মিশন থেকে ফিরে একমাত্র বোন লাকী খাতুনের দিয়ে দেওয়ার কথা ছিল তাঁর।
নীলফামারী থেকে এনটিভি অনলাইনের প্রতিনিধি নূর আলম জানান, শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন জাহাঙ্গীর আলমের মা গুলেনাহার বেগম। তাঁর ছেলে মধ্য আফ্রিকায় শান্তিরক্ষী মিশনে গিয়ে বোমা বিষ্ফোরণে নিহত হয়েছেন। শয্যাশায়ী মা গুলেনাহার বলেন, ‘কয়েকদিন আগে অনলাইনে ব্যাটার (ছেলের) সাথে কথা হইল, কইল মা—মুই ভালো আছো (আছি)। মিশন শ্যাষ হয়ছে। কিছুদিন পর দ্যাশোত আসিম (আসব)। তোমরা ভালো থাকো।’
কথা বলতে বলতেই ভাষা হারিয়ে ফেলা মা আবারও বললেন, ‘ছেলেটাক ক্যানে মরি গেইল, আল্লাহ মোকে আগোত (আগে) নিয়া গেইলে তো হইল হয়। মুই ছেলেটাক দেখির (দেখতে) চাও (চাই)।’
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার জাহাঙ্গীর আলমের বাবা লতিফর রহমানের মুখ থেকে বের হচ্ছে না যেন কোন কথা। বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। থামানো যাচ্ছে না স্ত্রী শিমু আকতারের কান্না।