আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে : আইনমন্ত্রী

Looks like you've blocked notifications!
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পুরোনো ছবি : এনটিভি

বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা না ঘটে এজন্য সরকার সচেষ্ট রয়েছে।’ আজ বুধবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী।

আনিসুল হক বলেন, ‘এ মামলা আদালতে পরিচালনার জন্য আমাদের প্রসিকিউশন টিম আগেই গঠন করা হয়েছে। মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা এটা করেছি। আজ তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্র দিয়েছেন। আগামী সোমবার প্রসিকিউশন টিম কাজ শুরু করবে। মামলার বিচার শুরু করার আগে যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা করতে একটি আবেদন দেবে আমাদের কাছে। ওই আবেদন অনুযায়ী আমরা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি করতে পাঠাব।’

‘ট্রাইব্যুনাল ৯০ দিনে এ মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন করবেন। এ সময়েও নিষ্পত্তি না হলে ট্রাইব্যুনাল আরো ৩০ দিন নিতে পারবেন। এতেও নিষ্পত্তি করতে না পারলে যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে আরো ১৫ দিন সময় নিতে পারবেন। মোট ১৩৫ দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনালকে এ মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে।’ যোগ করেন আইনমন্ত্রী।

গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় পরের দিন ৭ অক্টোবর আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১২ জনকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আটজন জবানবন্দি দিয়েছেন।

এদিকে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২৫ জনকে আসামি করে চূড়ান্ত করা অভিযোগপত্র আজ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখায় জমা দিয়েছেন মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য (ডিবি) বিভাগ।

এর আগে আজ দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২৫ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আটজন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে আবরারকে মারধরে সরাসরি অংশ নিয়েছেন ১১ জন। এভাবেই আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’

যে ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন- বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহসভাপতি এস এম মাহমুদ সেতু, বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতাসিম ফুয়াদ, বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান রবিন, বহিষ্কৃত তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকার, বহিষ্কৃত ক্রীড়া সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, বহিষ্কৃত সাহিত্য সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মনির, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, বহিষ্কৃত উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, বহিষ্কৃত উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, বহিষ্কৃত উপদপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ, বহিষ্কৃত সদস্য মো. মুজাহিদুর রহমান, মুনতাসির আলম জেমি ও এহতেসামুল রাব্বি তানিম, সদস্য মাহমুদুল জিসান,  হোসেন মোহাম্মদ তোহা ও মোয়াজ আবু হুরায়রা এবং ছাত্রলীগকর্মী খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. আকাশ হোসেন, মো. মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অর্মত্য ইসলাম, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান ও শামসুল আরেফিন রাফাত।

২৫ জনের মধ্যে ২১ জন এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছে। যে চারজন পলাতক আছেন তাঁরা হলেন- জিসান, তানিন, মোর্শেদ ও রাফিদ।

এর মধ্যে ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, এস এম মাহমুদ সেতু, রাফিদ- এদের নাম এজাহারে ছিল না। পুলিশের তদন্তে এদের নাম বেরিয়ে আসে। এখন তাঁরা আসামি হলেন।

সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল আরো বলেন, অভিযোগপত্রে মামলার এজাহারে নাম থাকা ১৯ জন এবং তদন্তে বেরিয়ে আসা আরো ছয়জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এজাহারভুক্তের ভেতরে তিনজন এবং পরবর্তী সময়ে নাম আসাদের ভেতরে একজন পলাতক আছেন।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আরো বলেন, ‘আবরারকে হত্যার জন্য আমরা একক কোনো কারণ জানতে পারেনি। বিভিন্ন কারণে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে। শিবির করা তার মধ্যে একটি। বড়দের সালাম না দেওয়া, আসামিদের উগ্র আচরণ, র‍্যাগিংসহ নানা কারণে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে।’