আবরার হত্যা : যা ঘটেছিল সেই রাতে

Looks like you've blocked notifications!
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বী। ফাইল ছবি

বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যা মামলায় ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। এই আসামিদের মধ্যে ২২ জন কারাগারে আটক আছেন এবং তিন আসামি পলাতক। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মোহাম্মদ কামরুজ্জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এর মধ্য দিয়ে আলোচিত এ মামলার বিচার শুরু হলো।

গত বছরের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় পরের দিন ৭ অক্টোবর ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা। এরপর ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ মামলার অভিযোগপত্রে আবরার হত্যার ওই রাতের ঘটনার বিবরণ জানা গেছে। সেই অভিযোগপত্রে ওই রাতে কী হয়েছিল তা বর্ণনা করা হলো :

রাত তখন ১১টা। বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ১০১১ নম্বর কক্ষে এসে হাজির হন এস এম মাহমুদ ওরফে সেতু। আবরারের ব্যাপারে উপস্থিত অন্যদের কাছ থেকে তিনি জানতে চান। তখন অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ ও মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আবরার কোনো তথ্য দিচ্ছে না।’ মাহমুদ ওরফে সেতু অন্যদের বলে যান, ‘মারতে থাক।’ এমন নির্দেশনার পর ইফতি মোশাররফ ও অনিক সরকার আবরারকে ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পেটাতে থাকেন। হাতের কনুই দিয়ে আবরারের পিঠে প্রচণ্ড আঘাত করেন। তখন সবাই মিলে প্রচণ্ড শক্তিতে আবরারকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি, চড়-থাপ্পড় লাথি মারতে থাকেন। এরপর ওই কক্ষ থেকে বের হওয়ার আগে অনিক সরকার ও মেহেদী হাসান ওরফে রবিন অন্যদের বলে যান, ‘তোরা আবরারের কাছ থেকে তথ্য বের কর।’

তখন মনিরুজ্জামান মনির বলেন, তিনি আবরারের মোবাইল চেক করে শিবিরের তথ্য পেয়েছেন। এরপর মনিরুজ্জামান ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে আবরারকে পেটাতে থাকেন। তাবাখখারুল, নাজমুস সাদাত, এহতেশামুল রাব্বী ওরফে তানিম, মুনতাসির আল জেমি আবরারকে চড়-থাপ্পড় মারেন। বাইরে থেকে আবার ওই কক্ষে ঢোকেন অনিক সরকার। হাতে তুলে নেন ক্রিকেট স্টাম্প। তখন অনিক সরকার আবার আবরার ফাহাদকে প্রচণ্ড জোরে আরো ৪০ থেকে ৫০টি আঘাত করেন। তখন আবরার বমি ও প্রস্রাব করে ফেলেন। বাঁচার জন্য ইশারা-ইঙ্গিতে আকুতি-মিনতি করেন। এমন অবস্থায় আবরারকে হলের বাথরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। ধুয়েমুছে আবরার ফাহাদের জামাকাপড় বদলানো হয়।

এরপর ইফতি মোশাররফ ও মেহেদী হাসানের নির্দেশে নাজমুস সাদাত, শামীম বিল্লাহ, শামসুল আরেফিন, আকাশ, মোয়াজ আবু হোরায়রা, মুনতাসির আল জেমি ও এহতেশামুল রাব্বি আবরারকে ধরাধরি করে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। ইফতি মোশাররফ হলের মেসবয় জাহিদ হাসানকে ডেকে আনেন। ২০১১ নম্বর কক্ষটি তাঁকে দিয়ে পরিষ্কার করানো হয়।

আবরার ফাহাদকে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নেওয়ার পর ইফতি মোশাররফ অন্যদের বলেন, ‘তোরা এবার আবরারের কাছ থেকে তথ্য বের কর। বুয়েটে কে, কে শিবির করে।’ তখন মোয়াজ আবু হোরায়রা ও অমর্ত্য ইসলাম আবরারের মুমূর্ষু অবস্থা দেখে মেহেদি হাসান ওরফে রবিনকে জানান, ‘আবরারকে হাসপাতালে নিতে হবে।’ এই কথা শোনার পর মেহেদি হাসান ওরফে রবিন বলেন, ‘ও নাটক করছে। শিবির চেনস না। শিবির চেনা কষ্ট।’ রাত আড়াইটার সময় ইফতি মোশাররফ, মুজাহিদ, তাবাখখারুল ও তোহা মিলে আবরারকে তোশকে করে হলের দোতালার সিঁড়িতে রাখেন।

এরপর আসামিরা বুয়েটের চিকিৎসক ও অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনেন। চিকিৎসক আবরারের দেহ পরীক্ষা করে ঘোষণা দেন, তিনি মারা গেছেন। আবরারকে হত্যার পর ক্রিকেট স্টাম্প, তোশক, বালিশ, আবরারের ল্যাপটপ, চাপাতি হলের ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদের কক্ষে নিয়ে রেখে দেওয়া হয়।

অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল ও সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ ওই হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে অপরাধ ঘটাতে সার্বিক সহায়তা করেন। আবরারের মৃতদেহ হলের নিচে নামানোর পর তড়িঘড়ি করে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল বুয়েটের চিকিৎসকের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। পরস্পর যোগসাজশে পরস্পরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।