‘আমজাদ হোসেনের চলচ্চিত্র পাঠ্য হওয়া উচিত’
আধুনিক মানসিকতাসম্পন্ন নির্মাতা ছিলেন আমজাদ হোসেন। তিনি তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দিতেন। তাঁর কাজ শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্যপাঠ্য—বরেণ্য এ চলচ্চিত্রকারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে এভাবেই স্মরণ করলেন বিশিষ্টজনরা।
আজ ১৪ ডিসেম্বর, বরেণ্য চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। দিনটিকে স্মরণে রাখতে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি আয়োজন করে স্মরণসভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। দুপুরে এফডিসির জহির রায়হান কালারল্যাব অডিটরিয়ামে শ্রদ্ধাভরে তাঁকে স্মরণ করা হয়।
গত বছরের এই দিনে (১৪ ডিসেম্বর) থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন আমজাদ হোসেন।
স্মরণসভা সঞ্চালন করেন পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন জেমি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সাইদুর রহমান সাইদ, মুশফিকুর রহমান গুলজার, বদিউল আলম খোকন, ছটকু আহমেদ, আবদুস সামাদ খোকন, শাহ আলম খোকন, শাহ আলম কিরণ, চিত্রগ্রাহক আবুল লতিফ বাচ্চু, প্রযোজক খোরশেদ আলম খোকন, চিত্রনায়ক আলমগীর, ওমর সানী, প্রয়াত আমজাদ হোসেনের দুই ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ও সোহেল আরমানসহ অনেকে।
প্রয়াতকে স্মরণ করে বর্ষীয়ান অভিনেতা আলমগীর বলেন, “আমজাদ হেসেনকে নিয়ে কিছু বলার ধৃষ্টতা আমার নেই। কিছু স্মৃতিচারণ করতে পারি। উনার সঙ্গে ‘কসাই’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’—এই তিনটি ছবিতে আমার অভিনয় করার সৌভাগ্য হয়েছে। তখন যা শিখেছি, তা বলতে আমার ৪৭ বছর লাগবে। ‘কসাই’ সিনেমার স্মৃতি বলছি। তখন ‘কসাই’ সিনেমার সেট ভেঙে ফেলা হবে। শুধু একটি গানের শুটিং বাকি, কিন্তু গান রেকর্ড হয়নি তখনো। রাত ১০টায় শুটিং শেষ হওয়ার পর তাঁর বাসায় গেলাম। তখন রাত ১টা, ঘরে ঢোকার সময় আমি গুনগুন করে গান গাইতে-গাইতে ঢুকলাম। কিছুক্ষণ পর তিনি আমাকে বললেন, ‘আবার গানটা গাও তো।’ আমি চেষ্টা করলাম। তখন রাত ২টা বাজে। তিনি আলাউদ্দিন আলী ভাইকে ফোন দিয়ে বললেন, ‘আজ তোমার বাসায় ভাত খাব।’ সেখানে গিয়ে গান লিখলেন, তিনি আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন এবং সকালে গান রেডি করে শুটিংয়ে এসে গানটি ড্যান্স ডিরেক্টরকে বুঝিয়ে দিয়ে সেটের পাশেই ঘুমিয়ে পড়লেন। একজন মানুষের ভেতর কতটা ম্যাডনেস (পাগলামি) থাকলে এভাবে কাজ করতে পারেন!”
নির্মাতা তৌকির আহমেদ বলেন, “আমজাদ হোসেনের চলচ্চিত্র শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্য হওয়া উচিত। তিনি পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে পারতেন। আধুনিক মানসিকতার নির্মাতা ছিলেন। তিনি যখন ‘জয়যাত্রা’ সিনেমাটি আমাকে নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিলেন, তখন তিনি স্ক্রিপ্টে লিখেছিলেন যে চলচ্চিত্রের স্বার্থে উপন্যাসের সংযোজন-বিয়োজন-পরিবর্ধন করতে পারবেন।”
নির্মাতা ছটকু আহমেদ বলেন, ‘আমজাদ হোসেন মানুষের জন্য ছবি বানাতেন। তাঁর ছবিতে বাণিজ্য ও শিল্পের মিশ্রণ দেখলে যে কেউ অভিভূত হবে। এখন কোনো ছবি দেখলে বোঝা যায় না যে এটা কার ছবি। তবে আমজাদ হোসেনের ছবি দেখলে বোঝা যায় এটা তাঁর চলচ্চিত্র। আমি তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’
নির্মাতা আবদুস সামাদ খোকন বলেন, ‘আমাকে তিনি বলতেন, আমি তাঁর সারাজীবনের সঙ্গী। কেন বলতেন জানি না। তবে জীবনের চলার পথে নানাভাবে আবিষ্কার করেছি তাঁকে। হয়তো এর জন্যই। তাঁর আরেকটি চলচ্চিত্রকে নিয়ে তিনি সব সময় ভাবতেন। এই যে আজকাল বলা হয় টাকার জন্য ছবি বানাতে পারছি না, তিনি বলতেন সিনেমা বানাতে শুধু টাকা নয়, সিনেমা বানাতে স্বপ্ন দেখতে হয়। যে স্বপ্ন দেখতে পারে না, তাঁকে দিয়ে নির্মাণ সম্ভব হয় না।’
১৯৬১ সালে ‘হারানো দিন’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন আমজাদ হোসেন। এর মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গনে পা রাখেন তিনি। পরবর্তীতে চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৬৭ সালে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমা নির্মাণের মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটে তাঁর।
এরপর ‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘ভাত দে’ সিনেমা নির্মাণ করে প্রশংসা কুড়ান আমজাদ হোসেন। ১৯৭৬ সালে ‘নয়নমনি’ সিনেমার জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তারপর ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘ভাত দে’, ‘জয়যাত্রা’ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন আমজাদ হোসেন।